"বাজারের
কাছেই ওনার বাড়ি। খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।" ----
এটাই বলেছিল নিরঞ্জন আমাকে। নিরঞ্জন আমার অফিস পার্টনার। সেইমতো বাজারের এক মাছওয়ালাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , " দাদা, নিশিকান্তবাবুর বাড়িটা কোথায় জানেন?" লোকটা আমাকে ফেলুদার দৃষ্টিতে আগাপাছতলা দেখলো, তারপর বললো, " থাকেন কোথায় , ওনার বাড়ি চেনেন না!" বুঝলাম নিশিকান্তবাবু বেশ ফেমাস এলাকায়। আমতা আমতা করে বললাম, " সত্যিই চিনি না। আমি হরিদেবপুর থেকে আসছি।"
---- ভাগ্যিস চেনেন না, তাই। নাহলে আর আসার নাম করতেন না।
---- কেন, এরকম বলছেন কেন?
---- সে অনেক কারণ আছে।
এটাই বলেছিল নিরঞ্জন আমাকে। নিরঞ্জন আমার অফিস পার্টনার। সেইমতো বাজারের এক মাছওয়ালাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , " দাদা, নিশিকান্তবাবুর বাড়িটা কোথায় জানেন?" লোকটা আমাকে ফেলুদার দৃষ্টিতে আগাপাছতলা দেখলো, তারপর বললো, " থাকেন কোথায় , ওনার বাড়ি চেনেন না!" বুঝলাম নিশিকান্তবাবু বেশ ফেমাস এলাকায়। আমতা আমতা করে বললাম, " সত্যিই চিনি না। আমি হরিদেবপুর থেকে আসছি।"
---- ভাগ্যিস চেনেন না, তাই। নাহলে আর আসার নাম করতেন না।
---- কেন, এরকম বলছেন কেন?
---- সে অনেক কারণ আছে।
আমার
অত কিছু জানার দরকার নেই। কেননা এই প্রথম, আর হয়তো
এই শেষবার আসা। আমি একটা কুরিয়্যর সংস্থার কর্মী। অনলাইনে মার্কেটিং-এর
বিজনেস করে এমন একটি সংস্থার সঙ্গে আমাদের কোম্পানীর গাঁটছড়া। নিশিকান্তবাবু অনলাইনে একটি কাপড়ের অর্ডার দিয়েছিলেন। কাপড়টির অরিজিনাল দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। উনি ডিসকাউন্ট দিয়ে কাপড়টি পাঁচশো টাকায় পেয়ে গেছেন। আমার হাতে এখন সেই শাড়ির পার্সেলটা। প্যাকেটের গায়ে ওনার ফোন নাম্বারটা আছে। কিন্তু আমার কাছে ফোন নেই। তাড়াহুড়োই সেটা অফিসেই ফেলে এসেছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেছি। কোনও বুথের দেখা পাইনি। অগত্যা ঠিক করলাম, এনাদেরই
ভরসা করতে হবে। ততক্ষণে সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে পাশের মুদির দোকানের লোকটা। এই দুপুরে
বাজারে এমনি খদ্দের কমই থাকে। কিন্তু একটু আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে বলে বাজার শুনশান। ক্রেতার দেখা নেই, আছে শুধু বিক্রেতারা। মাছওয়ালা চুপ। মুদির দোকানদার বললো, " ও, ঐ মাষ্টারের
বাড়ি যাবেন, তা
কি ব্যাপার?" বুঝলাম হাঁড়ির খবর না নিয়ে
কিছুতেই এরা নিশিকান্তবাবুর বাড়িটা দেখাবেন না! বললাম, " আসলে একটা কুরিয়ার ছিল ওনার। ওটাই দিতে এসেছি।"
---- ও, তাই বলি, ওনাকে আবার কার দরকার!
---- ও, তাই বলি, ওনাকে আবার কার দরকার!
