Sunday, March 25, 2018

অশুভ / সুবর্ণা বসু






সাদা জমির ওপর লাল সবুজ ছোপানো নামী কম্পানির দামী সালোযার কামিজটা পরে নিজেকে আযনায দেখতে লাগলো রোশনি, সযত্নে সেজেছে নীল এর কথা ভাবতে ভাবতে! নিজের ই চোখ ফিরছে না তো অন্যের কি অবস্থা হবে তাই অনুমান করে ঠোঁটের কোণে একচিলতে নরম হাসি খেলে গেলো ।  

"এই আজ তোমাকে কি দারুণ লাগছে.." বলতে বলতে আলতো করে নিজের মাথাটা ওর কোলে রেখে একেবারে কাছে টেনে নিল নীল ওকে।কি সুন্দর সেজেছে ও, আর কি মিষ্টি একটা গন্ধ শরীর ঘিরে জড়িয়ে রেখেছে । এত সুন্দর করে কি করে যে সাজায নিজেকে ভেবে পায় না নীল  !                                
আপাতত বেশ সুখের আমেজে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে । বেশি কথা হচ্ছে না, অল্প মৃদু আওয়াজ ছাড়া সুন্দর করে সাজানো সতেরো তলার ওপরের এই ফ্ল্যাটের এই শোওযার ঘরে শুধু ঐ কোকিল ঘড়ি টার আওয়াজ। ঘণ্টায ঘণ্টায ছোট্ট দরজাটা ফাঁক করে মুখ বাড়িয়ে সময় জানান দিচ্ছে কোকিলটা। পর্দা আলতো করে উড়িয়ে মৃদু হাওয়া ঢুকে পডছে  ঘরটায। নাঃ... আজ কোন তাড়া নেই , খুব নিশ্চিন্ত লাগছে রোশনির। 

অনেক দিন পরে আজ আশা পূরণ হতে পেরেছে ওর, কতদিন অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য, কত কিছু ই মনে মনে সাজিয়েছে, ভেংগেছে আবার জুড়েছে এই দিনটার কথা মনে করে। আজ সম্পূর্ণ করে পাবে নীলকে, ওর মনকে।     
আজ শুধুই ওরা দুজন।    অপলকে নীলকে দুচোখ ভরে দেখতে দেখতে কোলের ওপর রাখা মাথার ঘন চুলের রাশির মধ্যে আঙুল চালাতে চালাতে কখন যেন বড়ো আপন লাগতে লেগেছে ওর মুখটা... ফর্সা রং, একমাথা ঘন কালো চুল, পাশে খুলে রাখা আধুনিক ফ্রেমের চশমা, গায়ে নরম কটন এর গাঢ় রং এর টিশার্ট... একটা শক্ত পোক্ত হাত কোলের ওপর দিয়ে ঘিরে ধরে রেখেছে রোশনি কে ।                                                    

খুব মনে পড়ছে প্রথম আলাপের সময় টা। মুখোমুখি দেখা তো আজ ই, প্রথম নিবিড় করে পাওয়ার দিন, কত মুহূর্তের অপেক্ষার অবসান। প্রথম আলাপ মেসেঞ্জারে হ্যালো হাই দিয়ে ...আজ আর মনে পড়ে না কে প্রথম শুরু করেছে কথা বলা । ছোট ছোট লাজুক কথার দিন পেরিয়ে কত রাত পর্যন্ত কত গল্প হয়েছে, দুজন দুজনকে যেন নিঃশেষে জেনে নিয়েছে। রাত গডিযে গভীর হয়েছে কেউ কথা শেষ করতে পারে নি । 

তাই...   আজ এই নিরিবিলি সাক্ষাৎ। বহু চেষ্টা করতে হয়েছে ওকে। সময় হচ্ছিল না নীল এরই। নানা অকাজে এখানে ওখানে যেতে আসতে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে, অপেক্ষাও বেড়েছে। ছোটমতন উইক এন্ডে কাছেপিঠে বেডাতে যাওয়ার প্ল্যানও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি ।
বড়ো তাড়াতাড়ি যেন সময় কেটে যাচ্ছে ওদের, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে কূল ছাপিয়ে গেছে, ওদের আটকায কার সাধ্য, বড়ো সুন্দর মাযাময চোখ, মিষ্টি গলার আওয়াজ, নেশাধরা...মোহগ্রাস! 

হঠাৎ ই বডো বডো চোখ মেলে রোশনির হাত টা চেপে ধরে নীল বলে ওঠে " এতদিন তোমাকে বলতে চেযেও পারিনি। এইজন্য দেখাও করতে চাইনি "। রোশনির দম আটকে আসছে, কি বলবে নীল! আচমকা অনেক কাঁচ ভাঙ্গার ঝনঝন শব্দ, কানে তালা লেগে যাচ্ছে, মাথার মধ্যে সমুদ্রের গর্জন, হাজার ঢেউ ভাঙ্গার শব্দ । যেন ঘোর লেগে গেছে। যেন কতদূর থেকে কানে আসছে নীল এর কথাগুলো...  "অনেক টাকা চাই আমার, তোমার সংগে আলাপ করার উদ্দেশ্য ই এই, বলো দেবে? তবেই পাবে আমাকে। বলো, চুপ করে থেকো না। " 

হিসহিস করে ওঠে নীল ... যেন অজগর ফুঁসছে। 


No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া