সে অনেকদিন আগের কথা। ষাটের দশকের মাঝামাঝি কোন এক বছরে দুর্গাপুজোর শেষ,
আবার কালী পুজো শুরু হতে এখনো কয়েকদিন বাকী। সেই সময়ে একদিন আমি আর আমার
স্কুলের সহপাঠী বন্ধু বাপ্পা, ছুটির এই কটা দিন কি কি দুষ্টমি করে কাটানো
যায়, তাই ভাবছি। এমন সময়ে বাপ্পা বললে, "চল যাই, তুই আর আমি দুজনে আমার
মামার বাড়ি গিরিডিতে ঘুরে আসি ক'দিন।" আমিতো অবাক! বললাম, " বাহ! গিরিডি
যেতে পারলে তো ভীষণ মজা হবে, কিন্তু তা কি করে সম্ভব ? অত দূরে তোর
সঙ্গে আমার বাবা মা আমাকে ছাড়বে কেন? আর তোর বাড়ি থেকে কি তোকে একা
ছাড়বে?" বাপ্পা বললো, সে নাকি গত দু-তিন বছর ধরে একাই গিরিডি যায়। আমি যে
সময়ের কথা বলছি তখন একজন সতেরো কিম্বা আঠারো বছরের ছেলের এখনকার ছেলেদের
মত এতটা স্বাধীনতা ছিল না।
যাই হোক বাপ্পার বাবা বাণেশ্বর কাকু আমার বাবার বিশেষ বন্ধু ছিলেন, তাই
তাঁর পক্ষে আমার বাবাকে রাজী করাতে বিশেষ দেরী হল না। অবশ্য বাপ্পার
মামার বাড়িতে এখন আর তেমন কেউ থাকে না। ওর বড় মামা তার দাদুর অর্থাৎ
বাপ্পার প্রমাতামহ'র তৈরী ওদের তিন পুরুষের ওই গিরিডির বাড়িটা দেখাশোনা
করতেন। সেই মামা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে, মামাতো দাদারা সবাই জীবিকার
সন্ধানে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বাপ্পার বড় মামীমা এখনও সেই বাড়ি ঘর
সম্পত্তি সব আগলে রেখেছেন। আমি কখনও কলকাতার বাইরে অতদুরে কোনদিন যাইনি।
আর বাবা-মাকে ছেড়ে একা যাওয়া্র তো কোন প্রশ্নই ওঠে না।
সেই যুগে মোবাইল ফোন দুরের কথা, আমরা যে এলাকায় থাকতাম সেই পাড়ায় ল্যান্ড
লাইন ফোনও আমাদের গোটা পাড়াতে একজনেরও ছিল না। বাপ্পা বলল, "মামীমাকে
চিঠি দিয়ে, তার উত্তর পেতে পেতেই দশ বারোদিন কেটে যাবে, তার চেয়ে চল হটাৎ
গিয়ে মামীমাকে সারপ্রাইজ দেবো।" যথারীতি অক্টোবর মাসের শেষ দিকে এক
রবিবার দুপুর নাগাদ হাওড়া স্টেশনের আট নং প্লাটফর্ম থেকে ছাড়লো আমাদের
ট্রেন। কয়লায় চলা বিশাল কানাডিয়ান স্টিম ইঞ্জিনের এক্সপ্রেস ট্রেন। সেই
সময়ে ট্রেনের তিনটে ক্লাশ ছিল। ফার্স্ট, সেকেন্ড আর থার্ড ক্লাশ। আমরা
অবশ্যই থার্ড ক্লাশের যাত্রী ছিলাম। নামেই এক্সপ্রেস ট্রেন, বসার জন্য
খুবই সাধারণ মানের কাঠের আসন। তবে ট্রেনে তেমন ভিড় না থাকায় আমরা দুজন
জানালার ধারে দুটো মুখোমুখি চেয়ারে বসলাম। ট্রেনে জানালার ধারে বসার
জায়গা পাওয়ার আনন্দই আলাদা। আবার জানালার ধারে বসার বিড়ম্বনাও ছিল
যথেষ্ট, প্রতি মুহুর্তে কয়লার গুঁড়ো উড়ে এসে চোখে পড়ার ভয়। তবুও সেই বয়সে
জীবনে প্রথম কারও শাসন ছাড়া একা বন্ধুর সঙ্গে দূর ভ্রমণ। তাই এক অব্যক্ত
আনন্দে কয়লার গূড়োর মত তুচ্ছ জিনিসকে উপেক্ষা করে দুজনে গল্প করতে করতে
যাত্রা শুরু করলাম। তবে সঠিক সময়ে ছাড়লেও প্রথম থেকেই ট্রেনটি মাঝে মাঝেই
কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ছিল।
অবশ্য সে কারনে আমার বিদেশ ভ্রমণের আনন্দের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। বরং আমি এই
