জানলাটা খুলে বাইরে
তাকালো শিবানী। পূর্ণিমার আলোয় চারিদিক ভেসে যাচ্ছে, দুচোখ ভরে এর স্বাদ নিলো
শিবানী।
আহ! কতদিন পর,মনে হয় যেন কতকাল পরে সেই পুরোনো দিনে ফিরে গেল।
পাম এভিনিউর এই বিলাসবহুল কমপ্লেক্স লোডশেডিং শব্দটার সাথে দিনযাপন করে না।
এদের স্ট্রং পাওয়ার ব্যাক আপ সিস্টেম,জীবনযাপনের অভ্যেস টাই পাল্টে দিয়েছে।
আজ হঠাৎ করেই ওদের সিস্টেমে প্রবলেম হয়েছে, আর আজ সন্ধ্যাতেই লোডশেডিং!
শিবানীর প্রথমে একটু বিরক্ত লাগছিলো, যতই হোক,মানুষ অভ্যাসের দাস, প্রায় পঁচিশটা বছর যে জীবন সে যাপন করছে, তা তো কম বিলাসবহুল নয়।
এখানে এসেছে সবেমাত্র আটমাস, কিন্তু আগের ফ্ল্যাটেও অটো কাট ইনভার্টার ছিলো, তাই কোনোদিন সেভাবে অসুবিধে হয়নি।
ঘরেতে মোমবাতি আছে হয়তো, কিন্তু এই অন্ধকারে কোথায় খুঁজবে, একটু চিন্তা করে জানলার কাছে এসে, পর্দা সরিয়ে জানলা খুলে দিতেই জ্যোৎস্নার অপার সৌন্দর্য্য দেখে ও পাওয়ার কাট কে ধন্যবাদ জানালো।
ওদের কমপ্লেক্স টা বিশাল, আর শিবানীর এপার্টমেন্টটা যেদিকে তার বাইরের ভিউটা অসাধারণ।
এদিকে একটা পার্ক, তারপরে ফুটবল খেলার মাঠ, তারপর বড় বড় গাছ সারি দিয়ে লাগানো। আজ এই খোলা জানলা দিয়ে লোডশেডিং আর জ্যোৎস্না উপভোগ করতে করতে মন চলে গেল ফেলে আসা দিনগুলোয়।
......
''রিম্পি, হারিকেনটা নিয়ে যা, দাদাকে দিয়ে আয়, আর তুই বইগুলো নিয়ে রান্নাঘরে আমার কাছে আয়...", মায়ের ডাকে ছোট্ট শিবানী একছুটে মায়ের কাছে..... আসলে ও তো মায়ের এই ডাকের অপেক্ষাতেই থাকতো, রোজ নিয়ম করে সন্ধ্যেবেলা কারেন্ট চলে যেত ওদের আধা মফস্বল শহরে, কোনোদিন এক ঘন্টা, কোনোদিন তারও বেশি, মা ডাকলেই একদৌড়ে ও রান্নাঘরে।
মায়ের গায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ , সেটা যে কিসের ও বুঝতে পারতোনা।
তেল সাবান, স্নো, পাউডার, মায়ের কাচা শাড়ী, সব মিশিয়ে ওটা ছিলো ওর মায়ের গন্ধ, তার সাথে রান্নার ফোড়নের গন্ধে ও কেমন বিবশ হয়ে যেত, পড়া তো কত হত!
শিবানীর শুধু ইচ্ছে হতো মায়ের সাথে গল্প করতে, মনে আছে, মা হারিকেনের আলোয়, ঘামতে ঘামতে আঁচল দিয়ে মুখ মুছতো, আর একহাতে শিবানীকে একটু একটু পাখার হাওয়াও করে দিতো, তখন গ্যাস ছিলোনা, মা তোলা উনুনে রান্না করতো, মা একটা আলু বেগুনের তরকারি করতো, যার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে যেন! এখন এত রকমারি খাবার, না চাইতেই চলে আসে, কিন্তু সেই তৃপ্তি, সেই ভালোলাগা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে!
