Friday, December 23, 2016

আমার নতুন বছর............রুমুন চক্রবর্তী

  • আমার নতুন বছর
    রুমুন চক্রবর্তী
    • কালের নিয়ম মেনে আবার একটা বছর বিদায় নিতে চলেছে। বিদায় কালে তার ঝুলি ভরে সাথে নিয়ে যাবে কিছু না পাওয়ার কষ্ট, কিছু কান্না, কিছু প্রাপ্তিসুখ, কিছু হাসি, কিছু অঙ্গীকার, কিছু বিশ্বাসভঙ্গতা, কিছু বিনিদ্র রাতের কাহিনী আর কিছু আশা পূরণের সকাল।
      চলতি বছর চলে যাওয়ায় আমরা কেউই যে খুব একটা হতাশ হই বা দুঃখ পাই, তা কিন্তু কখনো মনে হয়নি আমার। বরং লক্ষ্য করেছি আমরা সবাই কম-বেশি খুশিই হই নতুন বছরের আগমনে। তা না হ’লে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এত সব আয়োজনে মেতে উঠতাম নাকি?
      ২৫শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিন আসা মানেই নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানানোর তোড়জোড় শুরু। যদিও এটা খৃষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের একটা মহোৎসব, কিন্তু সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও সমান উৎসাহে পালন করেন বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের আগমনী উৎসব।
      নতুন পোশাক, গির্জায় যাওয়া, আত্মীয় বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, একে অপরকে সুন্দর সুন্দর উপহার দেওয়া, কেক, পেস্ট্রি, চকলেট ও রকমারি খাওয়াদাওয়া --- কত আয়োজন! আলোয় আলোয় সেজে ওঠে শহর। বাড়িতে বাড়িতে রাখা হয় সুসজ্জিত ‘ক্রিস্টমাস ট্রি’, বারান্দায় ঝোলানো হয় ঝকমকে ‘স্টার’। প্রায় সকলেই নিজের নিজের সাধ্যমত সামিল হন এই আনন্দে। সশরীরে দেখা করে বা ফোনে আমরা একে অন্যকে ‘মেরি ক্রিস্টমাস’ এর শুভেচ্ছা জানাই। আজকাল তো আবার ইন্টারনেটের সুবিধে হওয়ায় ঘরে বসেই দেশের যেকোনো প্রান্তে থাকা বন্ধু বা আত্মীয়কে পৌঁছে দিই তাঁদের পছন্দের উপহার ও শুভেচ্ছাবার্তা। তবে একটা জিনিস বদলায়নি। আমি দেখেছি আজও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিশ্বাস করে বড়দিনের আগের দিন রাতে তারা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন বৃদ্ধ ‘স্যান্টাক্লজ’ হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চেপে আসে। তারপর চুপিচুপি এসে একটা মোজার মধ্যে তাদের জন্য উপহার স্বরূপ তাদের প্রিয় খেলনা ও চকলেট রেখে যায়। তাই পরদিন সকালে চোখ খুলে এই কুঁচোকাঁচারা প্রথমেই খোঁজ করে ওই মোজার। এই বিশ্বাস ও প্রাপ্তির আনন্দ - দুটোই অতি প্রাচীন। কত প্রজন্ম ধরে যে এই রীতি চলে আসছে তা হয়ত কেউই ঠিক মত বলতে পারব না।
      পরিনত মানুষদের নতুন বছর নিয়ে উন্মাদনার কারণ বোধহয় ইতিবাচক চিন্তা। যারা বিদায়ী বছরে ভালো ছিলাম তারা ভাবি এ’বছরে আরও বেশি ভালো হবে সব কিছু, আর যারা ভালো ছিলাম না তারাও ভাবি এ’বছর সময় বদলে যাবে, দুঃসময়ের মেঘ কেটে গিয়ে সুদিন আসবে। এইভাবেই প্রতিবার একবুক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন বছরে পা রাখি সবাই। তারপর পাওয়া না পাওয়ার দাঁড়িপাল্লা সামলাতে সামলাতে কখন যে আস্ত একটা বছর পেরিয়ে যায় তা বুঝতেই পারি না। বছরের শেষ দিনে কেউ বলি, বাব্বা বাঁচা গেল, বছরটা বড্ড খারাপ কাটল। কেউ আবার উল্টো সুরে বলি, ইশ্‌... এ’বছরটা কি ভালোই না কেটেছে! ঠাকুর করেন সামনের বছরটাও যেন এমনই ভালোয় ভালোয় কেটে যায়।
      এসবের বাইরেও আমার কাছে নতুন বছরের অন্য গুরুত্ব আছে। পুরনো বছরের শেষ দিনে পিছন ফিরে শুধু পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখিনা বা নতুন বছর আমার জীবনে বিরাট কোন পরিবর্তন আনবে এমন অলীক আশাও করি না। তবে একটা বছর পেরিয়ে যেতে যেতে আমায় যে অল্প হলেও বদলে দিয়ে যায়, সেটা বিলক্ষণ বুঝি। অনুভব করি, পুরোনো বছর চলে যাওয়ার সাথে ছেলেমানুষি কমে গিয়ে আরও একটু পরিনত হয়েছি। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে জীবন ও মানুষকে আরেকটু বেশি চিনতে শিখেছি। ক্ষমা করার প্রবণতা বেড়েছে। বুঝতে শিখেছি মনের কোণে কটু স্মৃতি জমিয়ে রাখলে যন্ত্রণা বাড়ে বই কমে না।
      আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে অল্প বদলে যেতে দেখে কপালে আরও দুশ্চিন্তার ভাঁজ দুই একটা বাড়ে। চুল আগের চেয়ে একটু পাতলা হওয়া মন খারাপ করায়। রগের পাশে রূপোর ঝিলিক খুঁজে না পেলেও গায়ের রঙ আর চামড়ার ঔজ্জ্বল্য কমে যাওয়া বুঝিয়ে দেয় সেই দিনটার দিকে সন্তর্পণে পা ফেলে এগিয়ে চলেছি যে দিনটা একদিন আগাম জানান না দিয়েই আসবে আমাদের সবার জীবনে। সেদিন সে না অপেক্ষা করবে পুরনো বছর যাওয়ার শোক পালনের না করবে নতুন বছর আগমনের উল্লাসের।
      এটাই শাশ্বত।
      তবুও এভাবেই খুশির ডালি সাজিয়ে নতুন বছর এসেছে, আসছে, আবারও আসবে বারে বারে।
      (সমাপ্ত)
    • Today

2 comments:

  1. খুব ভাল লাগল।

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা...।

    ReplyDelete

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া