সন্তোষপুরে
কিছু মাল ডেলিভারি করেছি। এখন কুরিয়ার
একটাই। এটা হ্যান্ড ওভার করতে পারলেই আজ আমার
ছুটি। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আড়াইটে বাজে। মালটা ডেলভারি দিয়েই একটা হোটেলে খেয়ে নেবো, এই হল প্লান।
কিন্তু নিশিকান্তবাবু লোকটার সম্পর্কে আমিও যেন কৌতূহলী হয়ে উঠছিলাম ধীরে ধীরে।
----- আচ্ছা, কিছু যদি না মনে করেন, একটা কথা বলবো?
----- আচ্ছা, কিছু যদি না মনে করেন, একটা কথা বলবো?
মাছওয়ালা
বেচে যাওয়া দুটো কাতলা জলে ধুয়ে বরফে ফেললো। ওর ঠোঁটে
একটা বিড়ি গোঁজা। তখনও সেটা জ্বালায়নি। মুদির দোকানদার বললো, " না
না, বলেন।"
----- বলছি, নিশিকান্তবাবু সম্পর্কে আপনারা এত ইন্টারেস্টেড কেন?
----- কেন, সেটা বলি, শোনেন।
বাজারের ভেতরে বাড়ি হলেও মাষ্টারমশাই এখান থেকে কোনও কিছুই কেনেন না। না কেনেন সবজি, না কেনেন মাছ-মাংস, না কেনেন মুদির জিনিস।
----- তাহলে বাজার করেন কোথা থেকে?
----- দু' কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে করণ দিঘী হাটে বাজার করতে যান। শুধু খাওয়ার জিনিস না, পড়ার জিনিসও ঐ হাট থেকেই কেনেন! বাজারের কোনও কাপড়-দোকানকদার বলতে পারবেন না, তার কাছ থেকে কোনও দিন মেয়ে-বউয়ের জন্য জামাকাপড় কিনেছেন তিনি।
----- বলছি, নিশিকান্তবাবু সম্পর্কে আপনারা এত ইন্টারেস্টেড কেন?
----- কেন, সেটা বলি, শোনেন।
বাজারের ভেতরে বাড়ি হলেও মাষ্টারমশাই এখান থেকে কোনও কিছুই কেনেন না। না কেনেন সবজি, না কেনেন মাছ-মাংস, না কেনেন মুদির জিনিস।
----- তাহলে বাজার করেন কোথা থেকে?
----- দু' কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে করণ দিঘী হাটে বাজার করতে যান। শুধু খাওয়ার জিনিস না, পড়ার জিনিসও ঐ হাট থেকেই কেনেন! বাজারের কোনও কাপড়-দোকানকদার বলতে পারবেন না, তার কাছ থেকে কোনও দিন মেয়ে-বউয়ের জন্য জামাকাপড় কিনেছেন তিনি।
ভাবলাম, এই জন্যই
এত রাগ আপনাদের ! তার যেখানে পোষাবে, সেখান
থেকেই তো উনি
জিনিস কিনবেন! এটা
তো কোনও ব্যবসাদারের ধর্ম হতে পারে না! কিন্তু কেন জানি না আমার
ভেতরের কথাটা মুদির লোকটা জেনে গেছে! সে আবার বলতে শুরু করলো , " তাতে
আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু উনি ওনার ভাড়াটেকেও হাট থেকেই জিনিস কিনে আনতে পরামর্শ দেবেন! একজন মাষ্টার মানুষ। এটা ভাববেন না, যে আমরা দুটো করে খাচ্ছি।.... ওনার
বাড়িতে ভিখারিও যায় না, জানেন! চাঁদা কাটতে গেলে ক্যাচাল বাঁধে পাড়ার ছেলেদের সাথে। সেল্সম্যান যাতে না ঢোকে
বাড়ির বাইরে কাগজ টানিয়ে রেখেছেন। আর পোষা
কুত্তার ভয়ে পাড়াপড়শিও ও বাড়ি
ঢোকার সাহস পায় না। তাই আপনার যাওয়ার খবরেই অবাক হচ্ছিলাম।"
বুঝলাম
তার কোনও ভাড়াটে তার সম্পর্কে নানা কথা বলে বাজার-ব্যবসায়ীদের
কান ভারি করেছেন। এর পেছনে
হয়তো কোনও প্রতিশোধ পরায়ণতা কাজ করে থাকবে। কিন্তু আমি কোনও ডিটেকটিভ না যে
সেসব উত্তর খুঁজতে যাবো।
এটা
বোঝা যাচ্ছে, নিশিকান্তবাবু
খরচাপাতি বুঝে করেন। পয়সার কার্পণ্য করতে অনেক লোককেই দেখেছি। তাবলে নিশিকান্তবাবুকে আর আলাদা
করে দেখার কি আছে!
