Wednesday, May 24, 2017

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন - গৌতম সেন... কারীগরী সহায়তা --নূপুর বড়ুয়া


সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন - গৌতম সেন... কারীগরী সহায়তা --নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় / গৌতম সেন

                                                     
 সম্পাদকীয়

বাংলা নতুন বছর তার জন্মের মাসাধিক সময় উত্তীর্ণ করল। বৈশাখ গেল, এবার জ্যৈষ্ঠের পালা। বৈশাখে গ্রীষ্ণের আবাহন, জ্যৈষ্ঠে যেন তার প্রখর যৌবন। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রুদ্র প্রতাপে। প্রকৃতি ও প্রাণী সমানভাবে পর্যুদস্ত। বাতাসে আগুনের হলকা, গাছের পাতারা থম মেরে আছে। আর আমরা দহনক্লান্ত হাহাকার ধ্বনিমুখর। সকলের মুখে একই বাক্য উচ্চারিত –“আর পারি না! আয় বৃষ্টি ঝেঁপে...”    অতএব অপেক্ষা নিরন্তর একটু আকাশভরা মেঘ আর ঝরঝর বরিষণ-এর পথ চেয়ে!         
এরই মাঝে ঠাকুর রবির জন্মদিনের ঠিক প্রাক্কালে, ৭ই মে চিলেকোঠা বসেছিল আড্ডায় – বৈশাখী আড্ডা, কেষ্টপুরে চিলেকোঠা সদস্য দেবাশিস সাহার বাড়িতে এক প্রাণবন্ত পরিবেশে। বেশ কয়েকজন সদস্য-সদস্যা সেদিন পৌছে গিয়েছিলেন চিলেকোঠার আহ্বানে, অন্তরের টানে। গৌতম করের বিদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতার টুকিটাকি বর্ণনার ঝিলিকে সেদিনের আলোচনা সভা ঋদ্ধ হয়ে উঠেছিল। জমে উঠেছিল ক্রমে ক্রমে কবিতা আবৃত্তি, গান, নাচ এমন আরও প্রতিভার প্রকাশে। চা-টা মানে সুস্বাদু জলখাবার ও চা – সে তো ছিলই এছাড়া।
চিলেকোঠার ইম্যাগাজিন এবারও নিয়ে এল নানা উৎকৃষ্টতার সম্ভার। গল্প, কবিতা রচনার এ সুন্দর প্রকাশ, লেখক কবিদের আন্তরিক অবদান বলেই মনে করে চিলেকোঠা ইম্যাগ। তাদের এমন স্বতঃষ্ফুর্ত যোগদান এই ইম্যাগ কে এগিয়ে যেতে শুধু সাহার্যই করে না, তাদের লেখা প্রকাশিত হয়ে এ প্রয়াস দিনে দিনে ক্রমান্বয়ে সম্বৃদ্ধতা লাভ করে চলেছে। তাদের এই আন্তরিক অবদান চিলেকোঠা ইম্যাগ প্রকাশের পথে এক অপরিহার্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে – এ কথা আজ অনস্বীকার্য।
চিলেকোঠা ইম্যাগের তরফে সকলকে ধন্যবাদ – ধন্যবাদ যেমন লেখক, লেখিকাদের, তেমনই ধন্যবাদ যারা এই প্রকাশ পড়ে দেখেন, মতামত জানান। কবি, গল্পকার বা প্রবন্ধকার, তাঁদের সাথে পাঠকদলের এই সমভিব্যাহার সর্বদাই একান্ত কাম্য। যা সাহিত্যকে আরও অগ্রসর করে নিয়ে যায় চিরকাল আরো উন্নতমানের শিখরে।

অবশেষে চিলেকোঠা ইম্যাগের তরফ থেকে সকলকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই। কামনা করি এ কঠোর দহনবেলা অচিরেই মিলিয়ে যাক। কবির ভাষায় ... “ওই-যে ঝড়ের মেঘের কোলে বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে...” মনে এমনই সম্ভাবনার আশা জাগিয়ে  আজ শেষ করি।

ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ - ৬ / ন ন্দি নী সে ন গু প্ত




কিছুদিন ধরে আমরা বারে বারে তাকে স্মরণ করছি। হ্যাঁ, বৈশাখ যে কবিকে মনে করবার সময়। আজ বাঙ্গালীর জীবনে কবিপক্ষ এক উৎসবের আকার নিয়েছে। কবির আবির্ভাব এই কঠিন নিদাঘবেলাতেই। অনুরাগীদের মৃদু অনুযোগও আছে সে নিয়ে, যে যদি কবি রম্য অঘ্রাণে জন্মাতেন, হয়ত বা বাঙ্গালী আরও জমকালো উৎসবে পালন করত তার জন্মদিন। কিন্তু বাংলায় বৈশাখের রুদ্র আবহাওয়াকে উপেক্ষা করেও বাঙ্গালী মহাউৎসাহে উদযাপন করে চলেছে কবির জন্মদিন। অবশ্য বৈশাখ যে শুধুই নিদাঘবেলার ক্রুদ্ধ আত্মা, তা নয়। সে মাঝে মাঝে দেখায় তার বিচিত্র রূপ, কালবৈশাখী ঝড়ের মুহূর্তে। যখন ঝড় আসে, তখনো সেই ঝড়ের রূপ বর্ণনা করার জন্য তার ভাষা ধার করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। তিনি বলে গিয়েছেন ‘তাপস-নিঃশ্বাসবায়ে আসে ঝড়। সে যেন এক সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। ঝড় উড়িয়ে দেবে যা অপ্রয়োজনীয়, প্রথম এই বোধ জেগেছিল তার লেখা পড়েই। যেন সম্পূর্ণ ধ্বংস নয়, ঝড় এসে স্থান করে দেয় নতুনের আগমনের জন্য। আমাদের নাগরিক জীবনে সেভাবে খোলা আকাশের ঝড়ের সেই সন্ন্যাসীর আবির্ভাবের রূপ দেখবার অবকাশ কতটুকু? কিন্তু তার লেখায় যেন আমরা বারে বারে খুঁজে পাই সেই খোলা আকাশ। ‘শালের বনে থেকে থেকে, ঝড় দোলা দেয় হেঁকেহেঁকে... প্রথমে শুনে মনে হয়েছিল ঝড় এভাবে হেঁকে যেতে পারে নাকি? কিন্তু খোলাপ্রান্তরে এমনটিই হয়। মনে হয় যেন কোনও পুরোহিত মন্দ্রস্বরে যজ্ঞের মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছেন। কবি যেন ঝড়ের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন যজ্ঞের সেই হোতাকে। ঝড় শুধুই এক প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, সে এক পরিবর্তনের সূচক । কবি ঝড়কে কোথাও করেছেন নিজের সাথী, বন্ধু। কখনও বা যে পথে তিনি যাচ্ছিলেন, ঝড় এসে ভুলিয়ে দিয়ে তাকে চালিত করে অন্যপথে। কিন্তু প্রবল ঝড়ের গভীর রাত শেষ হয়ে আলোর প্রভাতের ইঙ্গিত থাকে তার সব লেখাতেই।
হ্যাঁ, এই অলীক আলোকরেখার আশাবাদী ইঙ্গিত তাকে করে তুলেছে কালজয়ী কবি। কবি সবসময় স্বপ্ন দেখেন। তাই ঝড়ের ধ্বংসও তার লেখায় নিয়ে আসে সকালের আলোর খবর।
ঝড়ের শেষে তিনি অপেক্ষায় থাকেন সেই চিরপ্রেমিকের...
সকালবেলায় চেয়ে দেখি, দাঁড়িয়ে আছ তুমি একী!
ঘর ভরা মোর শূন্যতারই বুকের ‘পরে।

