মিষ্টি মেয়েটা দোল
পূর্ণিমার দিন মায়ের কোলে এসেছিল বলে, তার নাম রাখা হলো "দোল"। অথচ এই
দোলের রঙের সাথেই তার বিবাদ অদ্ভুত রকমের। ছোট থেকেই ও কখনো আবীর মাখা, রঙ নিয়ে
খেলা পছন্দ করেনা।
যৌথ পরিবারের নিয়ম
অনুযায়ী , দোলের দিন সকালে প্রথমে গৃহদেবতার পায়ে , তারপর বাড়ির সব বড়দের
পায়ে আবীর দিয়ে প্রনাম করার চল আছে। এক চিমটি আবীর নিয়ে কোনক্রমে এই নিয়মটুকু
পালন করে পালাতে চাইতো দোল। বাড়ির সবাই ওর এই আবীরে বিরাগের কথা জানতো বলে, ওকে
কেউ আবীর মাখাতো না। শুধুমাত্র দাদুভাই , ইচ্ছে করে তার ছোট গিন্নীর গালে , কপালে
একটু আবীর ছুঁইয়ে দিতেন। তাতেই মেয়ে কেঁদেকেটে একশা করতো।
দোলের দিন নিজেকে
ঘরবন্দী করে রাখতো দোল। অনেক চেষ্টা করেও বন্ধুরা , ওকে কখনও রঙ খেলাতে পারেনি।
এ হেন
"দোলের" জীবনেও বসন্ত এলো তার রূপ নিয়ে।
তাদের বাড়ির নীচের
তলায় ভাড়া এলো "শিমুল" ও তার পরিবার।
শিমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র।
প্রথম দিন দেখাতেই
দুজনের মনে রঙের ছোঁয়া লাগলো। আস্তে আস্তে গাঢ় প্রেমে বাঁধা পড়লো তারা। সম্পর্ক
এমন হলো যে শিমুলের কোনো কথাই আর ফেলতে পারেনা দোল।
ইতিমধ্যে দোল তার আবীরে
বিরাগের কথা শুনিয়েছে শিমুলকে। শিমুল বলেছে, জীবনে প্রথম রঙ সে দেবে দোলকে। দোল
উৎসবের কদিন আগে থেকেই তাই দোল এবার খুব উদগ্রীব হয়ে আছে। শিমুল বলেছে লাল,কমলা,
নীল, সবুজ সব রঙের আবীরের রাঙিয়ে দেবে তাকে। তার সীমন্ত রাঙিয়ে দেবে লাল আবীরে।
তারপর মাথায় ঘোমটা তুলে দেখে নেবে তার বৌয়ের অপূর্ব সুন্দর মুখটা।
শিমুলের রঙে রেঙে ওঠার
নেশায় দোল তার আজন্ম বিরাগ ভুলে খুশিতে ভরে আছে।
শুধু একটা মাত্র শর্ত
তার, শিমুল শুধু তাকেই রঙ মাখাবে, আর সে শিমুলকে। অন্য কাউকে এক বিন্দু রঙ দেবেনা
তারা।
শিমুল তার দোলের জন্যে
সব করতে পারে। তাই সে প্রতিজ্ঞা করেছে, সে দোল ছাড়া কাউকে রঙ দেবেনা। তার সব রঙ
শুধু দোলের জন্যে।
আগের রাতে নীচের তলায়
ও উপর তলায় বাস করা দুই প্রেমী যুগল অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে, কথায় মেতে উঠলো। কতো
পরিকল্পনা। দোলের সিঁথি লাল আবীরে রাঙিয়ে শিমুল দুই পরিবারের সকলকে তাদের
ভালবাসার কথা জানাবে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই শিমুল
দৌড়ে উপরে এলো। দোল তাকে দেখে লুকিয়ে পড়লো।
যাঃ এতো পরিকল্পনা করেও
শিমুল আবীর কিনতে ভুলে গেছে। বাইরে থেকে দোলকে বললো , "তুমি সুন্দর করে সেজে
নাও , আমি এক্ষুনি গলির দোকান থেকে সব আবীর কিনে আনছি।
খুব সুন্দর করে হলুদ
রঙের শাড়িতে সেজেছে দোল। অপূর্ব দেখাচ্ছে তাকে।
দোল ছাদের উপর থেকে
দেখলো শিমুল আবীর কিনতে যাচ্ছে। একটু বেশি দেরী হচ্ছে দেখে দোল আবার ছাদে এসে
দাঁড়ালো। এবার সে দেখতে পেলো, এক দঙ্গল মেয়ে , যারা নিজেদের মধ্যে রঙ খেলছিল,
শিমুল কে ঘিরে ধরে আবীর মাখাচ্ছে। শিমুল চেষ্টা করেও আটকাতে পারলোনা । তখন সে
বাধ্য হলো ওদের সবাইকে এক মুঠো করে রঙ মাখাতে।
শিমুলের সারা শরীর, মুখ
রঙে রঙিন। এক বিন্দু বেরঙিন জায়গা নেই খালি নেই দোলের জন্যে।
দোলের মাথা কেমন করে
উঠলো। এক অদম্য অভিমানে সে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ওর প্রথম দোল এভাবে শেষ
হয়ে গেল বলে, ও পাগলের মতো কেঁদে উঠলো। পৃথিবী তখন ধূসর বর্ণ তার চোখে। এক ঝটকায়
হাতে তুলে নিল ধারালো ফল কাটার ছুরি। এক মূহুর্তে দু হাতের শিরা চিড়ে বেরিয়ে এলো
লাল রঙের উষ্ণ বন্যা।
অনেক চেষ্টা করার পরও
যখন দোল দরজা খুলছে না।
দরজা ভেঙে ফেলা
হলো।
রক্তশূন্য ফ্যাকাশে
দোলের সীমন্ত তখন তার রক্তের রঙে লাল।
শিমুলকে দেখে অনেক
কষ্টে হেসে জিজ্ঞেস করলো "আমায় সুন্দর লাগছে" ?
তারপর চোখ দুটো বন্ধ
করে ফেললো।
সকলের হাহাকার ভরা
কান্নার শব্দের মধ্যে অভিমানী "দোল",তার প্রথম ও শেষ রঙখেলা শেষ করে
অন্য জগতে পাড়ি দিচ্ছে তখন।
Khub marmosporshi kahini...kintu atota kothin na holeo parto Dol.
ReplyDeleteDarunnn....
ReplyDelete