সেটা ১৯৮০
সাল, মাধ্যমিকের ফল বেরল। রেডিওতে খবর পাওয়া মাত্রই বাবার উদ্বেগ। পরের দিন সকালেই
ছুটলাম লাইন দিতে নির্ধারিত বইয়ের দোকানে। গেজেট বেরোবে, আর গেজেট দেখেই প্রাথমিক
ভাবে ফল জানা যাবে। ফল বেরোল, ভালভাবে স্টার পেয়ে পাস করলাম মাধ্যমিক। দুর্গাপুর
বয়েস স্কুলের কৃতি ছাত্র ছিলাম। স্কুলের নাম রেখে ভালো নাম্বার পেয়ে পাস করার পর
বাবার হাত ধরে কলকাতা, উদ্দেশ্য নামী স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি। সেই থেকেই
কলকাতায় চলে আসা। সেন্ট জেভিয়ারস থেকে পাস করে প্রেসিডেন্সি তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে স্নাতকোত্তর সেরে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির চাকরি। এই জায়গা ওই জায়গা ঘুরে
শেষে বর্তমানে মুম্বাই। মাঝে দুর্গাপুর যাওয়া খুব কম সময়ের জন্য। আর বাবা ১৯৮৫ তে
রিটায়ার করার পর সেই পাঠ একদম চুকে গেছিলো। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো শৈশবের বন্ধুরা,
স্মৃতির খাতায় ধুলো জমে সেই দিনগুলো হারিয়ে যেতে বসেছিল যদি না গত বছর এয়ারপোর্টে
দেখা হতো আসিফের সঙ্গে।আসিফের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই দেখা হতো কলকাতায় পড়ার সময়। ও
পড়তো সিটি কলেজে। পরে কলকাতা পুলিশের চাকরি পেলো। সেই পর্যন্ত খবর ছিল, কিন্তু গত
বছর এয়ারপোর্টে দেখা হওয়ার পর যোগাযোগ আবার শুরু। সেল নাম্বার বিনিময় আর মোটামুটি
নিয়মিত যোগাযোগ। ওঁর মাধ্যমে যোগাযোগ হোল পলাদির সঙ্গে। আমি রজত বাসু, দুর্গাপুর
চললাম আজ আবার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে মিলনের জন্য। অনুষ্ঠান হবে বাবুলের বাড়ি,
পলাদি আয়োজক, যদিও থাকেন কলকাতায়, ওঁর এনার্জি আজও সেই আগের মতোই। শুনলাম বিজয়, কবীর, শুভ আর অহনা আসছে। ওরা প্রায় সব্বাই সোশ্যাল
নেটওয়ার্ক করে। যদিও সময়ের অভাবে আমার সেই ব্যপারটা আজও হয়ে ওঠেনি। সঙ্গে যাবে
আসিফ। ও উঠবে কালীঘাট থেকে। প্রায় তিরিশ বছর পর সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে যাদের
সঙ্গে বড় হওয়া।
হয়তো আজ দেখা না হলে
পাশ দিয়ে চলে গেলেও চিনতে পারতাম না কোনদিন। আসিফের একান্ত ইচ্ছে কে মর্যাদা না
দিয়ে পারলাম না। বিশেষ কাজে কলকাতায় এসে তাই একদিনের মুক্তি রোজকার ছদ্মবেশের জীবন
থেকে।আমার কলকাতায় কাজে আসার সময় মাথায় রেখেই ওরা প্রোগ্রাম ঠিক করেছিলো।ভীষণ
নস্টালজিক লাগছে ভাবতে। কালীঘাট থেকে আসিফ গাড়িতে উঠলো। গাড়ি চলল কোনা
হয়ে দুর্গাপুরের পথে।
গাড়িতে উঠে আসিফের
প্রশ্ন,কেমন আছিস,কাজ কর্ম মিটল তোর। কতদিন বাদে আবার সবার সঙ্গে দেখা হিসেব করে
দেখলি। প্রায় ৩০ বছর। কতজনের জীবনে কতো পরিবর্তন চেহারায় বা প্রাত্যহিক জীবনে সেটা
