Monday, April 24, 2017
সম্পাদকীয় / অলোক চৌধুরী
সম্পাদকীয়
স্বাগত ১৪২৪ সাল। শুরু হল নতুন বছর। বাঙালি মননে বৈশাখ মাস মানেই
রবীন্দ্র মাস। আর আছে হালখাতা। দোকানে দোকানে ভিড়। পাওনা বা অগ্রিম টাকা দিয়ে লাভ
হয় এক গ্লাস সরবৎ, একটি সুদৃশ্য ব্যাগে নতুন বছরে ক্যালেণ্ডার সহ এক বাক্স
মিস্টি। দিনের প্রচণ্ড দাবদাহে ক্লান্ত শরীরে, সন্ধ্যায় এক গ্লাস সরবৎ কিছুটা তৃপ্তি এনে দেয়। বৈশাখের
এই দাবদাহের মধ্যে কোথা থেকে এক ফালি মেঘ ভেসে এসে উত্তরবঙ্গকে কিছুটা স্বস্তি
দিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের আকাশও এখন মেঘলা। দুদিন আগেই হয়ে গেছে বছরের প্রথম
কালবৈশাখি। দক্ষিণবঙ্গের আকাশ এখন বেশীরভাগ সময়ই মেঘলা। মাঝে মাঝে খেজুর পাতার
ফাঁকে রোদের দেখা মেলে। পৃথিবীর মানচিত্রে বিচরণ করলে দেখা যাবে, সর্বত্র সমাজজীবনে চলেছে
অসহিষ্ণুতার এক মেঘলা পরিবেশ। সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে পান থেকে চুন খসলেই মারমুখি
জনতা। আবার এক শ্রেণীর মানুষ, সমাজকে করে চলেছে তোষণ বা শোষণ। এখন যেন মনে হয় এ সমাজ
যেন লাগামছাড়া। কেউ কাউকে মানতে চাইছে না। সবসময় একটা অহংবোধ কাজ করে চলেছে সবার
মনে। আর এই অহংবোধ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখনকার বেশীরভাগ ইয়ং জেনারেশন
বয়স্কদের আর সম্মান প্রদর্শন করতে চায় না। তাদের প্রকাশ্য আচরণে বয়স্কদের মাথা
হেঁট হয়ে যায়। মনে হয় শালিনতা বোধ যেন দিন দিন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। দুঃখের কথা, এখন ট্রেনে বাসে বয়স্কদের
জন্য আলাদা সিট লিখে রাখতে হয়। আমরা কি এই দিন দেখার প্রত্যাশায় বসেছিলাম। ভালবাসা, মমত্ববোধে এখন
স্বার্থপরতার লক্ষণ। মানুষ আজ বড় অসহিষ্ণু। পাহাড়প্রমাণ চাহিদা মেটাতে না পেরে
মানুষ আজ বড় হতাশাগ্রস্ত। আর এই হতাশাই একশ্রেণীর মানুষকে করে তুলেছে অসহিষ্ণু।
নিঃস্বার্থ ভালবাসা এখন বড়ই দুর্লভ। আসুন আমরা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে
ভালবাসি। সবার নিঃস্বার্থ ভালবাসা ছাড়া একটা সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। কবির
কথায় বলি, “মানুষ আজ বড় কষ্টে আছে, তোমরা মানুষ হয়ে মানুষের
পাশে দাঁড়াও”
।
ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ - ৫ ন ন্দি নী সে ন গু প্ত
এসে গেল নতুন বছর। বাংলা
নববর্ষ ১৪২৪। বছরের শুরু যে তাঁর জন্মমাস দিয়েই, কাজেই তাঁকে ভোলার কোনও জো নেই।
শুধু কি তাই? বাঙ্গালী তাঁর ভাষা ধার করেই স্বাগত জানায় নববর্ষকে। স্লোগানের মত
উচ্চারিত হয়, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’
তাঁর ভাষা, তাঁর দেখিয়ে
দেওয়া পথে বাঙ্গালী বরণ করে নিতে চায় নতুন বছরের নতুন আশা- আকাঙ্ক্ষা। সবারই
ভাবনার মধ্যে থাকে, ‘তাপস-নিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা
যাক।’ হ্যাঁ, পুরনো সময়ের গ্লানি এভাবে ঝেড়ে ফেলে নতুনের আবাহন করার মধ্য দিয়ে
আমরা যেন নিজেরাও নতুন হয়ে উঠতে চাই। হয়ত অনেকেই বলবেন, বাংলা নববর্ষ শুধুই একটি
তারিখ ছাড়া কিছু নয়। বাঙ্গালী হুজুগে জাত, সে হুজুগে পড়ে ইংরেজি নববর্ষকে আপন করে
নিয়েছে একথা যেমন মিথ্যে নয়, তেমন একথাও
সত্যি যে বাঙ্গালী সারা বছর বাংলা তারিখ, তিথি মনে না রাখলেও বাংলা নববর্ষকে ফেলে
দেয়নি মোটে। নতুন নতুন উদযাপনে রক্তের মধ্যে ভরে নিতে চাইছে নতুন বছরের বার্তা।
সেকাজ করতে গিয়ে বাঙ্গালী রবীন্দ্রনাথের কথা যদি ধার করেই বলতে চায়, বলুক না।
ক্ষতি কি? হোক না সেই বলা বহু- ব্যবহৃত, বহু- চর্চিত। ‘মরা, মরা’ জপ করতে করতেই
একদিন দস্যু রত্নাকর হয়ে উঠেছিলেন মহর্ষি বাল্মীকি। ঠিক সেভাবেই বাঙ্গালী নিজের
মধ্যমেধার মনন দিয়েও যদি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চা বিস্মৃত না হয়, সে যে নিজের
অগৌরবকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে, এবিষয়ে সন্দেহ নেই।
বৈশাখ মানেই কবির জন্মদিনের
উদযাপন, তাঁকে ঘিরে উৎসব। তাঁর জীবদ্দশাতে বিশেষ মাত্রা পেত এই উৎসব পঁচিশে
বৈশাখে। তাঁরি লেখা গানে- কবিতায় তাঁকে স্মরণ। সেই ধারা এখনো অব্যাহত সাধারণ
বাঙ্গালীর জীবনেও। কিন্তু এই বৈশাখ কবিকে শুধু তার কালবৈশাখীর রুদ্ররূপ দেখিয়ে
ক্ষান্ত দিয়েছিল এমন নয়। পরিণত বয়সে এসে প্রিয়জনের মৃত্যুশোক কতখানি যন্ত্রণাদায়ক,
এ উপলব্ধি প্রথম তার হয়েছিল কোনও এক বৈশাখেই। ১২৯১ সালের ৮ই বৈশাখ মারা গিয়েছিলেন
রবীন্দ্রনাথের বৌঠান কাদম্বরী দেবী। এই প্রসঙ্গে কবি লিখছেন, ‘কিন্তু আমার চব্বিশবছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা
দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে।‘ ... অতএব, বৈশাখ মানে কবির কাছে
শুধুই সুমধুর স্মৃতি ছিল না।
প্রতি নববর্ষের বার্তায় কবি
খুঁজে ফিরেছেন অসীম আনন্দ, সন্ধান করেছেন সুন্দরের। ধার্মিক আচার- আচরণের উর্দ্ধে
এক আনন্দসুন্দর যাপনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বহুবার। বলেছেন... ‘নববর্ষের প্রাতঃসূর্যালোকে দাঁড়াইয়া অদ্য
আমাদের হৃদয়কে চারিদিক হইতে আহ্বান করি। ভারতবর্ষের যে পৈতৃক মঙ্গলশঙ্খ গৃহের
প্রান্তে উপেক্ষিত হইয়া পড়িয়া আছে সমস্ত প্রাণের নিশ্বাস তাহাতে পরিপূর্ণ করি- সেই
মধুর গম্ভীর শঙ্খধ্বনি শুনিলে আমাদের বিক্ষিপ্ত চিত্ত অহংকার হইতে স্বার্থ হইতে
বিলাস হইতে প্রলোভন হইতে ছুটিয়া আসিবে। আজ শতধারা একধারা হইয়া গোমুখীর মুখনিঃসৃত
সমুদ্রবাহিনী গঙ্গার ন্যায় প্রবাহিত হইবে...’
হ্যাঁ, তাঁর এই বিশ্বাস ছিল। শুধু বাঙ্গালীকে নিয়ে নয়। ভারতবর্ষের আপামর
জনগণকে নিয়ে এই স্বপ্ন লালন করেছিলেন তিনি।
স্বপ্নদ্রষ্টা কবি তাই তাঁর নিজের জীবনের শেষ বৈশাখেও লিখে যেতে পারেন...
