অবশেষে জয়ী র বিয়েটা
হয়েই যাচ্ছে !ভাবতে পারছেনা ইমন ।জয়ী কাল থেকে অন্য কারও হয়ে যাবে ! বুকের
কাছে কেমন একটা দলা পাকানো কষ্ট ! অথচ ওই ই তো জয়ী কে বুঝিয়েছে বাবা -মা
র পছন্দ মতো ছেলেকে বিয়ে করে সুখী হতে ।"আমার কথা ভুলে যা জয়ী" !
নিজে কি ভুলতে পেরেছে ? সেই কলেজ থেকে ওদের বন্ধুত্ব । নরম সরম মিষ্টি মেয়েটা খুব সাধারণ । ইমনের মত বিত্তশালী পরিবার থেকে নয়
নেহাতই মধ্যবিত্ত পরিবারের সাদামাটা মেয়ে জয়ী । একটু নরম বলেই কলেজের দাদা
গোছের সিনিয়র রা একটু দাদাগিরি করতে এসেছিলো ওর সঙ্গে ,ইমন একদম কড়কে দিয়েছিল
প্রথম দিকেই ! সেই থেকেই জয়ী টা কিছু টা কৃতজ্ঞতা বশেই ভাব জমিয়েছিল ওর সাথে
! ইমন , জয়ী , অনুরাগ , পৌলমী আর সায়ন --এদের একটা বেশ দল তৈরী হয়ে গেছিলো ফার্স্ট ইয়ারে ই --একসাথে কলেজ কাট , মুভি দেখা --জমেছিল বেশ ! আস্তে
আস্তে কলেজ পেরিয়ে বন্ধুত্ব টা গড়িয়েছিল ইউনিভার্সিটি তেও -ইমন , জয়ী , সায়ন একই
সঙ্গে , অনুরাগ পাড়ি দিয়েছিল মুম্বই আর পৌলমী বসেছিল বিয়ের পিঁড়ি তে
--উচ্চশিক্ষার সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে !
আস্তে আস্তে ইমন টের পাচ্ছিল জয়ী র প্রতি ওর পোসেসিভনেশ টা
বড্ড বেড়ে যাচ্ছে ! জয়ী আর সায়ন নিছক গল্প করলেও ইমনের যেন সহ্য হচ্ছিল না বুঝতে
পারছিল ইমন।বন্ধুত্ব টা আর শুধু বন্ধুত্বে থেমে নেই,হয়তো আর ও কিছু ------
পরীক্ষার আগে জয়ী র বাড়ি গিয়ে কনসাল্ট করে পড়া করার
একটা ছুতো তৈরি করে নিয়েছিল ওরা -স্টাডি লিভের সময় টাও যাতে ওদের দেখা সাক্ষাতের
ব্যাঘাত না ঘটে ! জয়ী র মা ও খুব স্নেহ করতেন ওকে।ঘরে যা আছে তাই দিয়েই
আপ্যায়ন করতেন। একেকদিন তো আলুপোস্ত -মাছের ঝোল দিয়েই সোনামুখ করে ওখানেই লাঞ্চ
সারতো ইমন।কাকিমা ছাড়তেন না,বড় স্নেহ করতেন !বলতেন,"তোমার বাবা -মা
এখানে থাকেন না।ঠাকুর চাকরের হাতে ভালো করে খাওয়া হয়না নিশ্চয় তোমার!" অর্ধেকদিন বিদেশে কাটানো উচ্চবিত্ত বাবা -মার সময় কোথায় ছিলো ইমন কে নিয়ে ভাববার
! তার চেয়ে জয়ী দের বাড়ি টা বেশ ।কেমন যেন সবার সঙ্গে সবার বন্ডিং টা বেশ
দৃঢ় !