ঝড়ের শেষে বৃষ্টির ধারা যখন ধৌত করে দিয়েছে প্রকৃতিকে, তখন তার শ্যামল উত্তরীয় নির্মল করে তিনি সাজিয়ে তুলবেন সেই প্রাণবল্লভকে।  কবির স্বপ্নে ঝড় বয়ে নিয়ে আসে অজানার বার্তা,‘অজানাতে করবি গাহন, ঝড় সে পথের হবে বাহন। ... এই কথা সম্ভবত উঠে এসেছিল শুধু স্বপ্ন নয়, তার অনুভবের অন্তস্থল থেকে। ‘জাপান যাত্রী প্রবন্ধে দেখতে পাই সমুদ্রযাত্রাপথে কিরকম বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল কবি যে জাহাজে ভ্রমণ করছিলেন সেই তরীটি। সেই অভিজ্ঞতা তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল,... ‘মানুষের মধ্যে শরীর- মন- প্রাণের চেয়েও বড়ো একটা সত্তা আছে। ঝড়ের আকাশের উপরেও যেমন শান্ত আকাশ, তুফানের সমুদ্রের নীচে যেমন শান্ত সমুদ্র, সেই আকাশ সেই সমুদ্রই যেমন বড়ো, মানুষের অন্তরের গভীরে এবং সমুচ্চে সেইরকম একটি বিরাট শান্ত পুরুষ আছে বিপদ এবং দুঃখের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে দেখলে তাকে পাওয়া যায় দুঃখ তার পায়ের তলায়, মৃত্যু তাকে স্পর্শ করে না।' পেয়েছিলেন ঝড়ের রাতের শেষে সেই অমৃতভাণ্ডের সন্ধান, সেই অমৃতের অনুভবেই ব্যক্তিগত দুঃখকষ্ট ঝড়- ঝাপটা সবকিছুকে অতিক্রম করেছিলেন তিনি। তার সৃষ্টির মাঝে রেখে গিয়েছেন সে অমৃতের পরশ, তাই ঝড়ের শেষের শান্তিদূত হয়েই আজো তার ভাষা প্রলেপ দেয় সারা পৃথিবীর অজস্র মানুষের মনে।

কবিতা / বিশ্বাসের ঢেউ / অনুপম দাশশর্মা .





নদীর ধার দিয়ে যেতে যেতে চলকে চলকে
ওঠে বিশ্বাসের ঢেউ
আসেপাশে ছড়ান ছিটান মহীরুহগুলো
যেন তখন শুষে নিচ্ছে মূল্যবোধের প্রশ্বাস
#
এইসব পথ দিয়ে একসময় হেঁটে গেছে
পবিত্র কত আত্মা
আমরা জেনেছি ছবি হয়েও বেঁচে থাকে
অযুত পদচিহ্ন
#
এমনতরো ফিকে হয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো
যখনি দমকা হাওয়ার সাথে হাজির করে
হলদে দিনের সব ছবি...
অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে সুসভ্য(!) প্রগতির
দৃশ্যমান মুখগুলি
#
অথচ, একই সাথে সংযমের পাঠ দিয়ে যায়
কিছু অপসৃয়মান সত্যসুন্দর মন
ক্ষণস্থায়ী হলেও সে-ই পরম স্নেহবৎসল

৩ আনার অপেরা / পিনাকী দত্ত গুপ্ত




মানুষগুলি অনেকদিন অপেরা দেখেনি
শেষপর্যন্ত অপেরা আসছে রবিবার জরাজীর্ণ রাজবাড়ীর জলসাঘরে

আমগাছজামগাছকাঠালগাছ পেড়িয়ে ঢেঁকি-রিকশায় চেপে টুপি পরা লোকটা চোঙা ফুঁকছে রাতদিন – "আসেন আসেনদেখে যান আনার অপেরা মাত্র আনা"


আজ রবিবার কেউ জানেনা কখন শুরু হবে অপেরার গান সূর্য অস্ত যেতেই পশ্চিমের অন্ধকার ঠেলে বেজে উঠল বিচিত্র কনসার্ট 

বেশ কিছু লোক সঙ সেজে এগিয়ে চলেছে ভাঙা রাজবাড়ীটার দিকে সবার পিঠে লেখা আছে  - “ আনা অপেরা' সঙ কারুর গলায় হারমোনিয়ামকারুর হাতে বেহালাবাঁশীতাসা কিংবা ডুগডুগি 

সঙেদের পিছু পিছু সারিবদ্ধ জনতাদেওয়ালের তৈলচিত্রে জমে থাকা ঝুল,  ভাঙা ছাদ থেকে ঘরে নেমে আসা চাঁদ... আর পুতুল নাচের মত দুলে চলা সঙ আর মানুষের ছায়া


কারুর মুখেই কোনো কথা নেই সবাই চুপটি করে শুনে চলে বিচিত্র কনসার্ট অচেনা সুরের সাথে ওরা যেন বোকা বোবা সঙ হয়ে গেছে

মোমবাতি হাতে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে অপরূপা নগ্ন সুন্দরী সবাই এদিক ওদিক চায় কেউ কি তাকিয়ে আছে তার দিকেতারপর নিশ্চিন্তে যৌবনে মিশে যায়

সুন্দরী চলে গেলে কক্ষে প্রবেশ করে সুঠাম উলঙ্গ এক পুরুষ ওকে দেখে জনতাও একে একে খুলে ফেলে পরিধেয় যত অপেরার বাজনা বেজে চলে


সঙ সাজা শিল্পীরা এবার বেরিয়ে এসেছে উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তরে ওদের পেছনে সারি বেঁধে উলঙ্গ নারী আর পুরুষের দল


ভাবছেনা কেউকতটা সময় ধরে কতদূর.. হেটে যেতে হবে  " আনার অপেরা" সাথে... এইভাবে কতদূরকতটা সময়!

