Wednesday, April 25, 2018

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া


সম্পাদকীয় / গৌতম সেন


সম্পাদকীয়

এক সাংঘাতিক পারিপার্শ্বিকতার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে সময়। মানুষে মানুষে হানাহানি ক্রমেই বেড়ে চলেছে, নিষ্ঠুর এক হিংস্রতার তাণ্ডব যেন উৎসবের চেহারা নিতে চলেছে। ধর্মের কদর্থ করে, মানুষকে আফিমের বদ নেশায় বুঁদ করে ধ্বংসের মাদকতা ধরিয়েছে মনে। মানবতা আজ এক ভীষণ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। আমরা বিশ্বাস করতে ভালবাসি যে এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। পৃথিবীর বুকে মানুষ একমাত্র বেঁচে থাকতে পারে কেবল সুস্থ মানবিকতার শক্ত জমির উপর দাঁড়িয়ে। অতএব আমরা বাঁচিয়ে রাখব এই আশা, এই স্বপ্ন যে আজ নয় কাল আবার শুভ বুদ্ধির উন্মেষ ঘটবে মানুষের মনে। দানবের চিহ্ন মুছে যাবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দলবদ্ধ মানুষের সম্মিলিত সুচেতনায়।
এমন ই এক ভয়ঙ্কর কালসংকট ক্ষণে, কালের নিয়মে এসে পড়ল আবার বাঙালির জীবনে নতুন বছর – চৈত্র শেষে এল বৈশাখ মাস, ঋতুচক্রের আবর্তনে এল গ্রীষ্মকাল। বৈশাখের ভোরের কণ্ঠে আবার নতুন করে বেজে উঠল সে গান – নব আনন্দে জাগো, নব রবিকিরণে। বাঙালির রবি, বিশ্বের কবি – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্ম শুভলগ্ন এ মাসে। মাসভর বাংলার বুকে চলবে সে মহামানবের সশ্রদ্ধ বন্দনা, তাঁর গানে, তাঁর কবিতায়, তাঁর সমস্ত কীর্তির পূনর্জাগরনের ভিতর দিয়ে। আসুন আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নি এক সুস্থতা ও সম্প্রীতির বন্ধনে।
চিলেকোঠার ই-ম্যাগ প্রতিবারের মতই প্রকাশিত হল, গল্পে, কবিতায়, নিবন্ধে –এবার পাকশালের সুবাসিত রান্নাও জায়গা করে নিয়েছে, আশা করা যায় রসনার বাসনাকে তৃপ্ত করবে সে অন্যান্য সাহিত্যরসের সাথে। সমস্ত সদস্য সদস্যাদের ধন্যবাদ জানাই যাঁদের সক্রিয় সাহিত্যকর্ম অবদানে এই ই-ম্যাগ এবারও তার গুণ-সম্বৃদ্ধি অটুট রাখতে সমর্থ হয়েছে। আপনাদের সকলের কাছে একটিই অনুরোধ – আরও লেখা পাঠান, আরও বেশি করে পড়ুন এই ই-ম্যাগের প্রকাশিত সংখ্যাগুলি।
কালবৈশাখী তার ঝড়ের পেখম মেলে, বৃষ্টির নুপূর বাজিয়ে আমাদের ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, প্রাকৃতিক নিয়মের ঘেরাটোপেও সে চিরসুন্দর। সকল বন্ধুকে নতুন বছরের হ্রার্দিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলি – আসুন আমরাও প্রকৃতির সাথে প্রকৃতই সুন্দর হয়ে উঠি।





ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ – ১৭ / ন ন্দি নী সে ন গু প্ত