আর সমিতদা! লোডশেডিং আর সমিতদা যেন একাকার হয়ে আছে!
আজ অনেকদিন পর হঠাৎ লোডশেডিং সব স্মৃতির দ্বার খুলে ওকে যেন এলোমেলো করে দিলো।
কিশোরী শিবানী, তখন বোধহয় ক্লাস নাইন,টিউশন থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল, এমনিতে শিবানী খুবই সাহসী,কিন্তু চারিদিকে চাপ চাপ অন্ধকারে সেদিন ওর কেন জানিনা বেশ ভয় করছিলো। হঠাৎ একটা টর্চের আলো ওর মুখে এসে পড়লো, সাথে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং!
"তুই রিম্পা না? প্রসূনের বোন.....নে, বোস আমি পৌঁছে দিচ্ছি। ভয় পাসনা, আমি প্রসূনের বন্ধু।"
না, সেই সময়টা এতটাও অবিশ্বাসের সময় ছিলোনা, তখন চেনা পরিচিতরা যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো, তেমনি ভরসা করাও যেতো তাদের।
"আমি চলে যেতে পারবো"
ওর আপত্তি ধোপে টেকেনি, সেদিন সমিতদার সাইকেলে ও বসতে রাজি না হওয়ায় সমিতদা ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলো।
ভালোলাগার সেই শুরু, তারপর মাঝে মাঝেই সমিতদা ওদের বাড়ি আসতো, ওকে নানা বিষয় নিয়ে রাগাতো, কিন্তু তারই মাঝে কখন যেন ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিলো।
...
তখন দাদা ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে কলকাতায়, দাদার সে বছর ফাইনাল ইয়ার, আর শিবানী সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।
কলেজের বন্ধুবান্ধব,সমিতদার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক, শিবানীর নিজেকে একটা রঙিন প্রজাপতির মতো মনে হতো!
মনে হতো ও হাওয়ায় উড়ছে যেন।
সমিতদা তখন গ্র্যাজুয়েশনের পর এটা সেটা পরীক্ষা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করছিলো।
সেদিন সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছিলো। একটু জ্বর জ্বর মনে হওয়াতে শিবানী সেদিন কলেজ যায়নি। তখন এতো ফোনের রমরমা ছিলোনা, মোবাইল তো অনেক দূরের, ওদের বাড়িতে কোনো ল্যান্ডফোনও ছিলোনা।
ওকে কলেজ যেতে না দেখে সন্ধ্যেবেলায় সমিতদা ওদের বাড়ি খোঁজ নিতে এসে, সোজা ওর ঘরে চলে এসেছিলো।
ঠান্ডা লেগে ওর গা'টা একটু ছ্যাঁক ছ্যাঁক করছিলো, তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা গল্পের বই পড়ছিলো। আচমকা সমিতদাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ও তাড়াতাড়ি উঠতে যাচ্ছিল, সমিতদা ওকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো, ''কি রে, অসময়ে শুয়ে আছিস? শরীর খারাপ নাকি?"
তারপর ওর মাথায় হাত দিতেই দেখে গা গরম, ওর বিছানায় ওর পাশে বসে সমিতদা বললো, ''তুই রেস্ট নে, শুয়ে পর'', ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল সমিতদা।
আর ঠিক তখনই সেই নির্ধারিত লোডশেডিং!
