বৃষ্টি ও বর্ষাকাল
নিয়ে আমি একটু বেশি রোমান্টিক বলেই , এই বর্ষাকালে আমার জীবনটা সবসময় ঘটনা
ও দূর্ঘটনা পূর্ণ থাকে।। এটা অবশ্য আমার সবচেয়ে বড়ো শত্রুপক্ষের, মানে আমার
পতিদেবতার ভাষায়। তা এমন সব ঘটনা আমি ঘটাই, যা তাকে এসব কথা বলতে ইন্ধন যোগায়,
সেটা অনিচ্ছাতেও মানতেই হয়। অবশ্য সে সব ঘটনার ঝামেলা গুলো তাকেই তো পোহাতে হয়।
তাই বলছে বলে রাগ দেখাতেও পারিনা সবসময়।
যেমন যখন খুব বৃষ্টি
হয়, আমার খুব টিনের চালের উপর ঝমঝম শব্দ শুনতে ইচ্ছা করে। আমার ছোট বেলায় , আমার
বাড়ির একটা দিকে, টিনের চাল ছিলো। আর আমি তাই ভীষন নস্টালজিক,এই ব্যাপারে। এটা
নিয়ে এমন বায়না এবং বকবক জুড়ে তার জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিলাম যে, সে বেচারি
অনেক মাথা খাটিয়ে আমার ফ্ল্যাট বাড়ির একমাত্র খোলা ব্যালকনির মাথা টিন দিয়ে
ঢেকে দিলো। উফ্ কি খুশি আমি। বৃষ্টি হলেই সেই টিনের চালের আওয়াজে , ছোটোবেলায়
ফিরে যাই।
আমার ফ্ল্যাটের সামনের
রাস্তায় একটু বৃষ্টিতেই জল জমে। আমার বাড়ির সবার খুব বিরক্তি এতে। আমার অবশ্য
বিশেষ বিকার নেই তাতে।
বর্ষাকালে জল তো জমবেই,
তাই বলে কি বাড়িতে বসে থাকতে হবে ? প্রচন্ড বৃষ্টি এবং ওতো জল উপেক্ষা করে,
প্রায়শই ওই নোংরা ,
ঘোলা এক হাঁটু জল ভেঙে বেরিয়ে পড়ি। শত্রুপক্ষ কতো কিছু যে সাবধান বানী শোনায়,
অসুখ করবে, পা ভাঙবে। ধুত্তোর , যা হবে হবে। আমি শোনবার পাত্রী নয়।
কদিন আগে ওইরকমই এক
প্রবল বৃষ্টির পর কলকাতা শহরে তখন সব রাস্তাই প্রায় জলমগ্ন। আমার বাড়ির সামনের রাস্তা
তো সমুদ্র হয়ে গেছে। এদিকে নন্দন চত্বরে একটি মঞ্চে অনুষ্ঠান আছে। যেতে তো হবেই।
সবার সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে পড়লাম। এক হাঁটু জল ভেঙে এগোচ্ছি তো এগোচ্ছি
। জল ক্রমশ বাড়ছে। সে যাকগে, আমায় যেতেই হবে, অনুষ্ঠানটাও করতে হবে। আমার শিল্পী
সত্বা তখন দারুন ভাবে জেগে উঠে, উৎসাহ দিচ্ছে আমায়।
খানিকটা যেতেই একটা পা
কেমন হাল্কা মনে হল, সে যাকগে, আমায় তখন রিক্সা পেতেই হবে। ওতো খেয়াল করার সময়
নেই।আমি একমনে জল ভেঙে এগোচ্ছি।
একসময়পরম ভরসার বস্তু,
একটা রিক্সা পেয়ে গেলাম।
রিক্সায় উঠতে গিয়ে
দেখি এক পায়ে চটি নেই। নেই তো নেই। সে কখন যেন জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছে। এবার
বুঝতে পারলাম ওই জন্যই একটা পা হাল্কা লাগছিলো। তখন আর কোথায় পাবো তারে ? বাড়ি
ফিরে যাব ? কিছুতেই না। আমি আজ যাবই যাব। আরেক টিকে বিসর্জন দিলাম ওই জলে।
মুক্ত,ভারহীন পা দুখানি নিয়ে, প্রচন্ড গাম্ভীর্য নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।
রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে দেখছে আমায়। আমি মেট্রো স্টেশনে গিয়ে সম্পূর্ণ খালি
পায়ে ট্রেনে উঠলাম।
ওতো দূর্যোগে সবাই কেমন
ব্যস্ত, তাই অনেকক্ষণ কেউ খেয়াল করেনি। কিছুক্ষণ পর দেখি কয়েকজন অদ্ভুত ভাবে
তাকাচ্ছে আমার দিকে আর হাসছে। আমি অসম্ভব গম্ভীর হয়ে থাকলাম, যেন তাদের হাসি
খেয়ালই করিনি। রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনে নামার পর আমার বেশ সাজগোজ করা, চেহারার
সাথে খালি পা অনেকেরই চোখে পড়েছে। না , বলতেই হবে কলকাতার মানুষজন ভালো, কেউ
জিজ্ঞেস করেনি কিছু। নিজেদের মধ্যে একটু হাসাহাসি করছিল। তা না হয় করছিলো, কি
হয়েছে তাতে ? আমি সিগন্যাল পার হয়ে শিশির মঞ্চের দিকে আসতেই দেখি, না ভগবান আছেন
, একটি লোক এই ওয়েদারেও কতগুলো হাওয়াই চটি নিয়ে বসেছে। উঃ বাঁচলাম। তাড়াতাড়ি
একটা কিনে পরে নিয়ে নির্দিষ্ট মঞ্চে পৌঁছালাম।
একটু ডিজাইন করা রঙিন
হাওয়াই চটি দেখে, সবাই ভাবলো এতো বৃষ্টি , তাই পরেছি। কাউকে কিচ্ছু বলিনি।
বাড়ির শত্রুপক্ষকেও
না। হাতে করে খেপানোর অস্ত্র তুলে দেয় কেউ কখনো?
তোমরা আমার বন্ধু বলে
তোমাদের বললাম গোপন কথাটা। কাউকে যেন বলোনা প্লিজ। আমার কতো লজ্জা করবে তাহলে তাই
না ?
No comments:
Post a Comment