অষ্টাদশ শতাব্দীর জাপানের প্রত্যন্ত একটি পাহাড়ি এলাকা। দুর্গম এই
এলাকাটিতে প্রচন্ড খাদ্যের অভাব, তাই বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কঠিন জীবন
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে মানুষগুলো কেমন যেন হিংস্র হয়ে উঠেছে। আর
এখানকার একটি বিভৎস স্থানীয় রীতি হ'ল 'উবাসুতে'। এই প্রথা অনুযায়ী কোন
মানুষের সত্তর বছর বয়স হলেই তার আর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। সমাজ বা
সংসার তার আর কোন দায় বা দায়িত্ব নেবে না। তাকে 'উবাসুতে' যেতেই হবে।
দুশো বছরেরও বেশি আগে প্রচলিত এই 'উবাসুতে' আমাদের দেশের সহমরণের চেয়েও
ভয়াবহ, অকল্পনীয় এবং অত্যন্ত কদর্য একটি জাপানী প্রথা। এই রীতি অনুযায়ী,
গ্রামের কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার বয়স সত্তর হলেই তাকে একটি খাদ্য পানীয়হীন
দুর্গম এক পাহাড়ের মৃত্যু উপতক্যায় বসিয়ে দিয়ে আসা হবে এবং একজন বৃদ্ধের
পক্ষে সেই দুর্গম উপত্যকা থেকে কোনদিনই আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। বাড়ির
লোকেরা তাকে ঐ মৃত্যু উপত্যকায় বসিয়ে দিয়ে আসার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই
চারিদিকে চিল শকুনের মাঝে এবং তার পূর্বসুরীদের কঙ্কালের মধ্যে জল এবং
খাদ্যের অভাবে এক নিদারুন কষ্টের মধ্যে সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। ঐ
মৃত্যুপুরীতে তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই চিল ও শকুনের দল তার উপর ঝাপিয়ে
পড়বে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই একটি জীবন্ত মানুষ পরিনত হবে একটা ছিন্ন
ভিন্ন নর কঙ্কালে।
এদিকে বৃদ্ধা মিসাকিরও আর সত্তর হতে বেশি বাকি নেই। মিসাকি জানে এই
পৃথিবীতে তার আয়ু আর মাত্র এক মাসও নয়। কিন্তু তার যে এখনো অনেক কাজ
বাকি! আগামী শীতে ছেলে মেয়েদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা হয়নি। সে 'উবাসুতে'
গেলে তার ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীরা এই শীতে খাবে কি? তাছাড়া ছোট ছেলেটি তো
এখনও সংসারীই হল না। তার বিয়ে থা দিয়ে তাকে সংসারী করে যেতে হবে। এত সব
কাজ বাকি, অথচ তার হাতে সময় বেশি নেই। এই সব কাজ মাত্র আগামী কয়েকদিনের
মধ্যেই তাকে শেষ করে যেতে হবে।
এই তো পাশের বাড়ির বৃদ্ধ আকিরাকে আজ তার ছেলেরা 'উবাসুতে' নিয়ে গেল।
যাওয়ার সময়ে বৃদ্ধের সে কি কান্না! কাঁঁদতে কাঁদতে বূড়োটা বলেই যাচ্ছে
যে, এখনও তার শরীরের জোর কম কিছু নেই। ছেলেদের সংসারের জন্যে সে সকাল
থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত খেটে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করে দেবে, সংসারের সব কাজ
করে দেবে । সে তার ছেলেদের ক্রীতদাস হয়ে থাকবে। তবু রেহাই নেই...।
ভাবা যায়? জীবন্ত এবং সম্পুর্ণ একটি সুস্থ মানুষকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে
বলপূর্বক 'উবাসুতে' নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? সেইযুগে ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলে
মানুষের জন্ম তারিখ তো আর সেই ভাবে হিসেব নিকেস করা থাকতো না! বাড়ির
লোকেরা যখন মনে করত যে এই সংসারে বুড়োটার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, এই পরিবারে
সে আর কোন উপকারে আসবে না, তখনই ধরে নেয়া হত যে তার সত্তর বছর বয়স হয়েছে।
ইদানিং মিসাকিরও কাজে কর্মে খুব ভুল হচ্ছে, পরিবারের অনেকের কাছেই তাকে
খুব কথা শুনতে হচ্ছে। তাই মিসাকিও 'উবাসুতে' যাওয়ার জন্য নিজেকে মানসিক
ভাবে প্রস্তুত করে নিয়েছে। সে কাঁঁদবে না। আর মাত্র তো কয়েকটা তো দিন!