----- শুনুন, উনি একটু কৃপণ। তাই বলে আপনারা এরকম অসহযোগিতা করবেন ওনার সঙ্গে !
----- অসহযোগিতা? উনি কোন সহযোগিতাটা করেছেন আমাদের সঙ্গে?
----- শুনুন, উনি একটু কৃপণ। তাই বলে আপনারা এরকম অসহযোগিতা করবেন ওনার সঙ্গে !
----- অসহযোগিতা? উনি কোন সহযোগিতাটা করেছেন আমাদের সঙ্গে?
দেখলাম
আমার কথায় লোকটা বেশ চটে গেল। তাই মলম দেওয়া প্রয়োজন মনে করলাম। বললাম, " দাদা, আমি এসবের বিস্তারিত কিছুই জানি না। হয়তো আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা করবেন। ওনার বাড়িতে আমার বিশেষ কাজ নেই। শুধু এই মালটা
দিয়েই চলে আসবো। তাই বাড়িটা...।"
কথাটা
শেষ করতে দিল না মাছওয়ালা। -----
" সান্টু, ছাড়তো। ঐ যে
লাল-সবুজ রঙের বাড়িটা দেখছেন, ওটা।
যাবেন, চলে আসবেন।
বেশি খিল্লি করতে যাবেন না। তাহলে....।"
বুঝলাম 'দু:খ' আছে।
(২)
চারিদিকে
পাঁচিল দেওয়া পাঁচ-ছ কাঠার উপরে বাড়িটা। দোতলা। সামনে দু দিকে
দুটো করে সুপারি গাছ লাগানো। গেট খুলে ভেতরে ঢুকে কলিং বেলটা বাজালাম। অমনি কানে গেল কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ। তারপর বাঁদিকে খেয়াল করতেই দেখলাম নেমপ্লেটে 'নিশিকান্ত
গোলদার'। আরেকটু ওপরে কোনাকুনি ডানদিকে লেখা 'কুকুর হইতে সাবধান'।
সমানে কুকুরটা ডেকে চলেছে।
আমার কুকুরে ভীষণ ভয়। ছেলেবেলায় সতুদের পোষা কুকুরটা একবার কামড়ে দিয়েছিল পায়ে। চোদ্দটা ইঞ্জেকশান নিতে হয়েছিল নাভির চারিদিকে। ওভাবে কুকুরের ডাকটা শুনে নাভির চারিদিকে আবার ব্যথাটা অনুভব করলাম। চিনচিন করছে। এখান থেকে না বেরোলে ব্যথা কমবে না, বুঝতে পারলাম। হঠাৎ রাশভারী একটা গলার আওয়াজ, " বিল্টু, কুকুরটা চিলেকোঠায় বেঁধে রেখে আয়তো।" ধড়ে প্রাণ এল কথাটা শুনে। চিনচিনে ব্যথাটা মনে হল একটু কমের দিকে ।
তবে চিলেকোঠায় কুকুর বেঁধে রাখার কথায় চিলেকোঠা নিয়ে আমার পুরনো স্মৃতি উসকে উঠলো। আমার পিসির বাড়ি চিলেকোঠায় আমরা যখন খুব ছোট, কতো কি খেলতাম! চাইনিস চেকার, লুডো, বাঘবন্দি কতো কি! একবার চোর-পুলিস খেলতে খেলতে "চোর ধরেছি, "চোর ধরেছি" বলে রীনাকে চেপে ধরেছিলাম বুকের সাথে। ওর খুব লেগেছিল। সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলেছিল ও। পরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছিলাম আমিই। রীনা তখন আমার সাথেই ক্লাস ফোরে পড়তো। এখন রীনাকে বুকের সঙ্গে চিপটে ধরে রাখলেও ও কাঁদে না। হেসে ওঠে। আর তখনই ডান গালে একটা টোল পড়ে। খুব সুন্দর দেখায় ওকে।
আমার কুকুরে ভীষণ ভয়। ছেলেবেলায় সতুদের পোষা কুকুরটা একবার কামড়ে দিয়েছিল পায়ে। চোদ্দটা ইঞ্জেকশান নিতে হয়েছিল নাভির চারিদিকে। ওভাবে কুকুরের ডাকটা শুনে নাভির চারিদিকে আবার ব্যথাটা অনুভব করলাম। চিনচিন করছে। এখান থেকে না বেরোলে ব্যথা কমবে না, বুঝতে পারলাম। হঠাৎ রাশভারী একটা গলার আওয়াজ, " বিল্টু, কুকুরটা চিলেকোঠায় বেঁধে রেখে আয়তো।" ধড়ে প্রাণ এল কথাটা শুনে। চিনচিনে ব্যথাটা মনে হল একটু কমের দিকে ।