স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি - এ বিষয়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কারো কোনও দ্বিমত নেই। তবুও নববর্ষের বাঙালিয়ানাটুকু কীভাবে যেন মরে যেতে যেতেও বেঁচে গিয়েছে নানা প্যাকেজ গুছিয়ে রাখা এক বিজ্ঞাপনের মত। সেই প্যাকেজের গায়ের লেবেলটুকু সাজিয়ে দেবার জন্য বাঙালি এখনো রবীন্দ্রনাথকেই আঁকড়ে ধরে আছে। এই আঁকড়ে ধরাটাই সম্ভবত মরতে মরতে বেঁচে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। হ্যাঁ, এই ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই যে বাঙালি এখনো নানা বিজাতীয় সংস্কৃতির কালবৈশাখী ঝড়ের মুখে যেনতেন প্রকারেণ ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামের খড়কুটোটুকু আঁকড়ে ধরতে চায়।    
প্রশ্ন উঠতে পারে যে ‘খড়কুটো’ বলছি কেন? তিনি তো মহীরুহ। ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। সত্যিই কি তাই? সে ছায়াটুকুর কতখানি মর্যাদা দিয়েছি আমরা? কবিপক্ষ কেটে গেলে তাকে এবং তার ভাবনার শিক্ষাটুকু মনে রাখবারও দায় থাকেনা আমাদের। আমরা নিজেরাই কি সেই গাছকে ভুলে গিয়ে তাকে খড়কুটোয় পরিণত করিনি? নিজেকে চিনে  নেবার, জেনে নেবার যে অপরিসীম ভাবনা নিয়ে আমরা জীবনের পথে চলেছি প্রতিদিন, সেখানে তাকে আঁকড়ে ধরলে যে সেই ভার লঘু হয়ে যায়, সেকথা হয়তো ভুলেই গিয়েছি।
মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে তিনি একাই কি ধর্মের মতই ধারণ করে রাখতে পারেন আমাদের? উত্তরে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে প্রচণ্ড শব্দে ‘হ্যাঁ’ বলতে সাধ জাগে। আমরা যারা দিশেহারা এই মুহূর্তে, তাদের জন্য অবশ্যই তিনি এক বিরাট অবলম্বন হয়ে উঠতে পারেন রবীন্দ্রনাথ।   
স্বপ্নস্বরূপের সঙ্গ খুঁজে ফিরেছিলেন কবি। এই খোঁজই ছিল তার জীবনচর্যা। জীবনের যাত্রাপথের বাঁকে বাঁকে  রেখে গিয়েছেন অজস্র মণিমুক্তা এবং তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন আমাদের জীবনের স্বপ্নস্বরূপ। আসলে আমরা  ঈশ্বরের উপস্থিতি টের পেলেও তাকে বুঝবার শক্তি জুটিয়ে উঠতে পারিনা। তার ক্ষেত্রেই এমনটিই হতে চলেছে। ঈশ্বরকে গজদন্তের সিংহাসনে বসিয়ে রেখে তার জন্মতিথি পালনের আচার অনুষ্ঠানটুকু যান্ত্রিকভাবে করে চলেছি আমরা এবং তার শিক্ষার মূল ভাবনা বিস্মৃত হয়েছি।
তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘জগতে স্বার্থপর হইবার যো নাই। পরার্থপরতাই এ জগতের ধর্ম। এই নিমিত্তই মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করা। জগতের ধর্ম আমাদিগকে আগে হইতেই পরের জন্য উৎসৃষ্ট করিয়া রাখিয়াছে, সে বিষয়ে আমরা জগতের জড়াদপি জড়ের সমতুল্য। কিন্তু আমরা যখন স্বেচ্ছায় সচেতনে সেই মহাধর্মের অনুগমন করি তখনই আমাদের মহত্ত্ব, তখনই আমরা জড়ের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কেবল তাহাই নয়, তখনই আমরা মহৎ সুখ লাভ করি।’
তিনি জগতসংসারের নিয়মকে আরোপ করতে চেয়েছিলেন মানুষের ধর্মাচরণের মধ্যে। এই পরার্থপরতা তার কাছে বিভিন্ন মনুষ্যসৃষ্ট আচার- আচরণবহুল ধর্মের চেয়েও অনেক মহৎ বলে প্রতিভাত হয়েছিল। মানুষের সমস্ত অসুখ যে লুকিয়ে আছে স্বার্থপরতার ভেতরে, সে কথা বারে বারে বলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকি কঠোর আধ্যাত্মিক নিয়মপালনও যে স্বার্থপরতার নামান্তর মাত্র, একথা বলতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।
তিনি বলেছিলেন, ‘সকল স্বার্থপরতায় চূড়ান্ত এই আধ্যাত্মিক স্বার্থপরতা। কারণ, সংসারের মধ্যে এমন একটি  অপূর্ব্ব কৌশল আছে যে, স্বার্থসাধন করিতে গেলেও পদে পদে স্বার্থত্যাগ করিতে হয়। সংসারে পরের দিকে একেবারে না তাকাইলে নিজের কার্য্যের ব্যাঘাত ঘটে। নৌকা যেমন গুণ দিয়া টানে তেমনি সংসারের স্বার্থবন্ধন আমাদিগকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সর্ব্বদাই প্রতিকূল স্রোত বাহিয়া নিজের দিক হইতে পরের দিকে আকর্ষণ করিতে থাকে। আমাদের স্বার্থ ক্রমশই আমাদের সন্তানের স্বার্থ, পরিবারের স্বার্থ, প্রতিবেশীর স্বার্থ, স্বদেশের স্বার্থ এবং সর্ব্বজনের স্বার্থে অবশ্যম্ভাবীরূপে ব্যাপ্ত হইতে থাকে।
কিন্তু যাঁহারা সংসারের দুঃখ শোক দারিদ্র্য হইতে পরিত্রাণ পাইবার প্রলোভনে আধ্যাত্মিক বিলাসিতায় নিমগ্ন হন তাঁহাদের স্বার্থপরতা সর্ব্বপ্রকার আঘাত হইতে সুরক্ষিত হইয়া সুদৃঢ় হইয়া উঠে।’ হ্যাঁ, আধ্যাত্মিক ধর্মপালনকে ‘বিলাসিতা’ বলে অভিহিত করতে দ্বিধাবোধ করেননি তিনি এবং সেই কারণে জগতসংসারের সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাকেও সমর্থন করেননি। 
জগতের ধর্ম বলতে অনেকক্ষেত্রেই প্রশ্ন ওঠে যে এর ভিত্তি কি নিষ্ঠুরতা নয়? প্রাণের ধারা প্রবাহিত থাকার অন্যতম শর্ত কি অন্যের প্রাণহরণ নয়? এখানে কবি মনে করিয়ে দেন যে আমরা খণ্ডচিত্র দেখছি। সমগ্র জগতের সাম্যাবস্থাকে দেখছিনা। তিনি বলে ওঠেন, ‘নিষ্ঠুরতাই যদি জগতের মূলগত নিয়ম হইত, হিংসাই যদি জগতের আশ্রয়স্থল হইত, তবে জগৎ এক মুহূর্ত বাঁচিত না। উপর হইতে যাহা দেখি তাহা ধর্ম নহে। উপর হইতে আমরা ত চতুর্দিকে পরিবর্তন দেখিতেছি, কিন্তু জগতের মূল ধর্ম কি অপরিবর্তনীয়তা নহে? আমরা চারি দিকেই ত অনৈক্য দেখিতেছি, কিন্তু তাহার মূলে কি ঐক্য বিরাজ করিতেছে না?’ 
এই ভাবধারা তো কোনও রূপক নয়। জগতছাড়া অনাসৃষ্টি কোনও অবাস্তব স্বপ্ন নয়। তবুও সেই ভাবনা আজো মানুষের কাছে অধরা হয়ে থেকে যাচ্ছে। স্বপ্নস্বরূপ সেই ভাবনার বাস্তবায়ন কি মানুষ কোনওকালে করতে পারবেনা?
(চলবে)       

      


কবিতা / শূন্য আস্ফালন / অনুপম দাশশর্মা



খোলা রাস্তায় এসে দাঁড়ালে দেখি
তিনভাগ হয়ে গেছে গন্তব্যের দিক
যে দিক ধরেই হাঁটি পা পড়ে যায় 
কাদার সংলাপে
আমি ধ্বনির মন বুঝে সরে আসি আয়নার কাছে
এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ছায়াঢাকা
মিথ্যের ডাকঘর
তখনি ভীষণ কাছের মনে হয় প্রাচীনকালকে।
শুভ্র পোশাকে এখন যা দৃশ্যমান,
তার আসল রূপ তো  মৃত গ্রহের

রাস্তায় চোখে পড়ে যায় কখনও সখনও কোন
অন্ধদিনের মুখশ্রী, যার কাছে শুধুই মেলে-
শূন্য আস্ফালন...মন্দ-অলংকারে।


Tuesday, April 24, 2018

কবিতা / মানবতা / গৌতম সেন



রক্তে ভেজে রোদ
বাতাসে হিংস্রতার বিষাক্ত গ্যাস

স্বার্থান্বেষীর অভিধানে 
ধর্ম কাঁদে কদর্থতার ভারে -

মতলবী হত্যালীলা চলে অবাধ।

এমন এক ভণ্ডামীর মহা সমাবেশে
জীবন স্তব্ধ হয়ে ভাবে এক মনে -

শুদ্ধতার সুবাস নিয়ে কবে জন্ম নেবে
মানব সম্প্রীতি? – সেই সব আলোর সন্তান

এক ধর্ম, এক প্রাণ – মানবতা যার নাম।

ভ্রমণ কাহিনী / ইতিহাস তুমি কেমন আছ / --অরুণ চট্টোপাধ্যায় /তৃতীয় ও শেষ পর্ব


                



