পাশের বাড়ির শেফালিদি সুইসাইড করেছে। বাড়ির বড়রা সবাই কানাঘুষোয় ব্যস্ত। সুইসাইড কি বস্তু ! এর মানে কি বুঝেই পায় না ৪ বছরের তুলি।শেফালিদিদি তো সবসময় কত হাসতো, ওকে কত গল্প বলতো ! নীতা পিসিদের বাড়ি গেলেই শেফালিদিদির ঘরে আগে এক ছুট্টে চলে যেত তুলি।শেফালিদিদি তুলিকে দেখলেই কি সুন্দর এক গাল হাসি দিত। শেফালিদির মধ্যে কেমন মা-মা গন্ধ পায় তুলি। মাকে তো ও দেখেইনি ! কি করে জানবে,মা কেমন হয় ! তবুও শেফালিদিদিকে দেখলেই মনে হয় মা এমনিই হয় হয়তো।কি মিষ্টি মা মা গন্ধ, মা মা হাসি। গায়ের সাথে একদম সেঁটে থাকতে ইচ্ছা করে তুলির। সেই শেফালিদি নাকি সুইসাইড করেছে। বাড়ির সবার হাবভাব, কান্ডকারখানা দেখে তো তুলির খালি মনে হচ্ছে, সুইসাইড খুব একটা ভালো জিনিষ নয়।কাকে জিজ্ঞাসা করে এখন? কেউ তো উত্তর দেয় না। বিন্তিমাসীকে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ধমক খেয়েছে তুলি , “যাও, নিজের ঘরে যাও তুলি।বড়দের মাঝে থেকো না একদম।”কি করে এখন তুলি ! বড়মার কাছে গেলে হয় না ! বড়মা তো একটা ঘরেই আটকে থাকে সারাদিন। বুড়ো হয়ে গেছে, ভালো করে চোখে দেখতে পায় না এখন, সারাদিন ওই কোণের ঘরেই আটকা পড়ে থাকে। তুলি ছুটে যায় বড়মার ঘরে। ঘরটায় কি আলো, কি আলো ! বুড়ো মানুষ চোখে কমজোর বলেই তো দাদু বড়মাকে এই ঘরটা দিয়েছে। একদিন তো বলছিল কাকা। ওই যেদিন কাকার বিয়ের দিন ঠিক হলো, দাদুর ঘর থেকে বেশ উঁচু গলার আওয়াজ পাচ্ছিল তুলি। কাকার গলা পায়নি, কিন্তু যে দাদুর গলা জোরে কখনো শোনেনি তুলি, সেই দাদু কত্ত জোরে জোরে বলছিল কথা। সব শুনতে পেয়েছিল তুলি। “মা বেঁচে থাকতে ওই ঘরের কথা কেউ বলবে না, এ কথা আমি আগেও বলেছি, আজ শেষবারের মত বললাম, আর যেন আমাকে বলতে না হয় ছোটখোকা!আর এই কথা যেন মায়ের কানে কোনভাবে না যায়। একজন প্রায় অন্ধ মানুষের জন্য ওই আলো বাতাসওয়ালা ঘরটা যে কত জরুরি, সেটা এত লেখাপড়া শিখেও কি বুঝতে অসুবিধা হয় তোমাদের? যাও আর বিরক্ত কোরোনা আমায়।”তুলি তাই বড়মাকে কিচ্ছুটি বলেনি। দাদু বারণ করে দিয়েছে ।আর বড়দের কথা শুনতে হয়, শেফালিদিদি শিখিয়েছে তো তুলিকে।
“বম্মা,
তুমি কি ঘুমোলে গো?” চোখ বন্ধ করে শুয়ে বড়মা। আসতে আসত গায়ে হাত বোলায় তুলি। “না গো
আমার তুলি রানী, আমার পিয়া সোনা , তুমি ডাকলে কি আর ঘুমাতে পারি?”“চোখ
বন্ধ করে ছিলে তো ?”“কি করি পিয়া সোনা, অন্ধ বুড়ির যে কাজ কর্ম কিছু নাই গো। শুয়ে
বসেই দিন কাটে। চোখ খুলেই রাখি আর বন্ধই থাক, কি বা এসে যায় দিদিভাই !”“অমন
করে বোলো না গো বম্মা, কেমন কষ্ট কষ্ট হয়।“ওরে বাবা ! দিদিভাই দেখি কষ্ট বুঝতে শিখে
গেছে, মুখ খানা এমন শুকনো কেন পিয়া সোনা?”“তবে যে বলো, তুমি দেখতে পাও না?”“একটু
একটু পাই গো দিদিভাই। তোমায় দেখতে কি আর এই পোড়া চোখ লাগে গো ! মনের চোখ দিয়েই দেখতে
পাই।”“মনের
চোখ কি বম্মা?”“সে এক
সুন্দর চোখ গো, যা কখনো খারাপ হয় না। মন যাকে বড় মন-কেমন- করা ভালবাসে, তাকে
মন দিয়ে, মনের চোখ দিয়েই দেখতে পাওয়া যায় গো সোনামনি। তা এবার বলো তো, কি তোমার কষ্ট?
