Monday, January 23, 2017
সম্পাদকীয়...অলোক চৌধুরী
শুভ নববর্ষ।
ভালোমন্দ মিশিয়ে কেটে গেল আরও একটা বছর। ২০১৬ সালকে বিদায় জানিয়ে আমরা হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছি ২০১৭ সালকে। গতবছরে মাঝের মাত্র দুটি মাস বাদে আমরা এই পত্রিকা প্রতি মাসেই বার করেছি। এই ই-ম্যাগটি চিলেকোঠা গ্রুপের একটা প্রকাশনা। তাই গত বছর চিলেকোঠা গ্রুপ যে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিয়োজিত থেকেছে তার একটা সালতামামি নীচে পেশ করছি।
প্রথমেই আসছি ৩০ জানুয়ারী, বইমেলাতে চিলেকোঠা তাদের সদস্যদের প্রকাশিত বই বিক্রিতে অংশগ্রহণ করেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারী আমাদের সদস্য সোমঋতা মল্লিকের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে চিলেকোঠার সাহিত্য আড্ডা। ২০ মার্চ ডোমজুড়ে আমরা পালন করেছি বসন্ত উৎসব। ২৭ মার্চ বিড়লা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত চিলেকোঠা জলসাঘরের শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীত উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। ২ মে বাংলা একাডেমীতে চিলেকোঠা জলসাঘরের শিল্পীদের শ্রুতিনাটক পরিবেশনা। ১৪ মে ময়ূরপঙ্খী লঞ্চে গঙ্গাবক্ষে আনন্দ অনুষ্ঠান। ২৭ মে বিকালে আমরা মিলিত হয়েছিলাম মোহরকুঞ্জে। মধুমিতা ভট্টাচার্যের বাড়িতে সাহিত্য আড্ডা হয়েছিল গত ২৫ জুন। ওই বছরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ISC, ICSE এবং CBSE উত্তীর্ণ আমাদের চিলেকোঠার সদস্যদের ১২ জন পুত্রকন্যাকে ৯ জুলাই আমরা অবনীন্দ্র সভাঘরে এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্বর্ধিত করেছিলাম। ১৮ আগষ্ট বরাহনগর মিলনতীর্থ বৃদ্ধাশ্রমে আমরা ৬০ জন আবাসিককে রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করেছি। ২ অক্টোবর মহেশ্বরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮ জন দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে আমাদের চিলেকোঠা সদস্যদের দেওয়া অনুদান পৌঁছে দিয়েছি। ৩০ নভেম্বর চিলেকোঠা জলসাঘরের শিল্পীরা বাংলা একাডেমীতে শ্রুতিনাটক পরিবেশনা করেছেন। ১১ ডিসেম্বর আমাদের গ্রাণ্ড পিকনিক অনুষ্ঠিত হয়েছে বড়া তপোবন উদ্যানে। আশা রাখি এ বছরেও চিলেকোঠা নানা সামাজিক এবং নানা আনন্দ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার আপন জয়যাত্রা সুদৃঢ় করবে।
এবারে আসছি দেশের খবরে। গত ৩১ মার্চ ভরদুপুরে বিবেকানন্দ রোড ও রবীন্দ্র সরণীর মোড়ে নির্মীয়মান বিবেকানন্দ ফ্লাই ওভারের দুটি ডেক ও সার্ভার ভেঙে ২১ জন হতভাগ্য পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ২৮ জুলাই চলে গেছেন ১৯৯৬ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। আবার আনন্দের খবর গত বছরের ডিসেম্বরে জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত হলেন সবার প্রিয় বর্ষীয়ান কবি মাননীয় শঙ্খ ঘোষ। গত বছর কোলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এশিয়ার ২৫টি মিউজিয়ামের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আর সবচেয়ে দর্শক সংখ্যা এখন ভিক্টোরিয়ার দখলে। গত বছর এভারেস্ট শীর্ষে উঠেছেন ১০ জন বাঙালী।
আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। আমাদের ই-ম্যাগ পড়ুন, আপনার বন্ধুদের পড়তে উৎসাহিত করুন।
নমস্কার..
নমস্কার..
স্বপ্নস্বরূপ - ২ নন্দিনী সেনগুপ্ত
এই ত সেদিন,
একটা বইয়ের দোকানে বই কিনতে গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর করে সাজানো পুস্তক বিপণী।
দোতলায় আবার চা-কফি খাবার জায়গা। সেখানে গিয়ে দুই চেনা মুখের সঙ্গে দেখা। হাসি- মজা-
সেলফি- ছবি তোলা এসব শেষ করে বই কিনে বেরিয়ে আসবো, হঠাৎ মনে হল আমার ভীষণ চেনা,
ভীষণ পরিচিত একজনের চোখে চোখ পড়ল। মনে হল সে আমাকে পেছন থেকে
ডাকছে। হ্যাঁ, সেই চোখ। এই ছবিটাই ত আজন্মকাল দেখে আসছি আমার মায়ের ঘরে। সেই যে,
গোঁফদাঁড়ির ফাঁকে ফাঁকে মনে হচ্ছে একটু কৌতুক নিহিত আছে। যেন বলছেন, ‘আমি কি তোর চেনা নই?’ কি
করে বলি, ভীষণ চেনা! তাঁকে চেনা কি সহজ ব্যাপার? আমি ত আমার মত করে চিনে নিতে চাই। ‘জানি জানি
আমার চেনা, কোনও কালেই ফুরাবে না’। অচেনাকে চেনবার ইচ্ছে তিনি জাগিয়ে দিচ্ছেন বারে
বারে, আবার তিনিই রাশ টেনে ধরে বলছেন...
‘কেউ যে
কারে চিনি নাকো সেটা মস্ত বাঁচন ।
তা না হলে নাচিয়ে দিত বিষম তুর্কি -নাচন ।‘ ...
তা না হলে নাচিয়ে দিত বিষম তুর্কি -নাচন ।‘ ...