কবিতা / অচিন খোঁজ / গৌতম সেন



ঘিঞ্জি মনের ভিড়, হাঁপানি দাপট
ক্লিষ্ট শরীরের মিছিলভরা পথ-ঘাট
এরই মাঝে একটা লোক আছে মহানন্দে -
পেয়েছি সে আশ্চর্য খবর- সে থাকে
খুশির মহানন্দা পারে জীবন কিনারে,
পড়ে নেই অযথা মাথা গুঁজে
অসুস্থ এই পাগল-আগারে।

এক দেয়াল বিহীন রাজমহলের ছাদ,
যেন তেপান্তরের মাঠ -
কত খাল-বিল, সবুজ ঘাসের স্বাদ
এই রাখাল বুড়োর ঘাট।
সে ইচ্ছা করলে সূর্য ওঠায়,
সূর্যমুখী ফোটায়, ফোটায় শিউলি
সে চাইলে আবার
অস্তরাগের নেশায় সূর্য নামে পাটে।

ছিমছাম রাজপাট তার বিনা কোলাহলের,
বিকিকিনিহীন নির্জন হাটে
তার ঠিকানা। অভাবহীন স্বভাব এমন
যায় না দেখা - বাকি সময় তন্ময় খোঁজে

আজও মেতে আছি নিয়ে আমার সমস্ত এখন।

অনুগল্প / মিঠে কড়া / উৎসব দত্ত



রাত তখন দু'টো হবে। নটবর'দা কে পাশে না দেখে শিল্পা বউদি এপাশ ওপাশ করছেন। শীতকাল। একই লেপের মধ্যে দুজনে শুয়েছিলেন। দুজন দুদিকে পাশ ফিরলে লেপ থেকে হাত পা বেরিয়ে যায়। নটবর'দা কে না দেখে শিল্পী বউদি লেপটাকে নিজের দিকে টেনে নিলেন। 

বেশ কদিন ধরেই মাঝরাতে নটবর'দা উঠে যাচ্ছেন। হয়তো বাথরুমে । শিল্পা'দি জানেননা। আজ হঠাৎ কি হল নটবর'দা কে না দেখে ক্যামন সন্দেহ হল। শোবার সময় তো দিব্বি ছিল। হাসি হাসি মুখ করে বউদির গাল টিপে আদর করে বলল "কাল ভোরে ডেকে দিও। উঠতে দেরি হলে অফিস কামাই হয়ে যাবে।" 

প্রায় আধ ঘণ্টা কেটে যেতে শিল্পা বউদি উঠে বসলেন বেশ বিরক্তের সাথে। এই শীতের মাঝরাতে কার বা উঠতে ভাল্লাগে। কিন্তু একটু চিন্তাও হচ্ছে। ডাইবেটিস,প্রেসার,সুগার শরীরে রোগের পাহাড় নটবর'দার। 

একটা চাদর জড়িয়ে বউদি বিছানা থেকে নামলেন। ঘরের আলো জ্বালাতে গিয়ে দেখলেন বাথরুমের আলো নেভানো। শিল্পাদি টর্চ বার করলেন। বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে দুবার ডাকলেন নটবরদার নাম ধরে। কোন সাড়া নেই। বেশ ভয় পেয়ে গেলেন বউদি। 

খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। অনেক ভেবে শেষমেষ একহাতে চোখ ঢেকে বাথরুমের দরজা ঠেলে ঢুকে শিল্পা বউদি ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করতে লাগলেন "দেখো মাঝরাতে নাটক ভাল্লাগছেনা। সাড়া দাওনা ক্যানো?" এতেও কোন উত্তর না পেয়ে শিল্পা বউদি চোখ খুলে দেখেন বাথরুম ফাঁকা। কোমোডে কেউ বসে নেই। 


মুহূর্তের মধ্যে বউদির ঘুমের ঘোর কেটে গেলো। টর্চ হাতে প্রায় পড়িমরি করে নিচের ঘরে এসে বউদি অবাক। নটবর'দা দিব্বি বসে আছেন ডাইনিং টেবিলে। বউদি চোখ বড় বড় করে নটবরদা'র দিকে তাকিয়ে। হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ল্যাংচা তুলে বিষম খেতে খেতে নটবর'দা বললেন  "ওরম ভাবে তাকিয়োনা ভয় করে। আর দুটো প্লিজ।"