কেন তোমার মন খারাপ?”
“সুইসাইড
কি গো?”
অশীতিপর বৃদ্ধা মৃন্ময়ী কিঞ্চিত কেঁপে উঠলেন। খবরটি তাহলে
এই ছোট্ট ফুলের মত মেয়েটাকেও স্পর্শ করেছে। কি জবাব দেবেন এখন তার পিয়া সোনাকে? কিন্তু
সত্য তো চাপা থাকে না, থাকবেও না। এখন না হলেও পরে তো তুলি জানতেই পারবে, তাহলে এখনই
নয় কেন?
“সুইসাইড
মানে আত্মহত্যা দিদিভাই। তোর শেফালিদিদিভাই আর নেই রে পিয়া, আমাদের সবাইকে ছেড়ে
চিরকালের মত চলে গেছে।”
“কোথায়
গেলো ? আমায় তো বললো না ? ওই সেবার শেফালিদিদি ওর মামাবাড়ি গেলো না ! ওই যে গো কোন
একটা দুরে গ্রামে, আমায় তো বলে গেছিলো। বলেছিলো ক’দিন পর আসবে, আমি যেন মন খারাপ না
করি, যেন লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকি, সবার কথা শুনি আর মন দিয়ে লেখাপড়া করি। আমি
তো সব করেছিলাম, যেমন যেমন বলেছিল শেফালিদিদি। তবে যে এইবার না বলে চলে গেল ? আর তুমি
কি সব বলছ ? চিরকালের মত মানে কি?”
“ও যে
আর ফিরবে না দিদিভাই। অনেক দুরে চলে গেছে, আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
“কত দুরে
? মা’র কাছে
?”ছোট্ট মন অনেক না বোঝা শব্দের বেড়াজাল পেরিয়ে আসল মানেটা শেষ মেষ বুঝেই ফেলে।
তবুও ধন্দ থেকে যায় হয়তো। “ও বম্মা, বলো না ! মা’র কাছে
চলে গেলো?”
“হ্যাঁ
দিদিভাই। তোমার মায়ের কাছে।”
আজ তিনদিন হয়ে গেল। তুলি নিজের বাড়ি থেকে বেরোয়নি। স্কুলেও
যায়নি।নিজের ঘরে রং পেন্সিল নিয়েই কিছু হাবিজাবি সময় কাটানো, মাঝে মাঝে মনে জাগা অনেক
প্রশ্ন নিয়ে বড়মার ঘরে উঁকি দেওয়া, এই ভাবেই কেটেছে এই দিন তিনেক। মৃন্ময়ী দেবী বুঝেছেন,
ছোটো মনে অনেক ঝড়, তার কুল পেতেই বারবার ছুটে আসে তুলি। তিনিও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন,
তুলির মনের হদিস পেতে, মনকে শান্ত করতে | কিন্তু তার ক্ষমতা যে বড়ই সীমিত।
“বম্মা,
আমি শুনেছি।”
“কি শুনেছ
দিদিভাই ?”
“শেফালিদিদি
গলায় দড়ি দিয়েছে।
“কে বললো
এসব ?”