চেনা-অচেনার এই বিষম দ্বন্দ্ব
শিশুকাল থেকে তিনিই হয়ত বা জাগিয়ে দিয়েছেন মনের মধ্যে। বলেছেন,
‘ছাদের কোণে পুকুরপারে জানব নিত্য-অজানারে
মিশিয়ে রবে অচেনা আর চেনা;
জমিয়ে ধুলো সাজিয়ে ঢেলা তৈরি হবে আমার খেলা,’
মিশিয়ে রবে অচেনা আর চেনা;
জমিয়ে ধুলো সাজিয়ে ঢেলা তৈরি হবে আমার খেলা,’
পরম চেনা পরিসরেও যে কতকিছু অজানা, অচেনা সেকথা ত তিনিই
শিখিয়ে দিচ্ছেন। মনে হয় যেন চেপে ধরে আছি তাঁর
হাত। হ্যাঁ, ওই আলখাল্লার হাতাটিও যেন আমার চেনা। স্বপ্নে এসে চিনিয়ে দিতে চান
স্বরূপ। ঘিরে আছেন প্রতি পদক্ষেপে, অথচ চেনা হয়ে ওঠেনা। কি এক অন্ধতার আবরণে বারে
বারে সরে যাই তাঁর ভাবনা থেকে।
যারা কবিতা লেখেন, উপমা হিসেবে খুব
স্বাভাবিক কারণেই চেনা জিনিস বেছে নেন। অচেনা জিনিস দিয়ে কবি উপমা তৈরি করবেন
কিভাবে? হ্যাঁ, পারবেন, তবে তাকে সেই জিনিসটি আগে চিনিয়ে দিতে হবে পাঠক- পাঠিকাদের।
তিনি সেই কঠিন কাজটিই করেছেন তার সারা জীবনের লেখায়। সেই অর্থে কবি যেন একজন যাত্রী। বেরিয়ে পড়েছেন অচেনা নিরুদ্দেশের
পথে। সঙ্গী করে নিয়েছেন আমাদের কি অনায়াস দক্ষতায়। পথের প্রতি বাঁক চিনিয়ে দিচ্ছেন
এমন ভঙ্গীতে যেন তিনিও প্রথম দেখছেন অচেনাকে। বিস্মিত হচ্ছেন আমাদের মতই। না, কোনও
জ্ঞান দেওয়ার ভঙ্গী নেই। আমরা তাকে বসিয়েছি গুরুদেবের আসনে, কিন্তু তিনি যে বারে
বারে পথের ধূলায় নেমে এসে ধরছেন হাত। আর পাঁচটা গড়পড়তা বাঙ্গালী মানসিকতার থেকে
তিনি ঠিক এইখানেই আলাদা। কোনওদিন চাননি গুরুমশাইগিরি করে নিজেকে সব্বার থেকে সরিয়ে
রাখতে। ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ প্রবন্ধে বলছেন,...
‘যিনি জাত-শিক্ষক ছেলেদের ডাক পেলেই তাঁর আপন ভিতরকার আদিম
ছেলেটা আপনি ছুটে আসে। মোটা গলার ভিতর থেকে উচ্ছ্বসিত হয় প্রাণে-ভরা কাঁচা হাসি।
ছেলেরা যদি কোনো দিক থেকেই তাঁকে স্বশ্রেণীর জীব বলে চিনতে না পারে, যদি মনে
করে লোকটা যেন প্রাগৈতিহাসিক মহাকায় প্রাণী, তবে থাকার আড়ম্বর দেখে
নির্ভয়ে সে তাঁর কাছে হাত বাড়াতেই পারবে না। সাধারণত আমাদের গুরুরা প্রবীণতা
সপ্রমাণ করতেই চান, প্রায়ই ওটা শস্তায় কর্তৃত্ব করবার প্রলোভনে, ছেলেদের আঙিনায় চোপদার না নিয়ে এগোলে সম্ভ্রম নষ্ট
হবার ভয়ে তাঁরা সতর্ক। তাই পাকা শাখায় কচি শাখায় ফুল ফোটাবার ফল ফলাবার মর্মগত
সহযোগ রুদ্ধ হয়ে থাকে।‘
কখনও তিনি চান নি প্রবীণ গুরুদেব হয়ে
উঠতে। সত্যদ্রষ্টা কবির প্রাণ সতত জেগে ছিল বিস্ময়ে। বিস্ময়, যা অতি প্রয়োজনীয় গুণ- অচেনা যে কোনও
জিনিসের মুখোমুখি হবার জন্য, সেই ‘বিস্ময়’ যাতে কখনও
মরে না যায়, সেই আবেদন দেখতে পাই তার লেখার প্রতি শব্দে। অচেনাকে চিনিয়ে দিতে দিতে
তিনি গুরুমশাই নন, বরং চিরচেনা পরানসখা হয়ে ওঠেন আপামর বাঙ্গালীর।
(চলবে)
ছোট গল্প...অনাস্বাদিত - অরুণ চট্টোপাধ্যায়
‘আমরা’ মানে মিতিলের দাদা অত্রি, বৌদি সুপ্রিয়া আর পাঁচ বছরের ভাইঝি
মৌলী। ওরা চন্দননগরে এক বন্ধুর মেয়ের অন্নপ্রাশনে গেল। মিতিলকেও যেতে বলেছিল।
কিন্তু মিতিলের ভাল লাগছিল না। হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা কিছুদিন হল শেষ হয়েছে।
পরীক্ষা তো নয় যেন ঝড় একটা। তাই বেশ কয়েকটা দিন বিশ্রাম করতে চায় সে। আর একলা হলে
তো বেশ ভাল হয়।
এমনিতে তার বন্ধুর বৃত্ত বিরাট বড় ব্যাসার্ধের নয়। মিশুকে বলে তেমন
কিছু নাম তার নেই। দেখা হলে একটু মিষ্টি করে হেসে দেওয়ার বেশি সে কিছু করতে পারে
না। ব্যতিক্রম এই শোভন। দাদার বন্ধু হলেও তার চেয়ে প্রায় পনের ষোল বছরের ওপর বেশি
বড়। অত্রি বোনের থেকে পনের বছর সাত মাসের বড়। আসলে মিতিল হল তার বাবা মায়ের ভালবাসার
একটি দুর্ঘটনার ফল। ছোট সংসার রাখার পক্ষপাতী ছিল তারা। একটা ছেলে হয়েছে এই
যথেষ্ট। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণের পাকাপাকি ব্যবস্থা না করে কম সুখে ছিল না। অতএব
পাকাপাকির দরকারটা কি?
