Tuesday, July 24, 2018

মহালয়া / অর্পিতা ভট্টাচার্য




দেখতে দেখতে কত কিছুই তো বদলে গেলো। ছোটোবেলার কথা ভাবতে বসলে কতো কথা মনে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এই সময়টায় যখন আকাশে , বাতাসে একটু একটু করে পূজো পূজো রঙ লাগাতে শুরু করেছে । মহালয়া আর রেডিওর মহিষমর্দিনী আমাদের কাছে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা বলতাম মহালয়া শুনবো। আমাদের স্কুল, কলেজ সব মহালয়ার আগেই ছুটি হয়ে যেতো। মহালয়ার আগের দিন থেকে বাড়িতে সাজো সাজো রব। বাড়িঘর সব ঝকঝকে করে সাজানো। মা কাঠের বাক্স থেকে বের করতেন মা দূর্গার বাঁধানো ফটো। টেবিলে নতুন ঢাকনা পাতা হতো, মায়ের সুন্দর হাতের কাজের। তার উপর মা দূর্গার ছবি। 
রেডিও বস্তুটি তখন দারুন মহার্ঘ । তার গায়েও চাপতো নতুন কভার।
ভোর সাড়ে তিনটের সময় বাবা ঘুম থেকে তুলে দিতেন আমাদের। মুখ, হাত ,পা ধুয়ে রেডিওর সামনে বসে পড়তাম আমরা। মা ওই ভোরে স্নান করে, ধোওয়া জামাকাপড় পড়ে, ঠাকুরের ছবিতে মালা পরিয়ে, ধূপ জ্বালিয়ে দিতেন।
আরেকটা দারুন প্রাপ্তি ছিলো সেই ভোরে। আমরা ছোটরা, যারা অন্যদিন চা খেতে পেতাম না, মহালয়ার ভোরে তাদের সবাইকে চা, বিস্কুট দেওয়া হতো।
গোল হয়ে রেডিও ঘিরে বসে আমরা মহালয়া শুনতাম। প্রতিবছর বাবা প্রতিটি গানের গায়ক, গায়িকার নাম জিজ্ঞেস করতেন। আমরা যথারীতি ভুল বলতাম, আর বাবা ঠিক করে দিতেন।
মহিষমর্দিনীর স্ত্রোত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে আমাদের পূজো এসেই যেতো।
মহালয়া শেষ হলে আমরা সবাই সেদিন বেড়াতে যেতাম পটুয়াপাড়ায়, ঠাকুরের চোখ আঁকা দেখতে। কি ভীষন আগ্রহ ও আনন্দ।

এখন মহালয়ার দিনও ছুটি থাকেনা। রেডিও প্রায় নেই বললেই চলে। লোকে যেটুকু রেডিও শোনে তাও মোবাইল ফোনে । পূজোর অনেক আগে থেকেই মাইকে আমাদের সেই মহালয়া( মহিষমর্দিনী ) শোনা যায়।
সেই পূজো পূজো নেশার দিনগুলো কখন যেন থিমের পূজোর জমজমাট আনন্দ গ্রাস করে নিয়েছে। 
অনেক আনন্দ বেড়েছে কিন্তু বড়ো মেকি সেই আনন্দ। নির্ভেজাল, আন্তরিক আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে কখন যেন চুপিসাড়ে প্রগতির কাছে হার মেনে।
বড়ো ইচ্ছে করে সেইদিন গুলো আবার ফিরে পেতে।
বুকের মধ্যে কষ্ট জমা হয়। তবু অজান্তেই "মহালয়া"র জন্য অপেক্ষাটা থেকেই যায়।




No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া