ভাবতে পারছিস। বাবুল যেমন আজ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, দুর্গাপুরে বিশাল নাম ডাক,
বিয়ে করেছিলো টেঁকে নি। বিজয় কলকাতায় থাকে, ছোটবেলার
লেখা লেখি নিয়ে আজও আছে, শুনেছি কোন পত্রিকায় লেখে। কবীর থাকে দুর্গাপুরেই, বীমার
এজেন্সি করে। শুভ সেই একই রকম আছে মজার মানুষ, শুনেছি একটা মনোহারী দোকান
করেছে।অহনা বর্ধমানে থাকে, ওঁর কত্তা স্কুলের শিক্ষক, ও আসবে ট্রেনে। বিড়ি খাওয়া
ছেড়ে দিয়েছিস নাকি খাচ্ছিস।আর দারু? একদমে কথা বলে থামল আসিফ। নাহ, বিড়ি পুরদমে
খাচ্ছি, আর দারু সপ্তাহান্তে, বললাম। পলাদি কলকাতায় বিয়ে হয়েছে এক মাড়োয়ারি
পরিবারে। শুনেছি ওঁর কত্তা খুব ভালো মানুষ। ওরা দুজনেই যাচ্ছে দুর্গাপুর, ওঁর
কত্তা বিজনেসের ব্যপারে যাচ্ছেন। পলাদিকে নামিয়ে দিয়ে যাবেন, আবার ফেরার পথে তুলে নিয়ে আসবেন।আর পলাদি, আজও একই রকম হাসি খুশি আমুদে
আর দুর্দান্ত আয়োজক, বলল আসিফ। বিজয় ওঁর ফ্যামিলি নিয়ে আসছে, ওঁর শ্বশুরবাড়ি
দুর্গাপুর। বউকে ওখানে রেখে আসবে। আর তোদের পাশের বাড়িতে থাকতো সেই অহনা বর্ধমানে
থাকে। সব্বাই আসবে বলে জানিয়েছে, বলল আসিফ। কথা বলতে বলতে শক্তিগড় এসে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে
একটু চা খেয়ে নিলে হয়না? বলল আসিফ। চা
খেয়ে আবার যাত্রা শুরু, ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে দুর্গাপুর, বাবুলের বাড়ি। বিশাল দুধ
সাদা রঙের বাড়ির ফটকে নাম লেখা বাবুল নন্দী। কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে দাঁড়ালো
একজন সুঠাম চেহারার ভদ্রলোক, একগাল দাঁড়ি ভরা হাসিমুখে সেই ছোটবেলার বাবুলকে চিনে
নিতে অসুবিধে হোল না। জড়িয়ে ধরল আমাকে, বলল কিরে কেমন আছিস, কতদিন পর তোর সঙ্গে
দেখা, আয় আয় ভেতরে আয়।
মুল দরজা দিয়ে বাড়ির
ভেতর গেলাম, এক তলার বসার ঘর পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম দোতলায়, বাবুলের পিছু পিছু,
সঙ্গে আসিফ। বেশ বড় একটা ঘরে দুজন বসে আছে, আমি ঢুকতেই উঠে দাঁড়ালো। কিরে চিনতে
পারছিস রজত, বলে এগিয়ে এলো সুন্দর দেখতে যেই মানুষটি, বুঝে ওঠার আগেই বলল,
আমি কবীর, নিশ্চয়ই চিনতে পারিস নি, বলে জড়িয়ে ধরল কবীর। ছোটবেলায় ভীষণ দুরন্ত ছিল,
নানা রকম বিটকেল দুষ্কর্মের নায়ক ছিল, আর ছিল মহিলাদের সম্মোহনের রাজা। এখন ও কি
তেমনই আছিস, জিজ্ঞাসা করলাম কবীরকে। সেই পুরনো মেজাজে, একই রকম? জোরে হেসে উঠলো
কবীর, আরে এখন কি আর সেই বয়স আছে নাকি সেই উদ্যম, তা ছাড়া এখন আমি পাক্কা সংসারি মানুষ, বলে কবীর। এরপর
শুভ হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে গালে আদর করে কেঁদে ফেললো, কিরে চিনতে পারছিস, দ্যাখ