তৃতীয় দিনের যাত্রা
আজ আমাদের যাত্রা হবে নদী অর্থাৎ ভাগীরথীর ওপারে। কাল যেদিকে গিয়েছিলাম আজ যাত্রার শুরু তার উল্টোদিকে। কিন্তু একটু পরে গিয়ে নদীর ব্রিজ পেরিয়ে আমরা আবার সেই একই দিকে অর্থাৎ উত্তর দিকে চলেছি। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। যারা মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে যাবেন তারা যেমন সরাসরি মুর্শিদাবাদে গিয়ে নামতে পারেন আবার বহরমপুরেও থাকতে পারেন। মুর্শিদাবাদ বহরমপুরের তুলনায় ছোট শহর। সেখানে সব সুবিধে পাওয়া যায় না। বহরমপুর জেলার সদর শহর আর বেশ বড় শহর। তাই বহরপুরে থেকেও মুর্শিদাবাদ অনায়াসে ঘুরে আসা যায়। যেমন আমরা করেছিলাম। যারা বহরমপুরে থাকবেন তাদের মুর্শিদাবাদ দেখতে যেতে হবে উত্তরে। যেমন আমরা চলেছি। আর যারা মুর্শিদাবাদে থাকবেন তাদের আসতে হবে দক্ষিণে। অর্থাৎ আমাদের ঠিক উলটো দিকে। এই যা পার্থক্য।
হাইওয়ে বেশ ভালই লাগছিল। সুন্দর সুবিস্তৃত ঝকঝকে এক রাস্তা। চারিদিকে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। বিশুদ্ধ অক্সিজেন নেবার প্রশস্ত এক পরিসর। উন্মুক্ত প্রকৃতির বুক চিরে যখন কোনও দীর্ঘ পথ বয়ে চলে তখন আমার খুব আনন্দ হয়। আমার মন গাইতে থাকে মুক্তির জয়গান, হারিয়ে যেতে নাই মানা।
একটু পরেই অবশ্য হারিয়ে যেতে হল। চওড়া হাইওয়ে ছেড়ে আমাদের গাড়ি ধরল মাঠের মধ্যে দিয়ে এক সর্পিল সংকীর্ণ পথ। সর্পিল বা সার্পেন্টাইন কথাটা অনেকে শুনেছেন। সাপের চলার আঁকাবাঁকা গতির সঙ্গেও আমাদের সকলেরই পরিচয় আছে অল্পবিস্তর। কিন্তু এই সার্পেন্টাইন শব্দটা যে এত ক্লান্ত, এত বিরক্তি আর এত আশঙ্কার জন্ম দিতে পারে তা এই আঁকাবাঁকা পথটাকে না দেখলে বিশ্বাস হত না। সরু এবড়ো খেবড়ো রাস্তার দুদিকে খাদ। তার মধ্যে দিয়েই হুস হুস করে বয়ে চলেছে সব গাড়ি। কত ট্রাক্টর মাটি কেটে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে দিব্বি। কেউ কেটে নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ বা কাটতে যাচ্ছে। দুই মুখ থেকে আসা গাড়িগুলোকে দেখে ভয় আর বাগ মানছিল না। এই বুঝি একটা গিয়ে পড়ল নিচে মাঠের মধ্যে। আমি ঈষৎ আশংকিত হয়ে চালককে জিজ্ঞেস করি ফেরার সময় আমাদের আবার এই পথ অতিক্রম করতে হবে কিনা। চালক আশ্বস্ত করল, না ফেরা হবে অন্য পথা দিয়ে।
রাস্তার দীর্ঘ অস্বাচ্ছন্দকর এক যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটল অবশ্য এক সময়। আমাদের প্রথম দর্শনীয় স্থান হল কীরিটেশ্বরী মন্দির। একান্ন মহাপীঠের একটি। এখানে সতীর মুকুট অর্থাৎ কীরিট পড়েছিল তাই এমন নাম। এখানে মন্দির আর তার ভেতরে পুজো দেওয়া ছাড়া দর্শনীয় তেমন কিছু নেই। দেবী এখানে ‘বিমলা’। এক হাজার বছরের পুরোন এই মন্দির হল মা ‘মহামায়ার’ নিদ্রাস্থল বলে সকলের বিশ্বাস। আর স্থানীয়দের মধ্যে এই মন্দিরের পরিচিতি হল ‘মহিষমর্দিনী’ নামে। ১৪০৫ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই মন্দিরটি উনবিংশ শতকে পুনর্নিমিত হয় লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণের দ্বারা আর এটিই মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির। প্রতি বছর পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গল আর শনিবারে এখানে মেলা বসে।  
এরপরে আমরা গেলাম যেখানে তার দৃশ্য, বৈভব আর প্রাচুর্য দেখে মোহিত বা হয়ে উপায় নেই। বিশাল চত্বর জুড়ে সম্পূর্ণ শ্বেত পাথরের তৈরি বিরাট এক মন্দির আর আশ্রম। এটি হল দহপাড়ার শ্রী প্রভু জগদ্বন্ধুসুন্দরের আশ্রম। আম আর বকুল গাছের সবুজ শোভায় আমোদিত যেন এক স্বপ্নকুঞ্জ। কুঞ্জদাস ব্রহ্মচারীর তৈরি নয়ন মনোহর এই আশ্রমে বহু দূরান্তরের ভক্ত সমাগম হয়। পুজোর ভোগের জন্যে এখানে সকাল এগারটার মধ্যে টিকিট কাটতে হয়। এগারটায় এই মন্দিরের বিগ্রহস্থল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিগ্রহ দর্শন আমাদের হয় নি।  
পর পর দুটি মন্দির দর্শনের পর আমরা পৌঁছে গেলাম সুজাউদ্দিনের কবরখানায়। সুজাউদ্দিন খাঁ ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁর জামাই। তার স্ত্রী ছিল মুর্শিদকুলির মেয়ে আজিমুন্নেসা। সুজাউদ্দীন খাঁর কবর দর্শন করে এবার আমরা ঢুকছি খোসবাগে। যেখানে শায়িত এক বিখ্যাত ব্যক্তির মধ্যে হলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা। সুজাউদ্দীনের ছেলে সরফরাজের সিপাহশালার ছিলেন আলীবর্দী খাঁ। পরে যিনি নবাব হয়েছিলেন বাংলার। এই আলীবর্দীর নাতি হলেন সিরাজ।
আলীবর্দীর স্বপ্নের স্থান ছিল খোসবাগ। প্রথমে নাম ছিল খুসবু বাগ। সেখান থেকে খোসবাগ। কথিত আছে এখানে ১০৮ রকমের গোলাপ চাষ করাতেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। নবাবের স্ত্রী সইফুন্নেসা বেগম আর তিন মেয়ে ঘষেটি বেগম, আমিনা বেগম আর মুভিনা বেগমের পরপর সমাধি রয়েছে এখানে। আমিনা বেগম ছিলেন সিরাজের মা আর ঘষেটি বেগম ছিল মাসি যার নাম ইতিহাসে বেশ পাওয়া যায়। ঘষেটি বেগমের কথা আগেও বলেছি মোতিঝিলের গল্প বলার সময়। কথিত আছে ঘষেটি বেগমের চক্রান্তেই নাকি নবাব সিরাজ বন্দী হয়েছিলেন ইংরেজদের হাতে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব পরাজিত হয়ে এক বিশ্বস্ত ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে যাওয়ার পথে ধরা পড়েন শুধু তার পায়ের জুতো জোড়ার জন্যে। কারণ বেশ পাল্টালেও এগুলি তিনি পাল্টাতে ভুলে যান। নৌকোর মাঝি তাঁকে চিনতে পারে আর ইংরেজদের হাতে ধরিয়ে দেয়। অবশ্য মীরজাফরের ছেলে মীরণের পরামর্শে ইংরেজরা বহু টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সিরাজকে ধরিয়ে দেবার জন্যে।
বন্দী অবস্থায় সিরাজ তাঁর আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা থেকে প্রায় সতের জন আত্মীয় আসেন। কিন্তু সিরাজ সমেত এই ১৭ জনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। খোসবাগে দাদু আলীবর্দীর কবরের কাছেই কবর দেওয়া হয় সিরাজকে। আর একটু দূরে বাকি ১৭ জনকে। খানিক দূরে মাঠের মধ্যে একটি কুয়োতে সমাধি দেওয়া হয় সিরাজকে ধরিয়ে দেওয়া সেই বিশ্বাসঘাতককেও। তাই খোসবাগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব যেমন বেশী তেমনি তা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও বেশ সমর্থ। একটু দূরেই আছে রেসিডেন্সি সিমেট্রি যাতে আছে তৎকালীন ইংরেজ রাজপুরুষদের কবর।
এবার কাশিমবাজার। কাশিমবাজার স্টেশনের অদূরে আছে কাশিমবাজার বড় আর ছোট রাজবাড়ি। কৃষ্ণকান্ত নন্দী ছিলেন এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। কথিত আছে সিরাজ ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি আক্রমণ করলে ওয়ারেন হেস্টিংসকে কৃষ্ণকান্ত নন্দী যিনি কান্তমুদি নামে পরিচিত ছিলেন, নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন আর পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। এরপর হেস্টিংস যখন বাংলার গভর্ণর হন তখন দিল্লীর বাদশার কাছে সুপারিশ করে কৃষ্ণকান্তর ছেলে লোকনাথকে মহারাজা করেন আর নাম হয় মহারাজা লোকনাথ রায় বাহাদুর। আস্তে আস্তে এই রাজবাড়ি বিরাট হয়ে যায়। এটি হল কাশিমবাজার বড় রাজবাড়ি। এর থেকে একটু দূরে আছে ছোট রাজবাড়ি। এই ছোট রাজবাড়িই বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খোলা হয় আর এর মধ্যে একটি মিউজিয়াম সমেত বহু জিনিস দেখার আছে। নিকটেই আছে ডাচদের কবর।
ছোট রাজবাড়ির থেকে বেরিয়ে আমরা এলাম পাতালেশ্বর মন্দির ও সংলগ্ন সতীদাহ ঘাট দেখতে। পাতালেশ্বর মন্দিরে ঢোকার মুখেই রাস্তার এপারে রয়েছে শিবের বিরাট ধ্যনমগ্ন এক মূর্তি। গেট পেরিয়ে আমরা বাগান ও মন্দিরে ঢুকলাম। সম্পূর্ণ শ্বেতপাথরের মন্দিরের ঠিক গায়েই আছে বিশাল পুরোন এক বটগাছ। এর পাশেই বিরাট এক জলাশয়। তার অনেকগুলি ঘাটের একটাকে সতীদাহ ঘাট বলে অভিহিত করা হয় কথিত আছে বহু অতীতে এই ঘাটে সতীদাহ হত। এখন অবশ্য মাছ ধরা হচ্ছে দেখলাম। বিরাট বাগানে রঙ বেরঙয়ের অনেক ফুল আর এক গোশালা নজরে পড়ল। এখানে আছে সত্তরটি গরু যাদের দুধ এই মন্দির আর আশ্রমের কাজে লাগে। খুব ভাল লাগবে এই ফলে ফুলে ভরা বাগান সমেত মন্দির পরিদর্শন করতে।
দেখেছি ব্যাসপুরের শিবমন্দির। যা পন্ডিত কৃষ্ণনাথ রায় পঞ্চাননের বাবা পন্ডিত রাম কেশব দেবের দ্বারা ১৮১১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ছোট অথচ অপূর্ব সুন্দর এই মন্দির রাজা যোগেন্দ্র বাহাদুর রায়ের দ্বারা ১৯১৮ সালে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সত্যিই একটি দর্শনীয় স্থান ও বিষয়।
গত কালকের থেকে আজ কিন্তু দর্শনীয় বস্তুর তালিকা বেশ ছোট ছিল। তাই ফিরেছিও একটু আগে। এসে বহরমপুরের রাস্তায় একটু পদচারণা আর তার সঙ্গে পরিচয় পর্ব গাঢ় করে লজে ফিরেছি। কাল ফেরার পালা। তাই গোছানোর পালা তো বটেই। তাই সময় নষ্ট না করে ডাইনিং-এ গিয়ে চিকেন আর ভাত খেয়ে টিভি দেখা আর ঘুম।
চতুর্থ দিনের যাত্রা
বহরমপুর থেকে আমাদের গাড়ি ছিল সকাল দশটা পঞ্চাশ। পৌঁছেছি সময়মত। আর সময়ের ট্রেন সময়ে আসায় আমরা উৎফুল্ল। গাড়ি সওয়া তিনটে নাগাদ শিয়ালদহ পৌঁছবে। রিজার্ভড কম্পার্টমেন্টে বসে আমার বন্ধু যখন খরচ খরচার হিসেব নিয়ে ব্যস্ত তখন আমিও ব্যাপৃত ছিলাম আর একটা হিসেব নিয়ে। সেটা হল চাওয়া পাওয়ার হিসেব। এই ভ্রমণে যা চেয়েছি পেয়েছি যেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। শুধু অতীত নয়, নয় শুধু মন খারাপ করা কবরস্থান, মুর্শিদাবাদে ইতিহাস আছে উজ্জ্বল হয়ে। কবরের গাঢ় নিঃশ্বাস বন্ধ করা অন্ধকারেও আছে ইতিহাসকে জানার আলোর আশ্বাস। এটা কি কম কথা।
চারটের মধ্যেই পৌছে গেছি বাড়িতে। আবার সেই একঘেয়ে বর্তমান। সেই একঘেয়ে রোজনামচার চর্বিত চর্বন। তার মাঝেই স্মৃতি হিসেবে মুর্শিদাবাদ উঁকি দিয়ে যাবেই মনের অন্দরে।
                        
