জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্
ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত, অভিমানে , মনটা ভরে যেত দুঃখে । শিক্ষিত বাবার ওপর ছিল তার অগাধ বিশ্বাস , সেই বাবা কি করে এরকম এক
সংষ্কারে আচ্ছন্ন পুরাতনপন্থী মনোভাবের পরিবারের সাথে তার বিয়ে দিলেন, যে বাড়ীর কাছে শিক্ষার কোন মূল্য নেই, যারা জীবনের দাম
বিচার করে পয়সা দিয়ে , তাদের বাবা ব্যাবসা করে অনেক পয়সা করেছেন তাদের
তিনতলা বাড়ী , অতএব যে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে আনা হয়েছে তার সাথে কাজের
লোকের মতন ব্যবহার করা যায়, তাকে যথেচ্ছ অপমান করা যায় ।
এ বাড়ীর মেয়েরা এক অদ্ভুত অহঙ্কারে আবর্ত ছিল । তারা
মনে করত তাদের বাবা যেহেতু নিজে হাতে একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন , যেহেতু তিনি পূজা আচ্ছা দিয়ে নিজের জীবনটাকে মুড়ে রেখেছিলেন , তাই তিনি ছিলেন অনেক ওপর তলার মানুষ আর যাকে বিয়ে দিয়ে আনা হয়েছে তার
বাবা মাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অপমান করা যায়। এখানেই দিয়ার ছিল সব চেয়ে বেশী অপমান আর দূঃখ ,কারণ দিয়ার বাবা সমাজে যথেষ্ট গণ্যমাণ্য ব্যক্তি ছিলেন। স্বনামধণ্য সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক ছিলেন । তখনকার
দিনের অনেক নাম করা কবি সাহিত্যিকের সাথে তাঁর ওঠা বসা ছিল, কর্ম জগতেও তিনি যথেষ্ট ওপর তলার মানুষ ছিলেন । দিয়া এবাড়ীতে খালি হাতে আসেনি এবং পায়ে হেঁটেও আসেনি ,তাকে দেখেশুনে পছন্দ করে নিয়ে আসা হয়েছিল, তবুও তাকে
প্রতিমূহুর্তে অপমান আর তাচ্ছিল্যকে মেনে নিতে হত । সে মেনেও নিত কারণ সে ছিল অতি শিক্ষিত বাড়ীর মেয়ে । কাউকে অপমান করে নিজেকে ছোট
করতে চাইতনা , এই ছিল তার বাবা মায়ের শিক্ষা।শুধু বাবামায়ের অপমান
বা বাবা সম্বন্ধে কোন অপমান জনক উক্তিকে মেনে নিতে তার বুকটা ফেটে যেত,কিন্তু মুখ ফুটত না । তার মনে হত এরা শুধু জীবনে পয়সাই চিনেছে আর কিছুই শেখে নি, এই বাড়ীতেই এদের সঙ্গে দিনের পর দিন এই ভাবে অপমানের সঙ্গে দিন কাটাতে কাটাতে দিয়ার মধ্যে এক তীব্র শক্তি ,প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠছিল । সে সারাদিনের পরিশ্রমের পর যখন রাতে শুতে যেত তখন
খুলে বসত তার ডায়েরী ,লিখে চলত তার প্রতিদিনের যত পাওয়া না পাওয়া ,মান
অপমানের কথা। তার মনে হত আজ যে জবাব সে নিজে দিতে পারছেনা , একদিন না একদিন ঈশ্বর তার জবাব নিশ্চয় দেবেন । তাই সে নীরবে তার কাজ করে যেত, চেষ্টা করত তার কর্তব্যে যেন কোন ফাঁক থেকে না যায়। আর একটা কাজ সে করত, দুই মেয়েকে নিজের সবটুকু দিয়ে
মানুষের মতন করে তুলতে, শুধু পড়াশোনায় নয় ; গুরুজনদের সন্মান করা্, কাজের লোকদের কাজের লোক না ভেবে
তাদের মানুষ ভাবা , পারলে কারও উপকার করা ,অপকার না করা, আর স্বার্থপর না হয়ে একটু অন্যের কথা ভাবতে শেখা , সবচেয়ে বড় শিক্ষা সে তাদের দিয়েছিল উপকারীর উপকার না
ভুলে যাওয়া অর্থাৎ অকৃতজ্ঞ না হওয়া । তার ভাবতে ভাল লাগে তার মেয়েরা
তার শিক্ষায় বড় হয়ে উঠেছে , তার দুই মেয়েই মানুষের মতন মানুষ হয়েছে, যখন পাঁচজনে বলে তোর মেয়ে দুটো বড় সুন্দর হয়েছেরে, তখন তার মনে হয় এ তারই সৃষ্টি।
ক্রমশ
পড়তে পড়তে হারিয়ে ফেলছি নিজেকে। বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার অপেক্ষা...
ReplyDelete