আমার সব চুল পেকে গেছে ৩০ বছরের প্রবহমান সময়ের ফাঁদে। তোর সঙ্গে কতো সুখ দুঃখ ভাগ
করতাম, কতদিন একসঙ্গে স্কুল ছুটি হওয়ার পর বসে গল্প করেছি মাঠে, বলল শুভ।কথা বলতে
বলতে আবার বেলের আওয়াজ। বাবুল নেমে গেলো দরজা খুলতে। এদিকে রান্না চলছে বাবুলের
রান্নাঘরে,কেয়ার অফ কাশিদা, বাবুলের রাধুনি কাম ঘর সামলানোর ভার প্রাপ্ত। গলার
আওয়াজ শুনে বোঝা গেলো কোন মহিলার আগমন হয়েছে। খানিক বাদে বাবুল এলো পলাদিকে সঙ্গে
নিয়ে। কিরে রজত, কতদিন পরে তোকে দেখছি, কেমন জেনটেলম্যান হয়ে গেছিস রে, সেই ছোট
রজত কোথায়, বলল পলাদি। অহনা আর বিজয় এখনও আসে নি... জিজ্ঞাসা করলো পলাদি। বাবুল
বলল বিজয় ট্রেনে ওঁর গিন্নিকে নিয়ে আসছে, দুর্গাপুরে নেমে শ্বশুরবাড়িতে ওঁকে রেখে
আসবে। আর অহনাও বর্ধমান থেকে ট্রেনে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরাও এসে পরবে।
এদিকে বর্ধমান স্টেশনে
অহনা দুর্গাপুর গামী ট্রেনে উঠে বসেছে একটা সিটে। উল্টোদিকে এক ভদ্রলোক ও তার
গিন্নি বসে। বার বার ভদ্রলোক ওঁর দিকে তাকাচ্ছে, খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো, কিছুক্ষণ
পর ওঁর গিন্নিও খেয়াল করেছে ব্যপারটা।কত্তা গিন্নি খুব ফিসফিস করে ঝগড়া করতে শুরু
করলো। উপলক্ষ অহনা নিজে, সেটাও বুঝতে পারলো। কিন্তু কেন ভদ্রলোক ওঁকে এমন ভাবে
দেখছে বুঝতে পারছিলো না অহনা। দুর্গাপুর আসতেই নেমে পড়লো, খেয়াল করলো ওই পরিবারও
দুর্গাপুরেই নামলো। স্টেশন থেকে বাস ধরল, কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলো বাবুলের
বাড়ি।
আড্ডা জমে উঠেছে পলাদি
আসার পরই। আবার বেলের আওয়াজ, বাবুল উঠলো, দরজা খুলে নিয়ে এলো অহনাকে। চিনতেই
পারছিলাম না, কতো পরিবর্তন, কি সুন্দর লাগছে অহনাকে। দেখে খানিকক্ষণ চুপ করে
রইলাম। আমার পাশেই এসে বসলো। বললাম কিরে চিনতে পারছিস? অহনা বলল রজতদা তোমাকে আমি
চিনতে পারবো না সেটা ভাবলে কি করে? আবার বেলের আওয়াজ, বিজয়কে নিয়ে আসরে ঢুকল
বাবুল। আমাদের সব্বাই এসে গেছে, এইবার বলেদি, নিচের একটা ঘর মহিলাদের জন্য রাখা,
আর আমাদের ছেলেদের জন্য ওপরের ওই ঘরটা। আড্ডা মারতে মারতে কারো একটু বিশ্রাম
নেওয়ার প্রয়োজন হলে ওই ঘর দুটোয় যেতে পারো। বিজয় ঢোকার পরই এক দারুণ ঘটনা ঘটলো।
আরে ট্রেনএ আপনার সঙ্গে এতো চোখাচোখি, আমার গিন্নির সঙ্গে ঝগড়া হয়ে
গেলো......আপনি...অহনা,তাই তো? দ্যাখতোকে দেখে চিনতে পারছিলাম অল্প অল্প, কিন্তু
সাহস করে জিজ্ঞাসা করতে পারছিলাম না ট্রেনে, বলল বিজয়। ওহ তুমিই বিজয়দা, তুমি অমন
ভাবে দেখছিলে আমাকে আমিও ঘাবড়ে গেছিলাম, কিন্তু খুব চেনা চেনা লাগছিলো, ইশ দ্যাখো
তো কি কাণ্ড ছোটবেলার বন্ধুকে চিনতে পাড়ি নি, বলল অহনা। আমি তো তোকে চিনতে পেরেছিলাম,
আমার বউকেও বলেছিলাম, তারপর দেখলাম তুই চিনতে পারছিস না, বউ ও অশান্তি শুরু করলো,
