Monday, June 25, 2018

গল্প / বৃষ্টি বিলাস ও যন্ত্রণা র উপাখ্যান / শমিতা চক্রবর্তী




আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো --কাল থেকে প্রায় একনাগাড়ে চলছে বৃষ্টি টা --বোধহয় এবার নিম্নচাপের হাত ধরেই বর্ষা এলো !  মেঘের বুক চিরে রূপোলী আলোর ঝিলিক আর মেঘের গুরু গুরু শুনতে শুনতে কেমন যেন বিমনা হল নন্দনা ! সুদীপ্ত অবশ্য ব্যাজার মুখ করে অফিস গেল --সত্যিই তো এমন ঝমঝমে বৃষ্টিতে কাজকর্ম সব লাটে ওঠার যোগাড় --তারপর রাস্তায় যা জল জমেছে --গাড়ি না বিকল হয়ে যায় !  
নন্দনার কিন্তু বৃষ্টি ভীষণ ভালো লাগে --সব কাজকর্ম শিকেয় তুলে -ঝুলবারান্দার দোলনায় বসে বসে বৃষ্টি উপভোগ করছে !  গোপালের মা আসলে আবার নাহয় কাজে মন দেবে ! আর কিই বা কাজ -দুটি প্রাণী র !  সুদীপ্ত অফিস চলে গেলে --অলস মন্থর গতিতে বেলা কাটে ! তবু গোপালের মা এলে ওর সাথে বকবক করে একটু সময় কাটে !  দুপুর টা কেটে যায় এখন গোপালকে পড়া দেখাতে দেখাতে . গোপালের মা -ই একদিন বলেছিল --বৌদিমণি দুকুরের দিকে তো তোমার তেমন কাজ নেই --আমার গোপাল টাকে এ বচ্ছর ইস্কুলে দিয়েচি --ওর পড়ালেখা টা এট্টু দেকিয়ে দিও না !  বাহ্ এ প্রস্তাব তো মন্দ নয় ! আজকাল হাঁপিয়ে ওঠে নন্দনা --এই অখণ্ড অবসর যেন গিলে খেতে আসে ওকে !  ----বেশ বেশ -গোপাল কে পাঠিয়ে দিও দুপুরের দিকে . সেই থেকে চলছে গোপালের প্রশিক্ষণ !  ভারী মিষ্টি ছেলে টা --গরীবের ঘরে জন্মালে হবে কি --ইন্টেলিজেন্সি কিছু কম নেই ওর ! 

                     রোজ গোপালের জন্য রকমারী চকোলেট আনিয়ে রাখে নন্দনা ,  আজকাল আবার ইউটিউব দেখে দেখে রকমারী কেক -কুকিজ -পেস্ট্রি ও বানিয়ে রাখে ! গোপাল টা ভারী ভালোবাসে !  এমনভাবেই গোপালের মধ্যো দিয়েই বুঝি ওর অপূর্ণ মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ করে নন্দনা ! বিয়ের পনেরো বছর হয়ে গেল --আজও কোল খালিই রয়ে গেলো ! চিকিত্সার অবশ্য ত্রুটি রাখেনি সুদীপ্ত --কিন্তু ফল সেই শূন্য ! আ্যডপশনের কথা যে সুদীপ্ত কে দু -একবার বলেনি এমন নয় -তবে সুদীপ্ত ব্যাপার টা বরাবরই এড়িয়ে গেছে ! 
                 অতএব শূন্য ঝুলি আর হাহাকার মাতৃত্বই সম্বল ! 

               একটানা বৃষ্টির বন্দিশ শুনতে শুনতে আনমনা নন্দনা তখন ভাবনা -বিবশ --এই বর্ষা ভারী আনন্দময় ! বর্ষাই তো পূর্ণতার ঋতু --আমার প্রাণের ঋতু , ভালোবাসার ঋতু !  এমনি করে নিজের ভাবনায় বিলীন হয়ে কতটা সময় অলস ভাবে কেটে গেল !  হঠাত্ ভাবনার জাল ছিঁড়ে বাস্তবে ফিরলো নন্দনা ---নাঃ অনেকটা বেলা হয়ে গেলো -এই বৃষ্টি তে আর গোপালের মা র আসার সম্ভবনা নেই !  ---যাই কাজে হাত লাগাই ! ইস্ আজ বৃষ্টি না থামলে গোপালটা ও আসবে কি না সন্দেহ --মাফিন বানিয়েছিলাম ওর জন্য !  মন ভারী হল নন্দনার ! 

             দিবানিদ্রার অভ্যেস নেই নন্দনার !  বার বার অস্থির হচ্ছিল --বৃষ্টি টা তো এখন ধরে এসেছে --গোপাল টা তো এলেই পারে এসময় ! 

                 ডিংডঙ্ - দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ ----এলেন বুঝি নাড়ু গোপাল !  --ওমা পাশের বাড়ির কাজের মাসি মিনতি ----হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো --ও বৌদিমণি গো কী সব্বোনাশ হল গো ! এমন বিলাপের সুরে বুক কেঁপে উঠলো নন্দনার ! ---কি হল গো ? --ও বৌদিমণি গোপাল ! কি হলো গোপালের ? অস্থির হল নন্দনা ! ---কাল অঝোর বিষ্টি তে গোপালদের মাটির দেয়াল এক্কেরে ভেঙে পড়লো গো --আর ঐ দেয়াল চাপা পড়েই --আবার কান্না ! বুঝতে বাকি রইলো না নন্দনার --কী দুর্ঘটনা ঘটে গেছে !  --বুকের ভেতর যেন অগুনতি ঢেউ আছড়ে পড়লো --দুগাল বেয়ে শুধু নোনা জলের অবিরাম ধারা !  মনে পড়লো কোথায় যেন পড়েছিল --এক অনামী কবির লেখা দু লাইন ------
                  বহুতলের বৃষ্টি সুখ ---
 অলস বেলা আলতো পায়ে গড়িয়ে 
যাস 
মাটির দেওয়াল আশঙ্কা তে 
অঝোর আকাশ বান ডেকেছে 
ভাঙলো বুঝি সুখের বাস ! 


No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া