Monday, April 24, 2017

রম্যরচনা / বর্ষবরণ .....শ্যামশ্রী চাকী





হু হু করে বইছে ভেজা বাতাস, বাতাস বইছে কালজানির বুক চিরে, বাতাস বইছে সিঞ্চুলা পাহাড়ের মেঘ ছুঁয়ে, বাতাস বইছে শিতলা মন্দির চাতালের মাধবীলতার ঝাড় বেয়ে, ধানক্ষেতের আলে। আমার জালনায় এখন এক টুকরো রাত ছুঁয়ে আছে। কাঁচের ফাঁকে একটা সকাল উঁকি দেবে একটু পরেই, সদ্য শেষ হয়েছে চড়ক। বুড়ি দাদীর ঝুপড়ীর পেছনে যে বাবলা ঝোপটা ছিল তার পাশেই আমাদের ছোট ছোট ইঁটপাতা খেলাঘর। রোদটা রোজ বিকেলে ওখানে কালচে হতে হতে মরে যায়। আজ তুলসীমঞ্চে ঝাড়ি বাঁধা হবে টুপ টুপ করে ঝরবে আদুরে জল, মাঝদুপুরে জলের শব্দ আর বিদেহী বাতাস দুজনে লুকোচুরি খেলবে আমার উঠোনে। হ্যাঁ আজ নববর্ষ। মেঘ ছুঁয়ে জল ছুঁয়ে আগুন ছুঁয়ে বাতাস এক বছর ছিঁড়ে আনে। আমরা সেই বছরটার শরীর থেকে রোজ একটা একটা করে পালক টেনে তুলে উড়িয়ে দিই। আজ আকাশের গায়ে গাঢ় চন্দন। পান্না সবুজ জংগল ঘেরা পাহাড়টা সূর্যের সবকটা রঙ মেখে স্নান করবে। চারদিকে আতরের গন্ধ, লাল খেরোর খাতা বেয়ে ঝরে পড়া হিসেব গুলো মিলিয়ে যাবে বকের ডানায়, শিমুল তুলোয়, আর বসন্তবৌরির ডাকে। গহীন হিজল তমাল একটা সময় আস্ত নদী হয় এই দিনে। একটা অদ্ভুত নেশা আজ নামবে পাকদণ্ডীর পথ বেয়ে, মহল্লা মহল্লায় উৎসবের আবহে নদীর ঘূর্ণিজলে ঘুরপাক খেয়ে যার নাম আশা, ভালো থেকো আশা সুখে থেকো আশা। আশার নেশার মৌতাত আজ আমার আধছেঁড়া ভোর বেয়ে সারা ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটু পরেই কাঁচের জানলাটা আমি নিজেই খুলে দেব। শব্দ গুলো আছড়ে পড়ুক আমার ঘরের আনাচে কানাচে, রোদের শব্দ, জলের শব্দ, পাথরের শব্দ, ভালোথাকার শব্দ। গত বছরটাও ত ভালো ছিল। আলপথে হাঁটত মেঠো মানুষ। নদীর সুরে উঠত তান। ছায়ার সুর ঝুমুর গানে, ভাদুগানে মাথা দুলিয়েছিল ধানের শীষ।টুসুগানে ঘরবসত। আর আমার দেওয়াল জোড়া স্বপ্ন ছিল নিকোনো উঠোনের, ধানের গোলার, ইঁদারার পলাশ ছায়ার। রোদের আজ বর্ষবরণ।

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া