রম্য রচনা / ষেটের বাছারা / শ্যামশ্রী চাকী



'ষষ্ঠীঠাকরুনের মুখে জলবিন্দু পড়ল না, ঠাকরুন কাঠামোর ভিতর ছটফট করতে লাগলেন, ঠাকরুণের কালো বেড়াল মিউ-মিউ করে কাঁদতে লাগল। বানর তখন মনে-মনে ফন্দি এঁটে পালকির দরজা খুলে রেখে আড়ালে গেল। ষষ্ঠীঠাকরুণ ভাবলেন--- আঃ আপদ গেল! কাঠফাটা রোদে কাঠামো থেকে বার হয়ে নৈবিদ্যের ছোলাটা কলাটা সন্ধান করতে লাগলেন'। ছোটবেলায় এপর্যন্ত এসে হোঁচট খেতাম। জাদুকরের দেশের মায়া বানর বড়ো ভালবাসে তার দুখিনী মা'কে। চোখের জল মুছিয়ে দিতে চায়।কি দারুণ বুদ্ধি খাটিয়ে মা ষষ্ঠীর কোল থেকে সোনার চাঁদ ছেলেকে পালকি চড়ে বাদ্যি বাজিয়ে দিগ্ নগরে ছেড়ে গেল!! আমিও মা কে খুব ভালবাসি ষষ্ঠীর দিন বাবা যখন মামাবাড়ি যেতে চাইতনা,মায়ের দুঃখী দুঃখী মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও মায়ের বাঁদর সন্তান হয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর উপায় বের করার কথা ভাবতাম। বাবা কিছু জিনিষ কট্টর ভাবে মেনে চলত, ষষ্ঠী, পূজো, শ্রাদ্ধতে অংশগ্রহণ এড়িয়ে চলত। কিন্তু কাউকে বাধা দিত না। প্রণাম নিতনা কারুর। তাই বলে আমাদের বাড়িতে পূজা পার্বণ হত না তা নয় কিন্তু বাবা অংশগ্রহণ করতনা। ষষ্ঠী বলতে আমার আজকাল অবন ঠাকুর আর একটা আলোছায়া দিন মনে ভাসে। আগের দিন সাজো সাজো রব। পিসিমনি আসবে চা-বাগান থেকে, আমের ঝুড়ি এসেছে,মর্তমান কাঁঠালি দু'রকম কলা, কালোজাম, গাছ থেকে কাঁঠাল পাড়ানো হয়েছে। সাদা ফটফটে জামরুল। পাকা ফুটির গন্ধে ম ম করছে সারা বাড়ি। রান্নাঘরে বিকেলের শেষ জ্বালে পায়েস হচ্ছে। মুঠো ভরা ভেজা কিসমিস পড়বে পড়বে করছে সেই পায়েসে।ঠাকুমার সাথে ছয় পাতার দূব্বো আর বাঁশের শিষ বাছাই করছি আমরা। দাদার সাথে পঞ্চবটের ডাল পাড়তে যাচ্ছি। এদিকে অন্য ঘরে মায়ের মুখ থমথমে,দিদার শত অনুরোধ সত্বেও বরফ গলত না, অফিস বাড়ি পার্টি অফিস এই ঘেরাটোপে নিজেকে আটকে রাখত বাবা। বাবার জীবনের মন্ত্র বা পাঁজিপুঁথি ছিল জন রিডের দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, নিকোলাই অস্ত্রভস্তির ঈস্পাত, ম্যাক্সিম গোর্কির মা, এরিক মারিয়া রেমার্ক এর অল কোয়েস্ট অফ দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট ব্রেটল্ট বেখট থ্রি পেনি অপেরা নাটক, যার বাংলা নাট্যরূপ নান্দীকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিন পয়সার পালা। কিছু বই হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই বয়েসেই। কিছু বুঝতাম কিছু বুঝতাম না। রাশিয়ার নিউজ পেপার ইসপ্রা'র গল্প শোনাত বাবা। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি দুই সংস্কারে আমার ছোটবেলাটা প্রায় স্যান্ডুইচ হয়ে গিয়েছিল। বাবার কিন্তু বেদ পূরাণে অসম্ভব জ্ঞান ছিল। কিন্তু সবকিছু যুক্তিদিয়ে বিচার করতেন। এবার ফিরে আসি মূল বিষয়ে। ভোরবেলা পূজোর ফুল যোগাড় করতাম আমরা। ঝটপট স্নান সেরে নিতাম। মা পিসি কাকিমাদের স্নান করতে হত নতুন পাখা নিয়ে। ওদের জন্য আলাদা আলাদা পেতলের গামলায় তালপাতার পাখা ভেজান থাকত। পাখার ওপড়ে দূব্বোর গাছা, বাঁশের করুল, কচি সুপুরির ছড়া, ডাল সহ করমচা, পাকা খেজুরের ছড়া। আর একটা গোটা আম, কলা।
সেদিন তেল সাবান ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। ঠাকুর ঘরের অন্য ব্যাপার গুলো সামলাত ঠাকুমা। মাটির তালে গাঁথা হত বট, অশত্থ, পাকুড়, আম, কাঁঠালের ডাল। মঙ্গল চিহ্ন আঁকা হত সিঁদুর দিয়ে। সার দিয়ে সাজানো চালের পিটুলি আর কলা, ঘী মেখে বানানো ছ'টা পুতুল। ঘটে সাজান আমের পল্লব, কলা, সুপুরি, হরতকি। কাঁচা হলুদ বেটে রাঙানো সুতোগাছা ছটা দুব্বো দিয়ে একটা গিঁঠ, বাকি পাঁচটা গিঁঠ দুব্বো ছাড়া। প্রত্যেকের জন্য এক গাছা করে সুতো বরাদ্দ। গিঁঠ গুলো বাঁধা হত ব্রতকথা পড়ার সময়। আমরা ঠাকুর ঘরের এক কোনে গুটিসুটি মেরে বসে অপেক্ষা করতাম ব্রতকথা শোনার জন্য। জামাইষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠীর গল্পটা এমন ছিল,এক বুড়ির আর তার ছয় ছেলের বৌ মিলে ষষ্ঠী পুজো করত। ছোট বৌএর স্বভাবটা অনেকটা আমার মত, লোভ সামলাতে না পেরে চুরি করে প্রসাদ খেয়ে কালো বেড়ালের মুখে দই মাখিয়ে দেয়। এবারে ষষ্ঠী ঠাকরুণের বাহন রেগে কাঁই গিয়ে নালিশ জানায় মা ষষ্ঠীকে। ছোট-বৌ এর পরপর জন্মানো ছয় সন্তান বেড়াল চুরি করে মা ষষ্টীর কাছে লুকিয়ে রাখে পড়ে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে বেড়ালের সাথে একটা প্যাচ আপ করে নেয় ছোট-বৌ। আর ছানা গুলো ফেরত পায়। আমাদের বাড়িতে একটা কালো বেড়াল ছিল, মাঝে মাঝেই জুলজুল করে তাকাত। একটু সমীহ করেই চলতাম আমরা,বেড়াল বড্ডো নালশে। এরপরের অধ্যায়ে সেই গামলার জলে ভেজানো তালপাখার বাতাস দেওয়া হত আমাদের। 'ষাট ষাট ষষ্ঠীর ষাট... 'কথাটা বার কয়েক উচ্চারণ করতেন ঠাকুমারা, সাথে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হত আম কলা আর একটা নতুন জামা। দুব্বো বাঁধা হলুদ সুতো হাতে বেঁধে দিয়ে জলখাবারের আয়োজন শুরু হত। একটা বারকোশে কাটা হত ফল। চালুন দিয়ে কাঁঠালের রস চেলে ফল, দই, খই, দিয়ে মাখা হত। মা, কাকিমা ঠাকুমা পিসিমনি সারাদিন ধরে তাই খেত। বাদবাকি দের জন্য কাটা ফল ফুলকো সাদা লুচি আর নারকোল কুচি দেওয়া ছোলার ডাল পায়েস। দুপুরে টানা বারান্দায় ঠাকুমার হাতে বানানো শাড়ির পাড়ের সুতো দিয়ে ফুলকাটা আসনে বসে ঝকঝকে কাঁসার থালায় কালোনুনিয়া চালের ভাত, আলাদা আলাদা বাটিতে চিতল/তেল কই, পাকা রূই /ইলিশ পাঁঠার মাংস সাথে ছানার ডালনা, পটলের দোলমা, আমের চাটনি খেতাম। মাঝে মাঝে মাংসের আরো দুপিস, বা একটা পাকা রুই এর কালিয়া পাতে নেওয়ার জন্য পিসেমশায় দের সাধাসাধি করত মা কাকিমা পিসিমনিরা।পাকা রুই বলতে তখন বোঝাত জালে ধরা কিলো দশেকের টাটকা রুই, খাওয়ার পরে তেল হাতে আঠার মত লেগে থাকত। আজকাল বাজারে সেই মাছ ডোডোপাখির মতই বিলুপ্ত। বিকেলে মায়ের হাত ধরে মামাবাড়ি যেতাম, সারাটা রাস্তা মা গম্ভীর থাকত। সেখানে বায়নার আম কলা, লুচি হালুয়া আর আলুর দম খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। তখনো বাবা পার্টি অফিস থেকে ফেরেনি। খুব রাগ হত বাবার ওপড়ে। দিন চলে যায় বদলায় মূল্যবোধ, দিদা বাবা কেউ আজ আর ইহলোকে নেই। তবুও ষষ্ঠী বা বিশেষ দিন গুলোতে স্মৃতিপথ কায়াহীন ছায়াগুলো ফিরে ফিরে আসে.... 'দিগনগরে যখন দিন,ঘুমের দেশে তখন রাত। ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি সারারাত দিগ্ নগরে ষষ্টীরদাস ষেঠের -বাছা ছেলেদের চোখে ঘুম দিয়ে, সকালবেলা ঘুমের দেশে রাজার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে, অনেক বেলায় একটু চোখ বোজেন'।



