দিয়ার ডায়েরীর ২য় পর্ব
পারমিতা চ্যাটার্জী
দিয়ার মনের ঘরের জানলাটা প্রায় বন্ধ হয়েই
গেছে মাঝে মাঝে ঝড়ের হাওয়ায় হঠাত নড়ে ওঠে, কালবৈশাখীর
দমকা হাওয়া ঢুকে মনটা এলোমেলো করে দেয়, মনের অঙ্গনে সবুজ
গাছগুলোতে জল ঢালার চেষ্টা করে, হয়তো অনেকদিনের অনভ্যাসের
গলাটা গেয়ে ওঠে তার প্রিয় রবীন্দ্রসংগীতের দু কলি,
' ...
“যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে।।
সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো,
আকাশ পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে?”
' ...
“যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে।।
সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো,
আকাশ পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে?”
ঠিক সেই সময় কেউ দিয়ার মনের দরজা ছেড়ে ঘরের
দরজায় এসে দাঁড়ায়, রাগত গলায় বলে ওঠে, ' কি
ব্যাপার তুমি এখানে কি করছ? নীচে কত লোক এসেছে তেমায় সবাই
খু্ঁজছে, যাও এখনি নীচে যাও', ।
দিয়া জানে তার স্বপ্নে সিঁড়ি ভেঙে গুড়িয়ে গেছে, তবু কি সে একটু অবকাশ পেতে পারেনা, এইতো সবাইকে গরম লুচি ভেজে আলুরদম করে খাইয়ে এলো, সবে গা ধুয়ে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে মেয়েদের নিয়ে একটু বসেছে, তার মনের উঠোনের কোণে এখনও যে গাছগুলো সবুজ আছে তাতে একটু জল দিতে, তা নইলে যে গাছগুলো শুকিয়ে এবার খড় হয়ে যাবে।
কি আর করা যাবে নীচে অনেক লোক এখন উত্তর দিতে গিলে আরও দেরী হয়ে যাবে, তাই মনের রাগ মনেই চেপে রেখে রেখে মেয়েদের পড়তে বসিয়ে নীচে নেমে আসতে হল।
নীচে এসে দেখে তার তিন শ্বশুর লাইন দিয়ে বসে আছে ।
রানাঘাট থেকে তাদের মাসতুত ভাইয়ের মেয়ে জামাই এসেছে, কর্তা বেড়িয়ে মাছ মাংস মিষ্টি সব নিয়ে এলো, অতিথি নারায়ণ, তাদের ত্রুটি হওয়া চলবেনা, আাবার একপ্রস্ত লুচি ভাজা হল,আলু বেগুন ভেজে মিষ্টি দিয়ে তাদের দেওয়া হল, কাজের একটা মেয়ে ছিল রেবতী বলে তার সাথে গিয়ে তিন তলা থেকে বিছানা নামিয়ে এনে একতলায় সোবার ব্যাবস্থা করে দেওয়া হল, এদিকে মেয়েদের পরীক্ষা ওদের পড়তে বসিয়ে দিয়ে এসেছে, বাড়ীতে পনেরো দিন হল ঠাকুর নেই, এতোগুলো লোকের রান্না সমানে করে যাচ্ছে দিয়া তার মধ্যে নিত্য পূজা, অসুস্থ শ্বশুরের নিয়মিত সেবা, বাকী যে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর আছে তাদের এক এক সময় এক এক রকম খাওয়া তার মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা সব করতে গিয়ে দিয়ার মনে হল মনের উঠোনে যে সবুজ গাছ গুলো এখনও বেঁচে ছিল তা বোধ হয় এবার সত্যি শুকিয়ে খড় হয়ে গেল, আর বোধহয় তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা, কিন্তু দিয়ার অদম্য প্রয়াস তাদের একটু হলেও বাঁচিয়ে রাখতেই হবে সব কর্তব্যের মাঝে।
দিয়া জানে তার স্বপ্নে সিঁড়ি ভেঙে গুড়িয়ে গেছে, তবু কি সে একটু অবকাশ পেতে পারেনা, এইতো সবাইকে গরম লুচি ভেজে আলুরদম করে খাইয়ে এলো, সবে গা ধুয়ে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে মেয়েদের নিয়ে একটু বসেছে, তার মনের উঠোনের কোণে এখনও যে গাছগুলো সবুজ আছে তাতে একটু জল দিতে, তা নইলে যে গাছগুলো শুকিয়ে এবার খড় হয়ে যাবে।
কি আর করা যাবে নীচে অনেক লোক এখন উত্তর দিতে গিলে আরও দেরী হয়ে যাবে, তাই মনের রাগ মনেই চেপে রেখে রেখে মেয়েদের পড়তে বসিয়ে নীচে নেমে আসতে হল।
নীচে এসে দেখে তার তিন শ্বশুর লাইন দিয়ে বসে আছে ।