মন্থর যাত্রাটাকে বেশ উপভোগই করছিলাম। এই ভাবে ট্রেনটি থামতে থামতে
ব্যান্ডেল, বর্ধমান, দুর্গাপুর পার হয়ে আসানসোল পৌঁছুতেই বেলা পাঁচটা,
মানে বেশ সন্ধ্যে হয়ে গেল। আমার তো ভারি মজা। বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে বাবা
আমাকে কুড়িটা টাকা দিয়েছিল, আর মা আমাদের দুজনের মত লুচি হালুয়া আর
নারকোলের নাড়ু বেঁধে দিয়েছিল সঙ্গে। আমি আর বাপ্পা সেগুলির সদব্যবহার
করতে শুরু করলাম। তবে আসানসোলের পরে গাড়ি আর যেন এগোতেই চায় না। একটা
ছোট্ট অজানা স্টেশনে ট্রেনটা সেই যে দাঁড়ালো আর নড়াচড়ার যেন কোন লক্ষণই
নেই। স্টেশনটিতে কোন উঁচু প্লাটফর্ম নেই। প্রত্যেকটা কামরার নীচে কাঠের
সিঁড়ি দিয়ে মানুষ জন উঠছে, নামছে।
এইসব স্টীম ইঞ্জিনের গাড়ি এক জায়গায় বেশিক্ষন দাঁড়ালে আস্তে আস্তে বগির
ডাইনামোর চার্জ যত কমতে থাকে গাড়ির আলোর তেজও ততই কমতে থাকে। একটা নির্জন
স্টেশনে আধো-অন্ধকারে এই ভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর আমার কেমন যেন ভয় ভয়
করতে লাগল। এইসব ছোট খাটো স্টেশনে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। প্লাটফর্মে মাত্র
সাত-আট ফুট উঁচু কয়েকটা লোহার খুঁটির উপর কাঁচের বাক্স মত করা আর তার ভিতরে
কেরসিনের আলোয় চারিদিকে আবছা, যেটুকু যা দেখা যায়। বেলা পাঁচটা নাগাদ
যেখানে ট্রেনটার মধুপুরে পৌছোনর কথা সেখানে বেলা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এই
ছোট্ট স্টেশনে দাঁড়িয়েই আছে।
এমন সময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের কামরা থেকে একজন বেশ লম্বা চওড়া ব্যক্তি
প্লাটফর্মে নেমে একটি আলোর নীচে দাঁড়ালো। বাপ্পা লোকটিকে দেখেই এক গাল
হেসে "আরে ও বংশীদা, বংশীদা ......" বলে চিৎকার করতে লাগলো। লোকটা যেন
সেকথা শুনতেই পেল না। এক বারের জন্যও আমাদের দিকে না তাকিয়ে জয় সিয়ারাম
জয় সিয়ারাম বলতে বলতে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের বাইরে কোথায় যেন
অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। লোকটার পরনে খাটো ধুতির উপরে অদ্ভুত একটা ঢল্লা মত
জামা। আর মাথায় পশ্চিমের লোকেদের মত কান ঢাকা পাগড়ি থাকার জন্য লোকটার
মুখটা ভাল করে দেখতেই পেলাম না।
বাপ্পা তাড়াতাড়ি ট্রেন থেকে নেমে লোকটার দিকে দৌড়তে যাবে এমন সময় এতক্ষন
ধরে অচল পাহাড় হয়ে স্থবির থাকা আমাদের ট্রেনটি একটি লম্বা টানা হুইসেল
দিয়ে নড়ে উঠল। ট্রেন চলতে শুরু করতেই আমি বাপ্পার হাত ধরে টেনে কামরার
ভিতরে ঢুকিয়ে নিলাম। আমাদের আসনে বসেই আমি বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুই
চিনিস ওকে...?" উত্তরে বাপ্পা বলল,"আরে, ও তো বংশীলাল।" তবে একটা বিষয়ে
দুজনে খুবই অবাক হলাম সেটা হচ্ছে লোকটি এতক্ষন আমাদের কামরাতেই ছিল।
কামরাতে তেমন কিছু ভিড়ও নেই অথচ ও আমাদের কারও নজরে পড়ল না কেন? আমি
জিজ্ঞেস করি, "বংশীলাল আবার কে?" বাপ্পা খুব ছোট্ট বয়সে ওর দাদুর কাছে
শুনেছে, দাদুর বাবা অর্থাৎ বাপ্পার প্রমাতামহ নিবারণচন্দ্র সরকার ছিলেন