আর সেই ফাঁকে এসে পড়েছিল মিতিল। সেটা অত্রির জন্মের প্রায় পনের
বছর পরে। দুর্ঘটনা হলেও অত্রির বাবা মা মিতিলকে বিসর্জন দেয় নি। এখন বরং বলে আহা
তেমন হলে আমাদের এমন ফুটফুটে পরীর মত মেয়েটাকে আমরা হারাতাম।
মাঝে মাঝে মিতিলের মা গল্প করে এ কথা শোনাতো। বেশ ভাল লাগত মিতিলের। খুব খুশি হত। এখন আর তার
মা বাবা নেই। ভয়ংকর এক দুর্ঘটনার ছোবল তাদের দুজনকেই কেড়ে নিয়েছে। তাই অত্রিই এখন
তার বাবার মত। যদিও বৌদি সুপ্রিয়া তার চেয়ে মাত্র সাত আট বছরের বড় তবু সে কিন্তু মিতিলকে
মায়ের আদর দেয়। আর পাঁচ বছরের পুঁচকে ভাইঝি মৌলী তো তার ভাইঝি নয় যেন বোন।
নিজের এমন ভরা সংসারের জন্যে বাইরের কথা বেশি ভাবত না মিতিল। ফেসবুকে হাতেগোনা কয়েকটা
ফ্রেন্ড আছে বটে তবে সে বেশিক্ষন এটা নিয়ে কাটায় না। বাড়িতে যতক্ষণ থাকে তার কেটে
যায় পুঁচকে ভাইঝিটাকে নিয়ে। তার সঙ্গে খেলা, খুনসুটি এমন কি তার খেলাধুলো বা
পড়াশোনায় সাহায্য করা তো বটেই।
টি-ভি বেশি দেখে না। দেখলেও মৌলীকে সঙ্গে নিয়ে ছোটদের চ্যানেল। গল্পের
বই বিশেষ পড়ে না। আজকাল অবশ্য বাংলা বা ইংরেজি গল্পের বই পড়ার রেওয়াজ এমনিতেই কমে
এসেছে অনেক। সবাই মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ এসব নিয়ে মেতে আছে। মিতিল
অবশ্য ব্যতিক্রম। পড়াশোনায় মন্দের ভাল। সেটা নিয়েই সে বেশ খুশি।
তবে একটা জিনিস তার বেশ ভাল লাগে। এই দাদার বন্ধু শোভনকে। দাদার থেকেও
যেন সুন্দর দেখতে। সুঠাম শরীর। গোলগাল মুখে হাসির একটা ছোঁয়া যেন সর্বদাই লেগে
আছে। মাঝে মাঝেই আসে তাদের বাড়িতে। আসে বৌ শ্রাবণী আর ছেলে ব্রতীনকে নিয়ে। সন্ধের
দিকে আসে। তার দাদা অত্রি অফিস থেকে ফেরার পর। এই দুই পরিবার মিলে যেন সারা
সন্ধ্যেটা স্বর্গসুখ উপভোগ করে।
এই হুল্লোড় দারুন লাগে মিতিলের। অমিশুকে মেয়ে হলেও বেশ উপভোগ
করে। কিন্তু সব চেয়ে ভাল লাগে শোভনকে। কি সুন্দর মাথায় ঘন কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। বেশ
বড় সড় একটা মোটা শুঁয়োপোকার মত কালো গোঁফ। আর গালে একটা বেশ বড় আঁচিল। মনের হাত
দিয়ে আঁচিল সরিয়ে শোভনকে দেখেছে অনেকবার। কিন্তু কোনবারই ভাল লাগে নি তার এতটুকু। অনেকের
গায়ের জড়ুল চিহ্ন যেমন তার একটা অলঙ্কার স্বরূপ শোভনের গালের জড়ুলটাও যেন ঠিক
তেমনি। অন্তত মিতিলের কাছে।
অত্রি বৌ মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছে সেই সকালে। মিতিলকে আর জোরাজুরি করে নি
ওরা কেউ। সুপ্রিয়া ওর একার মত রান্না করে দিয়ে বলেছে, ঢাকা দেওয়া রইল রে। মনে করে
ঠিক সময় মত খেয়ে নিস। আর বাইরের গেট অকারণে খুলবি না। বিশেষ ভর দুপুরে। চারদিকে
আজকাল যা হচ্ছে। ফেরিওলাগুলোই কি সব কম পাজি। কখন কি মতলবে ঢোকে আগে থেকে বোঝা
মুশকিল। গেট একেবারে খুলবি না কিন্তু মিতিল। যা কথা সব বারান্দা থেকে বলবি।
নীরবে শুধু ঘাড় নেড়েছে মিতিল। ফেরিওলাকে গেট খুলবে না ছাই। এখন
শুধু বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমোবে। মনে মনে বেশ ক্লান্তি বোধ করল সে। যেন অনেকদিন বাড়ির
সকলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি খেলেছে। এখন আর ভাল লাগছে না।
পড়ে পড়ে বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমোল। তারপর উঠে চান খাওয়া করে আবার শুল।
এবার কিন্তু ঘুম এল না। টিভি চালাল। প্রথমে বাচ্চাদের চ্যানেল চালিয়ে কিছুক্ষন
দেখতে দেখতে তার আর ভাল লাগল না। মনে হল এই চ্যানেলগুলো মৌলীর সঙ্গে দেখলেই মজা
পাওয়া যায়।
টিভি বন্ধ করে আবার ঘুমোনর চেষ্টা করল। কিন্তু এবারও ঘুম এল না। মাথার
মধ্যে কি যেন একটা ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু সে ঠিক বুঝতে পারছে না। আবার টিভি চালাল।
এবার রিমোট নিয়ে খেয়াল খুশিমত বাটন টিপতে টিপতে একটা বিনোদন চ্যানেলে গিয়ে হাজির
হল। একটা গানের অর্থাৎ মিউজিক চ্যানেল। সারাদিন এখানে গানবাজনা আর নাচ হয়। অনেক
সিনেমার জনপ্রিয় সিন দেখান হয়। হট গানের সব সিন। কিন্তু মিতিল তো কোনদিন টিভিতে
এসব চ্যানেল দেখেই না। বন্ধুরা টিভি চ্যানেলের নানা অনুষ্ঠান যেমন সিনেমা, সিরিয়াল
বা রিয়ালিটি শো নিয়ে আলোচনা করলে সে চুপ থাকে। জোরাজুরি করলে বলে, দূর আমার ওসব
ভাল লাগে না একদম।
কিন্তু এখন তার বেশ ভাল লাগছে। মনের মধ্যে যেন একটা কম্পন একটা শিহরণ।
রক্তের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে যেন কিসের একটা তীব্র স্রোত। রোমান্টিক সিনটা অবশ
করে রেখেছে একটা আবেশে। একটা মাধুর্য তাকে এমন পেয়ে বসল যে সামান্য একটু ঘুম এসে
গেল।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসে ঘড়ি দেখল। টিভিটা এখনও চলছে আর তাতে বিজ্ঞাপন হচ্ছে।
জানলা দিয়ে দেখল সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এসেছে। শোভনদা আসবে হয়ত সাড়ে ছটা কি সাতটা। এখন
বাজে প্রায় ছটা।
অলস স্খলিত পদে সে উঠে গেল সিঁড়ি দিয়ে। দু’চোখে ঘুমের মেজাজ। একতলা
বাড়ির ছাদ বেশ সুন্দরভাবে সাজানো। কারুকাজ করা আলসে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রাস্তাটা।
রাস্তাটা খুব একটা সরু নয় তাই মাঝে মধ্যে রিক্সোটিক্সোর সঙ্গে অটো টোটো বা