অনু গল্প / ফারাক / সুজয় চক্রবর্তী




ভগীরথদার কাছে আমরা প্রাইভেট পড়তাম। আমি, শিবু, নিখিল। বাংলা। বাংলায় ওর অগাধ জ্ঞান। সে প্রায় অনেকদিন হল।
এখন বিএড পড়ছি। দরকারে ভগীরথদার সাহায্য নিই। মাঝেমধ্যেই। সামনের বুধবার আমার সেমিনার লেকচার আছে। বহু চর্চিত একটা বিষয়কেই বেছে নিয়েছি শেষ পর্যন্ত। শিশুশ্রম। বইপত্র ঘেঁটে কিছু তথ্য যোগাড় করেছি। বাকিটা ভগীরথদা।
আজ গিয়েছিলাম ওর বাড়ি। একথা সেকথার পর ভগীরথদা বললো, শোন উপল, শিশুশ্রম এক সামাজিক অভিশাপ, বুঝলি? এর নির্বাসনই একমাত্র এর বিলুপ্তি ঘটাতে পারে।...
ভগীরথদার কথার মাঝখানে কোথা থেকে ঘরে ঢুকে পড়েছে বিল্টু। ওর একমাত্র ছেলে। ও ঢুকে পড়া মানেই সব ওলটপালট। আমরা জানি। তাই সবাই সতর্ক। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে ওকে কোলে তুলে নিল একটা মেয়ে। বয়স বারোতেরো। সঙ্গে করে চলেও গেল।
----- চায়না, বিল্টুকে দিদিমনির কাছে রেখে আমাকে জলের বোতলটা দিয়ে যাস তো..... ও, হ্যাঁ, তারপর যা বলছিলাম, শিশুশ্রম একটা....
ভাগীরথদার কথাগুলো একান দিয়ে ঢুকে ওকান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিছুতেই মগজে ঢুকছিল না।


ভালবাসা _দিবসের_লেখা / দূর্বা মিত্র


ভালবাসা _দিবসের_লেখা

"প্রিয়বরেষু ,"

(আহা ! মনটা বাহা বাহা করে উঠলো গো - একখানা চিঠি লেখার বাহানা পেয়ে ! বারো ক্লাস অব্দি যত চিঠি পরীক্ষার খাতায় লিখেছি - কোনো প্রশ্নপত্রে  প্রেমপত্র লিখতে বলেনি গো ! আজ  লিখবোই !)

"তুমি কেমন আছো? আমি ভালো আছি |"

{সেরেছে - প্রেমপত্র ব্যাপারটা লেখে কেমন করে ? কোনো নোটবুক কলেজ স্ট্রিট এ পাওয়া যায় নাকি ?}

"কতদিন তোমাকে দেখিনা | খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছো তো ? আবার যেন ম্যালেরিয়া না হয় ! "

( আচ্ছা - বিয়ের আগের  আড়াই বছর সপ্তাহে তিনটে করে চিঠি লিখতে কি করে শুনি? এখন দিনে তিনটে ফোন করো কি না সন্দেহ ! তিন মিনিট পার হয় কি না আরো সন্দেহ ! )

"আচ্ছা, বিয়ের আগে পরে সবাই যে জিজ্ঞেস করতো - আমার মতো কালো মোটা কুচ্ছিত মাথায় চুল নেই এক নারী কে - তোমার মতো ইউরোপিয়ান চেহারার মানুষ কেন বিয়ে করতে গেলে - তুমি এক চিলতে হেসে এড়িয়ে যেতে | আমি জিজ্ঞেস করলেই বলতে - দু বছর পর বলবো | দু বছর পেরোলে বললে - পাঁচ বছর পর বলবো | তারপর ভুলেই গেছি জিজ্ঞেস করতে | আজ তো প্রায়পঁচিশ এর দরজা এসে গেলো | এখন বলবে কি?"

(সত্যি কথা -ভালোবাসার সংজ্ঞা আমি আজও  বুঝিনি | ভালোবাসা দিবস - কেমন বায়বীয় আর ব্যবসায়িক শব্দ আমার অভিধান এ |

দুর্ঘটনায় ডান পা টা হারালাম | যতদিন হাসপাতালে ছিলাম, পাশের বিছানায় রইলে, আমার না খাওয়া খাবার খেলে - একদিন জিজ্ঞেস করলাম - ব্যাগ টা এতো বড়ো লাগছে - কি আছে? তুমিনিজেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ব্যাগটা খুললে | হে ভগবান - দুর্ঘটনার সময়ে আমার পায়ে যে সাদা এডিডাস এর জুতোটা ছিল - রক্তমাখা তোবড়ানো গাড়ির তলায় থ্যাঁতলানো  সেইজুতোজোড়া - ব্যাগে নিয়ে ৪দিন ধরে ঘুরছো !

ভালোবাসা দিবসের জ্বলন্ত সংজ্ঞা !
আমার বাবা চলে যাবার সময়ে হাসপাতালে আমি গেলে ভিসিটর পাস চাইতো - তোমাকে ছেলে বলে চিনতো | নাভি বিসর্জন ও তুমি  দিলে - আরেক ভালোবাসা দিবস |)

" বেশ তবে ওই কথাই রইলো - এবারের ভালোবাসা দিবসে তুমি ঐ লাল গোলাপ, টেডি বেয়ার, চকলেট, গ্রিটিংস কার্ড -  ইত্যাদি প্রভৃতি কিনে দিও | আমি মুখপুস্তিকায় ছবি দেব | "

( উদাত্ত উত্তাল হাসি - দু হাতে আমার চুলের মুঠি ধরে বললে - পাগলী একটা !
৫১ বছরে পা দিয়েও ভালেন্তি পুজো - মানে 'ভালোবাসা-দিবস' - আমার না পাওয়াই রয়ে গেলো গো!!)