অন্ধকার ঘর, চোখ একটু সয়ে যেতেই দেখে বাইরে থেকে পূর্ণিমার আলো এসে ওদের দুজনের ওপর পড়েছে।
সেই অপার্থিব আলো, এতো কাছাকাছি ওরা দুজন... দুজনেই বিহ্বল হয়ে গেছিলো।
কখন যেন দুজোড়া ঠোঁট খুব কাছে এসেছিলো।
এই প্রথম গভীর আবেশে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মা তখন ঠাকুরঘরে সন্ধ্যে প্রদীপ দেখাচ্ছিল, শিবানী একা ঘরে আছে, লোডশেডিং হয়েছে, মা তাড়াতাড়ি আলো নিয়ে ওর ঘরে আসছিলো, বাবাও অফিস থেকে ঠিক সেসময়ই ফিরেছে।
সকালবেলায় ওর জ্বর দেখেই বাবা গেছিলো, তাই অফিস থেকে ফিরেই ওর ঘরে ঢুকেছিলো।
মা বাবা প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেছিলো বোধহয়, তারপর ওই শান্ত মা রাগে ফেটে পড়েছিলো, যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছিলো সমিতদাকে, বাবা একটাও কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেছিলো।
সেই শেষ, সমিতদা একটা চাকরী নিয়ে চলে গেছিলো অনেক দূরে, ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
বেল বাজার শব্দে সম্বিৎ ফেরে শিবানীর, স্বামী,শুভময়ের ফেরার সময় হলো।
শিবানী তাকিয়ে দেখে কখন লাইট চলে এসেছে, চারিদিক আলোয় আলো।ভাবনার গভীরে ও এতই তলিয়ে গেছিলো, আলো ফিরে আসাটা খেয়ালই করেনি।
ওর মনে হয়, আশ্চর্য যার কথা ভাবলে এখনো ওর ভেতরটা আলো হয়ে ওঠে, তার সাথে যেন অন্ধকার ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে, আর শুভময়, যে ওর জীবনটা আলোয় ভরিয়ে রেখেছে, সে কোনোদিন ওর অন্তরের আলোর সন্ধান পায়নি!
হয়তো এর নামই জীবনপথের পিছনে ফেলে আসা স্মৃতির মণিকোঠা, যেখানে অন্ধকারে ঢেকে রাখা কত সুখের পরশ ব্যাথা হয়ে শুধুই অপেক্ষায় থাকে--- হ্যারিকেনের ম্লান শিখার একটু আলোর ছোঁয়ার!
এমন সব অতীত বোধহয় ফিরে ফিরে মনের আশ্রয় খোঁজে চির তরে বিলীন হওয়ার আগের মুহূর্তে।
আহ! কতদিন পর,মনে হয় যেন কতকাল পরে সেই পুরোনো দিনে ফিরে গেল।
পাম এভিনিউর এই বিলাসবহুল কমপ্লেক্স লোডশেডিং শব্দটার সাথে দিনযাপন করে না।
এদের স্ট্রং পাওয়ার ব্যাক আপ সিস্টেম,জীবনযাপনের অভ্যেস টাই পাল্টে দিয়েছে।
আজ হঠাৎ করেই ওদের সিস্টেমে প্রবলেম হয়েছে, আর আজ সন্ধ্যাতেই লোডশেডিং!
শিবানীর প্রথমে একটু বিরক্ত লাগছিলো, যতই হোক,মানুষ অভ্যাসের দাস, প্রায় পঁচিশটা বছর যে জীবন সে যাপন করছে, তা তো কম বিলাসবহুল নয়।
এখানে এসেছে সবেমাত্র আটমাস, কিন্তু আগের ফ্ল্যাটেও অটো কাট ইনভার্টার ছিলো, তাই কোনোদিন সেভাবে অসুবিধে হয়নি।
ঘরেতে মোমবাতি আছে হয়তো, কিন্তু এই অন্ধকারে কোথায় খুঁজবে, একটু চিন্তা করে জানলার কাছে এসে, পর্দা সরিয়ে জানলা খুলে দিতেই জ্যোৎস্নার অপার সৌন্দর্য্য দেখে ও পাওয়ার কাট কে ধন্যবাদ জানালো।
ওদের কমপ্লেক্স টা বিশাল, আর শিবানীর এপার্টমেন্টটা যেদিকে তার বাইরের ভিউটা অসাধারণ।
এদিকে একটা পার্ক, তারপরে ফুটবল খেলার মাঠ, তারপর বড় বড় গাছ সারি দিয়ে লাগানো। আজ এই খোলা জানলা দিয়ে লোডশেডিং আর জ্যোৎস্না উপভোগ করতে করতে মন চলে গেল ফেলে আসা দিনগুলোয়।
......