মিসাকি মনে মনে ভাবে ততদিনে নিশ্চই সংসারের সবার জন্য শীতের খাদ্য সংগ্রহ
করা হয়ে যাবে। ছোট্ট নাতিটা গত শীতে খুব কষ্ট পেয়েছে, ওর জন্য এবার একটা
মোটা দেখে কাঁথা বুনে দিয়ে যেতে হবে। আর মাত্র কয়েক দিন তার আগেই নিশ্চই
সব কিছু হয়ে যাবে।
মিসাকি নিজেই নিজের মনকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে। যেতে যখন হবেই তখন সে নিজেও
উবাসুতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আচ্ছা আজকে ওই বুড়ো আকিরার সঙ্গে চলে
গেলেই তো হত? মাত্র কয়েকটা তো দিন ! অন্তত মৃত্যুর আগে ওই মৃত্যু পাহাড়ে
বসে কয়েক ঘন্টা দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁঁদতে তো পারতো? আজ বুড়ো আকিরার
জন্য মিসাকির বুকের ভিতরের কান্নাটা দলা পাকিয়ে বার বার গলা পর্যন্ত উঠে
আসছে।
কত কথা মনে পড়ে যায়। বৃদ্ধ আকিরার বউকে কিম্বা মিসাকির স্বামীকে অবশ্য
উবাসুতে যেতে হয়নি। বুড়ি নিজের বাড়িতেই হটাৎ একদিন বুড়োর কোলে মাথা রেখে
ডাং ডাং করে সোনার রথে চড়ে স্বর্গে গেল। ঠিক একই রকম ভাবে মিসাকির বরও
দুদিনের অসুখে নিজের বউ এর হাতে ভাত খেয়ে নাচতে নাচতে স্বর্গে চলে গেল।
পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে খাবার জল কিম্বা আগুন জ্বালানোর শুখনো কাঠ আনতে মিসাকি
যখন জঙ্গলে যেত, প্রায়ই একই কাজে বেরনো আকিরার সঙ্গে তার দেখা হয়ে যেত।
নিজের নিজের সংসার নিয়ে ওদের দুজনে কত সুখ দুঃখের গল্প হ'ত। আকিরা বলতো,
জানিস মিসাকি, তোর বরের মত আর আমার বউ এর মত ভাগ্য কি আর আমাদের হবে?
মিসাকি তার উত্তরে বলত, কি জানি, কি যে হবে তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।
মাঝে মাঝে শুখনো কাঠ আর জল বইতে বইতে যখন দুজনে ক্লান্ত হয়ে পর'ত। একটা
পাহাড়ি মাপেল গাছের নীচে বসে দুজনে গল্প করেই যেত। তল্লা বাঁঁশের তৈরী
জল-পাত্র থেকে ঢক ঢক কয়েক ঢোক করে জল খেয়ে নেয় আকিরা, তারপর মিসাকিকে
বলে, অনেক ক্ষন বক বক করেছিস, নে একটু গলাটা ভিজিয়ে নে। এই বলে মিসাকি
যেই হাঁ করে মুখটা উচু করে ধরে, আকিরা তখন এক হাতে মিসাকির চিবুকটা ধরে
ওর মুখে আস্তে আস্তে জল ঢেলে দেয়। কিছুটা জল ছলকে পরে মিসাকির মুখ ও জামা
ভিজে যায়। আকিরার চোখে মিসাকিকে তখন কি সুন্দরীই না লাগে! মিসাকিও ইদানিং
লক্ষ্য করেছে, আকিরা মানুষটা বড্ড ভাল। ওর সঙ্গে বসে একবার গল্প করতে
শুরু করলে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না।
এই তো সেদিন যখন পাহাড়ি রাস্তায় মাথায় কাঠের বোঝা নিয়ে হাটতে হাটতে খাড়াই
পথ ধরে নেমে আসছিল, তখন আর একটু হলে মিসাকি তো পা পিছলে পরেই যাচ্ছিল।
ভাগ্যিস আকিরা তখন ওর বলিষ্ঠ হাত দুটো দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। নাহলে তো ও
পা পিছলে পরে মরেই যেত। এদিকে আকিরাও এখন একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে
মিসাকিকে না দেখলে আকিরারও মনটা কেমন যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। বলিষ্ঠ চেহারার
আকিরাকে কে বলবে তার সত্তর বছর বয়স হল। শুধু ডান পা টা একটু টেনে টেনে
হাটে। তাই রসিকতা করে মাঝে মাঝে মিসাকি তাকে বলে আমার "ল্যাংড়া আকিরা"।
আপন মনে এসব কথা ভাবতে ভাবতে হটাৎ মিসাকি লক্ষ্য করল, আকিরাকে নিয়ে ওর
ছেলেরা উবাসুতে চলে গেছে। মিসাকির দু চোখ বয়ে নেমে আসছে জলের ধারা। এই তো
মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। শীত আগত প্রায়। চারিদিকে ধীরে ধীরে চেরী
গাছগুলো লাল হতে শুরু করেছে। আকিরা কয়েকটা চেরীফুল নিয়ে মিসাকির মাথায়