কবিতা / জীবনবোধ/ প্রজ্ঞা পারমিতা ভাওয়াল





তোমায় নিয়ে কি করি ভাবতে ভাবতে
চড়া পেড়িয়ে পা ভিজিয়ে ফেলি
তোমায় কোথায় দেই  ঠাঁই ভাবতে ভাবতে
সাগরের অতলে ডুবতে থাকি ;
তোমার ডাকের অসীমতাকে
অগ্রাহ্য করতে করতেই বার বার সারা দিয়ে ফেলি।
ঘোর সঙ্কটে , চরম সঙ্কোচে
না বলতে বলতেই হ্যাঁ বলে ফেলি।
এক নির্মম অশান্তিতে সংঘর্ষ  চলে অহরহ , 
যুদ্ধ  অনবরত।
পুরুষালি ধৃষ্টতা অজানা নয়।
সমাজের ভয়ভীতিতে উদাসীন আমি 
জড়িয়ে ধরিনা অযথা তবুও ,
ভাসিনা মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ভেলায়।
তত্ত্বে নয় সত্ত্বে থাকি 
অন্তরপল্লীতে ঘর বাঁধি  ;
মেঘের আঁচলে ভাসাই সোহাগ,
মরমে মর্মে অনুক্ষণ জড়িয়ে রাখি জীবনবোধ। 