“বিন্তিমাসী
বলছিল বাসনদিদাকে।”
মৃন্ময়ী জানেন, এইটি এমন একটি বিষয় যে প্রত্যেকের কৌতুহল সীমাছাড়া।কাজের
লোকেদের মধ্যে এই নিয়ে জোরদার আলোচনা চলছে। যার ফলে এই ছোট্ট মা মরা মেয়েটার মনের ঝড়
উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া ওনার আর কিছুই করার নেই।
“বম্মা
...”,“বলো
দিদিভাই।“
“কাকা
কেন শেফালিদিদিকে বিয়ে করলো না গো ?”
হায় ভগবান এই খবরও শিশুর কানে তুলে দিয়েছে পরিস্থিতি ! কি বলবেন
এখন মৃন্ময়ী দেবী? কেন তার ছোটো নাতি শেফালির মত এত মিষ্টি গুণবতী মেয়েকে বিয়ে করলো
না !”
“কাকার
তো অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে গো দিদিভাই। নতুন কাকিমাকে দেখেছো তুমি ? খুব সুন্দর
নাকি !”“হ্যা,
দেখেছি তো ! ফর্সা, সুন্দর, লম্বা, কিরকম মেম মেম মতো। মা’র মতো
না একদম।”
কি করে বোঝান মৃন্ময়ী দেবী, এই শিশু মন তো শুধুই মা খুঁজে
বেড়ায়। শেফালি ধীরে ধীরে সেই মায়ের জায়গাটা সুন্দর করে নিয়েছিলো। জন্মেই যে শিশু মায়ের
কোল ছাড়া হয়েছে, তাকে মাতৃস্নেহে শেফালিই তো কোলে তুলে নিয়েছিলো। ছোটো নাতি অনি আর
শেফালির তো সেই কোন ছোট্টবেলার ভালবাসা, কে না জানতো ওদের কথা। এক পাঁচিলের এপাশে ওপাশে
দুই বাড়ি,দুই মন তো আর পাঁচিল চেনে না, তারা একাকার হয়েছিলো। আপত্তিও আসেনি দুই বাড়ি
থেকে। তবে আজ কেন এত গোলমাল হলো ! কি করে বোঝায় তুলি কে?অর্থ, কেরিয়ার, প্রতিপত্তি,
উচ্চাকাঙ্খা যেখানে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, সেখানে ভালবাসার কি
দাম ! তুলিকে কি করে বোঝাবে বৃদ্ধা মৃন্ময়ী, তার নতুন কাকিমা কাকার বসের মেয়ে।
একটা বিয়ে কি না এনে দিতে পারে ওর কাকার জীবনে ! প্রমোশন, বিদেশে স্থিতি, আর্থিক বিলাসিতা
সব কিছুই তো পায়ের তলায় এনে দিচ্ছে এই একটা বিয়ে | সেখানে বড়ই তুচ্ছ ছোটবেলার ভালবাসা
আর পাশের বাড়ির খুব সাধারণ শেফালি। নতুন কাকিমার মোম গলা মসৃন পিচ্ছিল ত্বক,
পালিশ করা রূপ, ঝা চকচকে পোশাক-আশাক –এসবের পাশে শেফালী বড়ই বেমানান, বড়ই নগণ্য।
বড্ড বোকা মেয়ে শেফালিটা! মেয়েদের সহ্যশক্তি এত কম হলে চলে ! ভালবাসার
অপমান মেনে নিতে পারিসনি জানি, তাই বলে একেবারে চলে গেলি? এখন এই মা মরা মেয়েকে কি
করে সামলাবেন তিনি !! জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন এক পা বাড়িয়েই আছেন, তখন তার
সীমিত ক্ষমতা দিয়ে কি ই বা করতে পারেন তিনি। বড় অসহায় লাগে নিজেকে। সকাল থেকে
বাড়িতে দৌড়োদৌড়ি লেগে গেছে। হুলুস্থুলু কান্ড। তুলিকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে
হচ্ছে। মৃন্ময়ী দেবীর বড্ড বুক ধড়ফড় করছে। ভগবান মুখ তুলে চাও, ছোট্ট মেয়েটাকে
কোলে ফিরিয়ে দাও ঠাকুর ! সবে বিয়ে মিটতে না মিটতেই দশ দিনের মাথায় অনি মেম বউ নিয়ে
কোন এক দেশে চলে গেলো,কোন এক খটমট নাম ওয়ালা দেশ। মনে রাখার ক্ষমতা নেই তার। এটুকু
সার বুঝেছেন, তার জীবদ্দশায় তিনি আর ছোটো নাতির মুখ দেখতে পাবেন না। সেই বিয়ের পর থেকেই
মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াত তুলি। খুব আশায় ছিল, নতুন কাকিমা নিশ্চই ওর মা হয়ে আসবে!