‘এই দিন বলে আজি মোর কানে,
‘অম্লান নূতন হয়ে অসংখ্যের মাঝখানে
একদিন তুমি এসেছিলে
এ নিখিলে
নবমল্লিকার গন্ধে,
সপ্তপর্ণ-পল্লবের পবনহিল্লোল-দোল-ছন্দে,
শ্যামলের বুকে,
নির্নিমেষ নীলিমার নয়নসম্মুখে।
সেই-যে নূতন তুমি,
তোমারে ললাট চুমি
এসেছি জাগাতে
বৈশাখের উদ্দীপ্ত প্রভাতে।‘...
‘অম্লান নূতন হয়ে অসংখ্যের মাঝখানে
একদিন তুমি এসেছিলে
এ নিখিলে
নবমল্লিকার গন্ধে,
সপ্তপর্ণ-পল্লবের পবনহিল্লোল-দোল-ছন্দে,
শ্যামলের বুকে,
নির্নিমেষ নীলিমার নয়নসম্মুখে।
সেই-যে নূতন তুমি,
তোমারে ললাট চুমি
এসেছি জাগাতে
বৈশাখের উদ্দীপ্ত প্রভাতে।‘...
কবি দেখেছিলেন এক উদ্দীপ্ত প্রভাতের স্বপ্ন। দীর্ঘজীবী কবি তাঁর অভিজ্ঞতায় এবং
জীবনে পৃথিবীতে সভ্যতার কালো অধ্যায় কম দেখেননি। দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, দেখেছেন
মানুষে মানুষে অবিশ্বাসের কালো ছায়া। তবুও স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি তাঁর। নববর্ষের
আবাহনে কখনও বিশ্ববিধাতার প্রতি বেজেছে অভিযোগ, অনুযোগের সুর, কিন্তু কখনও শুকিয়ে
যায়নি অন্তর্নিহিত আশাবাদের ফল্গুধারা। চরম নিরাশার মধ্যেও তিনি উচ্চারণ করেছেন
আনন্দের বার্তা। আমরা কান পেতে আছি সেই ধ্বনির অপেক্ষায়...
‘কতবার নববর্ষ এসেছে, কত নববর্ষের দিনে তোমরা কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করেছি। কিন্তু, কত মিথ্যা আর বলব। বারে বারে কত মিথ্যা সংকল্প আর উচ্চারণ করব। বাক্যের ব্যর্থ
অলংকারকে আর কত রাশীকৃত করে জমিয়ে তুলব। জীবন যদি সত্য হয়ে না থাকে তবে ব্যর্থ
জীবনের সত্য হয়ে উঠুক– সেই বেদনার বহ্নিশিখায় তুমি আমাকে পবিত্র করো। হে রুদ্র, বৈশাখের প্রথম দিনে আজ আমি তোমাকেই প্রণাম করি– তোমার প্রলয়লীলা আমার
জীবনবীণার সমস্ত আলস্যসুপ্ত তারগুলোকে কঠিনবলে আঘাত করুক, তা হলেই আমার মধ্যে তোমার সৃষ্টিলীলার নব আনন্দসংগীত বিশুদ্ধ হয়ে বেজে উঠবে।‘
কবিতা / ভাস্বর / অনুপম দাশশর্মা .
প্রতিটি আঘাত চোয়ালে এঁকে দেয়
সৃষ্টির আগাম জন্মতিথি
ঝুঁকে পড়ি সাদা পাতায়
ফুলে ফলে ঢেকে যায় সমস্ত দূর্গতি
.
প্রতিটি বিদ্বেষে ঘনিয়ে ওঠে জেদ
ভাঙ্গা কুলোয় বেঁধে নিই তান
টানটান শিড়দাঁড়ায় আসে রোদ
অনায়াসে সৃষ্টিরা হয় মহীয়ান
.
