Saturday, November 25, 2017
সম্পাদকীয় / গৌতম সেন
সম্পাদকীয় –
বছর গড়িয়ে গড়িয়ে তার মেয়াদের প্রান্তিক সীমায় এসে উপস্থিত প্রায়।
ইংরাজী বর্ষপঞ্জী, বিদায়ের প্রাক মুহূর্তে শীতের আগমনী গাইতে শুরু করে দিয়েছে।
হাওয়ায় হিমেল ভাব, কুয়াশামাখা রোদ, পৌষালি সোনা রঙের পাকা ফসল তোলার অপেক্ষায়। সময়
আসছে রসনার স্বাদ নতুন গুড়ের মিষ্টতায় তৃপ্ত হওয়ার। শীত বুঝি গুটিগুটি পায়ে এসে
ফিস্ফিস্ ক’রে কানে বলে যায়, মনে করিয়ে দেয় পশমের ওম।
আসন্ন শীতের এই অবকাশে চিলেকোঠাইম্যাগ গুটি গুটি পায়ে একবছর পূর্ণ
করল| নভেম্বর সংখ্যায় প্রথমেই শুরু করি এক সুন্দর সান্ধ্য অনুষ্ঠানের রোমন্থনে। গত
৫ই নভেম্বর, চিলেকোঠার অতি পরিচিত অ্যাডমিন সদস্যা নন্দিনী লাহার বাড়িতে সুন্দর
ঘরোয়া মেজাজে অনুষ্ঠিত হ’ল এক মনোজ্ঞ বৈঠক – আলোচনা ও আড্ডা মিলেমিশে, নানাজনের
ভাবনার আদান প্রদানে সেদিনের সে সন্ধ্যা সেজেছিল “বিজয়ার সেকাল ও একাল”
প্রসঙ্গে এক তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণ আলোচনায়। চিলেকোঠার সদস্য/সদস্যারা ছাড়াও উপস্থিত
ছিলেন দুই অতিথি- নৃতত্ত্ববিদ ও খ্যাতনামা লেখক শ্যামল ভট্টাচার্য
মহাশয় ও ত্রিপুরা থেকে আগত গ্রাফিক্স কাহিনীকার অলোক দাশগুপ্ত মহাশয়| প্রত্যেকের
বক্তব্য যুগপত মুগ্ধ ও ঋদ্ধ করল উপস্থিত শ্রোতৃ্মণ্ডলীকে |
এবার আসি ওয়েবজিনের কথায়। যারা নিয়মিত তাঁদের সৃষ্টিকর্ম – কবিতা,
গল্প, বা নানাবিধ সাহিত্য, চিত্র ইত্যাদি দিয়ে এর প্রকাশকে অব্যাহত রেখেছেন তাদের
শুধু ধন্যবাদ নয়, কৃতজ্ঞতাও জানাই চিলেকোঠা ওয়েবজিন তথা সামগ্রিকভাবে চিলেকোঠার
সঙ্গে থাকার জন্য। এই সংখ্যায় কিছু নতুন লেখাও পাওয়া গেছে, যা বলা বাহুল্য
পত্রিকার পক্ষে এক আনন্দের উৎস। গুণে ও মানে এই ওয়েবজিন আরো ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে
অনেক দূর এই আশার প্রতি আস্থা রেখে আজ তবে শেষ করি। সকলের জন্য রইল আগাম শীতের
পশমী শুভেচ্ছা ও নলেন গুড়ের আশ্বাস |
ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ / নন্দিনী সেনগুপ্ত
চিলেকোঠা। এই শব্দটা
উচ্চারণের সাথে সাথে যেকোনো বাঙালির মনে জেগে ওঠে এক অদ্ভুত স্মৃতিমেদুরতা। অবশ্য
এখনকার এই কাচ-কাঠ-কংক্রিটের ফ্ল্যাটবাড়ি আর হাউসিং কমপ্লেক্সে ভর্তি বদলে যাওয়া
শহরে সেই সাবেক কায়দায় বানানো বাড়ির ছাদের ঘরে চিলেকোঠার নষ্ট্যালজিয়া খুঁজে পাওয়া
ভারি মুস্কিল। তবে অতীতে তো এমনটি ছিল না। বহুযুগ ধরেই, এমনকি রবীন্দ্রনাথের
জীবনেও বিশেষ কিছু উল্লেখযোগ্য স্মৃতি ছিল চিলেকোঠা বা ছাদের ঘর নিয়ে। চিলেকোঠা
মানেই সামনে অনেকখানি জায়গা যেখানে আকাশ নেমে আসে। ছোট ঐ ঘর অনেক তরঙ্গ নিয়ে আসে।
ছোট একটু স্থানের মধ্যে ধরে রাখে নানা রঙের অনুভূতি।
‘ছেলেবেলা’ প্রবন্ধে দেখতে
পাই কবির সাথে তার বৌঠাকরুনের রান্নাবাটি খেলার জায়গা ছিল ঐ চিলেকোঠা। না,
পাঠক/পাঠিকারা এর মধ্যে দয়া করে কোনও কলুষ খুঁজতে যাবেন না। নেহাত শিশুবয়সের
দেওরের সাথে এক বালিকাবধূর রান্নাবাটি খেলার মধুর রসটি যারা আহরণ করতে অক্ষম,
তাদের জন্য এ লেখা নয়।
বৌঠাকরুনের আপন জায়গা ছিল ছাদের ঘর। সেখানে রবির অবাধ
গতায়াত। পুতুলের বিয়ের প্রধান অতিথি কে? রবি। বৌঠাকরুনের হাতের রান্না প্রথমে কে
চেখে দেখবে? রবি। রবির দিনের রঙটাই বদলে যায় পান্তাভাতে ‘লঙ্কার আভাস’ দিয়ে
চিংড়িমাছের চচ্চড়ি মেখে যখন বৌঠাকরুন পরিবেশন করেন। এই নিষ্কলুষ বন্ধুত্বের
ছেলেমানুষি যে এখনকার কালের মানুষের ঠিকঠাক হজম হবেনা, রবি কি সেই ইঙ্গিত
পেয়েছিলেন? নাহলে তিনি কেনই বা বলবেন...