বিশেষ ধার্মিক লোক। ভারতের এমন কোন তীর্থস্থান নেই যেখানে নিবারণচন্দ্র
যাননি। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে এই নিবারণবাবুই একবার কুম্ভমেলায়
পিতা মাতা বিচ্ছিন্ন এই বংশীলালকে কুড়িয়ে পান। তখন তার বয়স মাত্র আট-দশ
বছর। তারপর তাকে এই গিরিডিতে নিয়ে এসে নিজ-সন্তান তুল্য মানুষ করেন। পরে
বংশীলালের বিবাহ দিয়ে নিজের বাড়ির কাছাকাছি কিছুটা জমির উপর একটা ছোট্ট
ঘর করে দেন এবং বংশীলালও গিরিডিতে বাপ্পার মামার বাড়ির পরিবারের তিন
পুরুষ ধরে দেখভাল করতে করতে কখন যেন তাদের সংসারেরই একজন হয়ে ওঠে।
হাওড়া থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পর থেকেই অনেক ভুগিয়ে অবশেষে আমাদের এক্সপ্রেস
ট্রেন এতক্ষনে এক্সপ্রেসের মতই দৌড়তে আরম্ভ করল এবং নির্ধারিত সময়ের
প্রায় দুঘন্টা পরে সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ মধুপুরে পৌঁছালো। ট্রেন থেকে নেমে
বেশ শীত শীত করতে লাগল। কলকাতায় এখন বেশ গরম কিন্তু বিহারের (এখন
ঝাড়খন্ড) এইসব জায়গায় এই অক্টোবরের শেষে আবহাওয়া বড়ই মনোরম। মধুপুর
স্টেশনে বিদ্যুৎ আছে তবে অতি সাধারণ কয়েকটা বাল্ব প্লাটফর্মে টিম টিম করে
জ্বলছে। মধুপুরে ট্রেন পালটে গিরিডির ট্রেনে উঠতে হবে। পাশের প্লাটফর্মে
দাঁড়িয়ে আছে গিরিডির ট্রেন। আমরা যেই সেই ট্রেনে উঠতে যাবো, বাপ্পা হঠাৎ
থমকে গিয়ে, "আরে ও বংশীদা ... বংশীদা......" বলে চিৎকার করতে লাগলো। অমনি
ঘাড় ঘুরিয়ে আমি দেখি আগের স্টেশনে দেখা সেই লোকটা...। পরনে খাটো ধুতির
উপর অদ্ভুত একটা ঢল্লা মত জামা। আর মাথায় পশ্চিমের লোকেদের মত কান ঢাকা
দেওয়া পাগড়ি। চক্ষের নিমেষে লোকটা দ্রুত জয় সিয়ারাম জয় সিয়ারাম বলতে বলতে
কোথায় যেন এক আধো অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
গিরিডির ট্রেনটি আমাদের এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল তাই
ট্রেনে ওঠার এক দুই মিনিটের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিল।
তবে পর পর দুবার ঐ লোকটিকে অমন অলৌকিক ভাবে দেখে বাপ্পা যেন কেমন ভীত ও
বিমর্ষ হয়ে গেল। আমাকে বলল, "জানিস, আমি নিশ্চিত জানি ও বংশীলাল। সেই
চেহারা, সেই পোষাক আর ঠিক তেমনই কথায় কথায় জয় সিয়ারাম বলা। অথচ ও আমাকে
চিনতে পারছে কেন, সেটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। বংশীদা আমাকে অসম্ভব
ভালবাসে। আমি গিরিডি আসবো শুনলেই ও আমাকে নিতে মধুপুর পর্যন্ত চলে আসে।
আসার আগে, আমি গিয়ে খাব বলে দাদুর বাগানের গিরিডির বিখ্যাত সেরা পেয়ারা
আর আতাগুলো আমার জন্য পেড়ে রেখে দেয়। পুকুরের মাছ ধরে রান্না করে রেখে
দেয়। আর গিরিডির সবচেয়ে সেরা দোকানের প্যাঁড়া একদম অর্ডার দিয়ে তৈরী করে
রাখে। কিন্তু এবার তো আমি মামিমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে কোন খবর না দিয়েই
যাচ্ছি, তাহলে বংশীদা জানবে কি করে যে আমরা গিরিডি যাচ্ছি। তাছাড়া বংশীদা
আমাকে চিনতে পারছে না কেন?"