সে আর হলো কই !! নতুন বউ যেন অন্য গ্রহের প্রাণী। বাচ্চা মেয়েটা দূর থেকে দেখত
শুধু নতুন কাকিমাকে, কাছে ঘেঁষার চেষ্টা অবধি করলো না। ওরা চলে যাওয়ার পর আজ এই ঘটনা।
হে ভগবান, একটু মুখ তুলে চাও। ফিরিয়ে দাও মেয়েটাকে। দুদিন হলো বাড়ি ফিরেছে তুলি।
প্রাণোচ্ছল মেয়েটা এই কদিনে নীলবর্ণ হয়ে গেছে, যেন কেউ এক পোঁচ কালি লেপে দিয়েছে। ছেলে
আর বড় নাতিকে বলে কয়ে মেয়েটাকে নিজের ঘরে রাখার অনুমতি টুকু পেয়েছেন মৃন্ময়ী দেবী।অশক্ত
হাতে যেমন করে পারেন ছোট্ট প্রাণকে আগলে রাখার চেষ্টা করে যান। তার বড় নাতি গত কদিন
অফিস যায়নি। রাতদিন হাসপাতালে পড়ে থেকেছে। তুলির বিপদ কেটে যেতে একবার শুধু বাড়ি ফিরেছিল।
লাঠি নিয়ে গুটিগুটি পায়ে কোনমতে নাতির ঘর অবধি পৌঁছতে পেরেছিলেন। বাইরে থেকে এক অসহায়,
ব্যর্থ বাবার গুমরে ওঠা কান্না শুনে ধীর পায়ে যেমন এসেছিলেন, ফিরে গেছিলেন নিজের ঘরে।
কি বলে স্বান্ত্বনা দেবেন তিনি ! ভাষা নেই কোনো। ছেলেটা এতবার বলা সত্ত্বেও বিয়ে করলো
না আর, শুধুই তুলিকে ভালো করে মানুষ করবে বলে ! বিয়ের কথা উঠলেই বলতো, ওই তো অনির বিয়ে
হয়ে গেলেই শেফালী আসবে তুলির মা হয়ে। ভবিতব্য বোধ হয় একেই বলে !!!
“এমন
কেন করলে দিদিভাই ?”
“পারলাম
না বম্মা।”
“কি পারলে
না পিয়া সোনা ?”
“মা’র কাছে
যেতে।”ডুকরে ওঠে চাপা কান্না।
“কেন
দিদিভাই, আমার সোনামনি, কেন মামনি ?”
“নাহলে
কি করে পাবো মাকে ?”
“যেতেই
হবে মা’র কাছে
? আমরা তোমায় তো খুব ভালবাসি পিয়া সোনা !”“জানো বম্মা, ইস্কুলে সবার মা আসে ছুটির সময়।
মনামির মা ওকে কত আদর করে। আরোহীর মা রোজ ওকে শরবত দেয় ছুটির সময়। খুব গরম তো !টিনটিনের
মা জানো ওকে কোলে করে করে নিয়ে যায় চুমুও দেয় জাপ্পু করে। আমি বিন্তিপিসির সাথে আসার
সময় ওদের চেয়ে চেয়ে দেখি।”
“মন খরাপ
কোরো না দিদিভাই।”
“শেফালিদিদি
বলেছিলো, আমার কাকিমা হয়ে রোজ আমায় আনতে যাবে ইস্কুলে, টিনটিনের মায়ের মত করে আদর করবে,
চান করিয়ে খাইয়ে দেবে।গল্প শোনাবে, আমার হোমওয়ার্ক করিয়ে দেবে। কিচ্ছু না করে চলে গেলো।”
“তুমি
কি খেয়েছিলে দিদিভাই ? কি বমি ! কি বমি ! পেট টা তো তোমার ফুটো হয়ে যেত দিদিভাই।”
“পিছনের
বারান্দার ওই কোনটাতে একটা কাঁচের লাল মত বোতল আছে না,ওটা খেয়েছিলাম।”
“হে ভগবান,
ওটা তো বিষ, ওটা কেন খেলে ?”