“এ কালের মেয়েদের হাসি পাবে, তাঁরা বলবেন,
নিজের ছাড়া সংসারে কি পরের দেওর ছিল না কোনোখানে। কথাটা মানি। এখনকার কালের বয়স
সকল দিকেই তখনকার থেকে হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তখন বড়ো ছোটো সবাই ছিল ছেলেমানুষ!”
বৌঠাকরুন আস্তে আস্তে সাজিয়ে নিয়েছিলেন ছাদের সামনের জায়গাটুকু। বাগান করেছিলেন
সেখানে। মাতৃহারা বালক রবিও যেন সেই বাগানের ফুলের মতই লাভ করেছিল জ্যোতিদাদা আর
বৌঠাকরুনের স্নেহসান্নিধ্য। সকালে পূর্বদিকের চিলেকোঠার ছায়ায় কফিপান করতে করতে
জ্যোতিদাদা পড়ে শোনাতেন নতুন নাটকের খসড়া। বিকেলে গানের সুরে পিয়ানোর সঙ্গতে ভেসে
যেত চিলেকোঠার সামনের আকাশটুকু।
বৌঠাকরুন বধূবেশে বাড়িতে আসার আগে থেকেই শিশু রবির
বিশেষ পছন্দের জায়গা ছিল চিলেকোঠার সামনের ছাদটুকু। রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, “আমার
জীবনে বাইরের খোলা ছাদ ছিল প্রধান ছুটির দেশ। ছোটো থেকে বড়ো বয়স পর্যন্ত আমার নানা
রকমের দিন ঐ ছাদে নানা ভাবে বয়ে চলেছে। আমার পিতা যখন বাড়ি থাকতেন তাঁর জায়গা ছিল
তেতালার ঘরে। চিলেকোঠার আড়ালে দাঁড়িয়ে দূর থেকে কতদিন দেখেছি, তখনো সূর্য ওঠে নি,
তিনি সাদা পাথরের মূর্তির মতো ছাদে চুপ করে বসে আছেন, কোলে দুটি হাত জোড়করা। মাঝে
মাঝে তিনি অনেক দিনের জন্য চলে যেতেন পাহাড়ে পর্বতে, তখন ঐ ছাদে যাওয়া ছিল আমার
সাত-সমুদ্দুরপারে যাওয়ার আনন্দ।”
একান্তের ঐ ছাদের ঘর যে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল তার
জীবনে, সে কথা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কারণ রবীন্দ্রনাথ –সৃষ্ট বেশ ক’টি
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বাস করে ছাদ সংলগ্ন ঘরে। ‘যোগাযোগ’ এর কুমুদিনী নিজের মনকে
প্রস্তুত করে নেবার জন্য ছাদের কোণে গিয়ে বসে। ‘ঘরে বাইরে’র বিমলা যখনই নিজের সঙ্গে
বোঝাপড়া করতে চায়, তখন খোলা আকাশের নিচের ছাদটাই আশ্রয়। ‘চোখের বালি’ মহেন্দ্রর
জীবনও অদ্ভুতভাবে আবর্তিত হয় খোলা আকাশের পাশে ছাদের ঘরের শয়নকক্ষ ঘিরে। ‘শেষের
কবিতা’র অমিত যখন তার প্রেয়সী বন্যার সাথে ঘর বাঁধবার স্বপ্ন দেখে, তখন গেরস্থালি
গুছিয়ে নেবার জন্য ছাদের পাশের চিলেকোঠা ঘর ভাড়া নেওয়া তার প্রথম পছন্দ। ‘গোরা’
উপন্যাসে দেখতে পাই সুচরিতার মাসি হরিমোহিনীর ঠাঁই হয়েছে চিলেকোঠার ঘরে। সংসারের
মূল অন্দরমহলের বাইরে খোলা আকাশের সঙ্গে লাগোয়া এই ঘরটিকে অতি অবশ্যই লেখক এক
বিশেষ মর্যাদার জায়গায় রেখেছেন। বাইরের সঙ্গে ভিতরের সংযোগ স্থাপন করে অনেক কাল
ধরে মানুষের জীবনে এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে চিলেকোঠা।
Type a message...
কবিতা / এ আলোচনা থাক / অনুপম দাশশর্মা
এ আলোচনা থাক
কে কতটা নিয়েছে মনুষ্যত্বে বাঁক
আমরা বরং শোকাবহেও লিরিক খুঁজি।
কে কতটা নিয়েছে মনুষ্যত্বে বাঁক
আমরা বরং শোকাবহেও লিরিক খুঁজি।
এই
যেমন আমরা অন্ধদিনেও কাদার তাল নিয়ে
চেষ্টা করে যাই রোজ...
কা'কে কা'কে মাখালে অনায়াসে বাড়বে নিজের নিজের
টি.আর.পি.'র গতি।
অজস্র পথ থাকে আলোর তবু দৈন্যতা খামচে
ধরে নিম্নমেধার হাত
সেখানে গুচ্ছ গুচ্ছ বিপণণের অঙ্কতাপ
একাকার হয়ে ওঠে শুদ্ধ জলের সাথে
অসংযমের কৃষ্ণ অভিশাপ।
চেষ্টা করে যাই রোজ...
কা'কে কা'কে মাখালে অনায়াসে বাড়বে নিজের নিজের
টি.আর.পি.'র গতি।
অজস্র পথ থাকে আলোর তবু দৈন্যতা খামচে
ধরে নিম্নমেধার হাত
সেখানে গুচ্ছ গুচ্ছ বিপণণের অঙ্কতাপ
একাকার হয়ে ওঠে শুদ্ধ জলের সাথে
অসংযমের কৃষ্ণ অভিশাপ।
এ আলোচনা থাক, পাথরে মরে যাওয়াই কেন-
ঝর্ণার নিয়তি।
ঝর্ণার নিয়তি।
কবিতা /গ্রামাটিক ভুল / বুবুসীমা চট্টোপাধ্যায় ...(এবারের নতুন মুখ )
লিখবো বললেই যে লিখে রাখা যায় মেঘের গায়ে বৃষ্টিকথা !