প্রতিটি বিশ্বাসে ভেসে ওঠে খড়কুটো
অভিশপ্ত জীবনে সেটাই ঈশ্বর
আজ যেটা সাধ্যেতে অবরুদ্ধ
একটি বিশ্বাসী আত্মায় তাই ভাস্বর
কবিতা / আবার আসছ তুমি কবে? / গৌতম সেন
আমার বাড়ির ধারেকাছে কোনও সমুদ্র নেই
ত্রিসীমানায় কোন পাহাড় নেই,
পাহাড়ি ঝর্ণা থাকার কোনও সম্ভাবনাও তাই
নেই।
তবু তারা আসে,
স্মৃতির তবিল ঘেঁটে তারা আসে তোমার হাত
ধরে,
তারা আসে তুমি এলে পরে।
সমুদ্রের সীমাহীন বিস্তৃতি, অন্তহীন ঢেউ চোখে পড়ে,
বেলাভূমিতে লহর আছড়ে পড়ে
আমাকে পলকে ভিজিয়ে দেয় –
তোমার সসাগরা উপস্থিতি।
সাগর দূর্নিবার হয়, খুশিতে উদ্বেল হয়
যখন বেলাভূমি স্বয়ং তুমি।
যখন বেলাভূমি স্বয়ং তুমি।
আকাশে হেলান দিয়ে
বিশাল সবুজের এক আস্তানা
বিশাল সবুজের এক আস্তানা
পাহাড় সেজে দাঁড়িয়ে থাকে চোখের সামনে,
তরতরিয়ে ওই উঁচু শিখরের দিকে
উঠতে থাকি চরাই উতরাই ভেঙ্গে।
পাহাড়ের কোলে সারি সারি
বনস্পতি ডাকে আমায়,
সবুজ বনানী ঝাপসা ঝোপের মাঝে পথ খুঁজে নেয় -
সফেদ ফেনিল হাসি কলরোলে
কুলকুল ঝরণা ঝরে, সে ও
যেন তুমি।
বহুদিন সাগর চোখের সামনে থেকে বিলীন
পাহাড় বিলীন আকাশের গায়ে,
ঝরণাটা কে যেন নিয়ে
গেছে অন্য কোনও বাঁকে।
কতদিন তুমি পাশে নেই,
সাগর অপেক্ষারতা, পাহাড়র আকুলতা,
ঝরণা মুখর হবে আবার
কুলকুল নূপুর নিক্কনে কবে –
কুলকুল নূপুর নিক্কনে কবে –
ওদের হয়ে প্রশ্ন করি তবে
আবার আসছ তুমি কবে?
অণু গল্প / স্যার / উৎসব দত্ত
অনেকদিন পরে স্যারের বাড়ি গেছি। বেল বাজাতে নবো দা দরজা খুলল। প্রথমে আমায় চিনতে পারেনি।
বললাম
-
- আমি শেখর। ২০০৪ এর ব্যাচ।
- 'ওহ নীলাঞ্জনা দের সাথে পড়তে তুমি তাই তো?'
- মাথা নাড়লাম। স্যার আছেন?
- আছেন। তবে আজকাল স্যার কারোর সাথে দেখা করেন না। অনেক দিন হল পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
আমি শুনে কিছুটা অবাক হলাম। স্যার পড়াচ্ছেন না এটাও হতে পারে! যে লোকটা সারাজীবন অধ্যাপনা করে কাটিয়ে দিলেন, বিয়ে করলেন না শেষে কিনা পড়ানোই ছেড়ে দিলেন! আমি নবো দা কে বললাম
-
- অফিসের কাজে কিছুদিনের জন্য কোলকাতা এসেছি। ভাবলাম স্যারের সাথে দেখা করে যাবো এবার। কোলকাতায় তো আসা হয়না। যদি একবার দেখা পেতাম খুব ভালো লাগত।
আমার কথায় নবোদা একটু যেন নরম হলেন।
- 'ভেতরে এসো। বসো। আমি স্যারের সাথে একবার দেখা করে আসছি।'
- স্যারকে বোলো শেখর এসেছে। স্যার না করবেনা দেখো!
নবোদা মাথা নাড়তে নাড়তে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠল সেই আগের মতো।
আমরা পড়তে এসে এই ঘরটায় বসতাম। ছোট্ট একটা বিছানা তার ঠিক পাশে আলমারি ভর্তি বই। সামনে পুরনো দিনের লাল মেঝে। আমরা এখানে কার্পেট পেতে বসতাম। স্যার কোনোদিন বিছানায় বসতেননা। আমাদের সাথে মেঝেতেই বসতেন। স্যার মাঝখানে আমরা দুই ধারে। আমরা মানে ছেলেরা মেয়েরা একসাথেই বসতাম। প্রথমদিনেই স্যার বলে দিয়েছিলেন ছেলে মেয়ে কেউ আলাদা বসবেনা।
এতদিন পরে এই ঘরটায় ঢুকে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ স্যারের জন্যই। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য স্যারের কাছে এসেছিলাম। স্যারের গল্পগুলো এক এক করে মনে পড়ছিল। কি রসিক মানুষ বাব্বা। প্রায় প্রতি কথায় পান করতেন।
Twelfth Night পড়াতে গিয়ে আমাদের হাসিয়ে পেটে খিল ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রায়।