তবে চিলেকোঠায় কুকুর বেঁধে রাখার কথায় চিলেকোঠা নিয়ে আমার পুরনো স্মৃতি উসকে উঠলো। আমার পিসির বাড়ি চিলেকোঠায় আমরা যখন খুব ছোট, কতো কি খেলতাম! চাইনিস চেকার, লুডো, বাঘবন্দি কতো কি! একবার চোর-পুলিস খেলতে খেলতে "চোর ধরেছি, "চোর ধরেছি" বলে রীনাকে চেপে ধরেছিলাম বুকের সাথে। ওর খুব লেগেছিল। সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলেছিল ও। পরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছিলাম আমিই। রীনা তখন আমার সাথেই ক্লাস ফোরে পড়তো। এখন রীনাকে বুকের সঙ্গে চিপটে ধরে রাখলেও ও কাঁদে না। হেসে ওঠে। আর তখনই ডান গালে একটা টোল পড়ে। খুব সুন্দর দেখায় ওকে।
এসব
ভাবতে গিয়ে সত্যিই নাভির ব্যথাটা আর নেই।
কোলাপসিবল গেট খোলার আওয়াজ পেলাম। সামনেই দেখলাম এক মাঝবয়েসী
ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। ইনি নিশ্চই নিশিকান্তবাবু হবেন।
বললাম," আপনিই নিশিকান্তবাবু? "
উত্তর এল, " হ্যাঁ"।
---- একটা ক্যুরিয়ার ছিল আপনার।
---- কিসের ক্যুরিয়ার ভাই?
---- আপনি অনলাইনে একটা শাড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন, সেটাই...
---- ও আচ্ছা। এতো তাড়াতাড়ি চলে এল!
---- হ্যাঁ, আমাদের ডেলিভারি ডেট যেদিন থাকে, তার আগেই আমরা মাল পৌঁছে দি ক্রেতার কাছে।
---- বেশ বেশ। তা বসুন।
উত্তর এল, " হ্যাঁ"।
---- একটা ক্যুরিয়ার ছিল আপনার।
---- কিসের ক্যুরিয়ার ভাই?
---- আপনি অনলাইনে একটা শাড়ির অর্ডার দিয়েছিলেন, সেটাই...
---- ও আচ্ছা। এতো তাড়াতাড়ি চলে এল!
---- হ্যাঁ, আমাদের ডেলিভারি ডেট যেদিন থাকে, তার আগেই আমরা মাল পৌঁছে দি ক্রেতার কাছে।
---- বেশ বেশ। তা বসুন।
বসার
কথা শুনেই মাছওয়ালার কথাটা মনে পড়লো, " বেশি
খিল্লি করবেন না।" দরকার
নেই আমার ঝামেলায় জড়ানোর। বললাম, " না মানে, আপনি এই কাগজটাই
একটা সই করে
দিন, আমি চলে যাই।"
ইতিমধ্যে
ওনার ছেলে, মেয়ে, বউ এসে
হাজির। মনে হল এই
প্রথমবার অনলাইনে জিনিস কিনছেন। আমার কথাটাই যে ঠিক
তা প্রমাণ করলেন নিশিকান্তবাবু।
---- আসলে আপনি বসলে জিনিসটা দেখে নিতে পারতাম। অনলাইনে তো এর আগে কেনাকাটা করিনি, তাই আর কি।
---- ঠিক আছে আমি বসছি।
---- আসলে আপনি বসলে জিনিসটা দেখে নিতে পারতাম। অনলাইনে তো এর আগে কেনাকাটা করিনি, তাই আর কি।
---- ঠিক আছে আমি বসছি।
পাশেই
একটা প্লাস্টিকের চেয়ার রাখাছিল, ওটাতেই
বসে পড়লাম। নিশিকান্তবাবু প্যাকেটটা গিন্নিকে দিলেন।
-----খুলে দেখো তো, ঠিক আছে কিনা।
ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, " তা থাকেন কোথায়?"