                         [শেষ]





ছোট গল্প / প্রথম রঙ / অর্পিতা ভট্টাচার্য






মিষ্টি মেয়েটা দোল পূর্ণিমার দিন মায়ের কোলে এসেছিল বলে, তার নাম রাখা হলো "দোল"। অথচ এই দোলের রঙের সাথেই তার বিবাদ অদ্ভুত রকমের। ছোট থেকেই ও কখনো আবীর মাখা, রঙ নিয়ে খেলা পছন্দ করেনা।
যৌথ পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী , দোলের দিন সকালে প্রথমে গৃহদেবতার পায়ে , তারপর বাড়ির সব বড়দের পায়ে আবীর দিয়ে প্রনাম করার চল আছে। এক চিমটি আবীর নিয়ে কোনক্রমে এই নিয়মটুকু পালন করে পালাতে চাইতো দোল। বাড়ির সবাই ওর এই আবীরে বিরাগের কথা জানতো বলে, ওকে কেউ আবীর মাখাতো না। শুধুমাত্র দাদুভাই , ইচ্ছে করে তার ছোট গিন্নীর গালে , কপালে একটু আবীর ছুঁইয়ে দিতেন। তাতেই মেয়ে কেঁদেকেটে একশা করতো।
দোলের দিন নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখতো দোল। অনেক চেষ্টা করেও বন্ধুরা , ওকে কখনও রঙ খেলাতে পারেনি।