রানাঘাট থেকে তাদের মাসতুত ভাইয়ের মেয়ে জামাই এসেছে, কর্তা বেড়িয়ে মাছ মাংস মিষ্টি সব নিয়ে এলো, অতিথি নারায়ণ, তাদের ত্রুটি হওয়া চলবেনা, আাবার একপ্রস্ত লুচি ভাজা হল,আলু বেগুন ভেজে মিষ্টি দিয়ে তাদের দেওয়া হল, কাজের একটা মেয়ে ছিল রেবতী বলে তার সাথে গিয়ে তিন তলা থেকে বিছানা নামিয়ে এনে একতলায় সোবার ব্যাবস্থা করে দেওয়া হল, এদিকে মেয়েদের পরীক্ষা ওদের পড়তে বসিয়ে দিয়ে এসেছে, বাড়ীতে পনেরো দিন হল ঠাকুর নেই, এতোগুলো লোকের রান্না সমানে করে যাচ্ছে দিয়া তার মধ্যে নিত্য পূজা, অসুস্থ শ্বশুরের নিয়মিত সেবা, বাকী যে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর আছে তাদের এক এক সময় এক এক রকম খাওয়া তার মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা সব করতে গিয়ে দিয়ার মনে হল মনের উঠোনে যে সবুজ গাছ গুলো এখনও বেঁচে ছিল তা বোধ হয় এবার সত্যি শুকিয়ে খড় হয়ে গেল, আর বোধহয় তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা, কিন্তু দিয়ার অদম্য প্রয়াস তাদের একটু হলেও বাঁচিয়ে রাখতেই হবে সব কর্তব্যের মাঝে।
প্রতিদিনের কর্তব্য অকর্তব্যের মধ্যে দিয়ে
যেতে যেতে দিয়া যেন সংসারের এই বিপুলতায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল, এক এক সময় নিজের মনের দরজাটা নিজেই বন্ধ করে, অশান্ত
মনটা একটু আশ্রয় খুজে বেড়ায় একটু ভালোবাসার আশ্রয়, বাপেরবাড়ী
গেলে বাবা মা ঘিরে রাখে তাদের অসীম স্নেহ আর ভালোবাসার সিক্ত রসে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা শাসনের সুর যেন থেকেই যায়, গায়
মাথায় হাত বুলিয়ে মা ওই এক কথাই বলেন, মানিয়ে নিতে হয় মা,
কত মেয়ের কত যন্ত্রণা কত কষ্ট তবু তো... তারা যুদ্ধ করে চলে,
মা কে শুধু একটা কথা বলেনি দিয়া, আগামীর
দিয়ারা আজকের দিয়াদের সব অপমানের প্রতিশোধ নেবে, তারাই জবাব
দেবে নারী শক্তি কত তীব্র কত শক্তিশালী কতদিন আর তাদের দাবিয়ে রাখবে, এবার তো রুখে দাঁড়াবার সময় হয়ে গেছে। ওই অত্যাচারী বেশীর ভাগ বৃদ্ধ
শ্বশুররা তাদের বার্দ্ধক্যের সুযোগ নিয়ে কত মেয়ের সুন্দর সোনালী জীবন অন্ধকারে
ডুবিয়ে দিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই, দিয়াও তার ব্যাতিক্রম
নয়।
তবু দিয়া ফাগুন সন্ধ্যায় দক্ষিণের বারন্দায় দাঁড়িয়ে কল্পনার সাগরে সাঁতার কাঁটত, মনে মনে ভাবত একদিন হয়ত পূর্ণিমার চাঁদ তার জানলায় হাসবে, বারন্দার কোণে যূথি ফুলের গন্ধ ভাসবে, আধো জাগরণ আধো তন্দ্রার ঘোরে তার মনের মানুষ কাছে আসবে, সব কালো ঘুচে গিয়ে নতুন ভোরের আলোয় সে স্নান করবে,
সত্যি কি এই স্বপ্ন সফল হয়েছিল দিয়ার জীবনে? শুনি দিয়া কি বলে, দিয়া বলছে মাঝরাত্রি অবধি মেয়েদের পড়ার প্রশ্ন উত্তর লিখে ওদের মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি, ভোর হতে না হতে দরজায় ধাক্কা, দরজা খুলে দেখি শ্বশুর মশাই দাঁড়িয়ে আছেন, আমায় বললেন উঠে পড় গুরুদেব এসেছেন না? চা করতে হবে তো? হ্যা বাবা এখুনি আসছি বলে কোন রকমে বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বাসি কাপড় বদলে রান্নাঘরে ঢুকলাম, তাড়াতাড়ি করে গুরুদেবের ভালোপাতার চা করে টিপটে ভিজিয়ে প্লেটে নানারকম বিস্কুট সাজিয়ে উনার পূজা শেষ হবার
অপেক্ষায় বসে রইলাম, কখন তিনি দরজা খুলবেন, দরজা খুলে গুরু শিষ্যকে চা দিয়ে বেড়িয়ে দেখলাম আরও দুজন শ্বশুর মশাই মানে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর তারাও এসেও উপস্থিত হয়েছে, ততদিনে দুই সন্তানের মা সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে, ভালোবাসার পাবার আকাঙ্খাও ডুবে গেছে অতৃপ্ত স্বপ্ন সাগরে, তাই অন্তরের সুপ্ত বাসনা সুপ্ত থেকে গেল, স্বপ্ন ঘরের দরজাটায় আপাতত তালা লাগিয়ে পরবর্তী হুকুম তামিলের জন্য তৈরী হলাম। বড় মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে ছোট মেয়ের দুধের বোতল ফোটাতে গিয়ে বোতলটা গলে গেল, বড়ননদ গুরুদেব এসেছেন বলে সপরিবারে বাপেরবাড়ী আছে, বৌদি মধ্যবিত্ত বাড়ীর মেয়ে তাকে যখন যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করা যায়, আমাাকে তাই বলতে একটিও দ্বিধা করলনা যে ' বাবার পয়সা গুলো কি ভাবে নষ্ট হয়, একটু দেখে ফোটাতে পারিস না বোতলটা গলে গেল', তখন বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে আগের মতন সব সহ্য করে নিতে পারিনা, বিশেষ করে যখন জানি বেশ কিছু দধের বোতল আর দুই মেয়ে আর আমার জন্য প্রচুর প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমার দিদি আমার বাবা মায়ের হাত দিয়ে আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে, তাই আমিও উত্তর দিয়েদিলাম এগুলো আমার দিদি পাঠিয়েছে, বাবার পয়সায় কেনা নয়, যাই হোক এই ভাবেই প্রতিটা দিন যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিল।
তবু দিয়া ফাগুন সন্ধ্যায় দক্ষিণের বারন্দায় দাঁড়িয়ে কল্পনার সাগরে সাঁতার কাঁটত, মনে মনে ভাবত একদিন হয়ত পূর্ণিমার চাঁদ তার জানলায় হাসবে, বারন্দার কোণে যূথি ফুলের গন্ধ ভাসবে, আধো জাগরণ আধো তন্দ্রার ঘোরে তার মনের মানুষ কাছে আসবে, সব কালো ঘুচে গিয়ে নতুন ভোরের আলোয় সে স্নান করবে,
সত্যি কি এই স্বপ্ন সফল হয়েছিল দিয়ার জীবনে? শুনি দিয়া কি বলে, দিয়া বলছে মাঝরাত্রি অবধি মেয়েদের পড়ার প্রশ্ন উত্তর লিখে ওদের মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি, ভোর হতে না হতে দরজায় ধাক্কা, দরজা খুলে দেখি শ্বশুর মশাই দাঁড়িয়ে আছেন, আমায় বললেন উঠে পড় গুরুদেব এসেছেন না? চা করতে হবে তো? হ্যা বাবা এখুনি আসছি বলে কোন রকমে বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে বাসি কাপড় বদলে রান্নাঘরে ঢুকলাম, তাড়াতাড়ি করে গুরুদেবের ভালোপাতার চা করে টিপটে ভিজিয়ে প্লেটে নানারকম বিস্কুট সাজিয়ে উনার পূজা শেষ হবার
অপেক্ষায় বসে রইলাম, কখন তিনি দরজা খুলবেন, দরজা খুলে গুরু শিষ্যকে চা দিয়ে বেড়িয়ে দেখলাম আরও দুজন শ্বশুর মশাই মানে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর তারাও এসেও উপস্থিত হয়েছে, ততদিনে দুই সন্তানের মা সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে, ভালোবাসার পাবার আকাঙ্খাও ডুবে গেছে অতৃপ্ত স্বপ্ন সাগরে, তাই অন্তরের সুপ্ত বাসনা সুপ্ত থেকে গেল, স্বপ্ন ঘরের দরজাটায় আপাতত তালা লাগিয়ে পরবর্তী হুকুম তামিলের জন্য তৈরী হলাম। বড় মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে ছোট মেয়ের দুধের বোতল ফোটাতে গিয়ে বোতলটা গলে গেল, বড়ননদ গুরুদেব এসেছেন বলে সপরিবারে বাপেরবাড়ী আছে, বৌদি মধ্যবিত্ত বাড়ীর মেয়ে তাকে যখন যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করা যায়, আমাাকে তাই বলতে একটিও দ্বিধা করলনা যে ' বাবার পয়সা গুলো কি ভাবে নষ্ট হয়, একটু দেখে ফোটাতে পারিস না বোতলটা গলে গেল', তখন বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে আগের মতন সব সহ্য করে নিতে পারিনা, বিশেষ করে যখন জানি বেশ কিছু দধের বোতল আর দুই মেয়ে আর আমার জন্য প্রচুর প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমার দিদি আমার বাবা মায়ের হাত দিয়ে আমেরিকা থেকে পাঠিয়েছে, তাই আমিও উত্তর দিয়েদিলাম এগুলো আমার দিদি পাঠিয়েছে, বাবার পয়সায় কেনা নয়, যাই হোক এই ভাবেই প্রতিটা দিন যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিল।
ক্রমশ---
এভাবেই কত দিয়া হারিয়ে যায়...... :(
ReplyDeleteপরের সংখ্যার জন্য অপেক্ষায় রইলাম......