---- হরিদেবপুর।
---- ছোটন সমাদ্দারকে চেনেন?
---- চিনি।
---- ও আমার ভাইরা হয়।
---- ও।
-----খুলে দেখো তো, ঠিক আছে কিনা।
ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, " তা থাকেন কোথায়?"
---- হরিদেবপুর।
---- ছোটন সমাদ্দারকে চেনেন?
---- চিনি।
---- ও আমার ভাইরা হয়।
---- ও।
ছোটন
সমাদ্দার এলাকার পরিচিত মুখ। আগে জমির দালালি করতো, এখন লাইন চেঞ্জ করে ঠিকাদারির ব্যবসা শুরু করেছে। একদিনে হয়নি সেসব। এরজন্য জার্সিও বদল করেছে কয়েকবার। দোতলা বাড়ি হাঁকিয়েছে হরিদেবপুরে। আগে টাটার ন্যানো ছিল একটা। লালা রঙের। হালে সেটা বেচে দিয়ে মারুতি অলট্র কিনেছে। ন্যানোতে তার আপত্তি না থাকলেও, অন্য কারও আপত্তি ছিল নিশ্চয়। ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, এল ই
ডি টিভি সব কিছু
দিয়েই ভরিয়ে ফেলেছে ঘর। কি নেই!
---- ওর
এখন ব্যাপারই আলাদা। বাড়িতে কোনও কিছুরই অভাব নেই।
কথাটা
কানে গেছে নিশিকান্তবাবুর গিন্নীর।
---- তুমি কার কথা বলছো?
---- ঐ আমাদের ছোটনের।
---- ও চেনে নাকি ছোটনকে?
---- হ্যাঁ, একই গ্রামে বাড়ি তো।
---- তুমি কার কথা বলছো?
---- ঐ আমাদের ছোটনের।
---- ও চেনে নাকি ছোটনকে?
---- হ্যাঁ, একই গ্রামে বাড়ি তো।
ব্যস্, নিশিকান্তবাবুর গিন্নীর শাড়ি দেখা মাথায় উঠলো। শাড়িটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে খাটের উপর রাখলেন। আমি নিশ্চিত হলাম, কোনও ডিসপুট নেই তবে। তারপর বললেন, " তুমি ওদের সবাইকে চেনো?"
---- চিনি।
---- ওর বৌ সন্ধ্যা, আমার পরের বোন।
---- ও আচ্ছা।
---- ওদের বাড়িতে ঢুকেছো কখনও ?
---- না। সেভাবে পরিচয় নেই, তাই আর কি...।
---- চিনি।
---- ওর বৌ সন্ধ্যা, আমার পরের বোন।
---- ও আচ্ছা।
---- ওদের বাড়িতে ঢুকেছো কখনও ?
