Sunday, February 25, 2018

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া


সম্পাদকীয় / গৌতম সেন


সম্পাদকীয়

এ মাসে বসন্ত রেখেছে পা ধরণীর বুকে। মাসটা ফেব্রুয়ারী ইংরাজী নামে, তারই মাঝে এল ফাল্গুন, বসন্তের ডালি নিয়ে। কোকিলের কুহু কুহু রর, গাছে গাছে কচি কিশলয়। ফুলের জগতে আগুন সাজাতে গাছে গাছে ভরে গেল অশোক, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া। চিলেকোঠা এই মধুর বাসন্তী ক্ষণে আজ নিয়ে এল তার ই-ম্যাগ আবার।
এবার একটু ফিরে দেখার পাট। গত ২৭শে জানুয়ারী চিলেকোঠার সদস্য-সদস্যারা মিলে জড়ো হয়েছিল এক পিকনিকি জমায়েতে – প্রিন্সসেপ ঘাটে। সারাদিন ব্যাপী এক খুশির হুল্লোড়ে জমজমাট মিলনোৎসব পর্ব সমাধা হল উপস্থিত জনেদের স্বতঃস্ফুর্ত যোগদানে। খাওয়া দাওয়া সে তো ছিলই, আরো যা মন ভরিয়ে দিল, তা হল গান-বাজনা, গঙ্গাঘাটে নৌকা বিহারের এক অনন্য স্বাদ উপভোগ। মনে দাগ কেটে যাওয়ার মত  সর্বাঙ্গসুন্দর এক পিকনিক।

আগামী দিনে আবার এক মহামিলনের, নিখাদ আনন্দের উৎসব এসে হাজির। বসন্ত উৎসব তথা দোল পূর্ণিমার দিনে রঙে রঙে রঙিন হবার দিন। আবিরের অগুণতি রঙের ছটায়, হোলি উৎসব সবার আনন্দময় হয়ে উঠুক এই শুভকামনা জানাই। আশা রাখি এমন এক রঙের উৎসবকে মনে রেখে, চিলেকোঠার সকল সদস্য-সদস্যারা আগামী কোন এক সুন্দর অনুষ্ঠানের মাঝে মেতে ওঠার ডাক পাঠাবে। মন ভরে যাবে এমন এক রঙিন জমায়েতের মাঝে।
প্রতিবারের মত বন্ধুরা তাঁদের লেখনীর অনন্য সৃষ্টিসম্ভারে ভরিয়ে তুলেছেন এবারও এই ই-ম্যাগ। চিলেকোঠা ই-ম্যাগের তরফে তাঁদের এই অবদানকে সবিশেষ কৃতজ্ঞতা জানায়।
‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে...’ কবির এই গানের রেশ ধরে বলি ফাগুনের রঙ লাগুক মনে মনে। সে আনন্দস্পর্শে বসন্তছোঁয়ায় সবার মনে আনন্দরঙ লাগুক এই আন্তরিক শুভকামনা জানিয়ে শেষ করি আজ।


Saturday, February 24, 2018

ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ - ১৫ / ন ন্দি নী সে ন গু প্ত



 তিনি কবি। তিনি শুধু সত্যদ্রষ্টা নন, সুন্দরের দ্রষ্টা এবং স্রষ্টা। যিনি সুন্দরকে দেখতে পান, উপলব্ধি করতে পারেন, তিনিই তাকে সৃষ্টি করতে পারেন। চতুর্দিকে প্রবল অসুন্দরের মধ্যেও সুন্দরকে ঠিক খুঁজে পায় তার চোখ। এ যেন এক আধ্যাত্মিক সাধনা, ঠিক যেন পরমহংসের মতো জলের মধ্য থেকে দুধটুকু বেছে নেওয়া। প্রশ্ন উঠতে পারে, অসুন্দর কেন বলছি? হ্যাঁ, বলছি। একথা পরিষ্কার যে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জটিলতার মধ্যে সুন্দর সবসময় থাকেনা তাছাড়া কবি বেঁচেছিলেন ভারতবর্ষের এক অদ্ভুত সমস্যাসঙ্কুল সময়ে। পরাধীন ভারতবর্ষের নানা সমস্যা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সামাজিক বিবর্তন এবং ভারতবর্ষের রেনেসাঁর অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি নিজেই। ফলে, তার জীবনের চলার পথ একেবারেই মসৃণ, কুসুমাস্তীর্ণ ছিল, একথা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। অজস্র অসুন্দর সমস্যার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছিল তাকে, লড়াই করতে হয়েছিল নানা বাধাবিঘ্নের কাঁটার সঙ্গে, তবেই তিনি ফোটাতে পেরেছিলেন ফুল।
তার লেখার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফুটে ওঠে এই সুন্দর এবং অসুন্দর নিয়ে লড়াই। কবির দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষ পরিবর্তন দেখতে পাই, যখন তিনি আধুনিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
   কেউ সুন্দর, কেউ অসুন্দর; কেউ কাজের, কেউ অকাজের; কিন্তু সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো ছুতোয় কাউকে বাতিল করে দেওয়া অসম্ভব। সাহিত্যে, চিত্রকলাতেও সেইরকম। কোনো রূপের সৃষ্টি যদি হয়ে থাকে তো আর-কোনো জবাবদিহি নেই; যদি না হয়ে থাকে, যদি তার সত্তার জোর না থাকে, শুধু থাকে ভাবলালিত্য, তা হলে সেটা বর্জনীয়' ঠিক এই জায়গায় এসে ভাবতে বসি। ‘সত্তার জোর’ শব্দটা নিয়ে নাড়াচাড়া করি। সত্তার সাথে কি আন্তরিক সততার কোনও সম্পর্ক থাকে? হ্যাঁ, এই আন্তরিক সততা ছাড়া সত্তার জোর আর কীভাবে থাকা সম্ভব? অনেকটা পথ হেঁটে এসে, নিছক ভাবলালিত্য আর তার বিশেষ কোনও মনোযোগের জায়গা কেড়ে নিতে পারেনা, তাকে বর্জন করতেই চান। এখানে এসে সুন্দর, অসুন্দরের সংজ্ঞা গুলিয়ে যেতে পারে যে কারো। 
আসলে তিনি যে ডুব দিয়েছিলেন রূপসাগরে। কিন্তু সে তো বাইরের। অন্তরের যিনি ‘অরূপ’ তাকে যে সুন্দর- অসুন্দরের দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায় না, এই কথাই হয়ত তিনি মনে করিয়ে দিলেন নিছক ভাবলালিত্য বর্জন করতে বলে।
অদ্ভুতভাবে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কবি ক্ষুধার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তার ভাষায়, ‘ফল যে কেবল আমাদের পেট ভরায় তাহা নহে, তাহা স্বাদে গন্ধে দৃশ্যে সুন্দর। কিছুমাত্র সুন্দর যদি নাও হইত তবু আমরা তাহাকে পেটের দায়েই খাইতাম। আমাদের এতবড়ো একটা গরজ থাকা সত্ত্বেও, কেবল পেট ভরাইবার দিক হইতে নয়, সৌন্দর্যভোগের দিক হইতেও সে আমাদিগকে আনন্দ দিতেছে। এটা আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত লাভ।’ তিনি কবি, তাই তিনি মনে করিয়ে দেন যাপনের সৌন্দর্য, ‘আজ ক্ষুধা লাগিলেও আমরা পশুর মতো, রাক্ষসের মতো, যেমন-তেমন করিয়া খাইতে বসিতে পারি না; শোভনতাটুকু রক্ষা না করিলে আমাদের খাইবার প্রবৃত্তিই চলিয়া যায়। অতএব যখন আমাদের খাইবার প্রবৃত্তিই একমাত্র নহে, শোভনতা তাহাকে নরম করিয়া আনিয়াছে।’
আবার কখনো তিনি বলেছেন যা মঙ্গলজনক, যা হিতকর, তাই সুন্দর। এখানেও সেই প্রয়োজনের প্রসঙ্গ আসে; ক্ষুদ্রস্বার্থ বাদ দিয়ে বৃহত্তর জগতের কল্যাণের প্রসঙ্গ আসে। সেখানে যা সত্য, তাই সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু সত্যকে উপলব্ধি করা? হ্যাঁ, সে আবার ভিন্ন সাধনার কথা। ‘সত্যকে যখন শুধু আমরা চোখে দেখি, বুদ্ধিতে পাই তখন নয়, কিন্তু যখন তাহাকে হৃদয় দিয়া পাই তখনই তাহাকে সাহিত্যে প্রকাশ করিতে পারি' হ্যাঁ, এখানে এসেই বুঝতে পারি যে সাহিত্যে সৌন্দর্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেও কবি যে ‘সত্তার জোর’ এর কথা বলেছিলেন, সেই জোর হৃদয়ের সত্য ছাড়া আর কোনও কিছু দ্বারা উপলব্ধি করা অসম্ভব।
(চলবে)        

কবিতা / জন্মান্তরের বিপথে / অনুপম দাশশর্মা





নির্বোধের জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন
তুলনায় স্বল্পালোকে ধূসর শরীর
শ্বেতাক্ষরের। 

যে বেদনা সুপ্ত থাকে প্রদোষের 
সান্ধ‍্যদেউলে
ভোরকে সাক্ষী রেখে তাই-ই ছড়িয়ে পড়ে
উদাসীন স্বজনমহলে।


কবিতা / ভালোবাসি তো / বুবুসীমা চট্টোপাধ্যায়




দরজা খুলতেই সব আলো জ্বেলে দাঁড়িয়েছিলাম 
ঘরে ঢুকতেই বলে ফেললাম সেই কথাটা -
যা তুই কখনো মুখ ফুটে  বলতে পারিসনি , 
 কেবল আঁকিবুঁকি আর আঁকিবুঁকি - এতো যে
আঁকিবুঁকি কাটলি -কাটাকুটি খেললি তবু 
কখনো ঐ চারটে শব্দ ঘুরেফিরেফিরে ফিরে 
একই ডাইনিং – ড্রইং আর  ড্রইংডাইনিং 
 করে গেল ; বললি না কিছুই ...
অথচ ঐ চারশব্দের ঘরে উঠছি , বসছি , 
 ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাশ ফিরছি ,
বমি পেলে কাঠ বমিতে হলুদ আলোও দেখছি 
জড়িয়ে ধরে বললি '' সর্ষে ফুল দেখছিস নাকি ''? 
মাঝে মাঝে হাতড়ে মরছি -
শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে 
হারিয়ে যাওয়া হাতঘড়ি ;
সময় থমকে গেছে ভেবে -
ময়ূরপঙ্খী পালঙ্কের তলায় ডায়রির ছেঁড়া পৃষ্ঠায় 
আলো জ্বালিয়ে তাকিয়ে থাকি -
চারটে শব্দ ছটফট করে বেরিয়ে আসছে 
মন থেকেবুকে 
বুক থেকে -আমার চোখে ...
কাল আমার সব অন্ধকার হলে তোর মন জ্বলবেই ...... 
তখন বলিস 
‘ভালোবাসি তো !



কবিতা / গভীরতা / গৌতম সেন




তোমার জেনে রাখা উচিৎ
কথার গোপনীয়তা শুধুই কথার কথা,
পাঁচ থেকে পঞ্চান্ন কান ছড়াবে অকস্মাৎ
এমন কি আর নতুন কথা!

তোমার জেনে রাখা উচিৎ
মনের অন্দর মহলে যে ভাবনা চিরকাল
উত্তাল করে অহঃরহ, তার সামান্য প্রকাশ
দাবানল ছড়ায় বাহির প্রাঙ্গনে দিনরাত।

তাই বলি অপ্রকাশিত থাক কিঞ্চিৎ
কণা-পরিমাণ নীরবতা
আর যা কিছু না-বলা কথা;
অযথা স্বীকার কোরো না।
সমস্ত গোপন ভাল লাগা, ভালবাসা –
থাক নিজস্ব কিছু কথকতা হয়ে।

তোমার মনের গভীর থেকে
আরও গভীর কোণে
সে টুকু গোপন থাক সংগোপনে,
সেখানে যার আছে খোলা মনে প্রবেশাধিকার
বিন্দুমাত্র অসুবিধা হবে না তো তার
মনের বৃন্দাবণে সুধা হৃদিরঞ্জনে।


কবিতা / মোহ / অর্পিতা ভট্টাচার্য




তোমার জন্যেই তো অট্টালিকা   ছেড়ে মাটির ঘর বাঁধা।
তোমার জন্যেই শ্বেতপাথরের শুভ্রতা ছেড়ে মাটির উঠোনে আলপনা আঁকা।

মাটির গন্ধ যে তোমার ভীষন পছন্দ। তাই তো সারাশরীরে আমার মাটির প্রলেপ।
মেঠো আমার সেই শরীরে আমলকির গাছের স্নিগ্ধ ছায়া কতো ছবি এঁকে চলেছে।
তুমি দু দন্ড জিরিয়ে নেবে এই আশায় সাজিয়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গোনা। 

তুমি এসো,মাটির মানুষ তুমি এসো। মাটির মিষ্টি সুঘ্রাণ নিতে নিতে এই দাওয়ায় বসে জিরিয়ে নেবে এসো।

তুমি ফিরে যাচ্ছো?রাজপ্রাসাদের মোহমায়া চুম্বকের মতো তোমায় টানছে কেন ?
মাটির মানুষ তুমি যেওনা।
তোমার মাটির শরীর ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। তুমি যেওনা। 

একবার পিছন ফিরে দেখো। এ কি দেখছি ?
তুমি যে মোহগ্রস্থের মতো এগিয়ে যাচ্ছ বৈভবের আকর্ষণে।
অসহায় আমি দেখছি তুমি ফিরে যাচ্ছো, ফিরে যাচ্ছো তুমি ধ্বংসের দিকে।




অনু গল্প / অগোছালো ঘর / রীনা রায় ।



ঘড়িতে এখন দুপুর বারোটা, সারাটারাত বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ করে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো শুভ, ঘুম ভাঙতে দেখে সকাল পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটা দুপুর ছুঁতে চললো।
প্রথমেই মনে হল পৌষালি ওকে এখনও ডাকেনি কেন? আজ কি রবিবার? 
আস্তে আস্তে সব মনে পড়লো, পৌষালি নেই, কেউ ওকে ঘুম থেকে তুলে দেওয়ার নেই, কেউ চা বানিয়ে দেওয়ার নেই। ওহো, খেতে হবে কিছু এখন । কি খাবে শুভ এখন? 
ফ্রীজে কি কিছু আছে? আচ্ছা, কাজের মেয়েটাও তো এলোনা, ও কি বেল বাজিয়ে ফিরে গেছে? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শুভর মনে হল, আগে স্নানটা সেরে আসি।
ঘরের দিকে তাকাতেই চারিদিকে এলোমেলো জিনিসপত্র নজরে পড়লো।কাল বিকেলে ওরই ছুড়ে দেওয়া জিনিসগুলো কিরকম ওর দিকেই তাকিয়ে আছে দেখো! 
উঠে গিয়ে মোবাইলটা আগে তুললো শুভ--না ভাঙেনি, যাক! 
মনে পড়লো পৌষালির সাথে কালকের ঝগড়া।
'রোজ তোমাকে একই কথা বললেও শুনতে পাওনা নাকি ইচ্ছে করেই করো? জুতোটা জায়গায় রাখতে কতটুকু সময় লাগে বলোতো? আর ঐ নোংরা মোজাগুলো জুতোর মধ্যে ঢুকিয়ে রেখোনা---"
অফিসে বসের কাছে অকারণে কথা শুনতে হয়েছিল, শুভর মেজাজ এমনিই খারাপ ছিল, সেই মুহূর্তে পৌষালির এই পরিষ্কার পরিষ্কার বাতিকটা অসহ্য লাগছিলো।
এমনিতেই ও চিরদিনই একটু অগোছালো স্বভাবের, আর পৌষালি সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির। সবসময় সবকিছু পারফেক্ট হওয়া উচিত, এতটুকু নোংরা ও সহ্য করতে পারেনা। 
শুভ চেঁচিয়ে উঠেছিল, ঘরের সমস্ত জিনিস টান মেরে ছুড়ে ফেলে বলেছিলো, "বেএএশ করবো, নোংরা করবো।এটা আমার বাড়ি, আমি এইভাবেই থাকবো। তোমার যদি না পোষায় তুমি চলে যেতে পারো।''
পৌষালির মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোয়নি, জলভরা চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে শুভর দিকে তাকিয়েছিলো।তারপর,নিজের ব্যাগ নিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেছিলো, শুভর সামনে দিয়েই।
শুভ বাধা দেয়নি। দরজা বন্ধ করে শুভ সেই যে শুয়েছে উঠলো আজ দুপুর বারোটায়।
হঠাৎই শুভর মনে হলো আচ্ছা, পৌষালি তো বেশি কিছু চায়না, সত্যি ও ঘরটাকে কি সুন্দর গুছিয়ে রাখে! 
শুভ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব জিনিস একটা একটা করে গুছিয়ে তুলে রাখলো! পৌষালির মতো হল কি? 
-----
পৌষালির কাল থেকে সমানে মনে হচ্ছে, সবসময় এতো টিপটপ থাকা, এতো গুছিয়ে রাখা এগুলো কি সত্যিই ওর বাতিক হয়ে যাচ্ছে? 
থাক না শুভ একটু অগোছালো, একটু এলোমেলো -- কিই বা ক্ষতি তাতে? 
শুভকে ছাড়া ও তো বাঁচতে পারবেনা! 
হঠাৎ কি খেয়াল হলো ঘরের সব জিনিস এলোমেলো করতে লাগলো-ওর কান্ড দেখে পৌষালির মা অবাক হয়ে গেল, "কিরে, কি হয়েছে তোর? ঘরদোর এলোমেলো করছিস কেন? "
"থাক না মা একটু এলোমেলো --কিই বা ক্ষতি তাতে! "
---
মোবাইলটা বেজে উঠতেই পৌষালি দেখলো শুভর ফোন --ফোন রিসিভ করেই বলে উঠলো, "শোনো, তুমি না তোমার মতোই থেকো, আমি তোমাকে আর কোনোদিন কিছু বলবোনা! "
"পাগলি একটা! কখন আসবে তুমি? তুমি না এলে তোমার শুভকে কে দেখবে--আমাদের ঘরটা তুমি ছাড়া এত সুন্দর করে কে সাজাবে হুঁ? ----"
----
শুভ দরজা খুলতেই পৌষালি অবাক হয়ে দেখে ঘরের প্রতিটি কোণা ঝকঝক করছে,যেন এইমাত্র ও নিজেই ঘর গুছিয়ে রেখেছে! 
''কি ম্যাডাম,সব ঠিক আছে তো?" "কে করলো? মিনা তো আজ কাজে আসবেনা বলেছিলো--"
"কেন ম্যাডাম, এতদিন ধরে এই অধমকে তাহলে কি ট্রেনিং দিলেন! "
"তুমি?!! তুমি করেছো? আমি তো ভাবতেই পারছিনা--"
--
এরপর দুজন দুজনের মধ্যে এক আকাশ ভালবাসা খুঁজে পায়।
বাইরে বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাস, কাছেই কোথাও কোকিল ডেকে ওঠে।
শুধু বাইরে নয়, শুভ-পৌষালির ঘরেও তখন চিরবসন্ত!

ধারাবাহিকভ্রমণ কাহিনী / ইতিহাস তুমি কেমন আছ / অরুণ চট্টোপাধ্যায়



প্রথম দিনের যাত্রা
                    ঘটনার স্রোত নিয়ে জীবনের নদী। সব ঘটনাই অতীত হয় কিন্তু সব অতীত ইতিহাস হয় না। তাই সব অতীত নিয়ে মানুষ মাথা ঘামায় না। সেই অতীত নিয়ে মানুষ মাথা ঘামায় যাতে থাকে ঘটনার ঘনঘটা। যে অতীত তার সু কাজ কিংবা কু কাজের জন্যে একটা দাগ রেখে যায় জীবন বা সমাজের বুকে। ঘটনার স্রোত যখন এক জায়গায় পাক খেতে খেতে একটা গভীর দহ তৈরি করে-- সেই অতীত স্থান পায় ইতিহাসে।
                   ইতিহাস রেখে যায় তার স্মৃতিচিহ্ন—সুখের কিংবা দুঃখের। হয়ত সুখের কম দুঃখের বেশি।  কিন্তু দাগ না রাখলে সেটা ইতিহাসে স্থানই পাবে না। ইতিহাস মানুষকে শিক্ষা দেয়। অতীত দিশা দেয় ভবিষ্যতে চলার সঠিক পথের। তার থাকে নানা নিদর্শন। যারা ইতিহাসের ছাত্র বা ছাত্রী তারা ইতিহাস পড়ে সমাজকে সতর্ক করার জন্যে। অতীতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতকে পথ দেখাবার জন্যে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তারা ইতিহাস পড়ে কৌতূহলী হয়ে। এই কৌতূহলের খোরাক তার মনে এক অর্থে বিনোদন জোগায়।
                  আমি সাধারণ মানুষ। তাই আমার ইতিহাস দর্শন নিতান্ত কৌতূহল নিবারণের উদ্দেশ্যে। ভারতে ঐতিহাসিক স্থানের অন্ত নেই। আমাদের এখানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। এক কালে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার রাজধানী। এখানে জীবন এগিয়েছে, সমাজ এগিয়েছে অনেক। কিন্তু ইতিহাসকে মানুষ বিশেষ ঘাঁটায় নি। তাকে একপাশে তার মত করে থাকতে দিয়ে নিজের গতিপথ ঠিক করে নিয়েছে। আর তাই হাজারদুয়ারী, কাটরা মসজিদ, ইমামবাড়া, খোসবাগ, জাফরাগঞ্জ, পলাশীর আমবাগান, মোতিঝিল, কাশিমবাজার, জাহানকোষা কামান, কীরিটেশ্বরী মন্দির, ডাচ সমাধি ক্ষেত্র, নসীপুরের আখড়া, জগৎ শেঠের বাড়ি, কাঠগোলা প্রভৃতি অজস্র দর্শনীয় স্থান আজও ভবিষ্যৎ দর্শকদের জন্যে নিজেদের মত করে ঘুমিয়ে আছে।
                  গত ২৩শে জানুয়ারী শিয়ালদহ থেকে দুপুর বারটা পঞ্চাশ মিনিটে আমাদের লালগোলা প্যাসেঞ্জার ছাড়ল এস ওয়ান রিজার্ভেশন কম্পার্টমেন্টে আমাদের নিয়ে। বিকেল পাঁচটার কাছাকাছি আমরা এসে পৌঁছলাম বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে। আর ছটার মধ্যেই স্টেশন চত্বরে চা টা খেয়ে ছবি টবি তুলে পৌঁছে গেছি সেখানকার টুরিষ্ট লজে। এর মধ্যে ঘটনার কোনও ঘনঘটা নেই। নেই এমন কিছু বৈচিত্র যা মনে রাখার মত বা মনে রাখানোর মত।
                   সেদিন তো সন্ধ্যে হয়ে গেছে। ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আগামী কালের সাইট সিইং এর জন্যে গাড়ি ঠিক করে নেওয়া গেল। আগামী দুদিনের ট্যুর। আপাতত চা খেয়ে হোটেলের বাইরে বেরোন গেল। ঠান্ডা খুব বেশিও নয় আবার খুব কমও নয়। ফুলহাতা সোয়েটার বা জ্যাকেট আর টুপির আড়ালে রাখলে শরীর বেশ আনন্দই পাচ্ছিল। আমরা হাঁটছিলাম। সমস্ত বড় বড় সরকারি অফিসগুলো এখানে। কারণ এটা মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর।  গান্ধী মোড়ে বিরাট বড় পার্ক। তার পাশ দিয়ে ডানদিকে একটু দূরেই ভীড় দেখে থমকে গেছি। পরে শুনি সেটা বহরমপুর টেক্সটটাইল কলেজ আর সেখানে সরস্বতী পুজো আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশাল আয়োজন। থিম বেশ ভাল লাগল। বিশাল লাইন ভেঙ্গে ঠাকুর দেখে আবার ফেরত আসতে কম বেশি ঘন্টাখানেক লেগে গেল। তারপর একটা বেশ বড় মিষ্টির দোকানে মালপোয়া, লবঙ্গ লতিকা আর অন্য মিষ্টি খেয়ে খিদে মেটানো গেল। এতবড় আকারের লবঙ্গ লতিকা আর মালপোয়া আমি আগে কখনও খাই নি। ইতিহাস দর্শনের আগেই এই মিষ্টিতে বর্তমানে মুখ আর মন দুইই বেশ ভরে গেল। এখানে দোকান টোকান বিশেষ ভাবে খাবারের দোকানগুলো বেশ বড় আর সুন্দর। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন তো বটেই। দেখে মন বেশ প্রসন্ন হবার কথা।
                ওয়েস্ট বেঙ্গল টুরিজমের এই লজটি দারুণ সাজানো গোছানো। খাবারও এখানে বেশ ভাল। বেরোনর আগে আমরা ডিনারের অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলাম। আজকের রাতের জন্যে ভাত ডাল সবজি আর চিকেন যথেষ্ট ছিল। খেয়ে নিয়ে রুমে বসে টিভি দেখে নেওয়া গেল। আমি অবশ্য লোকের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা ভরা ছিল। তাছাড়াও রুমে ওয়াই ফাই চালু ছিল। তাই ফেসবুক আগে বন্ধ করে চলে গেলেও মেসেঞ্জার হোয়াটস আপে আলাপ আর কথা বলতে কোনও অসুবিধেই হচ্ছিল না। সেই বন্ধ ঘরে শুধুমাত্র আমার বন্ধু উপস্থিত থাকলেও আরও বহু বন্ধুর কল্পিত উপস্থিতি (digital presence) টের পাচ্ছিলাম। রাত এগারটার মধ্যেই শুয়ে পড়া গেল। কাল নটার মধ্যেই বেরোতে হবে।

দ্বিতীয় দিনের যাত্রা

                 পরের দিন আমাদের ভ্রমণের আসল পর্ব হল শুরু। সাড়ে নটার সময় আমাদের জন্যে গাড়ি এল। ব্রেকফাস্টে গরম ফুলকো লুচি, তরকারি আর সুস্বাদু দার্জিলিং চা খেয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। গাড়ি নাতিবৃহৎ এক যাত্রা সেরে প্রথম দাঁড়াল মুর্শিদাবাদের জাহানকোষা কামান দেখাতে। এটি আমাদের প্রথম দর্শনীয় বস্তু।
                 মুর্শিদাবাদে নবাবের তোপখানায় মিলল এই চরম বিস্ময়ের দর্শন। কাটরা মসজিদে যাওয়ার পথে পড়ে এটি। কাটরা মসজিদ থেকে এর দূরত্ব মাত্র সিকি মাইল। জাহানকোষা কামান ১৬৩৭ সালে দিল্লীতে মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের আমলে জনার্দন কর্মকার নামে এক বাঙ্গালি কারিগরের হাতে গড়া প্রায় সাড়ে সতের ফুট দীর্ঘ আর তিনফুট ব্যাস বিশিষ্ট এক কামান। এর বিশাল আকার আর বিরাট আর ক্ষমতার জন্যে একে ‘বৃহৎ কামান’ বা ‘গ্রেট গান’, ‘ডেস্ট্রয়ার অফ দি ওয়ার্ল্ড’, ‘কনকারার অফ দি ইউনিভার্স’, ‘ওয়ার্ল্ড সাবডুয়ার’ ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। প্রতিবার কামান দাগার জন্যে সতের কিলোগ্রাম বারুদের প্রয়োজন হত। এই কামানটি সতিই দর্শনীয়। ভাল লাগবে বিশাল এই কামানের সামনে দাঁড়িয়ে একা, দোকা কিংবা সপরিবার বা সবান্ধব ছবি তুলতে।
                আমাদের দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান হল মুর্শিদাবাদ শহরের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত কাটরা মসজিদ। ১৭২৩ থেকে ১৭২৪ সালের মধ্যে মুর্শিদকুলি খানের নির্মিত বিশাল এই মসজিদ স্থাপত্যের এক চমৎকার নিদর্শন। এটি সম্পূর্ণ ইঁটের তৈরি আর খিলেনের ওপর ধারণ করা। আজকের দিনে খিলেনের কাজের কথা অনেকেই হয়ত জানেন না। কারণ আজ কংক্রিটের যুগ। কিন্তু প্রায় তিনশ বছর আগে সিমেন্ট ছিল স্বপ্ন। তখন ইটের পরে ইট গাঁথার জন্যে মাঝে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হত সুরকি যা ইঁটকে মিহি করে গুঁড়ো করেই পাওয়া যেত। খিলেন হল ইঁটের সঙ্গে ইঁট বিশেষ কায়দায় সাজিয়ে কড়ি বরগা ছাড়াই ছাদ তৈরি করা। এই খিলেন যে কত শক্তিশালী হতে পারে মসজিদটিই তাঁর নিদর্শন। সেই খিলেন দিয়ে তৈরি বিশাল এই মসজিদ সত্যিই এক চমকপ্রদ জিনিস।
                  এটি শুধু মসজিদ বা নমাজের স্থান ছিল না ছিল একটি মাদ্রাসা বা শিক্ষাকেন্দ্রও। সম্পূর্ণ চারকোণা এই মসজিদের চারকোণে চারটি ৭০ ফুট উঁচু আর ২৫ ফুট ব্যস যুক্ত অষ্টভুজাকৃতি মিনার ছিল। দুঃখের বিষয় এর মাত্র দুটি এখন অবশিষ্ট আছে আর যেগুলির সংস্কার চলছে।
                 বিশাল এই মসজিদ দুই তলা বিশিষ্ট ছিল। নিচের আর ওপরের তলা মিলিয়ে ৭০০ ছাত্রদের থাকার জন্যে ঘর, রান্নার জন্যে রান্নাঘর ইত্যাদি ছিল। এই ঘরগুলি ইটের খিলেন করা এবং প্রত্যেকটি ২০ ফুট বর্গ মাপের।
                 এই কক্ষগুলির পরে একটি রাস্তা মাঝের মসজিদকে ঘিরে আছে। মসজিদের উপরের তলায় মাঝে বিরাট চত্বর তাতে প্রায় ২০০০ ব্যক্তির নমাজ পাঠ করার জন্য ২০০০টি চৌকো খাঁজ কাটা আসন তৈরি করা ছিল। এই আসনগুলি মেঝের সংগে সংশ্লিষ্ট ছিল। এই আসনগুলিও দেখার মত। চারটি মিনারের ওপর চারটি গম্বুজ ছাড়াও মসজিদের মাঝে একটি বড় গম্বুজ ছিল যা ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
                কেন্দ্রীয় মসজিদটির মূল ওঠার সিঁড়ির নিচে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁকে কবরস্থ করা হয়েছে তাঁরই পূর্ব নির্ধারিত আর নির্দেশিত ইচ্ছার নিরিখে। জীবনের শেষ দিকে নিজের কৃত অনেক খারাপ কাজের জন্যে অনুতপ্ত নবাবের ইচ্ছা ছিল তাঁকে কবরস্থ করা সেখানেই হবে যেখানে তাঁর ওপর দিয়ে চলে যাবে অসংখ্য মানুষের পদতল। পর্যটকরা যে সিঁড়ি দিয়ে মসজিদে উঠবেন চোদ্দ ধাপের সেই সিঁড়ির নিচেই সমাধিস্থ রয়েছেন নবাব মুর্শিদকুলি তাঁর নিজেরই ইচ্ছায়। বিশাল এই মসজিদ আর তার চত্বর ঘুরে দেখার মত।  
                কাটরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে রেল লাইন পেরিয়ে ঠিক ক্রশিং –এর পারেই গেলাম একটি অসম্পূর্ণ মসজিদে। মুর্শিদকুলি খাঁর দৌহিত্র সরফরাজ খাঁ শেষ জীবনে কাটরা মসজিদের আদলে একটি মসজিদ বানানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু কাটরা মসজিদের থেকে আকারে অনেক ছোট লম্বায় প্রায় ১৩৫ ফুট আর উচ্চতায় ৪০ ফুট এই মসজিদ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মসজিদের তিনটি গম্বুজের দুইটি সম্পূর্ণ হলেও মাঝের প্রধান গম্বুজটি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আলীবর্দী খাঁর হাতে পরাজিত আর নিহত হন। এইভাবে নবাব বিধ্বংস বা ফৌত হয়ে যাওয়ার কারণে এটিকে ফৌতি মসজিদ বা ফুটি মসজিদ নামে অভিহিত করা হয়। সরফরাজ খাঁর পরে আর কোনও নবাবই এই মসজিদ সম্পূর্ণ করেন নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এর অন্য দুটি গম্বুজও ভেঙ্গে পড়ে। মাথায় ফুটো থেকে যাওয়ায় অবশ্য স্থানীয়ভাবে একে ফুটো মসজিদও বলা হয়। মসজিদের সামনের সিঁড়িটি একেবারেই ভাঙ্গা তাই পর্যটকদের বেশ অসুবিধে হবে।
                 আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কাঠগোলা বাগান ও তৎসংলগ্ন জৈন মন্দির। কাঠগোলা বাগানের বিশাল চত্বরের মধ্যে তিনটি জিনিস। একেবারে গোড়াতেই রয়েছে ডানদিকে চিঁড়িয়াখানা আর বা দিকে একটি গুপ্ত সুড়ঙ্গ পথ যা চলে গেছে একেবারে ভাগীরথী পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে আমাদের এখানের হুগলী নদীই কিন্তু মুর্শিদাবাদে ভাগীরথী নামে পরিচিত।
                 এরপর আবার একটি গেট। সেখানে প্রশস্ত বাগান। অন্যান্য বহু ফুলের মধ্যেও গোলাপেরই প্রাধান্য। বাগানে ঘোড় সওয়ারের স্ট্যাচু। এই বাগান ছিল নাকি চার ভাইয়ের যাদের সঙ্গে স্বয়ং জগৎ শেঠের খুব দহরম মহরম ছিল। কারোর কারোর মতে এরা ছিলেন রত্ন পাথরের ব্যাবসায়ী। আবার কেউ কেউ বলেন এরা ছিলেন কাঠের ব্যবসায়ী আর তাই থেকেই এর নাম হয়েছে কাঠগোলা বাগান। কেউ কেউ বলে এখানে নাকি কাঠগোলাপ পাওয়া যেত। যে যাই বলুক এই বাগান সত্যিই মনোরম। মুর্শিদাবাতে এক নাগাড়ে নিদ্রিত, মৃত বা অর্ধমৃত ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে দেখতে ক্লান্ত তাঁদের কাছে এই বাগান সত্য্যি এক নয়নসুখ।
                শুধু চিঁড়িয়াখানা বা বাগানই নয়। বিরাট এই জায়গায় রয়েছে আরও অনেক কিছু। ভাগীরথী পর্যন্ত গুপ্ত সুড়ঙ্গর কথা তো বলেইছি। তা ছাড়াও আছে আরও তিনটি জিনিস। একটি হল সুরম্য আর সুপ্রশস্ত এক ঝিল যার মধ্যে মাছ কিলবিল করে খেলে বেড়াচ্ছে আর উল্টোদিকে রয়েছে বাঁধানো ঘাট। শুধু মাছের খেলাই নয়, জলে সারি সারি হাঁসের চরে বেড়ানোও কম উপভোগ্য নয়।
এই সরোবরের ঠিক পাশেই বিরাট সুদৃশ্য মিউজিয়াম। দুইটি তলা বিশিষ্ট এই মিউজিয়ামে অতীতের বহু নিদর্শন, অস্ত্রশস্ত্র, ব্যবহার্য বাসনপত্র ও অন্যান্য জিনিস, মূল্যবান পোশাক ইত্যাদি দেখে তাক লেগে যাবার মত।
                একটু দূরে চলেছি এবার। সুন্দর ফুলের বাগান ঘেরা সম্পূর্ণ শ্বেত পাথরের জৈন মন্দির। এর এক পাশে একটি ছোট জলাশয়ে আবার বোটিংও হয়। সব মিলিয়ে কাঠগোলা বাগান আর চিড়িয়াখানা ঘুরতে ঘন্টা দুয়েক সময় তো লাগবেই। পর্যটকদের উচিত হাতে বেশ একটু সময় নিয়ে বাগানটিকে দেখা।
[ক্রমশ]


কবিতা / ঘর বদল / পিনাকী দত্ত গুপ্ত



অনেক দিনের পর,
যেদিন প্রথম পূর্ণিমা চাঁদ
বদলে নিলো ঘর।

অন্য আকাশ, অন্য আলো,
 বিবর্ণ রঙ গাঁথা,
হারিয়ে যাওয়া, আমার নকশী-কাঁথা।

 চাঁদের লোভে গন্ধে ডোবে
রাত্রি অহর্নিশ;
আমার চোখে ঘুমের ঘোরে
অমৃত আর বিষ!

কবিতা / চুপ কথাটি / প্রজ্ঞা পারমিতা ভাওয়াল




চুপ কথাটি হবে আজ নয়তো কাল;
জানলা দিয়ে প্রেম পালাবে
স্মৃতি যাবে মুছে ,
ধোঁয়াশা হতে হতে
হবে মলিন ,
আলিঙ্গনের বাহুডোর হবে খান খান ,
কোলাকুলির দিন অবসান।
নিত্য মধুরতাতে বিচ্ছেদের চাদর বিছানো হবে
নজর এড়ানোর লুকোচুরি হবে শুরু ,
বিস্বাদ  রোদনে ভাসবে না,
কণিকামাত্রও রবেনা অনুভূতির আবেগের উচ্ছাস।
সম্পর্কের মাহাত্ম্য চুরমার হয়ে খসে পড়বে ,
শঙ্খ ধ্বনি ভেসে আসা সাঁঝবেলার হাহাকারে কাঁপবে হিয়া ,
জুড়াবেনা মন।


কবিতা / পাসওয়ার্ড / বৈশাখী দাস







তালার বন্ধ বুকে কান পেতেছো কখোনো?
নিষেধ বিষয়ক কর্তব্যে ডুবে,
কি কাঠিন্য ওই কঙ্কালে....!
চোখ রেখেছো কখনো ওর স্মৃতির গ্যালারিতে?
লোহার গভীর খাঁজও জমিয়ে রেখেছে
কত যাওয়া-আসা ধূলো,গল্প-কথা হাসি,
গর্জে ওঠা শব্দদূষণ এবং
বিদ্রূপের চিলতে রোদ্দুরও নিজস্ব,তুলনায় মেতে
আজে-অতীতে....
কিছু দু:খভেজা প্রাণবায়ু ছুঁয়ে বাদামী হ'তে হ'তে
শেষে স্থায়ী আঁটোসাটো আবহবিকার....,
যা আসলে অবহেলার আভিধানিক রূপ।

নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে
চাবিও ভুলে যায় তালা খোলার পাসওয়ার্ড! 

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া