প্রাইভেট কারেরও আনাগোনা আছে। বেশ কিছুক্ষন আলসের পাশে দাঁড়িয়ে রাস্তাটা দেখল মিতিল।
ছাদে একটা আবছা অন্ধকার। ফুলের টবগুলো বেশ কিছু ফুল আর পাতাবাহারে
সাজানো। মিতিল এসব কিছু না করলেও সুপ্রিয়া করে বেশ যত্নের সঙ্গে। নানা ফুলের চারা
সে সংগ্রহ করে আনে নানা নার্শারি থেকে। ছুটির দিনে মাঝে মাঝে অত্রিকে ডেকে আনে
ওপরে। দুজনে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে এই ফুলগাছ আর পাতাবাহারের দৃশ্য দেখে। দেখতে দেখতে
মোহিত হয়ে সুপ্রিয়ার দিকে কি সুন্দর মুগ্ধ হয়ে তাকায়। দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে মিতিলের
মনের ভেতর কি যেন একটা পুলক জেগে ওঠে সে ঠিক বুঝতে পারে না। গায়ে যেন একটা কাঁটা
দেবার মত ব্যাপার।
অন্ধকার আর একটু ঘন হচ্ছে। এইবার বোধহয় ছটা বেজে গেছে। শোভনের আসার সময়
হল। একটু অন্যমনস্ক থাকলে হয় কলিং বেল বাজিয়ে ফিরে যাবে। ফিরে এসে দাদা শুনে হবে
অপ্রস্তুত। হয়ত মিতিলকে দিতে পারে ধমকও।
ছাদ থেকে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। সিঁড়ির চাতাল এখন অন্ধকার। সিঁড়ির ঘরের
আলো জ্বালান হয় নি। এইবার জ্বালাবে সে। কিন্তু কেমন যেন ভাল লাগছে না মিতিলের। কি যেন একটা মধুর চিন্তায়
অবশ হয়ে আছে তার মন। এই অন্ধকারের ঘনত্ব তার মনে অন্য একটা চিন্তার ঘনত্ব বাড়িয়ে
তুলছে।
চুপ করে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে তার ভাল লাগছে। সিঁড়ির মাঝের চাতালে
একটা হালকা পদশব্দ। সে কি! বাইরের গেট কি সে বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল নাকি? কি যেন
একটা আসছে তার দিকে। একটু ভয় ভয় করতে লাগল। আবার অন্য একটা কথা মাথাতেও এল। তবে কি
শোভন মানে শোভনদাই দরজা খোলা পেয়ে চলে এসেছে ভেতরে?
কিন্তু এমন চোরের মত কেন? নাকি সেটা মিতিলের মনে হচ্ছে? শোভনদা তো
তাদের প্রায় ঘরের লোকের মতই। হয়ত তাই সরাসরি চলে এসেছে। তাই বলে এমনভাবে? একবারও
না ডেকেই? কলিং বেল একবার না বাজিয়েই? আর ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করার বদলে সরাসরি
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে? মনের মধ্যে একটা অস্বস্তির খোঁচা। আবার বেশ একটা ভাললাগা ভাব।
একটা গাঢ় অন্ধকার যেন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সেই অন্ধকারেই শোভনের পুরু
গোঁফ আর গালের আঁচিলের অস্তিত্ব টের পেল মিতিল। খুব কাছে এসে পড়েছে
শোভনদা। একেবারে কাছে। তার গায়ের গন্ধ তার নাকে আর তার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে।
--শোভনদা! আবেগরুদ্ধ গলায় ফিসফিস করে ডাকল মিতিল। কিন্তু শোভন কোনও উত্তর
দিল না। পরিবর্তে মিতিলের দুই ঠোঁটে একটা উত্তাপের ছোঁয়া। সেই সঙ্গে একটা চাপ।
সারা শরীরের শিরায় শিরায় শিহরণ। একটু আগে সেই রোমান্টিক সিনের নায়িকা মনে হচ্ছে
নিজেকে। নায়কের মতই সুন্দর সুপুষ্ট চেহারা শোভনদার।
বেশ কিছুক্ষন উপভোগ করার পর হঠাৎ তার মনে হল শোভনদা যে তার চেয়ে অনেক
বড়। তাতে বিবাহিত পুরুষ। একটি সুন্দরী স্ত্রীর স্বামী আর ফুটফুটে বাচ্চার বাবা।
কিন্তু তা হোক। এই পরশ তার এত ভাল লাগছে যা আগে কখনও কল্পনাও করে নি। এখন তার মনে হচ্ছে এই
অজানা অনধ্যুষিত জগতটার সম্পর্কে এত উদাসীন এতকাল সে ছিল কি করে?
কড় কড় করে যেন একটা বাজ পড়ল। নিচে গেটে কলিং বেলের শব্দ। মিতিলের হঠাৎ
এখন মনে হল বেলটা বেজে চলেছে বেশ কিছুক্ষন ধরেই। অন্যমনস্ক থাকার জন্যেই খেয়াল করে
নি। জোর করে সেই আবেশের হাত থেকে মুক্ত করল নিজেকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেগে দুড়
দুড় করে ছুটে নেমে এল সিঁড়ি দিয়ে। কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেল দরজার দিকে। কাঁপা হাতে
দরজা খুলল।
--এ কি মিতিল? তুমি কি এই সন্ধ্যেতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি ভাই? শ্রাবণীর
গলা কলকলিয়ে উঠল ঝরণার মত।
এরা তিনজন এসেছে। একেবারে সামনে পুঁচকে ব্রতীন কেমন ভ্যাবলা ভ্যাবলা
ভাবে তাকিয়ে আছে। পেছনে মিষ্টি হাসিতে মুখ ভরিয়ে কৌতূহলী শ্রাবণী। আর সবার পেছনে শোভন।
অন্ধকারে তার মুখটা ভাল করে দেখা যাচ্ছে না ভাল করে।
গেট খুলে দিল মিতিল। ড্রয়িং রুমে বসাল।
--বসুন শ্রাবণী বৌদি। দাদা আর বৌদি একটু চন্দননগরে গেছে। ওদের একটা
নেমন্তন্ন আছে। শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল মিতিল। কিন্তু তাকাতে পারল না
শোভনের দিকে। নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হচ্ছে তার। মনে হতে লাগল এই নির্দোষ
মানুষটাকে অশুচি করে দেবে হয়ত তার দৃষ্টি। নিজের মনটা কি সত্যি এত বিষাক্ত হয়ে
গেছে তার যে শোভনদার মত মানুষের সম্পর্কে—কল্পনা হলেও সেটার জন্ম তো তার মনের
মধ্যেই ছিল নাকি?
ধারাবাহিক গল্প............দিয়ার ডায়েরী...... পারমিতা চ্যাটার্জী
' ...
যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে
জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে।।
সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো,
আকাশ পানে হাত বড়ালেম কাহার তরে?