তার কোনো মানে হয়না কবি , সব বৃষ্টি বুঝি ব্যাকরণ মেনে
নেমে আসে পাথরের ফেটে যাওয়া চাতালে ?
মা কিশোরী বেলায় নদীর ধারে শুধু একবার হোলিতে ডুব দিয়েছিল ;
সব রং ধুয়ে যখন শাল পাতায় মুখ ঢেকে বাড়ি ফিরল -
তখন কোনো অংক ছিল না জীবনে , তাই হিসেবেও ভুল নেই ।
বাবা পাই টু পাই হিসেব বুঝে নিয়েছিল নদীর কাছে সেই রঙের;
ভুল ছিল সেটাই যে , মা তাঁর কিশোরী বেলার নদীতে
আমাদের কখনো স্নান করাতে পারেনি । ব্যাকরণে ভুল ছিল
সেখানের প্রতিটি ইট,কাঠ ,মাঠ তাই সব ধুলো হয়ে গেছে ,
বসন্ত উৎসব হয় কি আর সেখানের পলাশে আর মহুয়ায় ?
মা দেখতে যাওয়ার সময় পায়নি আর কখনো ।
যখন লালে লাল ফাগুনের হোলির সকাল ,
আড় বাঁশীতে সুর তোলে ফাগুনিয়া , ঠাকুর দালান থেকে
ঘ্রাণ আসতো বিষ্ণুর পরমান্নে দুধ আর এলাচের মিলনের ।
দোল মঞ্চের পাশে লাল পাড় শাড়িতে মা দাঁড়ালে
প্রদীপের আলো ম্লান হয়ে যেতো , ডান হাতের আঙুলে সিগারেটের
বদলে চিরকাল কলম দেখেছি বাবার , বহুবার মায়ের
সেই রঙ ধোয়া নদী- কলমের মুখে স্রোত বইয়ে দিয়েছে তবু যেন
সব রঙ ব্যাকরন মেনে রঙিন হয় না ।
নদী ভুল পথে বাঁক নিলেও , বাবা একটা আস্ত পলাশের
ডাঙা দিয়েছিল মাকে উপহার , মাঝখানে টলটলে জলের দীঘি।
রঙিন হতে হতে মা এক একটা বসন্তে সবটুকু রঙ উজাড় করে দিতো
বাবার স্বপ্নের পায়ে ।
মায়ের সেই রঙ পিচকিরির উল্টো টানে টানতে টানতে
বাবার বয়স পেরিয়ে যায় বৃষ্টিকথার মতো ।
রোগা শীর্ণ হাতে
লাল পাড় শাড়ির ঘোমটা তুলে দিচ্ছে আজ বাবা , মা রঙ্গিন
হয়ে ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে থাকে কবির কলমের দিকে !
ভুল ব্যাকরনে শখের দোলমঞ্চ অসহায় । সমস্ত
জীবনীশক্তি ক্ষয় করে যে পাথরের চাতাল বানিয়ে
ফাগুনিয়া সুর তুলেছিল , তাতে যে ব্যাকরনের ভুল সুর সাধা ।
লাল পাড় শাড়ির ঘোমটা তুলে দিচ্ছে আজ বাবা , মা রঙ্গিন
হয়ে ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে থাকে কবির কলমের দিকে !
ভুল ব্যাকরনে শখের দোলমঞ্চ অসহায় । সমস্ত
জীবনীশক্তি ক্ষয় করে যে পাথরের চাতাল বানিয়ে
ফাগুনিয়া সুর তুলেছিল , তাতে যে ব্যাকরনের ভুল সুর সাধা ।
অনু গল্প / 'পেটের দায়ে' / রীনা রায় ( এবারের নতুন মুখ )
প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল,এখনও উবেরটা এলোনা-ফোনে দেখাচ্ছে খুব কাছেই রয়েছে---অবশ্য এই রাস্তাটায় এই সময়টায় এত জ্যাম হয়, কিন্তু সময়ে না পৌঁছলে---যথেষ্ট উদ্বিগ্ন লাগছিল পরমকে।
---
চোখ ফেরানো যায়না এতটাই সুদর্শন পরম সিং, গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে, রোজগারের আশা নিয়ে ---বোনের বিয়ে, বাবার কারখানার লক আউট, মায়ের অসুস্থতা--সবের মাঝে ওর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছিলো, ওর এই সুন্দর চেহারাটাকেই সম্বল করে ও অকূল পাথারে ঝাঁপ দিয়েছিল ।
---
ঐ যে এসে গেছে, পরম উবেরে উঠে আর একবার অ্যাড্রেসটায় চোখ বুলিয়ে নিলো।
ক্লায়েন্ট আসবার আগেই ওকে হোটেলের রুমে পৌঁছতে হবে।
ক্লায়েন্টের বিবরণ দেওয়া আছে।
মহিলার বয়স প্রায় তার দ্বিগুণ।
ওকে ছবিও পাঠানো হয়েছে।
আজ এই মহিলাকে সুখী করতে পারলে পুরো একলাখ টাকা পাবে, টাকার বড় দরকার --বোনটাকে ভালভাবে মানুষ করতে হবে!
---
ইদানীং 'জিগোলো' পরমের চাহিদা খুব বেড়েছে---
আবার একটা ফোন আসছে, আজ আর ভাল লাগছেনা, তবু কিছু করার নেই, হোটেলের সঙ্গে ও চুক্তিবদ্ধ--
ফোনটা তুলে হ্যালো বলল পরম --
'পরম, আমি শ্রেয়া---'
প্রচন্ড চমকে ফোনটা কেটে দিলো পরম--শ্রেয়া! তার একমাত্র ভালবাসা!
আবারও বাজছে ফোনটা--শ্রেয়া!