''রিম্পি, হারিকেনটা নিয়ে যা, দাদাকে দিয়ে আয়, আর তুই বইগুলো নিয়ে রান্নাঘরে আমার কাছে আয়...", মায়ের ডাকে ছোট্ট শিবানী একছুটে মায়ের কাছে..... আসলে ও তো মায়ের এই ডাকের অপেক্ষাতেই থাকতো, রোজ নিয়ম করে সন্ধ্যেবেলা কারেন্ট চলে যেত ওদের আধা মফস্বল শহরে, কোনোদিন এক ঘন্টা, কোনোদিন তারও বেশি, মা ডাকলেই একদৌড়ে ও রান্নাঘরে।
মায়ের গায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ , সেটা যে কিসের ও বুঝতে পারতোনা।
তেল সাবান, স্নো, পাউডার, মায়ের কাচা শাড়ী, সব মিশিয়ে ওটা ছিলো ওর মায়ের গন্ধ, তার সাথে রান্নার ফোড়নের গন্ধে ও কেমন বিবশ হয়ে যেত, পড়া তো কত হত!
শিবানীর শুধু ইচ্ছে হতো মায়ের সাথে গল্প করতে, মনে আছে, মা হারিকেনের আলোয়, ঘামতে ঘামতে আঁচল দিয়ে মুখ মুছতো, আর একহাতে শিবানীকে একটু একটু পাখার হাওয়াও করে দিতো, তখন গ্যাস ছিলোনা, মা তোলা উনুনে রান্না করতো, মা একটা আলু বেগুনের তরকারি করতো, যার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে যেন! এখন এত রকমারি খাবার, না চাইতেই চলে আসে, কিন্তু সেই তৃপ্তি, সেই ভালোলাগা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে!
আর সমিতদা! লোডশেডিং আর সমিতদা যেন একাকার হয়ে আছে!
আজ অনেকদিন পর হঠাৎ লোডশেডিং সব স্মৃতির দ্বার খুলে ওকে যেন এলোমেলো করে দিলো।
কিশোরী শিবানী, তখন বোধহয় ক্লাস নাইন,টিউশন থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল, এমনিতে শিবানী খুবই সাহসী,কিন্তু চারিদিকে চাপ চাপ অন্ধকারে সেদিন ওর কেন জানিনা বেশ ভয় করছিলো। হঠাৎ একটা টর্চের আলো ওর মুখে এসে পড়লো, সাথে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং!
"তুই রিম্পা না? প্রসূনের বোন.....নে, বোস আমি পৌঁছে দিচ্ছি। ভয় পাসনা, আমি প্রসূনের বন্ধু।"
না, সেই সময়টা এতটাও অবিশ্বাসের সময় ছিলোনা, তখন চেনা পরিচিতরা যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো, তেমনি ভরসা করাও যেতো তাদের।
"আমি চলে যেতে পারবো"
ওর আপত্তি ধোপে টেকেনি, সেদিন সমিতদার সাইকেলে ও বসতে রাজি না হওয়ায় সমিতদা ওকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলো।
ভালোলাগার সেই শুরু, তারপর মাঝে মাঝেই সমিতদা ওদের বাড়ি আসতো, ওকে নানা বিষয় নিয়ে রাগাতো, কিন্তু তারই মাঝে কখন যেন ওদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছিলো।
...
তখন দাদা ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে কলকাতায়, দাদার সে বছর ফাইনাল ইয়ার, আর শিবানী সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।
কলেজের বন্ধুবান্ধব,সমিতদার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক, শিবানীর নিজেকে একটা রঙিন প্রজাপতির মতো মনে হতো!