ঠিক সেই সময় কেউ দিয়ার মনের দরজা ছেড়ে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়, রাগত গলায় বলে ওঠে, ' কি ব্যাপার তুমি এখানে কি করছ? নীচে কত লোক এসেছে তেমায় সবাই
খু্ঁজছে, যাও এখনি
নীচে যাও', ।
দিয়া জানে তার স্বপ্নে সিঁড়ি ভেঙে গুড়িয়ে গেছে, তবু কি সে একটু অবকাশ পেতে পারেনা, এইতো সবাইকে গরম লুচি ভেজে আলুরদম করে খাইয়ে এলো, সবে গা ধুয়ে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে মেয়েদের নিয়ে একটু বসেছে, তার মনের উঠোনের কোণে এখনও যে গাছগুলো সবুজ আছে তাতে একটু জল দিতে, তা নইলে যে গাছগুলো শুকিয়ে এবার খর হয়ে যাবে।
কি আর করা যাবে নীচে অনেক লোক এখন উত্তর দিতে গিলে আরও দেরী হয়ে যাবে, তাই মনের রাগ মনেই চেপে রেখে রেখে মেয়েদের পড়তে বসিয়ে নীচে নেমে আসতে হল।
নীচে এসে দেখে তার তিন শ্বশুর লাইন দিয়ে বসে আছে
রানাঘাট থেকে তাদের মাসতুত ভাইয়ের মেয়ে জামাই এসেছে, কর্তা বেড়িয়ে মাছ মাংস মিষ্টি সব নিয়ে এলো, অতিথি নারায়ণ, তাদের ত্রুটি হওয়া চলবেনা, আাবার একপ্রস্ত লুচি ভাজা হল,আলু বেগুন ভেজে মিষ্টি দিয়ে তাদের দেওয়া হল, কাজের একটা মেয়ে ছিল রেবতী বলে তার সাথে গিয়ে তিন তলা থেকে বিছানা নামিয়ে এনে একতলায় সোবার ব্যাবস্থা করে দেওয়া হল, এদিকে মেয়েদের পরীক্ষা ওদের পড়তে বসিয়ে দিয়ে এসেছে, বাড়ীতে পনেরো দিন হল ঠাকুর নেই, এতোগুলো লোকের রান্না সমানে করে যাচ্ছে দিয়া তার মধ্যে নিত্য পূজা, অসুস্থ শ্বশুরের নিয়মিত সেবা, বাকী যে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর আছে তাদের এক এক সময় এক এক রকম খাওয়া তার মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা সব করতে গিয়ে দিয়ার মনে হল মনের উঠোনে যে সবুজ গাছ গুলো এখনও বেঁচে ছিল তা বোধ হয় এবার সত্যি শুকিয়ে খর হয়ে গেল, আর বোধহয় তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা, কিন্তু দিয়ার অদম্য প্রয়াস তাদের একটু হলেও বাঁচিয়ে রাখতেই হবে সব কর্তব্যের মাঝে।
প্রতিদিনের কর্তব্য অকর্তব্যের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দিয়া যেন সংসারের এই বিপুলতায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল, এক এক সময় নিজের মনের দরজাটা নিজেই বন্ধ করে, অশান্ত মনটা একটু আশ্রয় খুজে বেড়ায় একটু ভালোবাসার আশ্রয়, বাপেরবাড়ী গেলে বাবা মা ঘিরে রাখে তাদের অসীম স্নেহ আর ভালোবাসার সিক্ত রসে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা শাসনের সুর যেন থেকেই যায়, গায় মাথায় হাত বুলিয়ে মা ওই এক কথাই বলেন, মানিয়ে নিতে হয় মা, কত মেয়ের কত যন্ত্রণা কত কষ্ট তবু তো... তারা যুদ্ধ করে চলে, মা কে শুধু একটা কথা বলেনি দিয়া, আগামীর দিয়ারা আজকের দিয়াদের সব অপমানের প্রতিশোধ নেবে, তারাই জবাব দেবে নারী শক্তি কত তীব্র কত শক্তিশালী কতদিন আর তাদের দাবিয়ে রাখবে, এবার তো রুখে দাঁড়াবার সময় হয়ে গেছে। ওই অত্যাচারী বেশীর ভাগ বৃদ্ধ শ্বশুররা তাদের বার্দ্ধক্যের সুযোগ নিয়ে কত মেয়ের সুন্দর সোনালী জীবন অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই, দিয়াও তার ব্যাতিক্রম নয়।
তবু দিয়া ফাগুন সন্ধ্যায় দক্ষিণের বারন্দায় দাঁড়িয়ে কল্পনার সাগরে সাঁতার কাঁটত, মনে মনে ভাবত একদিন হয়ত পূর্ণিমার চাঁদ তার জানলায় হাসবে, বারন্দার কোণে যূথি ফুলের গন্ধ ভাসবে, আধো জাগরণ আধো তন্দ্রার ঘোরে তার মনের মানুষ কাছে আসবে, সব কালো ঘুচে গিয়ে নতুন ভোরের আলোয় সে স্নান করবে,
সত্যি কি এই স্বপ্ন সফল হয়েছিল দিয়ার জীবনে?
