আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি
নামলো --কাল থেকে প্রায় একনাগাড়ে চলছে বৃষ্টি টা --বোধহয় এবার নিম্নচাপের হাত ধরেই
বর্ষা এলো ! মেঘের বুক চিরে রূপোলী আলোর ঝিলিক আর মেঘের গুরু গুরু শুনতে
শুনতে কেমন যেন বিমনা হল নন্দনা ! সুদীপ্ত অবশ্য ব্যাজার মুখ করে অফিস গেল
--সত্যিই তো এমন ঝমঝমে বৃষ্টিতে কাজকর্ম সব লাটে ওঠার যোগাড় --তারপর রাস্তায় যা জল
জমেছে --গাড়ি না বিকল হয়ে যায় !
নন্দনার কিন্তু বৃষ্টি
ভীষণ ভালো লাগে --সব কাজকর্ম শিকেয় তুলে -ঝুলবারান্দার দোলনায় বসে বসে বৃষ্টি
উপভোগ করছে ! গোপালের মা আসলে আবার নাহয় কাজে মন দেবে ! আর কিই বা কাজ -দুটি
প্রাণী র ! সুদীপ্ত অফিস চলে গেলে --অলস মন্থর গতিতে বেলা কাটে ! তবু
গোপালের মা এলে ওর সাথে বকবক করে একটু সময় কাটে ! দুপুর টা কেটে যায় এখন
গোপালকে পড়া দেখাতে দেখাতে . গোপালের মা -ই একদিন বলেছিল --বৌদিমণি দুকুরের দিকে
তো তোমার তেমন কাজ নেই --আমার গোপাল টাকে এ বচ্ছর ইস্কুলে দিয়েচি --ওর পড়ালেখা টা
এট্টু দেকিয়ে দিও না ! বাহ্ এ প্রস্তাব তো মন্দ নয় ! আজকাল হাঁপিয়ে ওঠে
নন্দনা --এই অখণ্ড অবসর যেন গিলে খেতে আসে ওকে ! ----বেশ বেশ -গোপাল কে
পাঠিয়ে দিও দুপুরের দিকে . সেই থেকে চলছে গোপালের প্রশিক্ষণ ! ভারী মিষ্টি
ছেলে টা --গরীবের ঘরে জন্মালে হবে কি --ইন্টেলিজেন্সি কিছু কম নেই ওর !
রোজ গোপালের জন্য রকমারী
চকোলেট আনিয়ে রাখে নন্দনা , আজকাল আবার ইউটিউব দেখে দেখে রকমারী কেক -কুকিজ
-পেস্ট্রি ও বানিয়ে রাখে ! গোপাল টা ভারী ভালোবাসে ! এমনভাবেই গোপালের মধ্যো
দিয়েই বুঝি ওর অপূর্ণ মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করে নন্দনা ! বিয়ের পনেরো বছর হয়ে গেল
--আজও কোল খালিই রয়ে গেলো ! চিকিত্সার অবশ্য ত্রুটি রাখেনি সুদীপ্ত --কিন্তু ফল
সেই শূন্য ! আ্যডপশনের কথা যে সুদীপ্ত কে দু -একবার বলেনি এমন নয় -তবে সুদীপ্ত
ব্যাপার টা বরাবরই এড়িয়ে গেছে !
অতএব শূন্য ঝুলি আর হাহাকার মাতৃত্বই
সম্বল !
একটানা বৃষ্টির বন্দিশ শুনতে শুনতে আনমনা
নন্দনা তখন ভাবনা -বিবশ --এই বর্ষা ভারী আনন্দময় ! বর্ষাই তো পূর্ণতার ঋতু --আমার
প্রাণের ঋতু , ভালোবাসার ঋতু ! এমনি করে নিজের ভাবনায় বিলীন হয়ে কতটা সময়
অলস ভাবে কেটে গেল ! হঠাত্ ভাবনার জাল ছিঁড়ে বাস্তবে ফিরলো নন্দনা ---নাঃ
অনেকটা বেলা হয়ে গেলো -এই বৃষ্টি তে আর গোপালের মা র আসার সম্ভবনা নেই !
---যাই কাজে হাত লাগাই ! ইস্ আজ বৃষ্টি না থামলে গোপালটা ও আসবে কি না
সন্দেহ --মাফিন বানিয়েছিলাম ওর জন্য ! মন ভারী হল নন্দনার !
দিবানিদ্রার অভ্যেস নেই নন্দনার ! বার বার
অস্থির হচ্ছিল --বৃষ্টি টা তো এখন ধরে এসেছে --গোপাল টা তো এলেই পারে এসময় !
ডিংডঙ্ - দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ
----এলেন বুঝি নাড়ু গোপাল ! --ওমা পাশের বাড়ির কাজের মাসি মিনতি ----হাউমাউ
করে কেঁদে উঠলো --ও বৌদিমণি গো কী সব্বোনাশ হল গো ! এমন বিলাপের সুরে বুক কেঁপে
উঠলো নন্দনার ! ---কি হল গো ? --ও বৌদিমণি গোপাল ! কি হলো গোপালের ? অস্থির হল
নন্দনা ! ---কাল অঝোর বিষ্টি তে গোপালদের মাটির দেয়াল এক্কেরে ভেঙে পড়লো গো --আর ঐ
দেয়াল চাপা পড়েই --আবার কান্না ! বুঝতে বাকি রইলো না নন্দনার --কী দুর্ঘটনা ঘটে
গেছে ! --বুকের ভেতর যেন অগুনতি ঢেউ আছড়ে পড়লো --দুগাল বেয়ে শুধু নোনা জলের
অবিরাম ধারা ! মনে পড়লো কোথায় যেন পড়েছিল --এক অনামী কবির লেখা দু লাইন
------
বহুতলের বৃষ্টি সুখ ---
অলস বেলা আলতো
পায়ে গড়িয়ে
যাস
মাটির দেওয়াল আশঙ্কা
তে
অঝোর আকাশ বান
ডেকেছে
ভাঙলো বুঝি সুখের বাস
!
No comments:
Post a Comment