পরম ফোনটা তুলে বললো, 'সরি, রং নাম্বার! '
এজেন্টের দেওয়া অন্য ফোনটা বাজছে--পরম সেই ফোনটা রিসিভে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
মহাকাশ বিজ্ঞান / সূর্যের আয়ু -/ -অরুণ চট্টোপাধ্যায়
সূর্য আমাদের জন্মদাতা।
সূর্য আমাদের অন্নদাতা। সূর্য আমাদের পরিপালক, পরিপোষক। অর্থাৎ সূর্য একসঙ্গে
আমাদের বাবা ও মা। এই ‘আমাদের’ কথাটার মানে মানুষ অর্থাৎ শুধু পৃথিবীর মানুষ নয়।
সূর্যের অধীনস্থ সমস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ আর যা কিছু আছে এই সৌরমন্ডলে।
সবাই জানেন আমাদের এই
পৃথিবীটা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। শুধু পৃথিবী নয়, সৃষ্টি হয়েছিল একসঙ্গে ন’টি গ্রহ।
প্লুটোকে, মতান্তরে, বামন গ্রহ হিসেবে ধরা হয় এর আরও তিনটি সহযোগী বামন গ্রহের
সঙ্গে। যেমন করে পিতা আর মাতার দেহের অংশ একত্রিত করে জন্ম হয় সন্তানের ঠিক তেমন করেই
সূর্যের দেহের একটি বৃহৎ টুকরো তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল গ্রহ
উপগ্রহগুলি।
এই জন্মকাহিনী নিয়ে আজ
আমার এই প্রবন্ধ নয়। গ্রহমন্ডলীর পিতা বা স্রষ্টা সূর্যের সম্পর্কে, বেশি স্পষ্ট
করে বলতে গেলে তার আয়ু নিয়েই আমার এই লেখা। অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব
কোনও সংকটে আছে কিনা অথবা তার কখনও কোনভাবে তার বিলীন হবার সম্ভাবনা আছে কিনা সেটা
বলার জন্যে এই প্রবন্ধ। এটি সাধারণ এক আলোচনা বিশেষজ্ঞের মতামত নয়।
সূর্যের জন্মের পর থেকে
কেটে গেছে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর মানে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর (4.55 Billion
years)। এক বিলিয়ন মানে হল একশ কোটি। বিগত এই সাড়ে চারশ কোটি বছর কি সূর্য একই রকম
ছিল? কথায় আছে ‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?’ এই প্রবাদ শুধুমাত্র মানুষ বা
জীবিত প্রাণীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। প্রযোজ্য সমস্ত জাগতিক বস্তুর জন্যে।
অর্থাৎ জন্মটার নিশ্চয়তা
না থাকলেও মৃত্যুটা নিশ্চিত। যে কোনও জিনিসের সৃষ্টি নাও হতে পারে কিন্তু সৃষ্টি
হলে তার এক সময় না এক সময় পরে ধ্বংস অনিবার্য। সে দু’দিন বাদে হোক বা দু’শ কোটী
বছর বাদে হোক।
আমার এ কথাটায় অনেকের মন
খারাপ হয়ে যেতে পারে। কারণ সূর্যের একটা জন্ম যখন আছে তখন মৃত্যু বা ধরা যাক
স্বাভাবিক মৃত্যুও একটা থাকতে পারে এই ভেবে। হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা অবশ্য তেমন আশংকাই
প্রকাশ করেছেন। যেহেতু এ জগতে অবিনশ্বর কেউ নয়, তাই সূর্যের ক্ষেত্রেও এটা সমভাবে
প্রযোজ্য হবে। সেও চিরস্থায়ী নয় মোটেই।
কিন্তু যে কোনও জিনিসের
ধবংসের কথা বলতে গেলে তার জন্মের কথা কিছু বলতেই হয়। সূর্যের বয়স এখন মাত্র সাড়ে
চারশ কোটি বছর (4.55 Billion years)। অর্থাৎ এর আয়ুর ঠিক মধ্য গগনে অধিষ্ঠান
করছে এখন। ভর এক দশমিক নয় নয় গুণিত একের পিঠে তেত্রিশটা শূন্য দিলে যা হয় তত গ্রাম
(1.99X10^33Gram)। ব্যাসার্ধ হল সাত লক্ষ কিলোমিটার (700,000 KM)। আলোক উজ্জ্বলতা
(Luminosity) তিন দশমিক আট তিন গুণিত একের পিঠে ছাব্বিশটা শূন্য ওয়াট (3.83x10^26
watt)। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটী ডিগ্রী সেলসিয়াস (15 million
degrees Celsius বা 1.57x10^7K)। সারফেসের তাপমাত্রা পাঁচ হাজার সাতশত ঊনআশি
কেলভিন(5779K) বা প্রায় ছয় হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস (6045 degree Celsius)। সূর্যের
চারপাশে জ্বলন্ত গ্যাসের একটি আলোকিত উজ্জ্বল অংশ আছে এটিকে ছটা মন্ডল বা করোনা
(corona) বলে যার তাপমাত্রা প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ কেলভিন (5x10^6K)।
সূর্যের বিভিন্ন অংশের এত
যে তাপমাত্রার ফিরিস্তি দেওয়া হল তার কারণ সূর্যের বিশাল ও দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস
সম্পর্কে সকলকে একটা ধারণা দেওয়া। এই ধারণা না থাকলে সূর্যের আয়ু সম্পর্কেও
পরিষ্কার ধারণা থাকবে না বলে আমার মনে হয়। একটি ছোট দেশলাই কাঠি এক ফুঁয়ে নিভে
যায়। একটা মোমবাতি দমকা হাওয়ায় নিভে যায়। কিন্তু একটা মোটা সলতের বেশ বড় প্রদীপ
বাতাসের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ টিকে থাকতে পারে। অর্থাৎ যে বস্তুর অভ্যন্তরে সঞ্চিত
শক্তি (তাপ, বৈদ্যুতিক, যান্ত্রিক যে কোনও প্রকারের শক্তি হতে পারে) যত বেশি তার
টিকে থাকার ক্ষমতাও তত বেশি।
ওপরের চিত্রে স্কেলের যে ১
দাগটা আছে সেটা সূর্যের জীবনারম্ভের দাগ। অর্থাৎ এই সময় সূর্য সৃষ্টি হয়েছিল।
কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল সেটি প্রসঙ্গান্তর। পরে কখনও সুযোগ পেলে বলা যাবে। সূর্যের
মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন যার থেকে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম নামক গ্যাসটি।