এ হেন "দোলের" জীবনেও বসন্ত এলো তার রূপ নিয়ে।
তাদের বাড়ির নীচের তলায় ভাড়া এলো "শিমুল" ও তার পরিবার।
শিমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
প্রথম দিন দেখাতেই দুজনের মনে রঙের ছোঁয়া লাগলো। আস্তে আস্তে গাঢ় প্রেমে বাঁধা পড়লো তারা। সম্পর্ক এমন হলো যে শিমুলের কোনো কথাই আর ফেলতে পারেনা দোল।
ইতিমধ্যে দোল তার আবীরে বিরাগের কথা শুনিয়েছে শিমুলকে। শিমুল বলেছে, জীবনে প্রথম রঙ সে দেবে দোলকে। দোল উৎসবের কদিন আগে থেকেই তাই দোল এবার খুব উদগ্রীব হয়ে আছে। শিমুল বলেছে লাল,কমলা, নীল, সবুজ সব রঙের আবীরের রাঙিয়ে দেবে তাকে। তার সীমন্ত রাঙিয়ে দেবে লাল আবীরে। তারপর মাথায় ঘোমটা তুলে দেখে নেবে তার বৌয়ের অপূর্ব সুন্দর মুখটা।
শিমুলের রঙে রেঙে ওঠার নেশায় দোল তার আজন্ম বিরাগ ভুলে খুশিতে ভরে আছে।
শুধু একটা মাত্র শর্ত তার, শিমুল শুধু তাকেই রঙ মাখাবে, আর সে শিমুলকে। অন্য কাউকে এক বিন্দু রঙ দেবেনা তারা।
শিমুল তার দোলের জন্যে সব করতে পারে। তাই সে প্রতিজ্ঞা করেছে, সে দোল ছাড়া কাউকে রঙ দেবেনা। তার সব রঙ শুধু দোলের জন্যে।
আগের রাতে নীচের তলায় ও উপর তলায় বাস করা দুই প্রেমী যুগল অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে, কথায় মেতে উঠলো। কতো পরিকল্পনা। দোলের সিঁথি লাল আবীরে রাঙিয়ে শিমুল দুই পরিবারের সকলকে তাদের ভালবাসার কথা জানাবে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই শিমুল দৌড়ে উপরে এলো। দোল তাকে দেখে লুকিয়ে পড়লো।
যাঃ এতো পরিকল্পনা করেও শিমুল আবীর কিনতে ভুলে গেছে। বাইরে থেকে দোলকে বললো , "তুমি সুন্দর করে সেজে নাও , আমি এক্ষুনি গলির দোকান থেকে সব আবীর কিনে আনছি।
খুব সুন্দর করে হলুদ রঙের শাড়িতে সেজেছে দোল। অপূর্ব দেখাচ্ছে তাকে। 
দোল ছাদের উপর থেকে দেখলো শিমুল আবীর কিনতে যাচ্ছে। একটু বেশি দেরী হচ্ছে দেখে দোল আবার ছাদে এসে দাঁড়ালো। এবার সে দেখতে পেলো, এক দঙ্গল মেয়ে , যারা নিজেদের মধ্যে রঙ খেলছিল, শিমুল কে ঘিরে ধরে আবীর মাখাচ্ছে। শিমুল চেষ্টা করেও আটকাতে পারলোনা । তখন সে বাধ্য হলো ওদের সবাইকে এক মুঠো করে রঙ মাখাতে।
শিমুলের সারা শরীর, মুখ রঙে রঙিন। এক বিন্দু বেরঙিন জায়গা নেই খালি নেই দোলের জন্যে।
দোলের মাথা কেমন করে উঠলো। এক অদম্য অভিমানে সে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ওর প্রথম দোল এভাবে শেষ হয়ে গেল বলে, ও পাগলের মতো কেঁদে উঠলো। পৃথিবী তখন ধূসর বর্ণ তার চোখে। এক ঝটকায় হাতে তুলে নিল ধারালো ফল কাটার ছুরি। এক মূহুর্তে দু হাতের শিরা চিড়ে বেরিয়ে এলো লাল রঙের উষ্ণ বন্যা। 
অনেক চেষ্টা করার পরও যখন দোল দরজা খুলছে না।
দরজা ভেঙে ফেলা হলো। 
রক্তশূন্য ফ্যাকাশে দোলের সীমন্ত তখন তার রক্তের রঙে লাল।
শিমুলকে দেখে অনেক কষ্টে হেসে জিজ্ঞেস করলো "আমায় সুন্দর লাগছে" ?
তারপর চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। 
সকলের হাহাকার ভরা কান্নার শব্দের মধ্যে অভিমানী "দোল",তার প্রথম ও শেষ রঙখেলা শেষ করে অন্য জগতে পাড়ি দিচ্ছে তখন।




কবিতা / ফন্দি -ফিকির / বুবুসীমা চট্টোপাধ্যায়




তোমায় আমি রোজ দেখি তো
 হেমন্তে কি বসন্তে '
তুমি তো রোজ হাতের পরে
আমার হাতেই পান দিতে ;

পান দিতে কি ? সবাই বলে-
আসো নাকি প্রাণ নিতে '
বলতে পারো কোনকথাটি
সত্যি তোমার বুক ঠুকে !

আমার চোখেও সকাল আসে
তোমার চোখেও সন্ধ্যা নামে '
তবুও কেমন তোমার - আমার
আমার - তোমার ফিসফিসিয়ে গান থামে ;

সবাই কেমন যে যার মতো
টানছে খড়ির গন্ডিটা;;
দাগটিতে মন পড়লে পরেই
বুঝছি ফিকিরফন্দী বাই ;

দেখছো তুমি হলুদ - হলুদ
সোনা রঙের সকাল ঐ ?
হাতটা ধরে রোদ মাখোতো
অজয়পাড়ের বন্ধু হও ;

কলমীলতার মত করে
লতিয়ে উঠুক তোমার মন'
আলতো তুলির ছোঁয়ায় দেখো
নতুন সকাল দিচ্ছে চুম্ ;

এরপরেতেও তোমায় যদি
হিসেব খাতা খুলতে হয়!
আমি তবে যাই, রোদকিনারে-
তুমি তবে আজ হেতায় থোও ;

মেঘের বাড়ি----
হাওয়া গাড়ি ,
ফুলের প্রেমিক ----
নদীর মান'
আমার ঘরে ----
অঙ্ক ছাড়া
এদের নিয়েই----
  বাঁধছি  গান ।.


কবিতা / নিষিদ্ধ প্রতিবেদন / পিনাকী দত্ত গুপ্ত




আজ খোকনের দোকানে চায়ের দাম বেড়েছে।
এক টাকা প্রতি কাপ।
এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা… লেনিন, মাওসেতুঙ,
এমনকি বুদ্ধ থেকে মোদি।
কারণ, চায়ের দাম বেড়েছে কাপ প্রতি এক টাকা।

গান্ধীর কষ্ঠিপাথরের মূর্তিতে জমছে কাকের বিষ্ঠা।
কাল ধর্মতলায় মিটিং। 
কাতারে কাতারে জনতার দাবি মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা।
বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীও।
কারণ, গান্ধীর কালো চোখ সাদা বিষ্ঠায় বুজে গেছে।

পরশু মিছিল আছে রেডরোডে। ধর্নামঞ্চে অনশন।
বিষয় – মানবাধিকার।
দূর্ভিক্ষপীড়িত সোমালিয়া, রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসস্থান,
নারীমুক্তি, শিশুশ্রমিক..
কারণ, বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে ফান্ড এসেছে উদযাপনের।

পিঁপড়ে লাগা জামগাছের ডালে ঝুলছে প্যামফ্লেট।

“নিষিদ্ধ প্রতিবেদন - ১"
আজ এসেছে আয়কর দপ্তরের চিঠি, অনাদায়ী করের পরিমান...
একুশ লক্ষ বাইশ হাজার তেইশ টাকা
                              