গুজে দিয়ে বলল, তোকে কি সুন্দর লাগছে, আর লাগবে নাই বা কেন? তোর নামটাই
তো কত সুন্দর 'মিসাকি' মানে 'সুন্দর ফুল'। জানিস মিসাকি, তুই কাছে এলেই
তোর শরীর থেকে একটা সুন্দর ফুলে গন্ধ পাই আমি। উত্তরে মিসাকিও বলে তোর
নামটা তো আরও সুন্দর, 'আকিরা' মানে, উজ্জ্বল। তুই আমার কাছে সত্যি সত্যিই
উজ্জ্বল হয়েই থাকবি।
অথচ সেই আকিরা আজ...। সকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। মাঝে মাঝেই
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সঙ্গে বৃষ্টি। কারও উবাসুতে যাওয়ার দিনে মেঘে ঢাকা
আকাশ মানেই নাকি সে খুব ভাগ্যবান। ধুস্ মৃত্যুমুখে পতিত একজন মানুষের
আবার ভাগ্য ! এত দুঃখেও মিসাকির হাসি পায়। মিসাকি ভাবতেই পারছে না তার
'গোপন প্রেম' আকিরা ওই দুরের মৃত্যু পাহাড়ে অনাহারে, পিপাসায় শিয়াল,
শকুনের খাদ্য হয়ে ...। ইসস্স্স্...। আবার মিসাকির দু চোখ বয়ে নেমে আসে
জলের ধারা। কিন্তু পরক্ষনেই মিসাকি নিজেকে সামলে নেয়। এখন ওর কান্নার সময়
নয়। ওর যে এখনো অনেক কাজ বাকি। হাতে আর অল্প কয়েকটা দিন মাত্র। তার আগে
ছোট ছেলে দাইসুকুকে সংসারি করে যেতে হবে। শীত আসার আগে পরিবারের জন্য
শীতের খাদ্য মজুত করে যেতে হবে। ওর প্রিয় ছোট্ট নাতির জন্য একটা কাঁথা
বুনে দিয়ে যেতে হবে।
আকিরাকে পিঠে নিয়ে প্রায় চার-পাচ ঘন্টার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে মৃত্যু
পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলেছে ওর ছেলে আর কয়েকজন আত্মীয় পরিজন। ভীষণ দুর্গম
সে পথ। ঘন মেঘে আচ্ছাদিত আকাশ, সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হয়েই চলেছে। যেমন
করে আমাদের দেশে পাহাড়ি তীর্থ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দোলায় চাপিয়ে নিয়ে
যাওয়া হয়, ঠিক সেই ভাবে বয়ে নিয়ে আকিরাকে নিয়ে চলেছে তারই আত্মজ এবং
ঘনিষ্ট জনেরা। বৃষ্টির জোর যেন কমশ বেড়েই চলেছে, আর যেন কোনমতেই এগোন
যাচ্ছে না। প্রচন্ড খাড়াই রাস্তায় যেকোন মুহুর্তে পা পিছলে একটা দুর্ঘটনা
ঘটে যেতে পারে। এরপর সঙ্কীর্ণ পাহাড়ি রাস্তাটা এতটাই খাড়াই এবং বিপজ্জনক
ভাবে উপরের দিকে উঠে গেছে যে রাস্তা না শুকোলে এই বৃষ্টির মধ্যে কোনমতেই
ঐ উতরাই অতিক্রম করা সম্ভব নয়। অথচ এখনও প্রায় এক ঘন্টার পথ বাকি।
একটা গাছে তলায় সবাই কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর তারা ঠিক করলো, আকিরা কে
ওখানেই রেখে দিয়ে তারা চলে আসবে। বুড়ো নিশ্চই ওখান থেকে এই দুর্গম রাস্তা
হেঁঁটে আর বাড়ি ফিরে যেতে পারবে না। তাছাড়া 'উবাসুতে'র নিয়ম আনুযায়ী
একবার যাকে উবাসুতে দিয়ে আসা হয় কোনকারনে সে ফিরে এলেও তাকে আর কোনদিন
সংসারে ফিরিয়ে নেয়া হয় না। সেইমত সবাই আকিরাকে ওখানেই একটা গাছ তলায়
বসিয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরল। আকিরার আজকের এই আত্মজ এবং ঘনিষ্ট
আত্মীয় স্বজনদের ব্যবহারের সঙ্গে সভ্য সমাজের আচার ব্যবহার কোনমতেই মেলে
না। অথচ এটাই ছিল সেকালের ওই এলাকার নিয়ম। এই নিয়মের অন্যথায় সেই
পরিবারকে সমাজে একঘরে হতে হবে।
আকিরা এখন আর কাঁদছে না। ওর সব কান্না যেন শেষ। ইতিমধ্যে বৃষ্টি অনেকটা
কমে এসেছে বলিষ্ঠ চেহারার আকিরা উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে হেটে এলাকাটা
ঘুরতে লাগলো। একটা শকুন ও দুটো চিল ঊড়ে এসে ওর মাথায় ঠোক্কর দিতে চাইলে ও
এক ঝটকায় তাদেরকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে দিনের আলো
শেষ হয়ে আসছে। একটা পাহাড়ি গুহা যদি পাওয়া যেত, অন্তত রাতটুকুর জন্য!