গল্প / সুইসাইড / শাশ্বতী চৌধুরী



পাশের বাড়ির শেফালিদি সুইসাইড করেছে। বাড়ির বড়রা সবাই কানাঘুষোয় ব্যস্ত। সুইসাইড কি বস্তু ! এর মানে কি বুঝেই পায় না ৪ বছরের তুলি।শেফালিদিদি তো সবসময় কত হাসতো, ওকে কত গল্প বলতো ! নীতা পিসিদের বাড়ি গেলেই শেফালিদিদির ঘরে আগে এক ছুট্টে চলে যেত তুলি।শেফালিদিদি তুলিকে দেখলেই কি সুন্দর এক গাল হাসি দিত। শেফালিদির মধ্যে কেমন মা-মা গন্ধ পায় তুলি। মাকে তো ও দেখেইনি ! কি করে জানবে,মা কেমন হয় ! তবুও শেফালিদিদিকে দেখলেই মনে হয় মা এমনিই হয় হয়তো।কি মিষ্টি মা মা গন্ধ, মা মা হাসি। গায়ের সাথে একদম সেঁটে থাকতে ইচ্ছা করে তুলির। সেই শেফালিদি নাকি সুইসাইড করেছে। বাড়ির সবার হাবভাব, কান্ডকারখানা দেখে তো তুলির খালি মনে হচ্ছে, সুইসাইড খুব একটা ভালো জিনিষ নয়।কাকে জিজ্ঞাসা করে এখন? কেউ তো উত্তর দেয় না। বিন্তিমাসীকে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে ধমক খেয়েছে তুলি , “যাও, নিজের ঘরে যাও তুলি।বড়দের মাঝে থেকো না একদম।”কি করে এখন তুলি ! বড়মার কাছে গেলে হয় না ! বড়মা তো একটা ঘরেই আটকে থাকে সারাদিন।  বুড়ো হয়ে গেছে, ভালো করে চোখে দেখতে পায় না এখন, সারাদিন ওই কোণের ঘরেই আটকা পড়ে থাকে। তুলি ছুটে যায় বড়মার ঘরে। ঘরটায় কি আলো, কি আলো ! বুড়ো মানুষ চোখে কমজোর বলেই তো দাদু বড়মাকে এই ঘরটা দিয়েছে।  একদিন তো বলছিল কাকা। ওই যেদিন কাকার বিয়ের দিন ঠিক হলো, দাদুর ঘর থেকে বেশ উঁচু গলার আওয়াজ পাচ্ছিল তুলি। কাকার গলা পায়নি, কিন্তু যে দাদুর গলা জোরে কখনো শোনেনি তুলি, সেই দাদু কত্ত জোরে জোরে বলছিল কথা। সব শুনতে পেয়েছিল তুলি। মা বেঁচে থাকতে ওই ঘরের কথা কেউ বলবে না, এ কথা আমি আগেও বলেছি, আজ শেষবারের মত বললাম, আর যেন আমাকে বলতে না হয় ছোটখোকা!আর এই কথা যেন মায়ের কানে কোনভাবে না যায়। একজন প্রায় অন্ধ মানুষের জন্য ওই আলো বাতাসওয়ালা ঘরটা যে কত জরুরি, সেটা এত লেখাপড়া শিখেও কি বুঝতে অসুবিধা হয় তোমাদের? যাও আর বিরক্ত কোরোনা আমায়।তুলি তাই বড়মাকে কিচ্ছুটি বলেনি। দাদু বারণ করে দিয়েছে ।আর বড়দের কথা শুনতে হয়, শেফালিদিদি শিখিয়েছে তো তুলিকে। 
বম্মা, তুমি কি ঘুমোলে গো?” চোখ বন্ধ করে শুয়ে বড়মা। আসতে আসত গায়ে হাত বোলায় তুলি। না গো আমার তুলি রানী, আমার পিয়া সোনা , তুমি ডাকলে কি আর ঘুমাতে পারি?”চোখ বন্ধ করে ছিলে তো ?”কি করি পিয়া সোনা, অন্ধ বুড়ির যে কাজ কর্ম কিছু নাই গো। শুয়ে বসেই দিন কাটে। চোখ খুলেই রাখি আর বন্ধই থাক, কি বা এসে যায় দিদিভাই !”অমন করে বোলো না গো বম্মা, কেমন কষ্ট কষ্ট হয়।ওরে বাবা ! দিদিভাই দেখি কষ্ট বুঝতে শিখে গেছে, মুখ খানা এমন শুকনো কেন পিয়া সোনা?”তবে যে বলো, তুমি দেখতে পাও না?”একটু একটু পাই গো দিদিভাই। তোমায় দেখতে কি আর এই পোড়া চোখ লাগে গো ! মনের চোখ দিয়েই দেখতে পাই।”মনের চোখ কি বম্মা?”সে এক সুন্দর চোখ গো, যা কখনো খারাপ হয় না।  মন যাকে বড় মন-কেমন- করা ভালবাসে, তাকে মন দিয়ে, মনের চোখ দিয়েই দেখতে পাওয়া যায় গো সোনামনি। তা এবার বলো তো, কি তোমার কষ্ট? কেন তোমার মন খারাপ?”
সুইসাইড কি গো?”
অশীতিপর বৃদ্ধা মৃন্ময়ী কিঞ্চিত কেঁপে উঠলেন।  খবরটি তাহলে এই ছোট্ট ফুলের মত মেয়েটাকেও স্পর্শ করেছে। কি জবাব দেবেন এখন তার পিয়া সোনাকে? কিন্তু সত্য তো চাপা থাকে না, থাকবেও না। এখন না হলেও পরে তো তুলি জানতেই পারবে, তাহলে এখনই নয় কেন?
সুইসাইড মানে আত্মহত্যা দিদিভাই।  তোর শেফালিদিদিভাই আর নেই রে পিয়া, আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরকালের মত চলে গেছে।
কোথায় গেলো ? আমায় তো বললো না ? ওই সেবার শেফালিদিদি ওর মামাবাড়ি গেলো না ! ওই যে গো কোন একটা দুরে গ্রামে, আমায় তো বলে গেছিলো। বলেছিলো ক’দিন পর আসবে, আমি যেন মন খারাপ না করি, যেন লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকি, সবার কথা শুনি আর মন দিয়ে লেখাপড়া করি।  আমি তো সব করেছিলাম, যেমন যেমন বলেছিল শেফালিদিদি। তবে যে এইবার না বলে চলে গেল ? আর তুমি কি সব বলছ ? চিরকালের মত মানে কি?”
ও যে আর ফিরবে না দিদিভাই। অনেক দুরে চলে গেছে, আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কত দুরে ? মার কাছে ?”ছোট্ট মন অনেক না বোঝা শব্দের বেড়াজাল পেরিয়ে আসল মানেটা শেষ মেষ বুঝেই ফেলে।  তবুও ধন্দ থেকে যায় হয়তো। ও বম্মা, বলো না ! মার কাছে চলে গেলো?”
হ্যাঁ দিদিভাই।  তোমার মায়ের কাছে।
আজ তিনদিন হয়ে গেল। তুলি নিজের বাড়ি থেকে বেরোয়নি। স্কুলেও যায়নি।নিজের ঘরে রং পেন্সিল নিয়েই কিছু হাবিজাবি সময় কাটানো, মাঝে মাঝে মনে জাগা অনেক প্রশ্ন নিয়ে বড়মার ঘরে উঁকি দেওয়া, এই ভাবেই কেটেছে এই দিন তিনেক। মৃন্ময়ী দেবী বুঝেছেন, ছোটো মনে অনেক ঝড়, তার কুল পেতেই বারবার ছুটে আসে তুলি। তিনিও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তুলির মনের হদিস পেতে, মনকে শান্ত করতে | কিন্তু তার ক্ষমতা যে বড়ই সীমিত। 
বম্মা, আমি শুনেছি।
কি শুনেছ দিদিভাই ?”
শেফালিদিদি গলায় দড়ি দিয়েছে।
কে বললো এসব ?”
বিন্তিমাসী বলছিল বাসনদিদাকে।
মৃন্ময়ী জানেন, এইটি এমন একটি বিষয় যে প্রত্যেকের কৌতুহল সীমাছাড়া।কাজের লোকেদের মধ্যে এই নিয়ে জোরদার আলোচনা চলছে। যার ফলে এই ছোট্ট মা মরা মেয়েটার মনের ঝড় উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া ওনার আর কিছুই করার নেই। 
বম্মা ...”,বলো দিদিভাই।“
কাকা কেন শেফালিদিদিকে বিয়ে করলো না গো ?”
হায় ভগবান এই খবরও শিশুর কানে তুলে দিয়েছে পরিস্থিতি ! কি বলবেন এখন মৃন্ময়ী দেবী? কেন তার ছোটো নাতি শেফালির মত এত মিষ্টি গুণবতী মেয়েকে বিয়ে করলো না !”
কাকার তো অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে গো দিদিভাই। নতুন কাকিমাকে দেখেছো তুমি ? খুব সুন্দর নাকি !”হ্যা, দেখেছি তো ! ফর্সা, সুন্দর, লম্বা, কিরকম মেম মেম মতো। মার মতো না একদম।
 কি করে বোঝান মৃন্ময়ী দেবী, এই শিশু মন তো শুধুই মা খুঁজে বেড়ায়। শেফালি ধীরে ধীরে সেই মায়ের জায়গাটা সুন্দর করে নিয়েছিলো। জন্মেই যে শিশু মায়ের কোল ছাড়া হয়েছে, তাকে মাতৃস্নেহে শেফালিই তো কোলে তুলে নিয়েছিলো। ছোটো নাতি অনি আর শেফালির তো সেই কোন ছোট্টবেলার ভালবাসা, কে না জানতো ওদের কথা। এক পাঁচিলের এপাশে ওপাশে দুই বাড়ি,দুই মন তো আর পাঁচিল চেনে না, তারা একাকার হয়েছিলো। আপত্তিও আসেনি দুই বাড়ি থেকে। তবে আজ কেন এত গোলমাল হলো ! কি করে বোঝায় তুলি কে?অর্থ, কেরিয়ার, প্রতিপত্তি, উচ্চাকাঙ্খা যেখানে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে, সেখানে ভালবাসার কি দাম !  তুলিকে কি করে বোঝাবে বৃদ্ধা মৃন্ময়ী, তার নতুন কাকিমা কাকার বসের মেয়ে। একটা বিয়ে কি না এনে দিতে পারে ওর কাকার জীবনে ! প্রমোশন, বিদেশে স্থিতি, আর্থিক বিলাসিতা সব কিছুই তো পায়ের তলায় এনে দিচ্ছে এই একটা বিয়ে | সেখানে বড়ই তুচ্ছ ছোটবেলার ভালবাসা আর পাশের বাড়ির খুব সাধারণ শেফালি।  নতুন কাকিমার মোম গলা মসৃন পিচ্ছিল ত্বক, পালিশ করা রূপ, ঝা চকচকে পোশাক-আশাক –এসবের পাশে শেফালী বড়ই বেমানান, বড়ই নগণ্য।  বড্ড বোকা মেয়ে শেফালিটা!  মেয়েদের সহ্যশক্তি এত কম হলে চলে ! ভালবাসার অপমান মেনে নিতে পারিসনি জানি, তাই বলে একেবারে চলে গেলি? এখন এই মা মরা মেয়েকে কি করে সামলাবেন তিনি !! জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন এক পা বাড়িয়েই আছেন, তখন তার সীমিত ক্ষমতা দিয়ে কি ই বা করতে পারেন তিনি। বড় অসহায় লাগে নিজেকে। সকাল থেকে বাড়িতে দৌড়োদৌড়ি লেগে গেছে।  হুলুস্থুলু কান্ড।  তুলিকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হচ্ছে। মৃন্ময়ী দেবীর বড্ড বুক ধড়ফড় করছে।  ভগবান মুখ তুলে চাও, ছোট্ট মেয়েটাকে কোলে ফিরিয়ে দাও ঠাকুর ! সবে বিয়ে মিটতে না মিটতেই দশ দিনের মাথায় অনি মেম বউ নিয়ে কোন এক দেশে চলে গেলো,কোন এক খটমট নাম ওয়ালা দেশ। মনে রাখার ক্ষমতা নেই তার। এটুকু সার বুঝেছেন, তার জীবদ্দশায় তিনি আর ছোটো নাতির মুখ দেখতে পাবেন না। সেই বিয়ের পর থেকেই মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াত তুলি। খুব আশায় ছিল, নতুন কাকিমা নিশ্চই ওর মা হয়ে আসবে!  সে আর হলো কই !! নতুন বউ যেন অন্য গ্রহের প্রাণী। বাচ্চা মেয়েটা দূর থেকে দেখত শুধু নতুন কাকিমাকে, কাছে ঘেঁষার চেষ্টা অবধি করলো না। ওরা চলে যাওয়ার পর আজ এই ঘটনা। হে ভগবান, একটু মুখ তুলে চাও। ফিরিয়ে দাও মেয়েটাকে। দুদিন হলো বাড়ি ফিরেছে তুলি। প্রাণোচ্ছল মেয়েটা এই কদিনে নীলবর্ণ হয়ে গেছে, যেন কেউ এক পোঁচ কালি লেপে দিয়েছে। ছেলে আর বড় নাতিকে বলে কয়ে মেয়েটাকে নিজের ঘরে রাখার অনুমতি টুকু পেয়েছেন মৃন্ময়ী দেবী।অশক্ত হাতে যেমন করে পারেন ছোট্ট প্রাণকে আগলে রাখার চেষ্টা করে যান। তার বড় নাতি গত কদিন অফিস যায়নি। রাতদিন হাসপাতালে পড়ে থেকেছে। তুলির বিপদ কেটে যেতে একবার শুধু বাড়ি ফিরেছিল। লাঠি নিয়ে গুটিগুটি পায়ে কোনমতে নাতির ঘর অবধি পৌঁছতে পেরেছিলেন। বাইরে থেকে এক অসহায়, ব্যর্থ বাবার গুমরে ওঠা কান্না শুনে ধীর পায়ে যেমন এসেছিলেন, ফিরে গেছিলেন নিজের ঘরে। কি বলে স্বান্ত্বনা দেবেন তিনি ! ভাষা নেই কোনো। ছেলেটা এতবার বলা সত্ত্বেও বিয়ে করলো না আর, শুধুই তুলিকে ভালো করে মানুষ করবে বলে ! বিয়ের কথা উঠলেই বলতো, ওই তো অনির বিয়ে হয়ে গেলেই শেফালী আসবে তুলির মা হয়ে। ভবিতব্য বোধ হয় একেই বলে !!!
এমন কেন করলে দিদিভাই ?”
পারলাম না বম্মা।”
কি পারলে না পিয়া সোনা ?”
মার কাছে যেতে।”ডুকরে ওঠে চাপা কান্না।
কেন দিদিভাই, আমার সোনামনি, কেন মামনি ?”
নাহলে কি করে পাবো মাকে ?”
যেতেই হবে মার কাছে ? আমরা তোমায় তো খুব ভালবাসি পিয়া সোনা !”জানো বম্মা, ইস্কুলে সবার মা আসে ছুটির সময়। মনামির মা ওকে কত আদর করে। আরোহীর মা রোজ ওকে শরবত দেয় ছুটির সময়। খুব গরম তো !টিনটিনের মা জানো ওকে কোলে করে করে নিয়ে যায় চুমুও দেয় জাপ্পু করে। আমি বিন্তিপিসির সাথে আসার সময় ওদের চেয়ে চেয়ে দেখি।
মন খরাপ কোরো না দিদিভাই।
শেফালিদিদি বলেছিলো, আমার কাকিমা হয়ে রোজ আমায় আনতে যাবে ইস্কুলে, টিনটিনের মায়ের মত করে আদর করবে, চান করিয়ে খাইয়ে দেবে।গল্প শোনাবে, আমার হোমওয়ার্ক করিয়ে দেবে। কিচ্ছু না করে চলে গেলো।”


