Monday, April 24, 2017

ধারাবাহিক গল্প / দিয়ার ডায়েরী থেকে / পারমিতা চ্যাটার্জী



দিয়াকি তার দিনগুলি সত্যি রান্নাঘরের তেলকালির মধ্যেই কাটিয়েছিলনা কাটায়নি। সব কঠিন কর্তব্য ,পরাধীনত্‌ অর্থনৈতিক পরাধীনতাসবার বাধা সত্যেও দিয়া স্বপ্ন দেখে যেত কবে সে পরাধীনতার বদ্ধ দরজা ভেঙে অন্ধকার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখবেকবে সে স্বধীন হবে মানষিক ভাব এবং অর্থনৈতিক ভাবে। দিয়া জানত এরজন্যে তাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে যতদিন না তার সন্তানরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে ততদিন তাকে এই পরাধীনতার গ্লানি সহ্য করতেই হবেতাই দিয়ার পূজনীয় শ্বশুরমশাই যখন গলা ফাটিয়ে চিতকার করে বলতেন আমার বাড়িতে থাকতে গেলে আমার মতেই চলতে হবেআমার অবুঝ দাদারা ,বাড়ীতে যত আত্মীয় স্বজন আসবে আমার গুরুদেব এবং তাঁর পরিবারআমার মেয়ে জামাই নাতিনাতনীদের জন্য যখন যা বলব তাই করতে হবেএরজন্য মাইগ্রেনে তোমার মাথা ছিঁড়ে যাকগাদা গাদা অষুধ খেয়ে আলসার হোক তাতে আমার কিছু এসে যাযনাএ হেন শ্বশুর মশাইকেও দিয়া প্রাণ দিয়ে সেবা করে গেছেমুখে মুখে ওষুধ পথ্যডাক্তার বদ্যি সবই সে করে গেছে মেনে নিয়েছিল তাঁর সব কথা মনে করত সত্যিতো তাঁর বাড়ীতে যখন থাকছি তখন তাঁর কথা মতই চলতে হবেদিয়া তাঁর স্বামীকে বহুবার বলেছিল আমরা কি আলাদা থাকতে পারিনা তুমি একটু চেষ্টা কর না,দূর থেকে আমরা সবার দেখাশোনা করব ,তাহলে এই বিশাল সংসার থেকে একটু মুক্তি পাই একটু নিজের মতন করে বাঁচতে পারিতাঁর স্বামী কখনও বলত আচ্ছা দেখব কখনো বলত তুমি বললেই তো আর  হবেনাআমি আমার বাবা জ্যাঠা সবাইকে ছেড়ে চলে যাবআমি স্ত্রৈণ্য নই।
দিয়ার মনে পড়ে দিয়ার বড় মেয়ে যখন ১ বছরের তখন বড় ননদের ছোট মেয়ের আন্নপ্রাসনসবাই মিলে বসে তত্ত্ব সাজানো হচ্ছেবিশেষ করে ছোট ননদ এইসব ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিতসে আর তার বাবা মিলে নিউমার্কেট থেকে গিয়ে বড় ননদের দুই মেয়ের জন্য অনেক ভালো ভালো জামা কিনে নিয়ে এল দুজনের কারও মনে হলনা বাড়ীতে আর একটা বাচ্ছা আছে তার জন্য একটা হলেও জামা কেনা উচিতএই ব্যাবহারে দিয়ার চোখে জল এসে গিয়েছিলঠাকুর বোধহয় দিয়ার অন্তরে সন্তান প্রতি এই বঞ্চনার দুঃখ দেখতে পেয়েছলেনতাই এর কিছুদিন পর যখন দিয়ার বাবা মা যখন আমেরিকা থেকে ফিরলেন মানে তার দিদির কাছ থেকে তখন দিদি বাবা মায়ের হাত দিয়ে প্রথম বোনঝির জন্য উজার করে জিনিষ পত্র পাঠিয়েছেযা দিয়ার বড়লোক্ শ্বশুর বাড়ীথেকে কোনদিন পায়নিদিয়ার মনটা সাময়িক ভাবে একটা জয়ের উল্লাসে ভরে উঠেছিলদিয়া কিন্তু সব জায়গা থেকে নিজের জয়টা নিজের পরিশ্রমে আদায় করে নিয়েছিলনিজের চলার পথটায় নিজেই পিচ ঢেলে মসৃণ করেছিল ,নিজে হাতেই আগাছা ছেটে বাদ দিয়ে সমান ঘাসের গালিচা পেতেছিলএকমাত্র ভগবান ছাড়া তার এই চলার পথে কেউ তাকে একইঞ্চি জমি ছেড়ে দেয়নিনিজের জমি নিজেই তৈরী করেছিল।

ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া