একমনে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলো রিখি,দুপুরের এই সিরিয়ালটা ক্রমশঃ ওর মন কেড়ে নিচ্ছে, মাত্রই তো বারোটা এপিসোড হয়েছে,কিন্তু এটা ওর অন্যতম প্রিয় সিরিয়াল হয়ে উঠেছে।
চার বছর হলো রিখি আর অভিকের বিয়ে হয়েছে, এখনো ওদের কোনো সন্তান না হওয়ায় রিখির কিছুতেই সময় কাটতে চায়না, অভিক সকাল আটটায় অফিসে বেরিয়ে যায়, বাড়ির কাজ সারার পরেও হাতে অনেক সময় থাকে, ঘরের জিনিষপত্র ঝাড়পোঁছ করে, টুকিটাকি রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করেও রিখির কিছুতেই সময় কাটেনা।
এখন এই সিরিয়াল গুলোই ওর সব সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
রিখি বুদ্ধিমতি হলেও খুব আবেগপ্রবণ মেয়ে। সিরিয়াল দেখতে দেখতে কখন যেন সিরিয়ালের কোনো একটি চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করে নেয়, এই যেমন ওর এই প্রিয় সিরিয়াল 'মুক্তির স্বাদ'- এ চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ তৃষার মধ্যে নিজেকে আর তৃষার স্বামী রঞ্জনের মধ্যে অভিককে খুঁজতে চেষ্টা করে।
----
অভিক আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে, রিখি আলুর পরোটা করবে ভেবে সব রেডি করে রেখেছিল, অভিক বাড়ি এসে গেছে দেখে ঝটপট করে গরম গরম আলুর পরোটা করে দিলো।
অভিক তো খুব খুশি, ''এই না হলে আমার বউ!''
রিখি বায়না করলো, ''চলো না আমরা একটু বেরিয়ে আসি।''
রিখির ইচ্ছেয় ওরা একটা শপিং মলে ঢুকলো।
এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে করতে রিখির একটা ড্রেস খুব পছন্দ হয়ে গেলো, কিন্তু অভিককে ও কিছুই বললো না, সিরিয়ালের তৃষা যেমন মলে গিয়ে ড্রেস পছন্দ হওয়াতে বারবার ড্রেসটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো, আর তারপর রঞ্জন ওর মনের কথা বুঝে পরদিন ড্রেসটা কিনে এনে ওকে সারপ্রাইজ গিফ্ট দিয়েছিলো... সেই মোমেন্টটা মনে করেই ওর মন ভালোলাগায় ভরে গেলো... রিখি,তৃষার অনুকরণে ওই ড্রেসটার গায়ে বারবার হাত বোলালো, নিজের গায়ে ফেলে দেখলো, কিন্তু অভিককে একবারও বললো না যে ও ওটা কিনতে চায়।
পরদিন অভিককে অফিস থেকে খালি হাতেই ফিরতে দেখে রিখির মন খুব খারাপ হয়ে গেল...ইশ, অভিক কেনো রঞ্জনের মতো রোমান্টিক নয়,ইদানিং ও মনে মনে অভিকের প্রতিটা কাজে রঞ্জনের সাথে তুলনা করে।
রঞ্জন অফিস থেকে একটু দেরি করে ফেরে ঠিকই, কিন্তু তাতে কি.. তৃষার জন্য যে মাঝে মাঝেই দামি দামি গিফ্ট আনে!
বাড়ি ফিরেই তৃষাকে কত আদর করে!
রিখি মন খারাপ নিয়ে উঠে যায়, চা,খাবার এগিয়ে দেয়।
অভিক জিজ্ঞেস করে, ''কি ব্যাপার,ম্যাডামের কি শরীর খারাপ না মুড অফ? নাকি, তোমার তৃষা-রঞ্জনের ঝগড়া হয়েছে?"
"মোটেই ওদের ঝগড়া হয়না, রঞ্জন খুব ভালোবাসে তৃষাকে, ওর কত খেয়াল রাখে!"
"তা,ভালোবাসলে বুঝি ঝগড়া হতে নেই? আমার তো মনে হয় ভালোবাসায় ঝগড়া হবেই! "
রিখি কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তখন ওর মনের মধ্যে অনেক কথার ঝড় চলছিলো, আসলে ওর চাওয়া অনুযায়ী সব কিছু মিলছিলো না, তাই মনের মধ্যে কোথাও একটা হতাশা, ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিলো।
রিখি কিছু বললো না দেখে অভিকও চুপ করে গেলো।
দিন কয়েক পরে রিখি, অভিক অফিস থেকে ফিরতেই ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো, বললো,''তুমি তুমিই থেকো, তোমাকে 'রঞ্জন' হতে হবেনা!''
অভিক বুঝলো সিরিয়ালে কিছু দেখেই এই রিঅ্যকশন---
কিছুক্ষন পর, রিখি নিজেই বলতে শুরু করলো, ''জানো ওই রঞ্জনের অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন আছে, আর সেজন্যই ও রাত করে বাড়ি ফেরে, বউয়ের সাথে সবসময় মিষ্টি করে কথা বলে, দামি দামি গিফ্ট দেয়", তারপর নাক কুঁচকে বললো, ''ছি:, কি বাজে লোক!''
অভিক তখন একটা প্যাকেট রিখির হাতে দিয়ে বলে, ''খুলে দেখো!''
রিখি তাড়াতাড়ি খুলে দেখে, সেদিন মলে দেখা ওর পছন্দের ড্রেসটা!"
অভিক বললো, "সেদিন তোমার মুখ দেখেই বুঝেছিলাম এই ড্রেসটা তোমার খুব পছন্দ হয়েছে, কিন্তু মাসের শেষে তখন আমার কাছে বেশি টাকা ছিলোনা, আজ স্যালারি পেয়েই এটা কিনে আনলাম।"
রিখির দুচোখে তখন জল, ও অভিককে কত খারাপ ভেবেছে এই কদিন, কতবার মনে হয়েছে অভিক ওকে একটুও ভালোবাসে না!
ও ড্রেসটা সরিয়ে রেখে বললো, "আমার এই দামি গিফ্ট চাইনা, শুধু আমাকে ভালোবেসো তাহলেই হবে", তারপর, চোখেমুখে কপট রাগ ফুটিয়ে বলে উঠলো, ''এই, তোমার আবার কোনো মেয়ের সাথে ভাব হয়নি তো?"
"ধুর পাগলি, আমার বউটার মতো মিষ্টি মেয়ে আর একটাও আছে নাকি!"
রিখি অভিকের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে ভাবতে লাগলো, আর কখনো আমি অভিকের সাথে কারুর তুলনা করবোনা, ওই সিরিয়ালের ক্যারেক্টারগুলোর সঙ্গে তো নয়ই--
No comments:
Post a Comment