তুমি কি খেয়েছিলে দিদিভাই ? কি বমি ! কি বমি ! পেট টা তো তোমার ফুটো হয়ে যেত দিদিভাই।
পিছনের বারান্দার ওই কোনটাতে একটা কাঁচের লাল মত বোতল আছে না,ওটা খেয়েছিলাম।
হে ভগবান, ওটা তো বিষ, ওটা কেন খেলে ?”
“জানি তো বিষ।” বিন্তিমাসী বললো ওই দিন।
কবে ?”
ওই যে আমি বারান্দাতে পুতুল খেলছিলাম। পা লেগে লাল শিশিটা উল্টে গেছিলো। বাসন মাসি ঘর মুছছিলো ওই টা ঢেলে ঢেলে। ঢাকনা খোলা ছিল, পরে গিয়ে শিশিটা থেকে খানিকটা সাদা মত কি পড়ল বম্মা, দুধের মত। আমি হাতে নিয়ে দেখতে গেলাম, বিন্তিমাসী দৌড়ে এসে বলল, বিষ বিষ, ওতে হাত দেয় কেউ? এক্ষুনি হাত ধুয়ে নাও সাবান দিয়ে। চল আমার সাথে এক্ষুনি।
তাহলে কেন হাত দিলে দিদিভাই ?”
আমি বিন্তিমাসীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তো ! বিষ কি, কি হয় ওতে হাত দিলে? বিন্তিমাসী চোখ গোল গোল করে আমায় বলেছিল , “এই বিষ পেটে যদি চলে যেত, তাহলে কি বিপদ হত বলোতো ! মানুষ মরে যায় গো।”
তুমি যখন এত কিছু জানতে, তাহলে কেন নিলে ?”ফুঁপিয়ে ওঠে ছোট্ট মেয়েটা। 
কি করব বম্মা ! মা নেই , শেফালিদিদি মা হবে বললো..কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেলো আমায় ছেড়ে। নতুন কাকিমাও আমায় কোনদিন আদর করলো না,বাক্স গুছিয়ে কাকাকে নিয়ে চলে গেল।  আমি আর তো কোনদিন মা পাবো না, আমি জানি।  কি করে মার কাছে যাব বলো তো ? আমি জানি ওরা সবাই মরে গেছে, আকাশের তারা হয়ে গেছে .. আমিও মরে গেলে তবে আকাশের তারা হয়ে মায়ের কাছে যেতে পারবো। তোমরা আমায় কেন বাড়ি নিয়ে এলে বলো ? কেন নিয়ে এলে ? মার কাছে যাব আমি।” নরম ছোট্ট ফোলা ফোলা গাল বেয়ে অঝোরে ঝরে  যায় কান্না।  এক রত্তি ছোট্ট প্রাণটিকে বুকে চেপে ধরে ডুকরে ওঠেন মৃন্ময়ী দেবী।  কি বল স্বান্ত্বনা দেবেন এই দুধের শিশুকে ? কি ভাবে সামলে রাখবেন ওকে? এতদিন ঈশ্বরের কাছে শুধু প্রার্থনা করেছেন, অনেক দিন তো হলো এবার তুলে নাও ঠাকুর ! আজ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ঈশ্বরের কাছে একটাই নিবেদন,আমার আয়ু আরো বাড়িয়ে দাও ঠাকুর  এই মা মরা মেয়েটাকে যে বাচাতেই হবে ? আর যে কোনো উপায় নেই।  আমাকে যে বাঁচতেই হবে আমার তুলির জন্য।  ওকে সব কষ্ট ভুলিয়ে অনেক বড় করে তুলতে হবে যে !! দাও ঠাকুর দাও, আয়ু আরো বাড়িয়ে দাও। লোলচর্ম বৃদ্ধা সর্বময়ের কাছে আকুল হয়ে আয়ু-ভিক্ষা করতে থাকেন। দাও ঠাকুর দাও, আয়ু বাড়িয়ে দাও !!!



সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া