Friday, June 23, 2017

দিয়ার ডায়েরি থেকে - পারমিতা চ্যাটার্জী





সারাদিন যতই পরিশ্রম হোক দিয়ার নেশা ছিল রাত গভীর হলে ডায়েরী লেখা ।তার স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে মেয়েদের পড়িয়ে , ঘুম পাড়িয়ে, সংসারের সব কাজ সেরে এসে সে ডায়েরী লিখতে বসত, এই লেখায় কি লাভ হবে ভাবতনা কিন্তু লিখে যেত।
মনে হত জীবন খাতার হিসাব নিকাশ গুলো করে রাখাই ভালো। দিয়া যখন দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্বা হয় তার যখন প্রায় পাঁচ কি ছয় মাস তখন তার ছোট ননদ অন্ত;সত্বা হয়ে বাপেরবাড়ী আসে সে প্রথম থেকে শেষ অবধি বাপের বাড়ী ছিল , দিয়ার তখন কতই বা বয়স ২৭ বছর, সে অবস্থায় সে তিনজন শ্বশুরের পুর দেখা শোনা করে, দেওর ননদ নন্দাই, সবাইকে দেখে রাখতে হত, সে যে কি অসম্ভব চাপ, আজকের দিনে দিয়া যখন ভাবে সে নিজেই অবাক হয়ে যায় কি করে সব সামলেছিল। দিয়ার ছোট ননদ অন্ত;সত্বা বাড়ীতে এসে ছিল, তার সাথে তার স্বামীও এসে ছিল,তার স্বামীকে সকাল ৮টা নাগাদ অফিস যেত হত ,সকাল ৮টায় রান্নার ঠাকুর এসে রান্না বসাতে পারতনা, দিয়া তখন নিজেও অন্তঃসত্বা ,বড়মেয়ে  তখন সাড়েতিন বছরের তাকে সামলে স্কুল পাঠিয়ে ঠাকুর কে দু পিস মাছ আনতে দিত ,কারণ অত সকালে বাড়ীর বাজার এসে উঠতনা,দিয়া কোন্ রকমে ভাত ডাল আলু বা উচ্ছে ভাজা ,একটা মাছ ভাজা আর একটা মাছের ঝাল করে দিত। জামাই খেয়ে বার হবার সাথে সাথে শ্বশুরদের জলখাবারের তারা লেগে যেত , একজনের বার্লি তারপর পেঁপেকাটা এক প্লেট আর রুটি তরকারি, আর একজনের আগে এককাপ হরলিক্স, তারপর বেলসেদ্ধ একটা তারপর দুধ চিঁড়ে কলা, আর সব চেয়ে যিনি বড় তিনি সকাল ১০টার সময় ভাত খেতে বসতেন হজমের সুবিধার জন্য, দিয়াকে ঠাকুরের সাথে হাত লাগিয়ে তাড়াতাড়ি করে তার খাবার করে দিতে হত ,তা না হলে ঠাকুরের অপর তিনি এমন চিৎকার করতেন যে অধিকাংশ সময় ঠাকুর কাজ ছেড়ে চলে যেত তখন ওই বিশাল সংসারের রান্না দিয়াকেই সব করতে হত । তারপর ঠিক দুপুরবেলা একথালা ফল ,বিকেল ৫টায় জলখাবার ,হয় লুচি তরকারি না হয় ঘুগনি চারপিস পাঁউরুটি, না হয় সুজি চারপিস পাঁউরুটি, আবার সন্ধ্যাবেলায় মুড়ি আর বেগুনি তারপর রাতের খাবার ডট ১০টায়। এই মানুষটা অসম্ভব স্বার্থপর ছিলেন আর কুটিল ধরনের লোক ছিলেন, দিয়ার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল দিয়ার শরীরে রক্ত খুব কম, সেই শ্বশুর শুনে বললেন ,কেন ও তো রোজ সকালে উঠে ঠাকুরকে দিয়ে দু পিস মাছ আনিয়ে খেয়ে নেয়, ওই যে দিয়া নন্দাই অফিস যাবে বলে দুপিস মাছ আগে আনিয়ে রান্না করে দিত ঐ মানুষটা দেখেছে যে দিয়া  সকালে উঠে মাছ আনায়, সেটা কেন কি বৃতান্ত না জেনেই বলে দিল ও রোজ মাছ এনে খেয়ে নেয়।
অভিমানী দিয়ার চোখ দিয়ে জল এসে যেত ।একে তো সে নিজেও অন্তঃসত্বা খিদে পেটে নিয়ে কাজ করে যেত তাকে খেতে বলার কেউ নেই সবাই মিলে একটা মেয়ের অপর তাঁইস চালাচ্ছে তার ওপর এই অপবাদ, কিন্তু কে তার চোখের জল দেখবে? মাঝে মাঝে নি;স্তব্ধ দুপুরবেলায় মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে তার মনে হত এই স্বার্থপর লোকগুলোকে নিয়ে তাকে কতদিন চলতে হবে আর কতটা পথ হাঁটতে হবে জানেনা । শুধু জানে আরও চলতে হবে, তার জন্যে না হলেও সন্তানদের জন্যে তাকে চলতেই হবে।
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া