কোন অচেনা মহিলার দিকে নজর দিচ্ছি বলে, তাই চুপ করেই রইলাম ট্রেনে, বলল বিজয়। তুই
তো শালা মেয়েদের দিকে দেখতি না, বুড়ো বয়সে এমন ভিমরুতি ধরেছে বুঝি তোর, কবীর হেসে
বলে উঠলো।
কথার মাঝেই বিজয় গিয়ে
প্যান্ট চেঞ্জ করে লুঙ্গি পরে এসে বসলো আড্ডায়।
তোরা কেউ চেঞ্জ করবি না...জিজ্ঞাসা করলো বাবুল। মাথায় বেণী করা চুল, লুঙ্গি
পরা আঁতেল বিজয়কে দেখে সব্বাই আওয়াজ দিতে শুরু করলো। যদিও ছোটবেলা থেকেই ও একটু
অন্য রকম ছিল, তবে এমন টোটাল আঁতেল হয়ে গেছে, আজ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না।
আড্ডার শুরু হল নিজেদের পরিবার সম্পর্কে বিবরন দিয়ে। পলাদির দুই মেয়ে, বড় মেয়ে
ডাক্তারি পড়ছে, ছোট মেয়ে ল পড়ছে। কত্তা ব্যবসা করেন, সুখী সংসার। বাবুলের খুব দুঃখ
জনক পারিবারিক জীবন। একটা বিবাদের সুত্রে গিন্নির সঙ্গে বিচ্ছেদ। তারপর নিঃসন্তান
বাবুল আর বিয়ে করে নি। কবীরের এক ছেলে, ক্লাস ১২ এ
পড়ছে। গিন্নি গৃহবধূ।শুভর এক মেয়ে, স্নাতক হয়েছে, বিয়ের দেখা শোনা চলছে। বিজয়ের এক
ছেলে, কমার্স নিয়ে পড়ছে কলকাতায়, গিন্নি ঘর সামলায়। অহনার স্বামী স্কুল শিক্ষক, ও
নিজে একটা এনজিওর সঙ্গে জড়িত। আসিফের দুই ছেলে, বড় জন রিসার্চ করছে বিদেশে, ছোটজন
ক্লাস ১২ এ পড়ছে। আর আমার সংসার এক ছেলে আর গিন্নিকে নিয়ে। ছেলে সাংবাদিকতা নিয়ে
পড়াশুনো করছে, গিন্নি নিজের ব্যবসা করছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের, বাড়িতে ঘর সামলায়
কাজের লোক রেখা।
কথা বলতে বলতে বাবুল
একটা জ্যাক ড্যানিয়েলের বোতল নিয়ে এলো। চিয়ার্স করে খোলা হল। ৭ টা গ্লাসে সাজানো
হল পেগ। অহনা খায় না, আর পলাদি সঙ্গ দিতে একটা পেগ নেবে। বিজয় শুরু করলো
পুরনো কথা। কিরে মনে আছে রজত, তোর টিফিন একদিন আমি খেয়ে নিয়েছিলাম, লুচি আর আলুর
দম, তুই স্যরকে বলে দিয়েছিলি, কি প্যাঁদানি খেয়েছিলাম, তারপর যদিও আমি তোর কাছে
দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম। আর একবার তোর খাতা থেকে টুকছিলাম, বলাই স্যর এসে এক গাঁট্টা
দিয়েছিল, খাতা কেড়ে নিতে গিয়েছিল, কিন্তু তুই বারন করেছিলি। সেই দিন গুলো কোথায়
যেন চলে গেলো। আর ওই কবীর, রোজ একজন নতুন প্রেমিকার গল্প জুড়ে দিতো, কোনদিন কুহেলী
না হয় অপর্ণা। মেয়েদের ব্যপারে কি দুর্বল ছিলি কবীর। এখন ও কি মেয়েবাজি করিস নাকি,
জিজ্ঞাসা করে কবীরকে। বিজয় তুই তো নন্দিতার জন্য কতো কবিতা লিখে পাগল হয়েছিলি,
তারপর তোর সামনে দিয়ে নন্দিতাকে নিয়ে চলে গেলো কল্লোল, চেঁচিয়ে বলে উঠলো কবীর। শালা
আমি না হয় একজনের জন্য কবিতা লিখতাম কিন্তু তুই কি করে এতো মেয়েকে বশ করে ফেলতি,