“নিষিদ্ধ প্রতিবেদন - ২"
কাল নাকি গ্রেপ্তারের শমন পাঠাবে মহামান্য আদালত..
কারণ, কাজের ঝি-এর গায়ে ‘নিষ্ঠীবন প্রক্ষেপন’
                              
“নিষিদ্ধ প্রতিবেদন - ৩"
এইমাত্র জানলাম, আমার সাত বছরের পুরাতন প্রেমিকা
আগামি পরশু মামলা দায়েব করবে উচ্চ আদালতে।
আমারই বিরুদ্ধে।  অভিযোগ – “ধর্ষণ”


অনু গল্প / "তোমার তুলনা তুমি" / রিনা রায়




একমনে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলো রিখি,দুপুরের এই সিরিয়ালটা ক্রমশঃ ওর মন কেড়ে নিচ্ছে, মাত্রই তো বারোটা এপিসোড হয়েছে,কিন্তু এটা ওর অন্যতম প্রিয় সিরিয়াল হয়ে উঠেছে।
চার বছর হলো রিখি আর অভিকের বিয়ে হয়েছে, এখনো ওদের কোনো সন্তান না হওয়ায় রিখির কিছুতেই সময় কাটতে চায়না, অভিক সকাল আটটায় অফিসে বেরিয়ে যায়, বাড়ির কাজ সারার পরেও হাতে অনেক সময় থাকে, ঘরের জিনিষপত্র ঝাড়পোঁছ করে, টুকিটাকি রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করেও রিখির কিছুতেই সময় কাটেনা। 
এখন এই সিরিয়াল গুলোই ওর সব সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
রিখি বুদ্ধিমতি হলেও খুব আবেগপ্রবণ মেয়ে। সিরিয়াল দেখতে দেখতে কখন যেন সিরিয়ালের কোনো একটি চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করে নেয়, এই যেমন ওর এই প্রিয় সিরিয়াল 'মুক্তির স্বাদ'- এ চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ তৃষার মধ্যে নিজেকে আর তৃষার স্বামী রঞ্জনের মধ্যে অভিককে খুঁজতে চেষ্টা করে।
----
অভিক আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে, রিখি আলুর পরোটা করবে ভেবে সব রেডি করে রেখেছিল, অভিক বাড়ি এসে গেছে দেখে ঝটপট করে গরম গরম আলুর পরোটা করে দিলো।
অভিক তো খুব খুশি, ''এই না হলে আমার বউ!'' 
রিখি বায়না করলো, ''চলো না আমরা একটু বেরিয়ে আসি।''
রিখির ইচ্ছেয় ওরা একটা শপিং মলে ঢুকলো।
এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে করতে রিখির একটা ড্রেস খুব পছন্দ হয়ে গেলো, কিন্তু অভিককে ও কিছুই বললো না, সিরিয়ালের তৃষা যেমন মলে গিয়ে ড্রেস পছন্দ হওয়াতে বারবার ড্রেসটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো, আর তারপর রঞ্জন ওর মনের কথা বুঝে পরদিন ড্রেসটা কিনে এনে ওকে সারপ্রাইজ গিফ্ট দিয়েছিলো... সেই মোমেন্টটা মনে করেই ওর মন ভালোলাগায় ভরে গেলো... রিখি,তৃষার অনুকরণে ওই ড্রেসটার গায়ে বারবার হাত বোলালো, নিজের গায়ে ফেলে দেখলো, কিন্তু অভিককে একবারও বললো না যে ও ওটা কিনতে চায়।
পরদিন অভিককে অফিস থেকে খালি হাতেই ফিরতে দেখে রিখির মন খুব খারাপ হয়ে গেল...ইশ, অভিক কেনো রঞ্জনের মতো রোমান্টিক নয়,ইদানিং ও মনে মনে অভিকের প্রতিটা কাজে রঞ্জনের সাথে তুলনা করে।
রঞ্জন অফিস থেকে একটু দেরি করে ফেরে ঠিকই, কিন্তু তাতে কি.. তৃষার জন্য যে মাঝে মাঝেই দামি দামি গিফ্ট আনে! 
বাড়ি ফিরেই তৃষাকে কত আদর করে! 
রিখি মন খারাপ নিয়ে উঠে যায়, চা,খাবার এগিয়ে দেয়।
অভিক জিজ্ঞেস করে, ''কি ব্যাপার,ম্যাডামের কি শরীর খারাপ না মুড অফ? নাকি, তোমার তৃষা-রঞ্জনের ঝগড়া হয়েছে?"
"মোটেই ওদের ঝগড়া হয়না, রঞ্জন খুব ভালোবাসে তৃষাকে, ওর কত খেয়াল রাখে!"
"তা,ভালোবাসলে বুঝি ঝগড়া হতে নেই? আমার তো মনে হয় ভালোবাসায় ঝগড়া হবেই! "
রিখি কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তখন ওর মনের মধ্যে অনেক কথার ঝড় চলছিলো, আসলে ওর চাওয়া অনুযায়ী সব কিছু মিলছিলো না, তাই মনের মধ্যে কোথাও একটা হতাশা, ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিলো।
রিখি কিছু বললো না দেখে অভিকও চুপ করে গেলো।
দিন কয়েক পরে রিখি, অভিক অফিস থেকে ফিরতেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো, বললো,''তুমি তুমিই থেকো, তোমাকে 'রঞ্জন' হতে হবেনা!''
অভিক বুঝলো সিরিয়ালে কিছু দেখেই এই রিঅ্যকশন---
কিছুক্ষন পর, রিখি নিজেই বলতে শুরু করলো, ''জানো ওই রঞ্জনের অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন আছে, আর সেজন্যই ও রাত করে বাড়ি ফেরে, বউয়ের সাথে সবসময় মিষ্টি করে কথা বলে, দামি দামি গিফ্ট দেয়", তারপর নাক কুঁচকে বললো, ''ছি:, কি বাজে লোক!''
অভিক তখন একটা প্যাকেট রিখির হাতে দিয়ে বলে, ''খুলে দেখো!''
রিখি তাড়াতাড়ি খুলে দেখে, সেদিন মলে দেখা ওর পছন্দের ড্রেসটা!"
অভিক বললো, "সেদিন তোমার মুখ দেখেই বুঝেছিলাম এই ড্রেসটা তোমার খুব পছন্দ হয়েছে, কিন্তু মাসের শেষে তখন আমার কাছে বেশি টাকা ছিলোনা, আজ স্যালারি পেয়েই এটা কিনে আনলাম।"
রিখির দুচোখে তখন জল, ও অভিককে কত খারাপ ভেবেছে এই কদিন, কতবার মনে হয়েছে অভিক ওকে একটুও ভালোবাসে না!
ও ড্রেসটা সরিয়ে রেখে বললো, "আমার এই দামি গিফ্ট চাইনা, শুধু আমাকে ভালোবেসো তাহলেই হবে", তারপর, চোখেমুখে কপট রাগ ফুটিয়ে বলে উঠলো, ''এই, তোমার আবার কোনো মেয়ের সাথে ভাব হয়নি তো?"
"ধুর পাগলি, আমার বউটার মতো মিষ্টি মেয়ে আর একটাও আছে নাকি!"
রিখি অভিকের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে ভাবতে লাগলো, আর কখনো আমি অভিকের সাথে কারুর তুলনা করবোনা, ওই সিরিয়ালের ক্যারেক্টারগুলোর সঙ্গে তো নয়ই--


অপ্রাপ্তির গল্প / শমিতা চক্রবর্তী




অবশেষে জয়ী র বিয়েটা হয়েই যাচ্ছে !ভাবতে পারছেনা ইমন ।জয়ী কাল থেকে অন্য কারও হয়ে যাবে ! বুকের কাছে কেমন একটা দলা পাকানো কষ্ট !  অথচ ওই ই তো জয়ী কে বুঝিয়েছে বাবা -মা র পছন্দ মতো ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হতে ।"আমার কথা ভুলে যা জয়ী" ! 