---- না। সেভাবে পরিচয় নেই, তাই আর কি...।
তবে
ছোটন সমাদ্দারের দোতলা বাড়ির ছাদে সারাক্ষণ একটা অ্যালশেসিয়ান একবার এ মাথা, আরেকবার ও মাথা
ঘুরে বেড়ায়। দেখেছি। নিচ থেকেই তা দেখা
যায়। সেটা আর বললাম
না।
---- আচ্ছা, তুমি যখন ছোটনদের গ্রামের লোক, একটু চা খেয়ে যাও।
আমি আপত্তি করলাম। শুনলেন না। উনি উঠতে যাবেন, নিশিকান্তবাবু বললেন, " শোনো, তুমি ব'সো, আমি চা করে আনছি।"
---- আচ্ছা, তুমি যখন ছোটনদের গ্রামের লোক, একটু চা খেয়ে যাও।
আমি আপত্তি করলাম। শুনলেন না। উনি উঠতে যাবেন, নিশিকান্তবাবু বললেন, " শোনো, তুমি ব'সো, আমি চা করে আনছি।"
নিশিকান্তবাবু
রান্নাঘরের দিকে গেলেন। আমি ঘড়ি দেখছি। দশ মিনিট
হয়ে গেছে। নিশ্চয় দাঁত খিঁচোচ্ছে ঐ মাছওয়ালাটা।
আমার তো কোনও
দোষ নেই। ঐ ছোটন
সমাদ্দারের জন্যই তো আঁটকে
গেলাম। কি দরকার
ছিল ওর আমাদের
গ্রামেই বাড়ি করার!
----- ছোটনদের
বাড়িতে আমি অনেকদিন যাই না, জানো। যাবো কি করে
একটা প্রেস্টিজ আছে তো!
কিছু
বললাম না। বুঝলাম আগে কোনও বিষয়ে অপমানিত হয়েছিলেন হয়তো। তাই এসব বলছেন। কিন্তু তা শুনে
আমার কি লাভ? আর আমাকে
বলে তারই বা কি
লাভ? লাভ ওনার হয়েছে ঐ শাড়িতে।
তিন হাজার টাকা। বাইরে থেকে কিনলে ঐ শাড়ির
দাম সাড়ে তিন পড়তো। একদিনের ছিল অফারটা। ভাগ্য ভালো।
---- ওদের
বাড়ি যদি কোনও সময় যাও, দেখবে কোনও জিনিসের অভাব নেই! সব আছে সব।
---- হ্যাঁ, তা শুনেছি।
---- এটাই খারাপ লাগে জানো, হিংসা করছি না। ও আমার বোন। আমাকে দেখেশুনে এক মাস্টারের হাতে দিয়েছিল বাবা দাদারা। কিন্তু সন্ধ্যা প্রেম করে বিয়ে করেছিল ছোটনকে। যে ছোটনের চালচুলো কিছু ছিল না। বাড়ির সবারই অমত ছিল। কারওর সাথেই যোগাযোগ ছিল না বহুদিন। একবার দুর্গা পুজোয় ঠাকুর দেখতে গিয়ে প্যান্ডেলে দেখা। জোর করে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। ছোটন তখন দালালি করতো। জমিবাড়ির। কিছুই ছিল না তখন। ভাঁড়াবাড়িতে থাকতো। ঘরে একটা তক্তাপোষ ছিল। আর একটা চেয়ার। আলনা, ডেসিনটেবিল, আলমারি পর্যন্ত না। খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল। এখন ওর বাড়ি কি নেই! আমাদেরই লজ্জা লাগে। তোমার কাকুকে তো বলেছি, ও পারলে তুমি কেন পারবে না!
---- হ্যাঁ, তা শুনেছি।
---- এটাই খারাপ লাগে জানো, হিংসা করছি না। ও আমার বোন। আমাকে দেখেশুনে এক মাস্টারের হাতে দিয়েছিল বাবা দাদারা। কিন্তু সন্ধ্যা প্রেম করে বিয়ে করেছিল ছোটনকে। যে ছোটনের চালচুলো কিছু ছিল না। বাড়ির সবারই অমত ছিল। কারওর সাথেই যোগাযোগ ছিল না বহুদিন। একবার দুর্গা পুজোয় ঠাকুর দেখতে গিয়ে প্যান্ডেলে দেখা। জোর করে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। ছোটন তখন দালালি করতো। জমিবাড়ির। কিছুই ছিল না তখন। ভাঁড়াবাড়িতে থাকতো। ঘরে একটা তক্তাপোষ ছিল। আর একটা চেয়ার। আলনা, ডেসিনটেবিল, আলমারি পর্যন্ত না। খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল। এখন ওর বাড়ি কি নেই! আমাদেরই লজ্জা লাগে। তোমার কাকুকে তো বলেছি, ও পারলে তুমি কেন পারবে না!
