Friday, August 24, 2018

রম্যরচনা / এখন কটা বাজে ? / বুবুসীমা চট্টোপাধ্যায়






 সিধু জ্যাঠার  [মানে আমাদের পাড়ার সিদ্ধার্থ ঘোষাল ] ঘণ্টায় ঘণ্টায় অচেতন হয়ে যাওয়াটা দেখে খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম যখন তখন রাত বেড়েছে বেশ  । সকাল থেকে ভালোই ছিলেন জ্যাঠীমা  হঠাৎ কি এমন হল যে ভর সন্ধ্যায় মানুষ টা সিরিয়াল দেখতে দেখতে চলে গেলেন চিরতরে । মন ভার খুব তাই কবিতা পাড়ায় একবার না গেলে কিছুতেই মন শান্ত হবে না আমার । বারবার জ্যেঠীমার চওড়া সিঁথিতে সিন্দুর মাখানো মুখটাই মনে পড়ছে । জ্যাঠীমাকে কাঁচের গাড়িতে তোলার আগে জ্যাঠা আমায় বললেন----- ''মা রে তোর জ্যাঠীকে এই লাল বড় টিপটা পরিয়ে দে না মা কাল সন্ধ্যায় কিনে আনতে বলেছিলেন তার আর পরা হলনা'' । 
জ্যাঠার ছেলে মেয়েরা  বিলেতে পড়সি বলতে আমরা কজন আর এক দূর সম্পর্কের ভাইপোমা-বাপ মরা গরিবের ছেলে জ্যাঠীর কাছে কাছে থাকতো । এতো রাতে তার উপরেই জ্যাঠার দায়িত্ব দিয়ে আমরা নিজের নিজের বাড়ি এলাম পাড়ার প্রায় সব পুরুষেরাই আজ শ্মশানযাত্রী জ্যাঠীমাকে নিয়ে বার্নিং ঘাটে  গেলেন ।
তখন অনেক রাত্রি স্নান করে একবার নেটে বসলাম কিছু পড়বো বলে । ফেসবুক অন করলাম এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল খেয়ে বিছানায় ছেলের ঘুমন্ত গায়ে হেলান দিয়ে মন কে শান্ত করতে গিয়ে দেখি একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ... কবিতায় মন আজ বসবে না তাই ঢুকলাম রিকোয়েস্ট বাবুর দেয়ালে । আঁতিপাঁতি খুঁজেও আহামরি কিছু প্রোফাইলে দেখলাম না ... দেখলাম নানা বিদেশী সিনসিনারি । ঠিকানাও হাঁওমাঁওচাঁও কি একটা- উদ্ধার করতেও  পারলাম না ।। এই করতে করতেই ইনবক্সে ঢিপ করে একটা মেসেজ ঢুকলো ।
মেসেজ পড়ার আগেই কর্তার ফোন ,  
বলল ----দেরি হবে ফিরতে শ্মশানে লম্বা লাইনতোমরা মেইন গেট বন্ধ করে শুয়ে পড়ো ।
এবার সোফায় বসে পড়তে লাগলাম মেসেজ -
''------ 
হাই ডার্লিং , আমি সিড তুমি  কিন্তু খুব কিউট খুব ভালো কবিতাও লেখো গুনি মেয়ে, অনেক আশীর্বাদ তোমায়। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন তুমি খুব সুইটি লাল বড় টিপ দারুন''  

আমি মেসেজটা পড়ার পরেই ঢিপ করে মাটিতে বসে পড়লাম একি? ?
আমার টিপের দিকে নজর দেয় কে দেখিতো ব্যাটার  পি পি টা / হ্যাঁ ঠিক ধরেছি ...এই ছবিই তো আমায় একদিন দেখিয়েছিলেন জ্যাঠীমা । ভাবতে ভাবতেই আবার ফোন কর্তার ।।
'' --------শোনো আমরা ফিরে আসছি দারুন খবর আছে সাথে জ্যাঠীমাও আসছেন   হাসপাতাল হয়েই ফিরবো । শ্মশানে  হঠাৎ শ্যামলের  ফোনে রিং হচ্ছিল  ''ওপারে তুমি শ্যাম এপারে আমি ...।''  আর সেই সুর মরা  জ্যাঠইমার কানে পৌঁছেই  কি ভাবে যে কি হয়ে গেল ।আমরা  কিছু বোঝার আগেই জ্যাঠীমা উঠে বসে পড়েছে বলে কিনা
 ‘---------------- --কে ফোন করেছে রে? সিড নাকি এ আমি কোথায় এসেছি ?' 
শোনো সুখবরটা সিধু জ্যাঠাকে দিয়ে এসো ডার্লিং তবে এই ‘সিডের’  কথা বলনা জ্যাঠাকে যেন জ্যাঠীমা নিষেধ করে দিলেন বলতে । তাছাড়া জ্যাঠা যা সেন্সলেস হয়ে পড়ছিলেন বার বার । ''
ফোন কেটে যাবার পর আমার আর কিছুই মনে নেই ...।
এখন চোখ খুলে দেখছি একদিকে জ্যাঠীমা মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর একদিকে জ্যাঠা তাকিয়ে আছে জ্যাঠীমার আর আমার দিকে । আর আমার গুনধর ছেলে ? যে কিনা আমায় ফেসবুক একাউনট খুলে দিয়েছিল সে শুধুই হাসে আর হাসে আর হাসে ...... ।। আমি শুধাই ----------
এখন কটা বাজে ???????






No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া