Thursday, March 23, 2017

অনুগল্প............লক্ষ্মীর কৃপায়...... সুজয় চক্রবর্তী




কালো ময়রা মদ খায়। সকাল সন্ধের ব্যাপার নেই। তবে তাকে মাতলামি করতে দেখেনি কেউ। আজ একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। একেবারে বেঁহুশ যাকে বলে।কালো ময়রা মিষ্টি তৈরি করে না। তবে তার মধ্যপ্রদেশের বাড়বাড়ন্তের জন্য তাকে সবাই 'ময়রা' বলে ডাকে। কিন্তু সে যে কি করে, কে আছে তার ---- কিছুই জানা যায় না। চিৎ হয়ে শুয়ে আছে কালো। তার প্লাষ্টিকের চটি জোড়া এদিকওদিক ছড়িয়ে রয়েছে। পরনের লুঙ্গিটা উঠে গিয়ে ডান পায়ের দগদগে ঘা'টা দেখা যাচ্ছে। দু-একটা মাছিও বসছে সেখানে। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো প্রায় সকলের চোখই কালোর দিকে। ডান পাশে কাত হতে গিয়ে কালোর বুক পকেট থেকে মোবাইল, ছোট একটা ডাইরি আর কিছু খুচরো পয়সা শব্দ করে গড়িয়ে পড়লো নিচে। ভিড়ের মধ্য থেকে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক বললেন, ' আরে, এগুলো জি.আর.পির হাতে দেওয়া দরকার, না হলে কখন যে হাপিস হয়ে যাবে, কে জানে!' কিন্তু কেউই নিজের অমূল্য সময় নষ্ট করে পুলিশের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো না। মোবাইল, ডাইরি, খুচরো পয়সাগুলো নিজের কাছে রাখলো লক্ষ্মীমাসি। স্টেশন চত্বরে পনেরো বছর ধরে ভিক্ষে করছে সে। বিধবা। দুকুলে কেউ নেই। গোটা স্টেশন চত্বরটাই তার সংসার। কালোকে দু-একবার স্টেশন চত্বরে দেখেছে সে। তবে পরিচয় নেই।কালো মাতাল হলেও তালের ঠিক আছে। চিৎ হতে যাচ্ছিল, জামার পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করলো। ইতিমধ্যে ভিড়টাও কিছুটা পাতলা হয়েছে। লক্ষ্মী দূর থেকে কালোর ভাবসাব দেখে মুচকি হাসলো। তারপর কালোর কাছে গিয়ে সবকিছু তুলে দিল। কপালে হাত ঠেকিয়ে কৃতজ্ঞতা জানালো কালো। লক্ষ্মী জিজ্ঞেস করলো, 'তুমার বাড়ি কুথায়? ' হাতের ইশারায় লক্ষ্মীকে পাশে বসতে বললো কালো। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো লক্ষ্মীর দিকে। আবার প্রশ্ন করলো লক্ষ্মী, ' এসব ছাইপাঁশ খাও কেন? ' জবাবে তির্যক হাসি দিল কালো।সেদিনের পর থেকে লক্ষ্মীমাসিকে আর স্টেশন চত্বরে দেখা যায়নি। এমনকি ভিক্ষে করতেও দেখেনি কেউ। কোনও দিন।লক্ষ্মী যেখানে বসতো, এখন সেখানে খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, বইপত্র নিয়ে যে লোকটা বসে, তার প্রায় পঞ্চাশোর্ধ বয়স। কাঁচা-পাকা চুল। গায়ের রঙ কালো। একটা সময় তাকেই নাকি সবাই 'কালো ময়রা' বলে ডাকতো।

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া