এটাই
হল আসল কথা। ছোটন সমাদ্দার পারলে নিশিকান্ত গোলদার কেন পারবে না! রহস্যটা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছি। বাড়ির পাশের বাজার ছেড়ে তিনি কেন যান কয়েক কিলোমিটার দূরের হাটে। তিল তিল করে তার পয়সা বাঁচানো কি আর
এমনি?
ইতিমধ্যে
নিশিকান্তবাবু চা-বিস্কুট নিয়ে হাজির। প্লেটে দুটো ব্রিটানিয়া বিস্কুট দিয়ে কাপটা বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। ওনার গিন্নী দেখলাম একবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে নিশিকান্তবাবুর দিকে আবার তাকালেন। বোঝা গেল উনি বলতে চায়লেন, একটা
বিস্কুট দিলেই তো চলতো! এরজন্য আমি হাওয়া না হয়ে
যাওয়া পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করবেন গিন্নী। তারপর পিন্ডি চটকাবেন নিশিকান্তবাবুর। আমি শুধু চায়ের কাপটা তুলে নিলাম।
---- কেন
বিস্কুট খাবে না?
বললেন নিশিকান্তবাবু
---- না, আমি চায়ের সাথে বিস্কুট খাই না। মুখ টক হয়ে যায়।
---- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, আমারও মুখ টক হয়ে যায়। দুধ চা তো একদমই খেতে পারি না। খেলে ঐ লিকার, বিস্কুট ছাড়া।
এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন নিশিকান্তবাবুর মিসেস।
বললেন নিশিকান্তবাবু
---- না, আমি চায়ের সাথে বিস্কুট খাই না। মুখ টক হয়ে যায়।
---- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, আমারও মুখ টক হয়ে যায়। দুধ চা তো একদমই খেতে পারি না। খেলে ঐ লিকার, বিস্কুট ছাড়া।
এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন নিশিকান্তবাবুর মিসেস।
---- আমার
বাড়ি খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি তো?
নিশিকান্তবাবু আমার মুখের দিকে চেয়ে রয়েছেন প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য।
বললাম, " না, তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে....।"
---- তবে কি?
---- বাজারে আপনার নাম করতেই কয়েকজন....
---- দুর্নাম করলো, তাই তো?...
ওরা, আমার বাড়িতে যেই আসে, তাকেই উল্টোপাল্টা বলে আমার সম্পর্কে। আচ্ছা, তুমিই বলো, হাট থেকে আমি টাটকা শাকসবজি পাই। দামও কম। নেবো না কেন? মাছের দাম কম। মাংসের দাম কম। যদি পাঁচ টাকা কম পড়ে, সেটা তো আমারই লাভ! একটা প্রাইমারি টিচার এক জীবনে আর কতো কি করতে পারে, বলো তো? দোতলা হাঁকিয়ে এসব জিনিসপত্র করা কি চাড্ডিখানি কথা? তাও তো এখনও অনেক বাকি আছে!
নিশিকান্তবাবু আমার মুখের দিকে চেয়ে রয়েছেন প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য।
বললাম, " না, তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে....।"
---- তবে কি?
---- বাজারে আপনার নাম করতেই কয়েকজন....
---- দুর্নাম করলো, তাই তো?...
ওরা, আমার বাড়িতে যেই আসে, তাকেই উল্টোপাল্টা বলে আমার সম্পর্কে। আচ্ছা, তুমিই বলো, হাট থেকে আমি টাটকা শাকসবজি পাই। দামও কম। নেবো না কেন? মাছের দাম কম। মাংসের দাম কম। যদি পাঁচ টাকা কম পড়ে, সেটা তো আমারই লাভ! একটা প্রাইমারি টিচার এক জীবনে আর কতো কি করতে পারে, বলো তো? দোতলা হাঁকিয়ে এসব জিনিসপত্র করা কি চাড্ডিখানি কথা? তাও তো এখনও অনেক বাকি আছে!
