'ষষ্ঠীঠাকরুনের
মুখে জলবিন্দু পড়ল না, ঠাকরুন কাঠামোর ভিতর ছটফট করতে লাগলেন, ঠাকরুণের কালো বেড়াল
মিউ-মিউ করে কাঁদতে লাগল। বানর তখন মনে-মনে ফন্দি এঁটে পালকির দরজা খুলে রেখে আড়ালে
গেল। ষষ্ঠীঠাকরুণ ভাবলেন--- আঃ আপদ গেল! কাঠফাটা রোদে কাঠামো থেকে বার হয়ে নৈবিদ্যের
ছোলাটা কলাটা সন্ধান করতে লাগলেন'। ছোটবেলায় এপর্যন্ত এসে হোঁচট খেতাম। জাদুকরের দেশের
মায়া বানর বড়ো ভালবাসে তার দুখিনী মা'কে। চোখের জল মুছিয়ে দিতে চায়।কি দারুণ বুদ্ধি
খাটিয়ে মা ষষ্ঠীর কোল থেকে সোনার চাঁদ ছেলেকে পালকি চড়ে বাদ্যি বাজিয়ে দিগ্ নগরে ছেড়ে
গেল!! আমিও মা কে খুব ভালবাসি ষষ্ঠীর দিন বাবা যখন মামাবাড়ি যেতে চাইতনা,মায়ের দুঃখী
দুঃখী মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও মায়ের বাঁদর সন্তান হয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর উপায়
বের করার কথা ভাবতাম। বাবা কিছু জিনিষ কট্টর ভাবে মেনে চলত, ষষ্ঠী, পূজো, শ্রাদ্ধতে
অংশগ্রহণ এড়িয়ে চলত। কিন্তু কাউকে বাধা দিত না। প্রণাম নিতনা কারুর। তাই বলে আমাদের
বাড়িতে পূজা পার্বণ হত না তা নয় কিন্তু বাবা অংশগ্রহণ করতনা। ষষ্ঠী বলতে আমার আজকাল
অবন ঠাকুর আর একটা আলোছায়া দিন মনে ভাসে। আগের দিন সাজো সাজো রব। পিসিমনি আসবে চা-বাগান
থেকে, আমের ঝুড়ি এসেছে,মর্তমান কাঁঠালি দু'রকম কলা, কালোজাম, গাছ থেকে কাঁঠাল পাড়ানো
হয়েছে। সাদা ফটফটে জামরুল। পাকা ফুটির গন্ধে ম ম করছে সারা বাড়ি। রান্নাঘরে বিকেলের
শেষ জ্বালে পায়েস হচ্ছে। মুঠো ভরা ভেজা কিসমিস পড়বে পড়বে করছে সেই পায়েসে।ঠাকুমার সাথে
ছয় পাতার দূব্বো আর বাঁশের শিষ বাছাই করছি আমরা। দাদার সাথে পঞ্চবটের ডাল পাড়তে যাচ্ছি।
এদিকে অন্য ঘরে মায়ের মুখ থমথমে,দিদার শত অনুরোধ সত্বেও বরফ গলত না, অফিস বাড়ি পার্টি
অফিস এই ঘেরাটোপে নিজেকে আটকে রাখত বাবা। বাবার জীবনের মন্ত্র বা পাঁজিপুঁথি ছিল জন
রিডের দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, নিকোলাই অস্ত্রভস্তির ঈস্পাত, ম্যাক্সিম গোর্কির মা,
এরিক মারিয়া রেমার্ক এর অল কোয়েস্ট অফ দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ব্রেটল্ট বেখট থ্রি পেনি
অপেরা নাটক, যার বাংলা নাট্যরূপ নান্দীকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন পয়সার পালা।
কিছু বই হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই বয়েসেই। কিছু বুঝতাম কিছু বুঝতাম না। রাশিয়ার নিউজ
পেপার ইসপ্রা'র গল্প শোনাত বাবা। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি দুই সংস্কারে আমার ছোটবেলাটা
প্রায় স্যান্ডুইচ হয়ে গিয়েছিল। বাবার কিন্তু বেদ পূরাণে অসম্ভব জ্ঞান ছিল। কিন্তু সবকিছু
যুক্তিদিয়ে বিচার করতেন। এবার ফিরে আসি মূল বিষয়ে। ভোরবেলা পূজোর ফুল যোগাড় করতাম আমরা।
ঝটপট স্নান সেরে নিতাম। মা পিসি কাকিমাদের স্নান করতে হত নতুন পাখা নিয়ে। ওদের জন্য
আলাদা আলাদা পেতলের গামলায় তালপাতার পাখা ভেজান থাকত। পাখার ওপড়ে দূব্বোর গাছা, বাঁশের
করুল, কচি সুপুরির ছড়া, ডাল সহ করমচা, পাকা খেজুরের ছড়া। আর একটা গোটা আম, কলা।
Wednesday, May 24, 2017
রম্য রচনা / ষেটের বাছারা / শ্যামশ্রী চাকী
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

-
ধর্ম আমায় ধারণ করেছে আগুন করেছি বর্ম ... দেখতে পাচ্ছ এই দাবানলে জ্বলছে অস্থি , চর্ম ? দেখতে পাচ্ছ উড়ছে ফিনিক্স , চাঁ...
-
শত চেষ্টা করে যখন একটা কাঠও জোগাড় করা গেল না , তখন নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হল । যে খড়ের আঁটি জ্বেলে কাঙালি মায়ের মুখে আগুন...
-
বিষাদের মেঘ ছেয়েছে আকাশে বৃষ্টি বুঝি আসন্ন— বাতাসের চোখ ছল ছল ভাসে প্রতীক্ষা কার জন্য? ওগো মেয়ে তুমি কার কথা ভাবো, সে কি ...
-
শুকনো বকুল চললি কোথায় ? গ্রহণলাগা দুপুরবেলা লাল মাটি পথ একলা চলা - রুদ্রপলাশ মোড়ের মাথায় ? কি বললি ? আজ বিকেলে মোরগ লড়াই ...
-
ওকি বৃষ্টির শব্দ ? নাকি পায়ের থেকে নূপুর খুলে হাতে নিয়ে তোর দৌড়ে আসার শব্দ ; যদি তাই হয় তবে এখন কেন ? এখন তো অনেক রাত , ব...
-
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রোজ খেলে মরে, একাকী দেয়ালে খেয়ালে বা অখেয়ালে... হেসে কুটে একাকার। মাথা নেড়ে নেড়ে অবাধ...
-
জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্ ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত , অভিমানে ...
-
বসন্তে যেমন ফুল ফোটে তেমন ফুল ঝরে। কুদরতের নিয়মে যত ফুল ফোটে ঠিক তত ফুলই ঝরে। আল্লা তালার হিসেব চুলচেরা। শুধু কি ঝরে ? ফুল কাঁদে , ফ...
-
হাইবারনেশানে যাই যখন তখন তার অবগাহনে ডুবে যেতে। ফিরে যাই সেই মাতোয়ারা দিনগুলোতে জীবনের জরদ্গভ প্রাচীর ডিঙিয়ে অদ্ভুত এক লুকোচুর...
প্রাচীন পুজো আচার এই ষষ্ঠী পুজো নিয়ে হালকা রসের এক সুন্দর আলেখ্য ।
ReplyDeleteসুন্দর একটি স্মৃতি চারন বলা যায়||কিন্তু রম্যরচনা বোধহয় ঠিক হলনা, তবে নিঃসন্দেহে সুখপাঠ্য রচনা
ReplyDelete