শিবশঙ্করবাবুর বাড়ীতে মালীর কাজ করে দুঃখীরাম।নামের মতোই তার জীবনটাও দুঃখে ভরা। কিছুদিন হল দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অকালে তার জোয়ান ছেলেটার প্রাণ গেছে।
বাড়িতে বউয়ের শরীর ভাল নয়, টিবি ধরা পড়েছে।
একমাত্র আশা ভরসার জায়গা এই ছোট ছেলে।
সরকারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে, মাস্টারমশাইরা বলেন, ওর মাথা নাকি খুব পরিষ্কার ।
স্কুল না থাকলে ছেলেটা মাঝে মাঝেই বাবার সাথে এ বাড়ীতে চলে আসে।
এ বাড়ীর মালকিন ছেলেটিকে যথেষ্ট স্নেহের চোখে দেখেন, কিন্তু মালিক যে তার ছেলেটাকে কেন সহ্য করতে পারেনা, সেটা দুঃখীরাম কিছুতেই বুঝতে পারে না।
হয়তো তার নিজের ছেলে লেখাপড়ায় অত ভাল নয় বলে।
মালিক তাকে সহ্য করতে পারেনা, সেটা ছেলেটাও বোঝে, তাই শিবশঙ্করবাবু যখন বাড়ীতে থাকেন না তখনই সে আসে।
সেদিনও এসেছিল।
তার বাবা তখন বাগানে কাজ করছিল। সে বাগানের এককোণে চুপ করে বসেছিল। সে যেখানে বসেছিল, তার ঠিক পাশেই একটা টবে খুব সুন্দর একটা টকটকে লাল রঙের গোলাপ ফুটেছিল, ছেলেটি বসে বসে ফুলটাকে দেখছিল। কোনোদিন সে কোনো ফুলে হাত দেয়না, মালিক রাগ করে।
হঠাৎ ওর নজরে পড়লো, একটা কালো পিঁপড়ে ফুলের ওপর উঠে আসছে। ও ভাবলো পিঁপড়েটাকে আস্তে করে তুলে ফেলে দেবে, এই ভেবে যেই ও ফুলটার দিকে হাত বাড়িয়েছে, কোথা থেকে যেন ওর মাথায় সজোরে কেউ আঘাত করলো।
প্রচন্ড যন্ত্রণায় ও চীৎকার করে উঠলো।
ছেলের চীৎকার শুনে দুঃখীরাম ঘুরে তাকিয়ে প্রথমে দেখতে পেল মালিক দাঁড়িয়ে আছে, আর পাশ দিয়ে কতকগুলো গোলাপের পাপড়ি উড়ে যাচ্ছে। তারপর নজরে এল তার ছেলের মাথাটা মাটিতে পড়ে আছে আর লাল রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে ।
'বাবুয়া', বলে দুঃখীরাম আর্তনাদ করে উঠলো।
'তোর ছেলেকে আজ মেরেই ফেলবো, বলেছিলাম না, আমার ফুলগাছে হাত দিবিনা-----'
'মালিক, মাফ করে দিন এবারের মতো।আর মারবেন না, ছেলেটা মরে যাবে মালিক--- '
দুঃখীরামের কাকুতি মিনতি স্পর্শ করলো না শিবশঙ্করবাবুকে, তিনি তখন রাগে অন্ধ।
লাঠিটা তুলে আর একবার মারলেন বাবুয়ার মাথায়----
ছেলেটার ছোট্ট শরীরটা একবার কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল।
দুঃখীরামও শিবশঙ্করবাবুর পা ছেড়ে দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বোবা হয়ে গেল।
ওর ভূবন জুড়ে তখন শুধুই ধূসর শূন্যতা!!
No comments:
Post a Comment