              নিজে কি ভুলতে পেরেছে ? সেই কলেজ থেকে ওদের বন্ধুত্ব । নরম সরম মিষ্টি মেয়েটা খুব সাধারণ । ইমনের মত বিত্তশালী পরিবার থেকে নয় নেহাতই মধ্যবিত্ত পরিবারের সাদামাটা মেয়ে জয়ী । একটু নরম বলেই কলেজের দাদা গোছের সিনিয়র রা একটু দাদাগিরি করতে এসেছিলো ওর সঙ্গে ,ইমন একদম কড়কে দিয়েছিল প্রথম দিকেই !  সেই থেকেই জয়ী টা কিছু টা কৃতজ্ঞতা বশেই ভাব জমিয়েছিল ওর সাথে !  ইমন , জয়ী , অনুরাগ , পৌলমী আর সায়ন --এদের একটা বেশ দল তৈরী হয়ে গেছিলো ফার্স্ট ইয়ারে ই --একসাথে কলেজ কাট , মুভি দেখা --জমেছিল বেশ !  আস্তে আস্তে কলেজ পেরিয়ে বন্ধুত্ব টা গড়িয়েছিল ইউনিভার্সিটি তেও -ইমন , জয়ী , সায়ন একই সঙ্গে ,  অনুরাগ পাড়ি দিয়েছিল মুম্বই আর পৌলমী বসেছিল বিয়ের পিঁড়ি তে --উচ্চশিক্ষার সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে ! 

            আস্তে আস্তে ইমন টের পাচ্ছিল জয়ী র প্রতি ওর পোসেসিভনেশ টা বড্ড বেড়ে যাচ্ছে ! জয়ী আর সায়ন নিছক গল্প করলেও ইমনের যেন সহ্য হচ্ছিল না বুঝতে পারছিল ইমন।বন্ধুত্ব টা আর শুধু বন্ধুত্বে থেমে নেই,হয়তো আর ও কিছু ------

              পরীক্ষার আগে জয়ী র বাড়ি গিয়ে কনসাল্ট করে পড়া করার একটা ছুতো তৈরি করে নিয়েছিল ওরা -স্টাডি লিভের সময় টাও যাতে ওদের দেখা সাক্ষাতের ব্যাঘাত না ঘটে !  জয়ী র মা ও খুব স্নেহ করতেন ওকে।ঘরে যা আছে তাই দিয়েই আপ্যায়ন করতেন। একেকদিন তো আলুপোস্ত -মাছের ঝোল দিয়েই সোনামুখ করে ওখানেই লাঞ্চ সারতো ইমন।কাকিমা ছাড়তেন না,বড় স্নেহ করতেন !বলতেন,"তোমার বাবা -মা এখানে থাকেন না।ঠাকুর চাকরের হাতে ভালো করে খাওয়া হয়না নিশ্চয় তোমার!" অর্ধেকদিন বিদেশে কাটানো উচ্চবিত্ত বাবা -মার সময় কোথায় ছিলো ইমন কে নিয়ে ভাববার !  তার চেয়ে জয়ী দের বাড়ি টা বেশ ।কেমন যেন সবার সঙ্গে সবার বন্ডিং টা বেশ দৃঢ় ! 

                 জয়ী টা ও কেমন যেন দিন দিন ইমন নির্ভর হয়ে পড়ছিল !  প্রায়ই বলতো,"ইমন তোকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবো না রে !"  ইমন ও জয়ী কে জড়িয়ে ধরে আলতো করে একটা চুমো দিতো ঠোঁটে্আ‌ ,অশ্লেষে চোখ বুঁজতো জয়ী !  সবার অলক্ষ্যে এভাবেই গড়াচ্ছিল সম্পর্ক টা । 

            ঘটনা টা ঘটে গেলো সেদিন ।কনসাল্ট করে পড়ার ছুতোয় আবার জয়ীদের বাড়ি ইমন ---সেদিন বোধহয় একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিল ইমন --জয়ী কে জোর করে টেনে বুকের মধ্যে চেপে ধরেছিল ,বার বার ওর নরম ঠোঁটে এঁকে দিচ্ছিল ওর পুরুষালী ভালোবাসা।জয়ী বলেছিল," ছাড় ইমন কেউ দেখে ফেলবে ।" দেখেছিল জয়ী র টুয়েলভে পড়া বিশ্বপাকা ভাই টা !  সঙ্গে সঙ্গে মা কে নালিশ,"মা, এসব বেলেল্লাপনা এ বাড়িতে চলবে না বলে দিচ্ছি । সায়ন দা আমাকে আগেই এরকম হিন্টস দিয়েছিল।এখন দেখছি ব্যাপার টা সত্যিই ! "

                   জয়ী র মা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেছিলেন ,এ কি করে সম্ভব !  এতটা ভালোবেসেছিলাম ইমন কে ,শেষে কি না এই ! জয়ীর বাবা ও ঘরে ছিলেন তখন ।কঠিন গলায় বললেন,"তুমি আর জয়ী র সঙ্গে কোন সম্পর্ক রেখো না আজ থেকে !"  জয়ী মাথা নিচু করে তখন নীরবে কেঁদে চলেছে !  ইমন ও বেরিয়ে এসেছিল সেই মুহূর্তে .

                   জয়ী বার বার ফোন করেছিল ইমন কে বোধহয় সবাই কে লুকিয়েই ।কান্নাভেজা গলায় বার বার বলেছিল,"তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো কি করে!" 

           এরপর মাস খানেকের মাথায় জয়ী র বিয়ে ঠিক করে ফেললো ওর বাবা মা,মাস্টার্স এর ফাইনালটা ও দিতে দিলো না ! 

            আগামী কাল ই সেই অভিশপ্ত দিনটা ।নাঃ আর ভাবতে পারছে না ইমন ।বুক ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়,দুচোখে র বালিয়াড়ি জুড়ে দু এক ফোঁটা লবণাক্ত জল ও বুঝি !  কিন্তু হাপুস করে কাঁদতে পারছে কই !  

       প্রয়োজনীয় সব জিনিস গোছানো কমপ্লিট।আজ ই লন্ডন পাড়ি দেবে বাবা -মা র কাছে !  হয়তো পালিয়ে ই যাচ্ছে এ শহর ছেড়ে !  পুরনো একটা অ্যালবামে হাত বুলাচ্ছে পরম যত্নে --ওর আর জয়ী র কত অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ধরা আছে এতে --ও হ্যাঁ এটা ও তো নিতে হবে ! একটা ব্যথা ছেয়ে আছে মনে ,কেন এমন হয় শুধু ওরই সঙ্গে ?জীবন টা কি শুধুই অপ্রাপ্তি র গল্প !  বাবা -মায়ের স্নেহময় মনোযোগ ওকে পেতে নেই ,  আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক জীবন ওর প্রাপ্য নয়,সহজ নিয়মে ভালোবাসা ওকে পেতে নেই ।যদি বা পায় --সেই ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবনের পথে তার হাঁটতে নেই ! 
বিষাদে ভরে আছে মনটা !  হঠাত্ সম্বিত ফিরল ড্রাইভারের ডাকে,"সাব,গাড়ি রেডি হ্যায় সামান লে যাঁউ ?" 
"হাঁ হাঁ লে যাও ! "
            আসতে আসতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো,অপ্রাপ্তি র যন্ত্রণাটাই না হয় আজীবনের সঙ্গী হল আজ থেকে !  