মনে হতো ও হাওয়ায় উড়ছে যেন।
সমিতদা তখন গ্র্যাজুয়েশনের পর এটা সেটা পরীক্ষা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করছিলো।
সেদিন সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছিলো। একটু জ্বর জ্বর মনে হওয়াতে শিবানী সেদিন কলেজ যায়নি। তখন এতো ফোনের রমরমা ছিলোনা, মোবাইল তো অনেক দূরের, ওদের বাড়িতে কোনো ল্যান্ডফোনও ছিলোনা।
ওকে কলেজ যেতে না দেখে সন্ধ্যেবেলায় সমিতদা ওদের বাড়ি খোঁজ নিতে এসে, সোজা ওর ঘরে চলে এসেছিলো।
ঠান্ডা লেগে ওর গা'টা একটু ছ্যাঁক ছ্যাঁক করছিলো, তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা গল্পের বই পড়ছিলো। আচমকা সমিতদাকে ঘরে ঢুকতে দেখে ও তাড়াতাড়ি উঠতে যাচ্ছিল, সমিতদা ওকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো, ''কি রে, অসময়ে শুয়ে আছিস? শরীর খারাপ নাকি?"
তারপর ওর মাথায় হাত দিতেই দেখে গা গরম, ওর বিছানায় ওর পাশে বসে সমিতদা বললো, ''তুই রেস্ট নে, শুয়ে পর'', ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল সমিতদা।
আর ঠিক তখনই সেই নির্ধারিত লোডশেডিং!
অন্ধকার ঘর, চোখ একটু সয়ে যেতেই দেখে বাইরে থেকে পূর্ণিমার আলো এসে ওদের দুজনের ওপর পড়েছে।
সেই অপার্থিব আলো, এতো কাছাকাছি ওরা দুজন... দুজনেই বিহ্বল হয়ে গেছিলো।
কখন যেন দুজোড়া ঠোঁট খুব কাছে এসেছিলো।
এই প্রথম গভীর আবেশে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মা তখন ঠাকুরঘরে সন্ধ্যে প্রদীপ দেখাচ্ছিল, শিবানী একা ঘরে আছে, লোডশেডিং হয়েছে, মা তাড়াতাড়ি আলো নিয়ে ওর ঘরে আসছিলো, বাবাও অফিস থেকে ঠিক সেসময়ই ফিরেছে।
সকালবেলায় ওর জ্বর দেখেই বাবা গেছিলো, তাই অফিস থেকে ফিরেই ওর ঘরে ঢুকেছিলো।
মা বাবা প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেছিলো বোধহয়, তারপর ওই শান্ত মা রাগে ফেটে পড়েছিলো, যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছিলো সমিতদাকে, বাবা একটাও কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেছিলো।
সেই শেষ, সমিতদা একটা চাকরী নিয়ে চলে গেছিলো অনেক দূরে, ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
বেল বাজার শব্দে সম্বিৎ ফেরে শিবানীর, স্বামী,শুভময়ের ফেরার সময় হলো।
শিবানী তাকিয়ে দেখে কখন লাইট চলে এসেছে, চারিদিক আলোয় আলো।ভাবনার গভীরে ও এতই তলিয়ে গেছিলো, আলো ফিরে আসাটা খেয়ালই করেনি।
ওর মনে হয়, আশ্চর্য যার কথা ভাবলে এখনো ওর ভেতরটা আলো হয়ে ওঠে, তার সাথে যেন অন্ধকার ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে, আর শুভময়, যে ওর জীবনটা আলোয় ভরিয়ে রেখেছে, সে কোনোদিন ওর অন্তরের আলোর সন্ধান পায়নি!
হয়তো এর নামই জীবনপথের পিছনে ফেলে আসা স্মৃতির মণিকোঠা, যেখানে অন্ধকারে ঢেকে রাখা কত সুখের পরশ ব্যাথা হয়ে শুধুই অপেক্ষায় থাকে--- হ্যারিকেনের ম্লান শিখার একটু আলোর ছোঁয়ার!
এমন সব অতীত বোধহয় ফিরে ফিরে মনের আশ্রয় খোঁজে চির তরে বিলীন হওয়ার আগের মুহূর্তে।
No comments:
Post a Comment