দিয়া জানে তার স্বপ্নে সিঁড়ি ভেঙে গুড়িয়ে গেছে, তবু কি সে একটু অবকাশ পেতে পারেনা, এইতো সবাইকে গরম লুচি ভেজে আলুরদম করে খাইয়ে এলো, সবে গা ধুয়ে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে মেয়েদের নিয়ে একটু বসেছে, তার মনের উঠোনের কোণে এখনও যে গাছগুলো সবুজ আছে তাতে একটু জল দিতে, তা নইলে যে গাছগুলো শুকিয়ে এবার খর হয়ে যাবে।
কি আর করা যাবে নীচে অনেক লোক এখন উত্তর দিতে গিলে আরও দেরী হয়ে যাবে, তাই মনের রাগ মনেই চেপে রেখে রেখে মেয়েদের পড়তে বসিয়ে নীচে নেমে আসতে হল।
নীচে এসে দেখে তার তিন শ্বশুর লাইন দিয়ে বসে আছে
রানাঘাট থেকে তাদের মাসতুত ভাইয়ের মেয়ে জামাই এসেছে, কর্তা বেড়িয়ে মাছ মাংস মিষ্টি সব নিয়ে এলো, অতিথি নারায়ণ, তাদের ত্রুটি হওয়া চলবেনা, আাবার একপ্রস্ত লুচি ভাজা হল,আলু বেগুন ভেজে মিষ্টি দিয়ে তাদের দেওয়া হল, কাজের একটা মেয়ে ছিল রেবতী বলে তার সাথে গিয়ে তিন তলা থেকে বিছানা নামিয়ে এনে একতলায় সোবার ব্যাবস্থা করে দেওয়া হল, এদিকে মেয়েদের পরীক্ষা ওদের পড়তে বসিয়ে দিয়ে এসেছে, বাড়ীতে পনেরো দিন হল ঠাকুর নেই, এতোগুলো লোকের রান্না সমানে করে যাচ্ছে দিয়া তার মধ্যে নিত্য পূজা, অসুস্থ শ্বশুরের নিয়মিত সেবা, বাকী যে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর আছে তাদের এক এক সময় এক এক রকম খাওয়া তার মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা সব করতে গিয়ে দিয়ার মনে হল মনের উঠোনে যে সবুজ গাছ গুলো এখনও বেঁচে ছিল তা বোধ হয় এবার সত্যি শুকিয়ে খর হয়ে গেল, আর বোধহয় তাদের বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা, কিন্তু দিয়ার অদম্য প্রয়াস তাদের একটু হলেও বাঁচিয়ে রাখতেই হবে সব কর্তব্যের মাঝে।
প্রতিদিনের কর্তব্য অকর্তব্যের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দিয়া যেন সংসারের এই বিপুলতায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে লাগল, এক এক সময় নিজের মনের দরজাটা নিজেই বন্ধ করে, অশান্ত মনটা একটু আশ্রয় খুজে বেড়ায় একটু ভালোবাসার আশ্রয়, বাপেরবাড়ী গেলে বাবা মা ঘিরে রাখে তাদের অসীম স্নেহ আর ভালোবাসার সিক্ত রসে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা শাসনের সুর যেন থেকেই যায়, গায় মাথায় হাত বুলিয়ে মা ওই এক কথাই বলেন, মানিয়ে নিতে হয় মা, কত মেয়ের কত যন্ত্রণা কত কষ্ট তবু তো... তারা যুদ্ধ করে চলে, মা কে শুধু একটা কথা বলেনি দিয়া, আগামীর দিয়ারা আজকের দিয়াদের সব অপমানের প্রতিশোধ নেবে, তারাই জবাব দেবে নারী শক্তি কত তীব্র কত শক্তিশালী কতদিন আর তাদের দাবিয়ে রাখবে, এবার তো রুখে দাঁড়াবার সময় হয়ে গেছে। ওই অত্যাচারী বেশীর ভাগ বৃদ্ধ শ্বশুররা তাদের বার্দ্ধক্যের সুযোগ নিয়ে কত মেয়ের সুন্দর সোনালী জীবন অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই, দিয়াও তার ব্যাতিক্রম নয়।
তবু দিয়া ফাগুন সন্ধ্যায় দক্ষিণের বারন্দায় দাঁড়িয়ে কল্পনার সাগরে সাঁতার কাঁটত, মনে মনে ভাবত একদিন হয়ত পূর্ণিমার চাঁদ তার জানলায় হাসবে, বারন্দার কোণে যূথি ফুলের গন্ধ ভাসবে, আধো জাগরণ আধো তন্দ্রার ঘোরে তার মনের মানুষ কাছে আসবে, সব কালো ঘুচে গিয়ে নতুন ভোরের আলোয় সে স্নান করবে,
সত্যি কি এই স্বপ্ন সফল হয়েছিল দিয়ার জীবনে?
শুনি দিয়া কি বলে । দিয়া বলছে মাঝরাত্রি অবধি মেয়েদের পড়ার প্রশ্ন উত্তর লিখে
ওদের মাথার কাছে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছি, ভোর হতে না হতে দরজায় ধাক্কা, দরজা খুলে দেখি শ্বশুর মশাই দাঁড়িয়ে আছেন, আমায় বললেন উঠে পড় গুরুদেব এসেছেন না? চা করতে হবে তো? হ্যাঁ বাবা এখুনি আসছি বলে কোন রকমে বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে
বাসি কাপড় বদলে রান্নাঘরে ঢুকলাম । তাড়াতাড়ি করে গুরুদেবের জন্য ভালোপাতার চা করে টিপটে ভিজিয়ে
প্লেটে নানারকম বিস্কুট সাজিয়ে উনার পূজা শেষ হবার অপেক্ষায় বসে রইলাম, কখন তিনি দরজা খুলবেন, দরজা খুলে গুরু শিষ্যকে চা দিয়ে বেরিয়ে দেখলাম আরও দুজন
শ্বশুর মশাই মানে দুজন অবিবাহিত জ্যাঠশ্বশুর তারাও এসেও উপস্থিত হয়েছে । ততদিনে দুই সন্তানের মা সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে, ভালোবাসার পাবার আকাঙ্খাও ডুবে গেছে অতৃপ্ত স্বপ্ন সাগরে, তাই অন্তরের সুপ্ত বাসনা সুপ্ত থেকে গেল, স্বপ্ন ঘরের দরজাটায় আপাতত তালা লাগিয়ে পরবর্তী হুকুম
তামিলের জন্য তৈরী হলাম। বড় মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে ছোট মেয়ের দুধের বোতল ফোটাতে
গিয়ে বোতলটা গলে গেল । বড়ননদ গুরুদেব এসেছেন বলে সপরিবারে বাপেরবাড়ী আছে, বৌদি মধ্যবিত্ত বাড়ীর মেয়ে তাকে যখন যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান
করা যায়, আমাকে তাই বলতে একটিও দ্বিধা করলনা যে ' বাবার পয়সা গুলো কি ভাবে নষ্ট হয়, একটু দেখে ফোটাতে পারিস না বোতলটা গলে গেল' । তখন বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে । আগের মতন সব সহ্য করে
নিতে পারিনা, বিশেষ করে যখন জানি বেশ কিছু দুধের বোতল আর দুই মেয়ে আর আমার
জন্য প্রচুর প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমার দিদি আমার বাবা মায়ের হাত দিয়ে আমেরিকা থেকে
পাঠিয়েছে, তাই আমিও উত্তর দিয়েদিলাম,” এগুলো আমার দিদি পাঠিয়েছে, বাবার পয়সা কেনানয়,“যাই হোক এই ভাবেই প্রতিটা দিন যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে
যাচ্ছিল।
ক্রমশ---
ছোট গল্প.........অর্কিড স্বপ্ন ...... শ্যামশ্রী চাকী
চাঁদের বুড়ি চরকা কেটে ওই তুলোর দানা গুলো যেই কোনে ফেলে, সেখানেই জন্ম পরগাছা সমেত কার্পাস গাছটার। জায়গাটা কেমন
যেন! শুধু স্বপ্নের ছড়াছড়ি। সূর্যির কড়া তাত নেই, ওম নেই, ঝমঝম বৃষ্টিতে কাক ভেজা নেই, শীতে জড়োসড়ো হয়ে পাতা খসানো নেই
আছে শুধু জ্যোৎস্না আর জ্যোৎস্না। দূরে একমনে সাদাচুলোবুড়ি গুড়্গুড় গুড়্গুড় করে স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে! স্বপ্ন গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে আকাশে
বাতাসে, গুঁড়ো গুঁড়ো স্বপ্ন দিগন্ত ছাড়িয়ে হোমোস্ফিয়ার, টপোস্ফিয়ার, ওজন লেয়ার ভেদ করে ছড়িয়ে যায় ওই দূরের পৃথিবীর মাঠ,
পাথর, কাঁচের দেওয়ালে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকে কার্পাস গাছটা।সারা শরীর বেয়ে স্বপ্ন চুইয়ে চুইয়ে পরে। স্বপ্ন রেণু মাখা পাতা গুলো খুব
ভারী, আর ভারী পরগাছাগুলো।ঠিক ভাবে চোখ মেলতে পারেনা গাছটা।
শিলতোর্ষায় নৌকা বাওয়ার মত ঝামেলার কাজ কিচ্ছুটি নেই। ব্রিজটা উঠেগেলে খেয়াঘাটটা বন্ধ হয়ে যাবে। হাইরোডের ধারে জংলা
ফুলের দোকান দেবে রতন। আজকাল হেভভি ডিম্যান্ড, কলকাতার বাবুরা এত্ত টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। অর্কিড না কি যেন বলে,
বেশিরভাগই বাঁচেনা। হায় রে!! বাপ ঠাকুরদা পানা বনষ্পতির কোলে যে শিশু দোল খায় যে কি কথা কইবে ওই ইঁট পাথরের দেওয়ালে?