প্রচন্ড দুর্গম আবহাওয়ায় অতি সংকীর্ণ পাহাড়ি পথে কোনরকমে জীবনটাকে হাতে
নিয়ে আকিরা একটু আশ্রয়ের আশায় পাহাড়ি গাছের ডাল পালা ধরে ধরে হেঁটে যেতে
লাগলো। বেশ কিছুক্ষন হাটার পর একটা পাহাড়ি গুহার সন্ধান পেল। আশে পাসে
কয়েকটা সুস্বাদু ফলের গাছের সন্ধানও পেল সে। কিছু দূরে একটা পাহাড়ি
ঝর্ণারও শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সে কিছুটা নিশ্চিন্ত হল অন্তত আজকের রাতটুকু
কোনরকমে এই গুহাটাতে কাটানো যাবে। ইতিমধ্যে বেলা শেষ হয়ে অন্ধকার হয়ে
আসছে।
পরদিন সকালের গ্রাম আর পাঁচটা দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক। সবাই যে যার কাজ
নিয়ে ব্যস্ত। শুধু একজন, মিসাকি, সারা রাত নীরবে কেঁদে গেছে। সকালে সেও
আর পাঁঁচটা দিনের মতই পাহাড়ি জঙ্গল থেকে শুখনো কাঠ আর ঝর্ণার জল আনতে
বেরিয়ে গেল।
তবে আজ সে সম্পূর্ণ একা, মনটাও খুবই খারাপ। বার বার মনের মধ্যে শুধু
উঁঁকি দিয়ে যাচ্ছে একটাই মুখ, 'আকিরা', 'আকিরা' আর 'আকিরা'। গত কালকের
ঘটনা মিসাকি সবই শুনেছে। বেচারা আকিরা হয়ত এখন উদ্ভ্রান্তের মত ওই লাল
পাহাড়তার চুড়োয় ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে একটু খাবারের জন্য, একটু জলের
জন্য। একবার আকিরা ওকে দেখিয়েছিল ঐ মৃত্যু উপত্যকায় যাওয়ার রাস্তাটা। ঐ
তো ডান দিকের ঝর্ণার পাশ দিয়ে পাহারি খাড়াই টা পার হলেই নাকি সেই রাস্তা।
তারপর চার পাচ ঘন্টা দুর্গম পাহাড়ি রাস্তায় শুধু হাঁটা আর হাঁঁটা।
মিসাকির আর বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই
তো মিসাকিকে ছেলেদের কাঁঁধে চড়ে ঐ মৃত্য পাহাড়ে যেতেই হবে, তার চেয়ে ও
যদি আজ একাই হাটতে হাটতে জায়গাটাতে......। যেমন ভাবা ঠিক তেমনই কাজ। এক
ঝটকায় কাঁধ থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় কুড়িয়ে আনা জঙ্গলের সব কাঠ আর ঝরণার জল।
তার জোরে জোরে পা ফেলে সে এক মনে এগিয়ে যেতে থাকে সেই মৃত্যু উপত্যকার
দিকে। মিসাকির আর পিছন ফিরে তাকাবার সময় নেই। বেলা বাড়তে বাড়তে তার পা
ব্যাথা হতে থাকে, তবু সে একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকায় না। সূর্য্য তার
লাল আভা ছড়িয়ে ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে। মিসাকির পায়ে ফোস্কা পরে গেছে।
তবু সে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তায় গাছের ডাল পালা ধরে ধরে এগিয়ে চলে।
হটাৎ তার সমস্ত শরীর এক পরমানন্দে শীহরিত হয়ে উঠলো, মিসাকি স্পষ্ট দেখতে
পেল, কিছুটা দূরে সেই বলিষ্ঠ চেহারার লোকটি ঋজু ভঙ্গিমায় ডান পা টা টানতে
টানতে এই দিকেই এগিয়ে আসছে। লোকটি মিসাকিকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে
মিসাকিকে বুকে টেনে নিয়েই বলল... ঈশ্বর কিই কখনও প্রকৃত প্রেমকে ব্যর্থ
হতে দেয়? একথা বলেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!
No comments:
Post a Comment