দিয়াদের দিনকি আজও শেষ হয়েছে ? একটাই প্রশ্ন দিয়ার মনে জেগে ওঠে বার বার—উত্তর খুজে চলে দিয়া – হয়তো কোথাও শেষ হয়েছে, কোথাও আজও দিয়ারা যুদ্ধ করে চলেছে- তবুও তারা ঘরের আগল খুলে বেরিয়ে আসতে পেরেছে—ঘরে বাইরে সমান ভাবে লড়াই করে চলেছে আজকের দিয়ারা—
আজ তাদের এ কথা অন্তত শুনতে হয়না সারাদিন পরিশ্রমের পর ঘরের সবচেয়ে কাছের মানুষটির কাছে –‘ সারাদিন তো ঘরেই বসে থাকো –রোজগার তো আর করতে হয়না ‘। অথচ রোজগার করার পথ যে ঘরের পুরুষরাই সংসার করার জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য করতেন তা তারা ভুলেই যান। তখন পিতৃবাক্য তাদের কাছে বেদবাক্য হয়ে যায়—স্ত্রীর অপমান , লাঞ্ছনা, যন্ত্রণা সবই তাদের কাছে নিতান্তই মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের এই লাঞ্ছনা সহ্য করতে করতে একদিন দিয়ার মতন সহনশীল মেয়ের চোখেও আগুন জ্বলে ওঠে—যখন দেখে স্বামী তার পরনারীতে আসক্ত। সেদিন দিয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় --- বেরিয়ে আসে ঘরের আগল খুলে—নিজের পায়ের তলায় একটা মাটি পাওয়ার জন্য আপ্রাণ লড়াই করে—সেই সাথে চলে মেয়েদের মানুষ করে তোলার এক অদম্য প্রয়াস—
তারপর একসময় দিয়া সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে—যদিও স্বামীর থেকে তার ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে—কিন্তু সাফল্যের চাবিকাঠি তার হাতে আসতে থাকে। স্বামীর মধ্যে কোনোদিনই সে ভালোবাসা খুঁজে পায়নি তাই আজ ও নিয়ে তার নতুন করে কষ্ট পায়না—কিন্তু এক তীব্র অপমানে তার নারীসত্বা জ্বলতে থাকে—দিনের পর দিন স্বামী যখন পরস্ত্রীকে নিয়ে তারই চোখের সামনে বিদেশ বেড়াতে যায় বা ছুটির দিনগুলি কাটায় তার সাথে কখনও রায়চক বা ডায়মণ্ডহারবারে বা কখনও লংড্রাইভে--।
এমন কি দিয়া অপরেশন হয়ে পড়ে আছে নার্সিংহোমে—বড়মেয়ের বি এ পার্ট-১ পরীক্ষা- তার স্বামী তাকে দেখতে আসে ভিজিটিং আওয়ারের প্রায় শেষ পর্যায়- স্কার্ট পরা বান্ধবীকে সাথে নিয়ে—না সেদিনও দিয়া কাঁদেনি—চোখের জল তার শুকিয়ে গেছে –শুধু তীব্র অপমান বোধে ভিতরটা জ্বলতে থাকে আগুনের মতন—
প্রতিশোধের আগুন-।
দিয়া শুরু করে একটি বুটিক – সামান্য কিছু মুলধন সম্বল করে নামে কাজে—কিছু সুন্দর শাড়ী বানায়- তারপর বিভিন্ন কাগজের অফিসে গিয়ে তার শাড়ি দেখায়—নিয়মিত প্রতিবেদন বার হতে শুরু করে – ক্রমশ জমে উঠতে থাকে ব্যাবসা—ব্যাঙ্কলোন নিয়ে ব্যাবসা অনেক বাড়িয়ে তোলে—দিয়ার ক্রিয়েশন নামে চলতে থাকে তার বুটিক--। এক একটা এক্সিবিশনে তার তিন থেকে চার লাখ টাকার শাড়ী বিক্রি হতে থাকে--। স্বনির্ভর হল দিয়া- দেখিয়ে দিল দিয়া তার স্বামীকে রান্নাঘরের বাইরেও সে কিছু করতে পারে আবার সবাইকে নিয়ে সংসারও করতে পারে। স্বামী তাকে একদিন সবার সামনে অপমান করে বলেছিল ওই রান্নাটা ভালো কর ওটা নিয়েই থাকো ওর বাইরে আর কিছু করার চেষ্টা কোরোনা--। কিন্তু দিয়া দেখিয়ে দিল তিন শ্বশুর দেয়র,ননদ, তাদের বিয়ে দেওয়া—বাচ্ছা হওয়া, মেয়েদের মানুষ করেও নিজের পায়ের তলায় মাটি করে নিল।দিয়ার বড় মেয়ে তখন দিল্লী স্কুল অফ ইকনোমিক্স থেকে পঞ্চম স্থান অধিকার করে মাস্টারস শেষ করে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ থেকেই ৭০হাজার টাকা মাইনের চাকরি পেয়ে যায় আর ছোটো মেয়েও উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়ে সেন্টজেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হয়—সেদিন দিয়ার চোখ ভর্তি জল হয়ে যায় না সে তার যুদ্ধ বৃথা যায়নি – সে সফল হয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে তীব্র হতাশায় ডুবে যেত – যে স্বামীর সংসারের জন্য জীবনের সোনালী দিনগুলিকে , নিজের সমস্ত ইচ্ছাকে গলা টিপে মেরে ফেলে প্রাণ দিয়ে সংসার করে গেছে- সে স্বামী আজ পরনারীতে আশক্ত- এই অপমানটা মেনে নিতে তার বুক ভেঙে যেত –স্বামীর নিত্য অবহেলা, মহিলা বান্ধবীদের নিয়ে স্ত্রীর সামনেই নির্লজ্জ উন্মত্ততা তাকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment