Thursday, August 24, 2017

অনু কল্পগল্প / আদর্শ বনীকরণ / অরুণ চট্টোপাধ্যায়









এক লপ্তে বিশাল মাপের একটা জমি পেয়ে গেল রথীন। দেড়শ বছর আগের একটা পোড়ো জমিদার বাড়ি। এখন বাড়িটা আর আশপাশের জমিদারি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে আর তেনারা মানে, লোকে বলে ভূতেরা তাদের খাশ দখলে নিয়েছে। ভূতেদের কাছ থেকে জমি পাওয়া সহজ কাজ নয়। অনেক কসরত করে এক ভৌতিক উত্তর পুরুষের হাত থেকে জমিটা ম্যানেজ করেছে সে।
হোক না আম, জাম, জামরুল, অশ্বত্থ, বট, শাল পিয়ালের জঙ্গল। প্রমোটারি বিজনেসে জমিই হল আসল মূলধন। টাকা ব্যাংক থেকে লোন চাইলেই পাওয়া যায়। কিন্তু জমি? তাছাড়া ভূতের জমি বলে খুব সস্তা। জলের না হলেও একেবারে ভুতের দরে। কী হবে এখানে জমি রেখে? আর মাথায় ভূত না চাপলে কি কেউ এখানে ফ্লাট করার কথা ভাবে?
কিন্তু এমন জঙ্গলে ফ্ল্যাট বাড়ি কি করলে সেগুলো কিনবেই বা কে? সবাই যখন ভেবে আকুল হচ্ছে তখন রথীন বলেছে, দেখবে না এখানে একেবারে ওয়ান্ডার ল্যান্ড বানিয়ে ছাড়ব। ফ্ল্যাট কেনার জন্যে বিশাল লাইন পড়বে। দশগুণ দামে বিকোবে সেগুলো।
সরকারী আধিকারিক কিছুতেই অনুমতি দেবে না। বলেন, জঙ্গল ধ্বংস করলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। পরিবেশ আইনে দেওয়া যাবে না।
--কিছু ধ্বংস হবে না স্যার। আমি আবার সব এনে দেব। দেখবেন পরিবেশকে একেবারে হাজির করে এনে দেব মাথার ওপর। মাথায় করে রাখব দেখে নেবেন স্যার।
এই নেতিবাচক বিষয়টাও ইতিবাচক হয়ে গেল। কোন মন্ত্রে আর কোন ফুলে রথীন পুজো করেছিল একমাত্র সেই জানে। ইষ্টনাম আবার মনে মনে না জপলে কাজ দেয় না। তাই বাইরের অন্য কেউ শুনতে পেল না।
ফ্ল্যাট হল। রাস্তা হল, লন, পোর্টিকো, শপিং মল, কী না ছিল সেই কমপ্লেক্সে। সবাই একেবারে তাক লেগে গেল। কে বলবে এখানে একটা জঙ্গল ছিল কিছুদিন আগেও?
ফ্ল্যাট আগে থেকে বুকিং হয় নি। রথীন বলেছিল, আগে দেখবেন তারপর বুকিং করবেন।
কিন্তু কমপাউন্ডে ঢোকার আগেই কমপ্লেক্স দেখে তো সবার চোখ চড়কগাছ হয়ে আকাশে চড়ল। সেই সঙ্গে চড়ল ফ্ল্যাটের দামও। পরিচিত মহল খুশি হয়ে বলল, দেখলে রথীনের ব্যবসা বুদ্ধি? এ ছেলের হবে।
মন্ত্রী, সান্ত্রী, সাংবাদিক সবাই দেখতে এল। এই চমৎকারিত্বের কথা ফলাও করে লিখতে হবে কাগজের পাতায়। দেখাতে হবে টিভির পর্দায়।
খাতিরে সন্তুষ্ট হয়েও কিছু সাংবাদিক বেয়াড়া প্রশ্ন তুলল, কিন্তু পরিবেশের অনেক ক্ষতি হল রথীনবাবু। এ আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। হাজার হাজার গাছ কাটা পড়ল। কত অক্সিজেন কমল। কত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়ল। কত জীবজন্তু মরল। ইকো সিস্টেম ঘা খেল। কত পাখি উড়ে গেল। শ্রুতিনান্দনিকতা ব্যহত হল---
বাকিটা আর বলতে দিল না রথীন। শুধু বলল, সঙ্গে আসুন।
লিফটে চড়ে দশতলা ফ্ল্যাটের মাথায়। সবাই যে বিস্ময় কী ভাবে প্রকাশ করবে ভেবে পাচ্ছে না। বিশাল একটা বন। গহন অরণ্য। পাখি কিচকিচ করছে। পাহাড়ের মাথা ঝিকমিক করছে। ঝরণা কলকল করছে। এমন কী বাঘ ভালুক, শেয়াল, বন বেড়াল, বেঁজি, ময়াল কী নেই। আর সব জীবন্ত।  
কে বলে সিন্থেটিকে প্রাণ নেই? বিজ্ঞান আছে তবে কী করতে?


1 comment:

  1. বা: খুব ভাল লাগলো। সত্যি একদিন সবই তো সিন্থেটিক হবে। দেশ সেইদিকেই এগোচ্ছে।

    ReplyDelete

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া