সূর্যের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম উৎপাদিত হয় যে পদ্ধতিতে তাকে বলে ফিউশন
পদ্ধতি (Fusion)। এই পদ্ধতিতে চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হিলিয়াম পরমাণু
উৎপন্ন হয়। চারটি হাইড্রোজেন পরমাণুর মিলিত ভর হল 4.03130 AMU আর একটি হিলিয়াম
পরমাণুর ভর হল 4.00268AMU (1AMU= one atomic mass unit= 1.67x10^27 kg.). সংযোজন
শেষে বাড়তি ভর পড়ে থাকে 0.02862 AMU. আইনস্টাইনের সূত্র E=mc^2 অনুসারে এই বাড়তি
ভর প্রচুর পরিমাণে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা হল সূর্যের আসল শক্তি। কয়লার উনুনের
মধ্যে যেমন গনগনে আঁচ দেখা যায় ঠিক তেমনই দেখা যায় সূর্যের মধ্যেও। সূর্য যে
ক্রমাগত আলো আর তাপ বিকিরণ করে চলেছে সারা সৌরমন্ডলে, তার উৎস সূর্যের ভেতর নিয়ত
ঘটে যাওয়া এই ফিউশন বিক্রিয়া।
এখন, সৃষ্টির মুহূর্তে,
সূর্য কিন্তু একটি পুরোপুরি তারা বা নক্ষত্র অর্থাৎ Star হয়ে ওঠেনি তখন তার মধ্যে
ভর সবে কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করেছে, তখনও ফিউশন সংঘটিত হয় নি। এর পর ফিউশন শুরু হয়
আর ক্রমশ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে তার মধ্যে সঞ্চিত তাপশক্তির পরিমাণও। বাড়তে থাকে
তার তাপ বিকিরণের পরিমাণও। বাড়তে থাকে তার আকারও। একটি রুটি যেমন ফুলে বড় হয় তার
মধ্যে সঞ্চিত গ্যাসের জন্যে বা এক কড়া দুধ যেমন ফুলে উথলে ওঠে তার মধ্যে ভরা
বাতাসের উত্তাপে আয়তন বৃদ্ধির জন্যে, এও বেশ কতকটা তেমনই। উত্তাপে যে প্রচুর
পরিমাণ গ্যাস তৈরি হয় অথচ সূর্যের মাধ্যাকর্ষণের (gravitation) কারণে যেগুলো
মহাকাশে দূরে কোথাও ছিটকে চলে যেতে পারে না। এইভাবেই সূর্যের আকার দিনে দিনে
বাড়তেই থাকে আর বাড়তেই থাকে। স্কেলে পরবর্তী ছবিগুলি লক্ষ করুন।
এখন সূর্য রয়েছে স্কেলে
ঠিক চার দশমিক পাঁচ দাগের কাছে। খেয়াল করুন এর পর থেকে দাগ যতই বেড়ে যাচ্ছে সূর্য
ততই একটু একটু করে আয়তনে বাড়ছে। বাড়ছে তার উজ্জ্বলতা আর উত্তাপও। সূর্য হচ্ছে আরও
রাগী। অর্থাৎ আগামী দিনগুলি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (Rise in global
temperature) শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণের কারণেই হবে না, হবে সূর্যের ক্রমাগত এই ‘রাগ
বৃদ্ধির’ জন্যেও। কারণ বাড়ছে এর মধ্যে অনবরত ঘটে যাওয়া হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ামের
ফিউশন বা সংযোজন বিক্রিয়ার সংখ্যা আর উৎপন্ন শক্তির পরিমাণও। এই চিত্র
কাল্পনিক হলেও নিতান্ত মনগড়া নয়। বিজ্ঞানীরা আগাম হিসেব করে এটি তৈরি করেছেন।
অর্থাৎ বিজ্ঞানের জটিল অংকের ফসল রয়েছে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে।
লক্ষ করে দেখুন, স্কেলে
ঠিক যেখানে দশ লেখা আছে অর্থাৎ সময়ের হিসেবে যা প্রায় হাজার কোটী বছর, তখন সূর্যের
কী ভয়ংকর রূপ আর আকার। সূর্যের বয়স যখন (হবে) বার দশমিক দুই বিলিয়ন বছর তখন সে হয়ে
যাবে এর চেয়েও ভয়ংকর দৈত্যাকার। ভয়ংকর রকমের লাল আর বড়। এই ষ্টেজটিকে বলা হচ্ছে
লাল দৈত্য বা Red Giant. এই সময় সূর্যের বাইরের স্তরগুলি আরও প্রসারিত হতে চাইবে।
কিন্তু এর ভিতরের অংশটি অর্থাৎ কোর বা আঁটির ক্রমশ ঘটতে থাকবে সংকোচন। এই সময়
সূর্য ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকবে আর আকারেও বড় হতে থাকবে।
সূর্য যখন সবচেয়ে বড় আকার
ধারণ করে লাল দৈত্য হবে তখন তার কোর বা ভেতরের অংশে আরও অনেক বেশি করে ফিউশন ঘটতে
থাকবে। আরও বেশি করে তাপ ছড়িয়ে দিতে থাকবে। ফলে সে ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকবে। ভেতরে
ক্রমশ জ্বালানী কমে আসার ফলে তাপের উৎপাদন ক্রমশ কমতে থাকবে। উৎপন্ন হিলিয়াম ক্রমশ
বাইরে বেরিয়ে আসছে কিন্তু নতুন করে কোনও হিলিয়াম আর তৈরি হচ্ছে না। এখান থেকেই
সূর্যের শেষের হবে শুরু। তাপ তো আর তৈরি হবেই না বরং ক্রমাগত ছড়িয়ে দিতে থাকার
জন্যে সে আকারে ছোট হতেই থাকবে। অর্থাৎ যাকে বলে জ্বলে পুড়ে একেবারে খাক হয়ে
যাওয়া। তারপর ছাইগুলো যেমন চুর চুর হয়ে বাতাসে মিশিয়ে যেতে থাকে তেমনই হবে সূর্যের
দশা (প্ল্যানেটরি নেবুলা)। যেমন ধরা যাক একটি শুকনো গাছের গুঁড়িতে আগুন লাগানো হল।
আগুন ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে আর উত্তাপ বাড়ছে। ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। এতই গরম
চারপাশটা যে আগুনের সেই হলকা সহ্য করা যায় না। দাঁড়িয়ে থাকা অসহ্য। এরপর এক সময়
সেই গাছের গুঁড়ির অভ্যন্তরে সঞ্চিত জ্বালানীর পরিমাণ (Fuel) কমতে থাকল। আগুন কমতে
থাকল। উত্তাপ কমতে থাকল। কিন্তু গাছের গুঁড়ি ততক্ষণে পুড়ে একেবারে নিঃশেষ। চুর চুর
হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেল। আমাদের প্রিয় সূর্য ঠিক সেইভাবে মিলিয়ে যেতে থাকবে ক্রমশ।
ধরুন না কেন ঠিক যেমন মৃত্যুর পরে আমরা মিলিয়ে যাই পঞ্চভূতে?