আচমকা আমার Down Memory Lane আটকে গ্যালো। নবোদা নীচে আসার শব্দে।
- 'ওপরে চলো। স্যার তোমার সাথে দেখা করবেন।'
- বললাম তোমায়। শেখর নাম শুনলে স্যার না বলবেননা।
- 'স্যারের শরীর ভালো নেই বেশি সময় নষ্ট করবেনা।'
নবোদার কথা গুলো কেমন রুক্ষ শোনাচ্ছিল। বরাবরই একটু ক্যাঁটক্যাঁটে কোনোদিন হাসতে দেখিনি। কিন্তু এখন যেন আরও বেশি ক্যাঁটক্যাঁটে হয়ে গ্যাছে। হয়তো এতদিন পরে দেখছি বলে কিম্বা অযাচিত ভাবে ভুল সময় চলে এসেছি।
স্যারের ঘরে ঢুকে বেশ কিছুটা অবাক হলাম। বইয়ের আলমারির সাথে নতুন যোগ হয়েছে দেওয়াল ভর্তি হাতে আঁকা ছবি। কোনোটায় ফাঁকা খাঁচা আবার একটায় আরাম কেদারার ছবি আঁকা।
ফতুয়া আর পায়জামা পরে একটা সোফায় বসে আছেন। মাথায় চুল নেই। চোখ মুখ ফুলে গ্যাছে।
- স্যার চিনতে পারছেন ? আমি শেখর। ২০০৪ সালে আপনার কাছে পড়তাম। দীপক,নীলাঞ্জনাদের সাথে । আপনি আমায় মজা করে 'ভুতো' বলে ডাকতেন।
স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়েই আছেন। চোখটা ঘোলাটে। মুখে কোন অভিব্যাক্তি নেই। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে নবোদার দিকে তাকিয়ে বললাম
- স্যার ক্যামন আছেন? চেহারা এতো ভেঙ্গে গ্যালো কি করে?
নবোদা আমার দিকে চেয়ে চুপ করে রইল তারপর এক নাগাড়ে বলে গেল -
- 'দেড় বছর আগে অ্যাকসিডেন্টের পর থেকে স্যার ভাষা হারিয়েছেন। ছয়মাস অন্তর কেমো দিতে হয়। এখন বেটোফেন আর দেওয়ালের এই ছবিগুলো ছাড়া স্যার কোন ভাষা বুঝতে পারেননা।'
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে স্যারের জন্য আনা বইটা না দিয়েই চুপচাপ চলে গেলাম। স্যার আমার দিকে তখনও তাকিয়ে রইলেন।
Subscribe to:
Posts (Atom)
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

-
ধর্ম আমায় ধারণ করেছে আগুন করেছি বর্ম ... দেখতে পাচ্ছ এই দাবানলে জ্বলছে অস্থি , চর্ম ? দেখতে পাচ্ছ উড়ছে ফিনিক্স , চাঁ...
-
শত চেষ্টা করে যখন একটা কাঠও জোগাড় করা গেল না , তখন নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হল । যে খড়ের আঁটি জ্বেলে কাঙালি মায়ের মুখে আগুন...
-
বিষাদের মেঘ ছেয়েছে আকাশে বৃষ্টি বুঝি আসন্ন— বাতাসের চোখ ছল ছল ভাসে প্রতীক্ষা কার জন্য? ওগো মেয়ে তুমি কার কথা ভাবো, সে কি ...
-
শুকনো বকুল চললি কোথায় ? গ্রহণলাগা দুপুরবেলা লাল মাটি পথ একলা চলা - রুদ্রপলাশ মোড়ের মাথায় ? কি বললি ? আজ বিকেলে মোরগ লড়াই ...
-
ওকি বৃষ্টির শব্দ ? নাকি পায়ের থেকে নূপুর খুলে হাতে নিয়ে তোর দৌড়ে আসার শব্দ ; যদি তাই হয় তবে এখন কেন ? এখন তো অনেক রাত , ব...
-
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রোজ খেলে মরে, একাকী দেয়ালে খেয়ালে বা অখেয়ালে... হেসে কুটে একাকার। মাথা নেড়ে নেড়ে অবাধ...
-
জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্ ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত , অভিমানে ...
-
বসন্তে যেমন ফুল ফোটে তেমন ফুল ঝরে। কুদরতের নিয়মে যত ফুল ফোটে ঠিক তত ফুলই ঝরে। আল্লা তালার হিসেব চুলচেরা। শুধু কি ঝরে ? ফুল কাঁদে , ফ...
-
হাইবারনেশানে যাই যখন তখন তার অবগাহনে ডুবে যেতে। ফিরে যাই সেই মাতোয়ারা দিনগুলোতে জীবনের জরদ্গভ প্রাচীর ডিঙিয়ে অদ্ভুত এক লুকোচুর...