            


কবিতা / ইজ্জত / প্রজ্ঞা পারমিতা ভাওয়াল





বিশ বছর আগে পার্ক স্ট্রীট মেট্রো স্টেশনে
অফিস টাইম এতে চকিতে দেখা
যেন মুহুর্তে কোনো গীতিনির্ঝর।
দ্বিধা দ্বন্দ  হানা দেবার আগেই
জিজ্ঞেস করে ফেলি সেই নামটা !
যেন সম্ভাবনা কোনো বিমলবৃষ্টির।
মনের গহন মাঝে উঠলো কি ঝড় ?
যতটা স্বভাব সিদ্ধ স্বাভাবিকতা নিয়ে প্রশ্ন করি ,
ততটাই কুন্ঠা, ততটাই অস্বস্তিতে তাড়া থাকার ভান করে উধাও হলে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ,
নিজেকে নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগলো।
থমকে গেলাম ,চলে যাওয়া দেখলাম
ফিরে তাকালে কিনা লক্ষ্য করেছিলাম।
আমার নামহীন বর্ণহীন গন্ধহীন অনুভূতি গুলো
ইজ্জত  হারালো কিনা ,
না ভেবেই অফিসের দিকে পা বাড়িয়েছিলাম।



কবিতা / রঙবিজ্ঞান / বৈশাখী দাস






উজ্জ্বল আলোপথে যেই কণাধর্মী কিছু আড়াল,
ওমনি,বিক্ষেপণের শর্তে নীলায়িত আকাশ...
দু:খ-রঙ শুষে নিয়ে সুখ ফিরিয়ে দিলেই,
নামের সাথে সেঁটে যাওয়া এক ‘সুখরঙা’ লেবেল...
যে রঙের হাতে স্বচ্ছতার এফোঁড়-ওফোঁড়,
সে রঙ জুড়েই তো পরিচিতির সাতকাহন...

তবে,এ সব শুধু সিলেবাসের চেনা রঙবিজ্ঞান!

যে হাতের রেখা ছুঁয়ে আবিরের জায়গাবদল,
চিবুক থেকে চারকুঠুরীর গভীরে,
সেখানেই লেখা থাকে রাঙানোর আসল মন্ত্রটুকু....


IMPORTANCE OF READING BOOKS / DURBA MITRA




 The current generation is accused of being absurdly suffering from ANAGNOSMAPHOBIA- the fear of reading for multi - various reasons. We, the elders can not rinse out our hands to place the ball to the youngsters’ court. It is our primary responsibility as the parents / teachers / care givers – to make them understand the true value of a good book. We keep on shelling out lots of money for gadgets, mall-shopping, multiplex-hopping, eating out regularly –  at the same time we should imbibe the habit of taking them to good libraries and quaint book shops regularly.
Visiting the BOOK-FAIR once a year does not suffice!

We should take up the onus of discussing about books in our day to day conversation.

I had lined up some pointers here to converse about the IMPORTANCE OF READING BOOKS.   


Reading books improve vocabulary. Books improve our communication skills. Books help students or to express thoughts in a speech that required lots of words in the vocabulary. The more we read the newer words our brain start gaining new words and adding into the vocabulary folder of your brain.

"Books are the most quiet and lasting friends, the easiest to reach, the wisest counsellors and the most patient teachers." 

Charles W. Eliot


10 LONG LASTING ADVANTAGES OF READING BOOKS: -

1.          Reading reduces stress

When we read, we are still. We get comfortable. Most people sit while reading. Our bodies do not carry any special movements, they rest. The breathing slows down. We calm down. We imagine ourselves the worlds or situations described by words in the book. While reading we cannot think of other tasks or worries. Because of all this reasons reading does reduce stress.

2. Reading help us build a better vocabulary

It has been proven that book readers have a richer vocabulary, so for them easier to find the best expression for all that they want to tell others. In general, the more you read, the richer your vocabulary gets. Furthermore, books are definitely a treasure trove of knowledge!

3. Reading stimulates imagination

We are limited only to the extent to which our imagination is limited. When we read about unknown places, our mind itself creates the imaginative images in our heads, rather than simply saving images from small screens in memory. Thus, the imagination and creativity of our minds are being strengthened by reading.

4. Reading lights up new ideas

Reading encourages us to think. Sometimes, we even start dreaming based on the content we read. In addition, reading gives us new perspectives, that the reader may not even have thought of itself! Thus, through reading, we get new ideas and inspiration, so that we ourselves may try something new or different, inspired the things we read.

5. Reading improves focus and concentration

While reading, we concentrate on the thoughts of the story or whatever is the content of the book. We usually read longer than we do other tasks. Unlike other activities, we do not run parallel thoughts or "other movies" in our heads while reading. The longer we read, the more concentrated we are. Learning requires concentration, and for this reason, reading books for fun and relaxation is an investment in one's ability to concentrate and it's consequently, a basis for successful learning.

6. Reading improves your memory

While reading, we usually have more time to think about the things we just read. Reading books offers us the opportunity to stop and take the moment to rethink or reflect on the content we just read. This is not possible during a movie or when listening to the radio.

7. Reading improves our language skills

Reading in a foreign language does require more effort at the beginning, but it is makes our vocabulary richer. To understand the written, we sometimes need to translate parts of it, sometimes we need to find a word in the dictionary, but sometimes we can understand what is going on just from the context. In any case, reading in a foreign language is another way to enrich our vocabulary and a way we can enhance learning a foreign language. Of course, the text must be an appropriate to the level of the reader's language knowledge. Children have a gift for early language learning - they can pick up the foreign language by listening to it, which is another reason to start early language learning through reading to your child from the multilingual  books.

8. Reading gives us new knowledge

It is true that what we experience gives us best impression, but it is impossible in everyday life to be everywhere and to try out everything. Humans are the only species on Earth that can transmit information and knowledge over a distance and over several generations. A written language separates us from all other species! It enabled us to transfer knowledge rapidly and allows us to develop faster, which in the era of technological progress already exceeds the limits of imagination. So, we've been evolving for thousands of years by reading!

9. Reading makes you smarter

Books are a real treasure trove of data and new knowledge and are much cheaper than courses and education. We become more intelligent by reading books, more interesting and appealing. By reading you will become better in communication, you will improve your knowledge on various topics as well as rhetorical skills.

In addition to all of the above, there is another extremely important reading effect:

10. ENTERTAINMENT!

With all the benefits that come with reading, the book can be an ideal gift for any occasion!

Well, I have seen that some sort of competition going around the social media about posting the front cover of your favourite book for 7 days.

I had failed to see school or college students pick up the trend gleefully.

My appeal is to all my friends to build up the reading habits in the young minds rather than scolding them for the lack of it.










সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া