বলি রহস্যটা কিরে কবীর, বলল বিজয়। দুজনের তরজা বেশ জমে উঠেছে, আমরা সব্বাই বেশ
উপভোগ করছি।সুভ হঠাৎ গান ধরল পুরান সেই দিনের কথা...সব্বাই গলা মেলালাম। তুই তো
শালা গান করে মেয়েবাজি করতিস,কবীর সুভর পেছনে লাগলো। কতো মেয়ে সুভদা সুভদা করে তোর
কাছে আসতো, মাঝে যে এক আধজনকে আমিও ফাঁসানোর চেষ্টা করি নি তা বলব না, তবে তুই বস
সত্যি মাস্টার ছিলি গানের ব্যপারে।বাবুল ছিল খেলার জগতের মানুষ, ফুটবল খেলা নিয়ে
কতদিন সন্ধ্যে গড়িয়েছে, বাড়ি যেতে স্কুল থেকে, বললাম আমি। এখন খেলা দেখিস তো
বাবুল, জিজ্ঞাসা করলাম।তোর মনে আছে রজত, সেইবার ক্লাস সেভেনের সঙ্গে আমাদের ফুটবল
খেলা। আমাদের কোচ ছিলেন রঞ্জিত স্যর। সেভেনের কোচ ছিলেন লোকেশ স্যর। রঞ্জিত স্যর
আর লোকেশ স্যরের মধ্যে একটা মানসিক টানাপড়েন ছিল। আমরা ওদের চার গোলে হারালাম,
তারপর রঞ্জিত স্যর আমাদের সঙ্গে সেই প্রথম ও শেষ বারের মতো সিদ্ধি খেয়ে একদম
গড়াগড়ি মাঠের মধ্যে। তারপর স্যরকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসার সময় স্যরের গিন্নি আমাদের
কি সাঙ্ঘাতিক বকা ঝকা করেছিলেন। আমরা সব্বাই হেসে উঠলাম ঘটনাটা মনে করে।গরম গরম
পাকোড়া এলো, পানীয়ের সঙ্গে জমে উঠলো আড্ডা। তুই তো একদম চুপ করে আছিস, কি ব্যপার
রে আসিফ, জিজ্ঞাসা করলো বাবুল। আরে নানা সব্বাই একসঙ্গে কথা বললে হবে? কাউকে তো
শুনতেও হবে, আমি তো বেশ উপভোগ করছি তোদের কথা। মনে পড়ছে পুরনো দিনের কথা, বলল
আসিফ। জানিস বছর দুই আগে আমার ট্রাঙ্ক পরিস্কার করতে গিয়ে কতগুলো প্রেমপত্র বেরোল।
মৌসুমি চ্যাটার্জিরা থাকতো পুরনো বাজারের পেছনে, মনে আছে তোর বাবুল? ওঁর বাবা
ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। প্রেম বিনিময়ের পর এক মাসের মাথায় ওঁর বাবা বদলি হল সিউড়ি।
বেশ কিছুদিন ডাকে প্রেম পত্র আসতো। তারপর সময়ের তালে আমাকে ভুলেই গেলো, কতো চিঠি
পাঠালাম, কোন উত্তর এলো না। ট্রাঙ্ক থেকে লাল হয়ে যাওয়া সেই সব প্রেম পত্র বের করে
পড়লাম, মনটা কেমন করে উঠলো, সেই ছোট মৌসুমি আজ কারো গিন্নি, কোথায় আছে কেমন আছে
জানি না, ওই চিঠিগুলো ফেলে দিলাম। আজ আবার মনে পড়ছে সেই সব কথা, বলল আসিফ। পলাদি
বাবুনদার কথা মনে আছে...জিজ্ঞাসা করে বিজয়। উফফ সেই সময় পলাদি আর বাবুনদা হিট জুড়ি
ছিল। কতদিন পার্কে দুজনে গল্প করত, আমাদের খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে,
সন্ধ্যেবেলায়...আমরা লুকিয়ে দেখতাম, হেসে
বলে সুভ। এই এই এই কি হচ্ছে কি এই সব...জানিস আমি এখন পাক্কা গিন্নি, দুই মেয়ে
নিয়ে সংসার আমার। বাবুনদা জীবনে এক সময় এসেছিলো, আবার সময়ের স্রোতে ভেসে গেছে
কোথাও, বলল পলাদি। তারপর আমার জীবনে এলো আমার স্বামী অখিল। আজও আমার জীবনের
ধ্রুবতারা, পলাদি বলল।

No comments:
Post a Comment