এই প্রায় সাড়ে বার কোটী
বছর (12.2 Billion years) অর্থাৎ যখন থেকে সূর্য লাল দৈত্য হতে শুরু করবে তখন
থেকেই তার বাজবে মৃত্যুঘন্টাও। কিন্তু সে তো এখনও প্রায় সাত আটশ কোটি বছর দূরের
কথা। একবার ভাবুন তো, ততদিন কি পৃথিবী নিজেই বেঁচে থাকবে কিংবা বেঁচে থাকবে কি
সারা সৌরজগত সূর্যের ঐ মারাত্মক বর্ধমান তাপের ছটা সহ্য করে? গ্রহমন্ডলীর নিজেদের
কোনও শক্তির উৎস নেই। তাই নেই তাদের অস্তিত্বরক্ষার কোনও ব্যবস্থাও। হয়ত সূর্যের ঐ
লাল দৈত্যের অবস্থা আসার বহু আগেই সমগ্র সৌরজগৎ পুড়ে ছাই হয়ে মহাকাশে মিলিয়ে যাবে।
লাল দৈত্য দেখার সুযোগ হয়ত মানুষের আর হবেই না।
এসব নানা প্রশ্ন, প্রশ্ন
হয়েই আপাতত ঝুলে থাক আমাদের কোতূহলের পর্দায়। মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। ভয়
বা আশংকিত হবার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ ততদিন থাকব না আমরা কেউ—না এই লেখক না তার
পাঠককুল। ভবিষ্যতের কথা লেখা হবে ভবিষ্যতের পাতায়। আর সে পাতা হয়ত কোনদিন খোলাই
হবে না আমাদের সামনে।
গোয়েন্দা গল্প /মুক্তো কোথায় ? / দূর্বা মিত্র
গোয়েন্দা অফিসার সৌমাভ সান্যাল অবাক হয়ে তাকায় অধস্তন অফিসার এর দিকে -" কি বললে ? স্যার আমাকে যেতে বলেছেন ? মুক্তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ?"
-"হ্যাঁ স্যার | ওনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু , তাছাড়া মুক্তোটাও খুব দামী | লকার থেকে এনেছিলেন নতুন বেয়াই কে দেখাবেন বলে | দুপুরে খেয়ে সবাই শুয়েছিলেন , বিকেলে আলমারি খুলে দেখেন বাক্স খালি - মুক্তো গায়েব | বাড়ির গেট এ তালা লাগিয়ে উনি স্যার কে ফোন করেন | বিশেষ অনুরোধ করেন কোনো জানাজানি নাকরে মুক্তোটা খুঁজে দিতে - আজ রাতের মধ্যেই চাই | আর স্যার - বড়ো স্যার বলে দিয়েছেন - ইউনিফর্ম বা অফিস জীপ্ নিয়ে না যেতে |"
সৌমাভ ঘাড় নেড়ে কাগজ টা হাতে নেয় - A4 কাগজে নাম ঠিকানা ফোন নম্বর - মুক্তোটার বিবরণ সহ একটা ফটো | দাম ১০ লক্ষ হবে |
পেছনের ঘরে গিয়ে জিন্স, সাদা টি-শার্ট , পায়ে কালো স্নিকার্স পরে নিয়ে একটা ওলা ক্যাব ডেকে নেয় - ঠিকানা দিয়ে ওই কাগজটা আরেকবার পড়তে থাকে | মালিক ভদ্রলোক গেট বন্ধ করে দিয়েছেন | কেউ ঢোকেনি বা বেরোয়নি | তার মানে বাড়িতেই আছে মুক্তোটা | অত ছোট একটা জিনিস যে কোনো জায়গায়লুকিয়ে রাখা যেতে পারে | আজ রাতের মধ্যে উদ্ধার করা ? কি করে সেটা সম্ভব হবে ?
