গত অর্ধ শতাব্দী ধরে
জীবন থেকে হারিয়েছে কত কিছু তা কি বলে শেষ করা যাবে, সে তো একটা দুটো নয় গো
নয়...
সকালবেলা ঘুমভাংগার
সংগে কানে ঢুকতো... আকাশবাণী কলকাতা, স্থানীয় সংবাদ পড়ছি নীলিমা সান্যাল...
তারপরে শিল্পীর গাওয়া
লাইভ রবীন্দ্র সংগীত !
ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার
টেবিলে থাকত মুচমুচে ব্রেড টোষ্ট আমূল বাটার মাখানো । রান্না মাসীর জলদি হাতে
বানিয়ে দেওয়া ঘি এর গন্ধ মাখা সাদা ধবধবে দুধ ঢালা মিষ্টি মিষ্টি কাঁচের প্লেট
ভরতি ভাজা সুজি চিনি ছড়ানো ।
চা ছিল দুর্লভ কারণ
বয়স ছিল অল্প। এখন কিন্তু পাল্টেছে ধারণা, চা নাকি অনেক রোগের প্রতিষেধক, এমনকি
ক্যান্সারের ও।
হারিয়েছে কাঁধের কাছে
আলগোছে দুলতে থাকা একমাথা কালোচুলে মা'র সযত্নে সবল হাতে গড়া মোটাসোটা দুই
বিনুনি,...
চোখে প্রোগ্রেসিভ লেন্স এর হাল ফ্যাশন চশমার সংগে একটু ভারী শরীর আর গুরুগম্ভীর পদে আসীন সেদিনের স্কুলের
বাচ্চা মেয়ের দুই বিনুনির দোলন বড়ো বেমানান মানতেই হবে !
আর একটু বড়ো যখন সেই
মেয়ে...
কলেজ যাওয়া আসার পথের
পাশের ঝুলন্ত ব্যালকনির সুন্দর এক যুবকের সংগে চোখ পাতাপাতির প্রথম নরম মুহূর্ত
আজকের সুঠাম সুন্দরী নারী হয়ে ওঠা এই রমণীর কঠিন বাস্তবে পথ খুঁজে পেল না, সেই
দুই মন আজও দেখা হলে মনের নিবিড় হারিয়ে যাওয়া ছায়ায় কুসুম কোরক খোঁজে, দুহাত
ভরে তুলে আনে সোনালী রোদমাখা বিকেলগুলোর অনাবিল ভালো লাগা ভালোবাসা বাসির
মুহূর্তগুলো... জানা গেলো সে এখন দুই কন্যার পিতা, সেই কলেজ যাওয়া কন্যার এখন ঐ
বয়সী জিন্স টি শার্ট পরা এক সুন্দর কন্যা আর লম্বা ঋজু সুঠাম লাজুক এক পুত্র...
মনের যত আনন্দের উৎস... এক নিমেষপাতে উজান বাওযা দুটি মনের গভীরে ডুব
!
সেইসব কলেজ জীবনের
রোমাঞ্চ জাগানো সন্ধ্যা গুলো পাশাপাশি বসে অলস গল্পে সময় কাটানোর সূর্যাস্তের
আভায় রংগীন, এখন ঐ নদীর ধার ঐ খোলা মাঠে কালবৈশাখীর ঝড় আর কি আসে সব উড়িয়ে
নিয়ে সব চাওয়া পাওয়া এলোমেলো করা মনমাতানো ভালো লাগা ফিরিয়ে দিতে !
ঝড়ের শেষে অঝোর
বৃষ্টিভেজা শরীরী আলিংগনের একমাত্র সাক্ষী গাছের মাথা ছাড়িয়ে উঁচু আধখানা আকাশ
জুড়ে উঠে থাকা সাতরংগা বাহারে রামধনুখানা !
নিরনিমেষ ...
লজ্জাজডানো চাউনি
নেমেছে কপোল বেয়ে উষ্ণ অধীর দুটি অধরোষঠে, স্বাদ পেয়েছে যৌবনের উন্মাদ অধীরতার !
বর্ষা নেমেছে শরীর ছাপিয়ে...
আজ সব একাকার ! সেই
দুর্লভ একান্ত ভালোবাসার রামধনু সব রং
হারিয়ে হয়েছে বহু সুলভ, যখন ইচ্ছে পাওয়া যাবে ঝটিতি তার স্বাদ, না ই বা থাকলো
তাতে মনের সংযোগ, শরীর তো পাওয়া যাবে ষোল আনার ওপর আঠারো আনা পছন্দমত !
আর... সবকিছু হারিয়ে
ফেলার আগে চলো পিছিয়ে যাই সেই আঙিনায, সেই মাঠে ঘাটে যেখানে এখনো কিছু উষ্ণ
ভালোলাগা ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায় ঘাসে ঘাসে... রঙীন ফুলের আলপনায...
"কালের সাগর পাড়ি
দিয়ে এলেম চলে নিদ্রাবিহীন গগনতলে"
যেখানে
" তারায তারায
দীপ্ত শিখার আগুন জ্বলে"
No comments:
Post a Comment