মনে
হল লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন গিন্নী। তিনি একে একে সব মিলিয়ে
দেখছেন। চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম। কালার টিভি, গোদরেজ আলমারি, শোকেস।
এখনও কিছু বাকি আছে হয়তো, যেটা ছোটন সমাদ্দারের বাড়িতে আছে। বেশ অবাক লাগলো। শুধু গিন্নীর চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নিশিকান্তবাবু দিবানিশি পার করে দেন! 'বউ পাগলা' বলে
গ্রামে-গঞ্জে এখনও একটা কথা চালু আছে। আজ তার
প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমার সামনে বসে। নিজের
প্রকৃত পরিচয় সিন্দুকে চাবি দিয়ে একটা লোক কিভাবে যুঝে চলেছে 'কিপটে
তকমায়' নিজেকে তুলে ধরে।
---- আমি
আমার নিচতলার ভাড়াটেকেও বলেছি, একটু
কষ্ট করে হাটে গেলে দশ-বিশ টাকা সেভ হয়। কিন্তু ও শুনলে
তো আমার কথা!
নিজের
গিন্নীই শোনে না, তারপর তো ভাড়াটে! কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কাছে বেশ অদ্ভুত ঠেকলো। অনেকক্ষণ আছি। কুকুরটার কোনও আওয়াজ শুনতে পারছি না। যখন ঢুকেছিলাম, আত্মারাম
খাঁচাছাড়া হওয়ার যোগাড় হয়েছিল। পেটে ব্যথা অনেকক্ষণ নেই। বিল্টুকে কুকুরটা চিলেকোঠায় বেঁধে রেখে আসতে বলেছিলেন নিশিকান্তবাবু। বিল্টু অনেকক্ষণ থেকেই পাশের ঘরে কার্টুন দেখছে। কিন্তু কুকুরটা গেল কোথায়?
বলেই
ফেললাম, " আচ্ছা কাকু, আপনাদের কুকুরটা তো আর
ডাকছে না! "
---- এখন
আর ডাকবে না। আবার লোক আসলে ডাকবে।
---- মানে?
---- মানে, তোমার কাকিমার আর একটা শখ হল, ছোটনদের বাড়ির ছাদে যে অ্যালশেসিয়ানটা ঘুরে বেড়ায়, ঐ রকম একটা অ্যালশেসিয়ান আমাদের ছাদেও পায়চারি করুক।
---- সে তো ভালো কথা।
---- হ্যাঁ, ভালো কথাই। তবে এই মুহূর্তে তো হচ্ছে না, তাই বাজারের সিডি ক্যাসেটের দোকান থেকে কুকুরের আওয়াজটা রেকর্ড করে এনেছি। কলিং বেলে চাপ পড়লেই, যেই হোক, ওই রেকর্ডটা বাজিয়ে দেয়।
---- মানে?
---- মানে, তোমার কাকিমার আর একটা শখ হল, ছোটনদের বাড়ির ছাদে যে অ্যালশেসিয়ানটা ঘুরে বেড়ায়, ঐ রকম একটা অ্যালশেসিয়ান আমাদের ছাদেও পায়চারি করুক।
---- সে তো ভালো কথা।
---- হ্যাঁ, ভালো কথাই। তবে এই মুহূর্তে তো হচ্ছে না, তাই বাজারের সিডি ক্যাসেটের দোকান থেকে কুকুরের আওয়াজটা রেকর্ড করে এনেছি। কলিং বেলে চাপ পড়লেই, যেই হোক, ওই রেকর্ডটা বাজিয়ে দেয়।
আমি
হাসবো কি না
বুঝতে পারলাম না। কিন্তু যেহেতু হাসির কথা দাঁতগুলো এমনিই বেরিয়ে গেল।
হঠাৎ
কানে বাজলো কথাটা, "বেশি খিল্লি করবেন না।"
---- কাকু, আসি তাহলে, ভালো থাকবেন।
---- কাকু, আসি তাহলে, ভালো থাকবেন।
নিশিকান্ত
গোলদার মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। কাঁধের ব্যাগটা ঠিক করে পা বাড়াতেই
কলিং বেলের শব্দ। অমনি কুকুরের ডাক শুরু হল। কিন্তু বুক ঢিপঢিপ বা চিনচিনে
ব্যথাটা সত্যিই নেই।
বাহ! বেশ ভালো লাগলো
ReplyDelete