বাড়িটা তিনতলা - সামনে পেছনে বাগান - বড়ো লোহার গেট | ক্যাব থেকে নামতে নামতে কাগজে লেখা মোবাইল নম্বর এ ফোন করে নিজের পরিচয় দেয় | মালিক নিজে এসে গেট এর তালা খুলে ওকে একতলার একটা বসার ঘরে নিয়ে যান |
সুরুচি পূর্ণ ঘর | এসি চলছে | সৌমাভ সেই দিনের ডিটেলস জানতে চায় | মালিক বলেন সকালে লকার থেকে এনেছেন, বেয়াই বাড়ির সবাইকে দেখিয়ে আলমারিতে রেখেছেন - চাবি ওনার পকেটে থাকে - দুপুরে খাওয়ার পর ঘন্টা খানেক শুয়েছেন | বিকেল চারটে নাগাদ আলমারি খুলেছেন লকার এ ফেরত রেখে আসারজন্যে - বাক্স খালি | এখনো কাউকে কিছু বলেন নি | বড়ো ছেলের বিয়ে হয়েছে - সেই বেয়াই বাড়ির লোকজন এসেছেন - কাল সকালের ফ্লাইটে দিল্লি ফিরে যাবেন |
ছোট ছেলে কলেজ পাস্ ও করেনি - গানের ব্যান্ড তার স্বপ্ন | উনি আর গিন্নি তিনতলায় একদিকে থাকেন - অন্যদিকে ছোট ছেলে | দোতলায় বড়ো ছেলে একদিকে - অন্যদিকে অফিস | একতলায় ঠাকুর - চাকর - ড্রাইভার - মালি - দারোয়ান থাকে | অন্যদিকে রান্নাঘর - খাবার ঘর - বসার ঘর - গেস্ট রুম |
চুরি ধরার পরে কেউ এখনো বাইরে যায়নি বা আসেনি - কিন্তু কাল সকালে তো গেট বন্ধ রাখা যাবে না | চুরির কথাও প্রকাশ পাবে | পুলিশ এ যাওয়া মুশকিল - বড়ো ছেলে আর তার শ্বশুরবাড়ি কি ভাববে ? ডিসি ডিডি ১ ওনার স্কুলের বন্ধু | এখন সৌমাভ ভরসা |
সৌমাভ বলে উনি যেন সবাইকে বলেন যে সৌমাভ একটা উপন্যাস লিখছে - কিছু চরিত্র চিত্রণের জন্যে সবার ঘরে গিয়ে আলাদা কথা বলতে চায় | উনি ইন্টারকম এ সবাইকে খবর দেন |
সৌমাভ সাইড ব্যাগ থেকে আই-প্যাড বার করে একতলায় নেমে আসে |
যাবতীয় কাজের লোকেদের ফটো আর ডিটেলস নেয় - পোর্টিকোর চেয়ার এ বসে কফি খেতে খেতে কো-রিলেট করে কিছু সন্দেহ জনক দেখতে পায়না | সবকটা প্রোফাইল পিক খুঁটিয়ে দেখে - কোনো মুখেই কিছু লুকিয়ে রাখার চাতুরী খালি চোখে ধরা পড়েনা | লাই ডিটেক্টর পেলে ভালো হতো !
আই-প্যাড হাতে নিয়ে দোতলায় আসে | অফিস পোরশন তালাবন্ধ শুক্রবার থেকে - এখন শনিবার বিকেল - সে চাবিও মালিকের পকেট এ | সৌমাভ ডানদিকে ঘোরে বড়ছেলের সুইটের দিকে |
বড়ো ছেলে একটু অবাক চোখে তাকায় - বাবার কোনো উপন্যাস লেখা বন্ধুর ছেলে মনে করতে পারে না বোধয় | সে নিজে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট - বাবার ব্যবসার অংশীদার - মাস তিনেক হলো বিয়ে হয়েছে | শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আসাতে মুক্তোটা দুপুরে দেখেছে | ঘুম থেকে উঠে ক্যালকাটা ক্লাব এ যাবে ভেবেছিলোসবাইকে নিয়ে - বাবা বারণ করেছেন | ওনার স্ত্রী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিজেদের পরিচয় দিলেন - কে কি করেন তাও বললেন | ফটো বা ডিটেলস এ কোনো ফাঁক নেই | গুগল সার্চ করে সব কোম্পানি ডিটেলস ও চেক করলো সৌমাভ - no red flag
anywhere !
তিনতলায় উঠে বাঁদিকে ঘুরে ছোট ছেলের সুইটে বেল দেয় সৌমাভ | কেউ দরজা খোলেনা | আরেকবার বেল দেয় | no response ! উল্টোদিকের দরজা খুলে গিন্নিমা বেরিয়ে আসেন - মোবাইল থেকে ছোট ছেলেকে ফোন করেন | একটু পরে দরজা খুলে দাঁড়ায় ছোট ছেলে - রোগা,লম্বা,কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলে রঙিনফিতে | মুখটা অসম্ভব শুকনো - এক হাতে পেট চেপে ধরে আছে | গিন্নিমা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন - " ছোটু কি হয়েছে তোর ? ডাক্তার কাকাকে খবর দেব রে ?"
সৌমাভ গিন্নিমার কাঁধে আস্তে একটা টোকা দেয় -"জেঠিমা আমি ফার্স্ট এইড জানি - একটু দেখি প্লিজ ? তারপর না হয় ডাক্তার কাকাকে খবর দেবেন |"
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে সৌমাভ - একহাতে ছেলেটির কনুই এর নার্ভ চেপে ধরে ভেতরে ঢোকায় - আর অন্য হাতে দরজার লাচ আর ছিটকিনি লাগায় | ছেলেটি ঘুরে দাঁড়িয়ে সৌমাভর কলার ধরতে চায় পেট থেকে হাত সরিয়ে - সৌমাভ ওর কানের পেছনে রদ্দা লাগায় - কনুইয়ের চাপ ও বাড়িয়ে দেয় |
ছেলেটা বসে পড়ে সামনের চেয়ার এর ওপর |
সৌমাভ ওর দুই কাঁধে হাত রেখে বলে -" এর পরের ছ মিনিটে ছ মাস হাসপাতাল এ থাকার ব্যবস্থা করে দেব | চুপচাপ কথার উত্তর দাও | দুপুরে খাবার পর ঘরে ঢুকে কি কি খেয়েছিলে ? আমি ঘরে যা গন্ধ পাচ্ছি - মারিজুয়ানা, হুইস্কি আর চরস এর মিশ্রণ | কেস টা কি ?"
-" আ আ আপনি কে ?"