জয়ী টা ও কেমন যেন দিন দিন ইমন নির্ভর
হয়ে পড়ছিল ! প্রায়ই বলতো,"ইমন তোকে ছাড়া আমি বাঁচতেই পারবো না রে !" ইমন ও জয়ী কে জড়িয়ে ধরে আলতো করে একটা চুমো দিতো ঠোঁটে্আ ,অশ্লেষে চোখ বুঁজতো
জয়ী ! সবার অলক্ষ্যে এভাবেই গড়াচ্ছিল সম্পর্ক টা ।
ঘটনা টা ঘটে গেলো সেদিন ।কনসাল্ট করে পড়ার ছুতোয় আবার
জয়ীদের বাড়ি ইমন ---সেদিন বোধহয় একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিল ইমন --জয়ী কে জোর করে
টেনে বুকের মধ্যে চেপে ধরেছিল ,বার বার ওর নরম ঠোঁটে এঁকে দিচ্ছিল ওর পুরুষালী ভালোবাসা।জয়ী বলেছিল," ছাড় ইমন কেউ দেখে ফেলবে ।" দেখেছিল জয়ী র টুয়েলভে পড়া
বিশ্বপাকা ভাই টা ! সঙ্গে সঙ্গে মা কে নালিশ,"মা, এসব বেলেল্লাপনা এ বাড়িতে
চলবে না বলে দিচ্ছি । সায়ন দা আমাকে আগেই এরকম হিন্টস দিয়েছিল।এখন দেখছি
ব্যাপার টা সত্যিই ! "
জয়ী র মা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে
গেছিলেন ,এ কি করে সম্ভব ! এতটা ভালোবেসেছিলাম ইমন কে ,শেষে কি না এই !
জয়ীর বাবা ও ঘরে ছিলেন তখন ।কঠিন গলায় বললেন,"তুমি আর জয়ী র সঙ্গে কোন সম্পর্ক
রেখো না আজ থেকে !" জয়ী মাথা নিচু করে তখন নীরবে কেঁদে চলেছে ! ইমন ও
বেরিয়ে এসেছিল সেই মুহূর্তে .
জয়ী বার বার ফোন করেছিল ইমন কে
বোধহয় সবাই কে লুকিয়েই ।কান্নাভেজা গলায় বার বার বলেছিল,"তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো
কি করে!"
এরপর মাস খানেকের মাথায় জয়ী র বিয়ে ঠিক করে ফেললো ওর বাবা মা,মাস্টার্স এর ফাইনালটা ও দিতে দিলো না !
আগামী কাল ই সেই অভিশপ্ত দিনটা ।নাঃ আর ভাবতে পারছে না ইমন ।বুক ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়,দুচোখে র বালিয়াড়ি জুড়ে দু এক ফোঁটা লবণাক্ত জল ও
বুঝি ! কিন্তু হাপুস করে কাঁদতে পারছে কই !
প্রয়োজনীয় সব জিনিস গোছানো কমপ্লিট।আজ ই লন্ডন পাড়ি দেবে বাবা -মা র কাছে
! হয়তো পালিয়ে ই যাচ্ছে এ শহর ছেড়ে ! পুরনো একটা অ্যালবামে হাত
বুলাচ্ছে পরম যত্নে --ওর আর জয়ী র কত অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ধরা আছে এতে --ও হ্যাঁ এটা
ও তো নিতে হবে ! একটা ব্যথা ছেয়ে আছে মনে ,কেন এমন হয় শুধু ওরই সঙ্গে ?জীবন টা
কি শুধুই অপ্রাপ্তি র গল্প ! বাবা -মায়ের স্নেহময় মনোযোগ ওকে পেতে নেই ,
আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক জীবন ওর প্রাপ্য নয়,সহজ নিয়মে ভালোবাসা ওকে
পেতে নেই ।যদি বা পায় --সেই ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবনের পথে তার হাঁটতে নেই !
বিষাদে ভরে আছে মনটা !
হঠাত্ সম্বিত ফিরল ড্রাইভারের ডাকে,"সাব,গাড়ি রেডি হ্যায় সামান লে
যাঁউ ?"
"হাঁ হাঁ লে যাও ! "
আসতে আসতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো,অপ্রাপ্তি র যন্ত্রণাটাই
না হয় আজীবনের সঙ্গী হল আজ থেকে !
অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা সারা জীবনের সঙ্গী সত্যি সত্যি হয়ে যায় কারুর কারুর ॥
ReplyDelete