“জানি তো বিষ।” বিন্তিমাসী বললো ওই দিন।
“কবে
?”
“ওই যে
আমি বারান্দাতে পুতুল খেলছিলাম। পা লেগে লাল শিশিটা উল্টে গেছিলো। বাসন মাসি ঘর মুছছিলো
ওই টা ঢেলে ঢেলে। ঢাকনা খোলা ছিল, পরে গিয়ে শিশিটা থেকে খানিকটা সাদা মত কি পড়ল বম্মা,
দুধের মত। আমি হাতে নিয়ে দেখতে গেলাম, বিন্তিমাসী দৌড়ে এসে বলল, বিষ বিষ, ওতে হাত দেয়
কেউ? এক্ষুনি হাত ধুয়ে নাও সাবান দিয়ে। চল আমার সাথে এক্ষুনি।”
“তাহলে
কেন হাত দিলে দিদিভাই ?”
“আমি
বিন্তিমাসীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তো ! বিষ কি, কি হয় ওতে হাত দিলে? বিন্তিমাসী চোখ গোল
গোল করে আমায় বলেছিল , “এই বিষ পেটে যদি চলে যেত, তাহলে কি বিপদ হত বলোতো ! মানুষ মরে
যায় গো।”
“তুমি
যখন এত কিছু জানতে, তাহলে কেন নিলে ?”ফুঁপিয়ে ওঠে ছোট্ট মেয়েটা।
“কি করব
বম্মা ! মা নেই , শেফালিদিদি মা হবে বললো..কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেলো আমায় ছেড়ে।
নতুন কাকিমাও আমায় কোনদিন আদর করলো না,বাক্স গুছিয়ে কাকাকে নিয়ে চলে গেল। আমি
আর তো কোনদিন মা পাবো না, আমি জানি। কি করে মা’র কাছে
যাব বলো তো ? আমি জানি ওরা সবাই মরে গেছে, আকাশের তারা হয়ে গেছে .. আমিও মরে গেলে তবে
আকাশের তারা হয়ে মায়ের কাছে যেতে পারবো। তোমরা আমায় কেন বাড়ি নিয়ে এলে বলো ? কেন নিয়ে
এলে ? মা’র কাছে
যাব আমি।” নরম ছোট্ট ফোলা ফোলা গাল বেয়ে অঝোরে ঝরে যায় কান্না। এক রত্তি
ছোট্ট প্রাণটিকে বুকে চেপে ধরে ডুকরে ওঠেন মৃন্ময়ী দেবী। কি বল স্বান্ত্বনা দেবেন
এই দুধের শিশুকে ? কি ভাবে সামলে রাখবেন ওকে? এতদিন ঈশ্বরের কাছে শুধু প্রার্থনা করেছেন,
অনেক দিন তো হলো এবার তুলে নাও ঠাকুর ! আজ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ঈশ্বরের কাছে একটাই
নিবেদন,আমার আয়ু আরো বাড়িয়ে দাও ঠাকুর এই মা মরা মেয়েটাকে যে বাচাতেই হবে ? আর
যে কোনো উপায় নেই। আমাকে যে বাঁচতেই হবে আমার তুলির জন্য। ওকে সব কষ্ট
ভুলিয়ে অনেক বড় করে তুলতে হবে যে !! দাও ঠাকুর দাও, আয়ু আরো বাড়িয়ে দাও। লোলচর্ম
বৃদ্ধা সর্বময়ের কাছে আকুল হয়ে আয়ু-ভিক্ষা করতে থাকেন। দাও ঠাকুর দাও, আয়ু বাড়িয়ে
দাও !!!

কঠিন বাস্তব শৈশবকে মেরে ফেলে অকালে নির্দয় হাতে। খুব ভাল লাগল পড়ে।
ReplyDelete