দূরে দাঁড়িয়ে টিয়াপাখি নাক বেঁকায় লক্ষ্মী। সাথে রতনের জানে জিগর একরত্তি পটলা। লাল কমলা চুড়ির বাক্সটা হাতে তুলে দেয় লক্ষ্মীর
পটলার জন্য চাবিদেওয়া মটরগাড়ি। মুহূর্তে রাগ গলে জল বড়ো ভালো মনের মেয়ে লক্ষ্মী রাগ পুষে রাখতে পারেনা আর ভালোবাসাও।
রাতে অঝোরে বৃষ্টিনামে। বাজের ঝলকানিতে লক্ষ্মীর তৃপ্ত শরীরটা আবার জড়িয়ে ধরে রতনকে।
'ও গাড়ি এই ফেরিতে যাবেনা। আপনারা খেয়ায় বসুন আমরা আলাদা লঞ্চে পার করে দেব।' দেহাতি মানুষগুলোর ঘামের গন্ধে নাকে
রুমাল চাপা দেয় পর্ণা। সাথে বছর দশেকের অর্চিস।আজ বছর পনেরো দেশ ছাড়া পর্ণা কিসের টানে ছুটে এসেছে হারিয়ে যাওয়া সবুজ
দেশে।
স্বামী পুত্র নিয়ে এক নিটোল বিলাসবহুল সংসারে অভ্যস্ত পর্ণা ভুলেই জেগে স্বেদাক্ত নোনা গন্ধ,পাথুতে হাতের স্পর্শ, শীতেফাটা ওষ্ঠের
স্বাদ। হঠাৎ চোখ পড়ে নীল ফতুয়াধারী মাঝির চোখে। কেঁপে ওঠে পর্ণা, বিদেহী বাতাসে টাল মাটাল হলুদ পাতা যেন। সেই কত কাল
আগে শীতভোরে কুয়াশা মাখা জলপথে সহচর। ভেসে যেত স্বপ্নের তরী নাম নাজানা চরে দুজনেই মাতাল হত মাটির গন্ধে বনফুল সুবাসে
সবুজাভ স্বাদে দৃঢ় আলিঙ্গনে। মিশে যেত পর্ণা পেশিবহুল বাহুডোরে। আদরে চুলে গুঁজে দিত সেই স্বপ্নের ঘী-রঙা জংলা ফুল
অর্কিড।ওদের ফিরে আসতে হত এক সময়, ক্লান্ত শরীরে কিশোর মাঝির নির্মেদ সুঠাম দেহ গ্রীক ভাষ্কর্যের কথা মনে করিয়ে দিত।
তারপর লোক জানাজানি,রুপোলী পরবাসী আপাত সুখী পর্ণা।
চমক রতনের দু চোখ জুড়ে। সেই একাকী ভোর গহীন জলপথ প্রথম আলিঙ্গন ফিরে আসে এক লহমায়। এক সময় নৌকো থামে অর্চিসকে
কোলে তুলে সযত্নে ঘাটে নামায় সামনে পটলা মুঠোভরা জংলালতা, অর্কিড কুঁড়ি। পটলা একটা লতা হাতে তুলে দেয় অর্চিসের কিছুদিন
টাটকা থাকবে হয়ত ফুল গুলো কিন্তু কাঁচের দেওয়ালে আস্তে আস্তে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে গাছটার স্বপ্ন দেখা ভুলে যাবে আর স্বপ্ন ছাড়া
গাছ বাঁচেনা।
কার্পাস গাছটার আছে শুধু তুলো কিন্তু পরগাছাগুলো ফুলে ফুলে ভরা, গাছটার গুঁড়িবেয়ে অজস্র জংলা লতা,ওদের নাম অর্কিড। ঘী-রঙা
অর্কিড ফুলের ভেতরটা হলুদ আর খয়েরী। এখানে গাছের পাতা ঝরেনা,ডাল কাঁপে না,সারাবছর ফুল ফল ঝেঁপে আসে। এদেশে
কোনকিছুর বাড়াবাড়ি নেই, কুয়াশা মাখা শীত নেই,নোনা ঘামের গ্রীষ্ম নেই,কড়কড় শব্দে মেঘডাকা নেই,টলটলে শরৎ নেই শুধু বসন্ত
আর বসন্ত। একটু শিশিরের জন্য প্রাণ হাঁকপাক করে গাছটার। রোজ একবার করে চাঁদের আলোয় ছড়িয়ে দেয় পেঁজা তুলো,সেগুলো মেঘ
হয়ে ভাসতে ভাসতে নীচে নামে। অবাক চোখে তাকিয়ে ক্লান্ত গাছটা একটা ছেঁড়া স্বপ্ন মুড়িদিয়ে বুঁদ হয়ে থাকে।
বলানেই কওয়া নেই একদিন এক ঝোড়ো বাতাসএসে গাছটার শেকড় সুদ্ধ নাড়িয়ে দিল। দাপুটে হাওয়াটা প্রথমে পুরোনো জং ধরা স্বপ্ন
গুলোকে চড়চড় করে ছাল চামড়া সমেত টেনে ছিঁড়ে ছুড়ে ফেললো অন্ধকার কোনে। এক ছুটে সরিয়েদিল জ্যোৎস্নার পর্দা তাজা রোদ
উঠলো রঙধনু মাখা নীচের আকাশটায় আর শ্যাওলা ধরা আদ্দিকালের স্বপ্ন গুলো কোথায় যে মুখ লুকোলো কে জানে। সুযোগ বুঝে
কার্পাস গাছটা কটা পুরোনো পাতা ঝরিয়ে ফেলল। আর টপাটপ কটা ঘীরঙা অর্কিডফুল ছিঁড়ে উড়িয়ে দিল সেই নীল সবুজ ঘাসবনের
দেশেটার দিকে। ঝোড়ো হাওয়ার কানে কানে ফিসিফিস করে শিখিয়ে দিল ফুলগুলো যেন গাংশালিক আর শিল-তোর্ষার দেশেই যায়।
চাঁদের বুড়ি কিছু দেখেও দেখল না শুনেও শুনলনা শুধু পরগাছায় হাতবুলিয়ে কটা ঝরাপাতা কুড়িয়ে নিয়ে গুঁজল তার দুধসাদা চুলে,
আবার জ্যোৎস্নার পর্দা টেনে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে বসল। এক অদ্ভুত পান্নাসবুজ স্বপ্ন বুনে পাঠিয়ে দিল ফুলের পিছুপিছু। খুব শীত করতে