- " আমার প্রশ্নের উত্তর তুমি দেবে - উল্টোটা নয় | বলো কি খেয়েছিলে ?" - বলতে বলতেই কাঁধের ভেতরের নার্ভ এ চাপ বাড়ায় নিজের দুই বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে |
-"আ আ লাগছে - বলছি বলছি | লাঞ্চের পরে শরীর খারাপ লাগছিলো - তাই সবগুলোই একটু একটু খাচ্ছিলাম - যাতে পেট ব্যথা কমে যায় |"
-" কমেছে ?"
-"না মানে হ্যাঁ - মানে একটু -"
বাঁ হাতে কাঁধ ধরে তুলে ডান হাতে ওর পেটে ফুল ফ্রন্টাল ঘুঁষি চালায় সৌমাভ | ছেলেটা দুহাতে পেট চেপে বমি করে ফেলে |
-" খাবার পরে আর মদ খাবার আগে কি করেছিলে ?"
-" ক ক কই কিছু না তো ?"
এবারের ঘুষিটা পড়ে ডানদিকের চোয়ালে - অরণ্যদেব হলে নির্ঘাত ছাপ পড়তো - এতটাই জোরে |
চেয়ার থেকে গড়িয়ে পড়ে ছেলেটা - চিবুকে রক্ত | সৌমাভ একটা পা তুলে দেয় ছেলেটার পেটে - চিৎকার করে ওঠে সে - " পেটে না -প্লিজ পেটে না - অন্য যেখানে খুশি মারুন |"
সৌমাভ ঝুঁকে পড়ে ওর মুখের ওপর -" কেন পেটে নয় কেন ?" বলতে বলতে পেটের ওপর পায়ের চাপ বাড়ায় একটু |
-"ভেঙে যাবে - ভেঙে যাবে " - বলতে বলতে কান্না আর বমি শুরু করে দেয় |
দু হাতে তুলে চেয়ার এ বসায় সৌমাভ - টেবিল থেকে জলের বোতল এনে মুখে চোখে ছেটায় | নরম গলায় জিগেস করে -" চাবি তো বাবার পকেটে ছিল - আলমারি খুললে কি করে ?"
-" ঘু ঘু ঘুমের সময়ে বাবা বালিশের নিচে চাবি রাখে | মা তখন ও ওপরে আসেনি - দরজা খুলে দেখলাম বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে - ত ত তখন ভিতরে ঢুকে ----"
-"মুক্তোটা গিলতে গেলে কেন ?"
-"একটা সিনেমায় দেখেছিলাম |"
-" নেশার জিনিস গুলো খেলে কেন?"
-"পেট ব্যথা করছিলো যে !"
-"এতো টাকার তোমার দরকার পড়লো কেন ?"
-"বাবা আর টাকা দেবে না বলছিলো - বাজারে অনেক ধার | বিশ্বাস করুন - ব্যান্ড টা দাঁড়িয়ে গেলেই আমি টাকা শোধ করে দিতাম - আমি তো আর বস্তির ছেলে নই !"
-"তোমাকে বিক্রি করলেও দশ লক্ষ টাকা তুমি শোধ করতে পারতে না - আর মুক্তোটা চোরা বাজারে বিক্রি করলে অতো দাম ও তুমি পেতে না | এই পরিবারের ছেলে হয়ে তুমি এ কি করলে ?"
বলতে বলতে ছেলেটার বেল্ট খুলে চেয়ারের পেছনে হাত দুটো বাঁধে সৌমাভ | মোবাইল এ গৃহকর্তাকে বলে ডাক্তারকে খবর দিতে - সঙ্গে স্টমাক ওয়াশ আর পারগাটিভ ইনজেকশন যেন আনা হয় |
দরজায় বেল বাজতে সৌমাভ খুলে দেয় - কর্তা ও গিন্নি ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে |
-" বসুন আপনারা | ডাক্তার এলেই আপনার মুক্তো পাওয়া যাবে |"
-"সে কি ? কোথা থেকে ?"
-"ওর পেট থেকে |"- বলে ছোট ছেলের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায় সৌমাভ |
Subscribe to:
Posts (Atom)
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

-
ধর্ম আমায় ধারণ করেছে আগুন করেছি বর্ম ... দেখতে পাচ্ছ এই দাবানলে জ্বলছে অস্থি , চর্ম ? দেখতে পাচ্ছ উড়ছে ফিনিক্স , চাঁ...
-
শত চেষ্টা করে যখন একটা কাঠও জোগাড় করা গেল না , তখন নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হল । যে খড়ের আঁটি জ্বেলে কাঙালি মায়ের মুখে আগুন...
-
বিষাদের মেঘ ছেয়েছে আকাশে বৃষ্টি বুঝি আসন্ন— বাতাসের চোখ ছল ছল ভাসে প্রতীক্ষা কার জন্য? ওগো মেয়ে তুমি কার কথা ভাবো, সে কি ...
-
শুকনো বকুল চললি কোথায় ? গ্রহণলাগা দুপুরবেলা লাল মাটি পথ একলা চলা - রুদ্রপলাশ মোড়ের মাথায় ? কি বললি ? আজ বিকেলে মোরগ লড়াই ...
-
ওকি বৃষ্টির শব্দ ? নাকি পায়ের থেকে নূপুর খুলে হাতে নিয়ে তোর দৌড়ে আসার শব্দ ; যদি তাই হয় তবে এখন কেন ? এখন তো অনেক রাত , ব...
-
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রোজ খেলে মরে, একাকী দেয়ালে খেয়ালে বা অখেয়ালে... হেসে কুটে একাকার। মাথা নেড়ে নেড়ে অবাধ...
-
জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্ ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত , অভিমানে ...
-
বসন্তে যেমন ফুল ফোটে তেমন ফুল ঝরে। কুদরতের নিয়মে যত ফুল ফোটে ঠিক তত ফুলই ঝরে। আল্লা তালার হিসেব চুলচেরা। শুধু কি ঝরে ? ফুল কাঁদে , ফ...
-
হাইবারনেশানে যাই যখন তখন তার অবগাহনে ডুবে যেতে। ফিরে যাই সেই মাতোয়ারা দিনগুলোতে জীবনের জরদ্গভ প্রাচীর ডিঙিয়ে অদ্ভুত এক লুকোচুর...