লাগল কার্পাস গাছটার। এক অচেনা জ্বর এল স্বপ্নহীন পরগাছা সমেত গাছটার শিরার ধমনীতে।
একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল পর্ণার। ধ্রুবতারার ঠিক পাশদিয়ে মিল্কিওয়েটা নেমে এসেছে ওদের ছাদে, ঝরঝর শব্দে
স্ফটিকবিন্দু ঝরে পড়ছে । এক পদ্মগন্ধা সুবাসে আচ্ছন্ন মন। বাঁশির শব্দ শুনতে পাচ্ছে পর্ণা। হাজারটা ঘী রঙা অদ্ভুত পারিজাত তার
মাথার ওপড়ে গোল হয়ে চক্কর কাটছে।একসময় আকাশগঙ্গা স্তব্ধ হয়ে যায়, থেমে যায় বাঁশি, শান্ত গহীন গাঙে এক একলা নৌকো।
নৌকোটা মকরমুখী কোন যাত্রী নেই পর্ণা একা! দূরে অস্পষ্ট কে যেন নৌকা বাইছে খুব চেনা কিন্তু ঠাহরানো যাচ্ছেনা। কুয়াশা গ্রাস করে
নদীকে আর নদী গ্রাস করে নৌকাকে। সুগন্ধি জলে ডোবে পায়েরপাতা, গোড়ালি, হাঁটু আস্তে আস্তে বুকজল! এবারে জল নাকের কাছে
বৈঠা ফেলে কাছে আসে, অস্পষ্ট অবয়ব পর্ণাকে তুলে নেয় জলথেকে মুখটা কিছুতেই স্পষ্ট হয়না।একটা খুব চেনা ঘাম ঘাম গন্ধ টের পায়
পর্ণা। ঘামে জবজবে পোশাকটা বদলে চোখেমুখে ভাল করে জল ছেটায় পর্ণা। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। পূব আকাশে শুকতারা জ্বলজ্বল
করছে, শেষ বর্ষার হিমেল হাওয়ায় ভোরের আলো ফুটব ফুটব। জলভরা শিউলিগাছটার থেকে টুপটাপ ঝরে পরছে কমলাবৃন্তের শুভ্রত্ব।
গেটের কাছে একটা টুং শব্দ! চমকে তাকিয়ে দেখে সেই অস্পষ্ট আলো আঁধারিয়া মাঝি হাতে সেই ঘীরঙা পারিজাত। একটা ঘোরের
ভেতর দরজা খোলে পর্ণা, গ্রিলটা খুলে হাতবাড়িয়ে দেয়, একগোছা স্বর্গীয় ফুল দুহাত ভরে। ফুলের বুক জুড়ে এতদিনের কালচে লাল
জমাট রক্তক্ষরণ। টুপ টুপ করে গলেপড়ে রক্ত, পর্ণার দুহাত বেয়ে। আধফোটা আলোয় মাঝির হাত ধরে শীলতোর্ষার নৌকোয় ওঠে পর্ণা।
ছলাৎছলাৎ বৈঠা বায় বিনোদ। নৌকোদূরে মিলিয়েযায়। সূর্যটা আজ অনেক দেরী করে উঠেছে। গাংশালিকের দল অবাক চোখে
তাকিয়ে দেখে মাঝনদীতে একরাশ অর্কিড ফুলের নৌকোয় দুটো মানুষ একে অপরের চোখে স্বপ্ন মাখিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

-
ধর্ম আমায় ধারণ করেছে আগুন করেছি বর্ম ... দেখতে পাচ্ছ এই দাবানলে জ্বলছে অস্থি , চর্ম ? দেখতে পাচ্ছ উড়ছে ফিনিক্স , চাঁ...
-
শত চেষ্টা করে যখন একটা কাঠও জোগাড় করা গেল না , তখন নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হল । যে খড়ের আঁটি জ্বেলে কাঙালি মায়ের মুখে আগুন...
-
বিষাদের মেঘ ছেয়েছে আকাশে বৃষ্টি বুঝি আসন্ন— বাতাসের চোখ ছল ছল ভাসে প্রতীক্ষা কার জন্য? ওগো মেয়ে তুমি কার কথা ভাবো, সে কি ...
-
শুকনো বকুল চললি কোথায় ? গ্রহণলাগা দুপুরবেলা লাল মাটি পথ একলা চলা - রুদ্রপলাশ মোড়ের মাথায় ? কি বললি ? আজ বিকেলে মোরগ লড়াই ...
-
ওকি বৃষ্টির শব্দ ? নাকি পায়ের থেকে নূপুর খুলে হাতে নিয়ে তোর দৌড়ে আসার শব্দ ; যদি তাই হয় তবে এখন কেন ? এখন তো অনেক রাত , ব...
-
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রোজ খেলে মরে, একাকী দেয়ালে খেয়ালে বা অখেয়ালে... হেসে কুটে একাকার। মাথা নেড়ে নেড়ে অবাধ...
-
জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্ ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত , অভিমানে ...
-
বসন্তে যেমন ফুল ফোটে তেমন ফুল ঝরে। কুদরতের নিয়মে যত ফুল ফোটে ঠিক তত ফুলই ঝরে। আল্লা তালার হিসেব চুলচেরা। শুধু কি ঝরে ? ফুল কাঁদে , ফ...
-
হাইবারনেশানে যাই যখন তখন তার অবগাহনে ডুবে যেতে। ফিরে যাই সেই মাতোয়ারা দিনগুলোতে জীবনের জরদ্গভ প্রাচীর ডিঙিয়ে অদ্ভুত এক লুকোচুর...