মধুপুর থেকে গিরিডি মাত্র ঘন্টাখানেকের রাস্তা। আমাদের গল্প শেষ হওয়ার
আগেই দেখলাম ট্রেন গিরিডি স্টেশনে ঢুকছে। এই ট্রেন আর যাবে না, আবার
মধুপুর ফিরে যাবে, তাই সব যাত্রী এখানেই নেমে যাওয়ার ফলে ট্রেন খালি হয়ে
গেল। সবাই প্রায় স্থানীয় লোক। খুব বেশী হলে পঞ্চাশ-ষাট জন যাত্রী হবে,
তারা ট্রেন থেকে নেমেই হাঁটা শুরু করলো। এইসব এলাকায় রাত্রি আটটা মানে
অনেক রাত।
মিনিট দশেকের মধ্যে গোটা স্টেশন চত্তর ফাঁকা হয়ে গেল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে
আমরাই শুধু দাঁড়িয়ে আছি একট রিক্সা বা টম টমের জন্য। হটাৎ একটু দূরে নজর
পড়তেই আমরা দুজনে আবার চমকে উঠলাম। একটা ইলেক্ট্রিক পোষ্টের নীচে আবছা
আলোয় একজন মাত্র রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে, আর সেই অদ্ভুত পোশাক পরা লোকটা
তাকে কি যেন বলে চলেছে। বাপ্পা আবার বংশীদা বংশীদা বলে চিৎকার করে ডাকতেই
লোকটি জয় সিয়ারাম জয় সিয়ারাম বলে অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার সত্যি সত্যিই আমরা
দুজনে খুব ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর চলবে না
তাই ঐ রিক্সাওয়ালা টাকে ডাকতে যাবো, এমন সময় আমাদেরকে আরও আশ্চর্য করে
দিয়ে আমরা না ডাকতেই রিক্সাওয়ালাটি নিজেই আমাদের কাছে এসে, "উঠিয়ে
বাবুজি, আপলোক তো কাছারীপাড়া সরকার ভিলা যানেওয়ালা হায় না?" বলে দাঁড়িয়ে
গেল।
নিতান্তই ভয়ে ভয়ে দুজনে উঠলাম রিক্সাটায়, তবে রিক্সাওয়ালাটা ভারী মজার
লোক ছিল, তাই মুহুর্তের মধ্যেই আমাদের ভয় কিছুটা হলেও উধাও। প্যাডেলের
তালে তালে ... জী আপনা দিল, তু আওয়ারা... গাইতে গাইতে মাত্র আট-দশ
মিনিটের মধ্যে বাপ্পার মামার বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মেটাতে গিয়ে আমরা আবার অবাক। রিক্সাওয়ালা "আপকা ভাড়া
বনশীলালজী মিটা দিয়া" বলে রিক্সা ঘুরিয়ে নিয়ে জি আপনা দিল... গাইতে গাইতে
অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
আবছা অন্ধকারে রিক্সা থেকে নেমে মামাবাড়ির সদর দরজা পর্জন্ত যেতে যেতে
বাপ্পা বলল, "দেখলি তো? আমি বললাম না ও বংশীদা না হয়ে যায় না! আসলে ও আজ
কোন কাজে নিশ্চই আসানসোল গেছিল আর সেখানে আমাদের দেখতে পেয়ে ও আমাদেরকে
সারপ্রাইজ দেবে বলে এতক্ষন আমাদের সঙ্গে নাটক করছিল।" বাপ্পার মুখে একথা
শুনে আমি বললাম, "তার মানে তুই বলতে চাইছিস আগে থেকে খবর না দিয়ে এসে
মামীমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে আসতে গিয়ে উল্টে আমরাই সার প্রাইজড হয়ে
গেলাম? হা হা হা।"
যাইহোক এতক্ষনের একটা ভয়ের বাতাবরণ থেকে মুক্তি পেয়ে বাপ্পার মামার বাড়ির
কড়া নাড়া দিতেই মামীমা নিজেই দরজা খুলে আমাদের দুই মুর্তিমানকে দেখে
একেবারে আক্ষরিক অর্থেই অবাক। যাই হোক আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসিনি,
নিতান্তই মামীমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য যে এই ভাবে না জানিয়ে আসা সেটা
নিশ্চিন্ত হয়ে আমাদের প্রতি তার প্রাথমিক অভ্যর্থনা শেষ হতেই বললেন,
"তাহলে বংশীর কথাই ঠিক হল।" এ কথা শুনে আমরা দুজনে অবাক হয়ে শুধাই,
"বংশীদা তোমাকে কি বলেছে মামীমা?"
উত্তরে মামীমা বললেন, "আরে ওই পাগলটা নাকি স্বপ্ন দেখেছে যে আজ ওর বাপ্পা
দাদাবাবু আসবেই, আর সেই জন্যই সকালে থেকে এক মুহুর্তের জন্য নিজের বাড়িতে
পর্যন্ত যায়নি। সারাদিন ধরে গাছের পাকা আতা, পেয়ারা পেড়ে রেখেছে। এই তো
বিকেলে পুকুরে মাছ ধরল। আর তোরা ঢুকছিস দেখেই রান্না ঘরে গিয়ে তোদের জন্য
টিফিন করতে গেল। আমি আর কিছু বললাম না, আসলে এই বাড়িতে আমার চেয়ে তো ওরই
অধিকার বেশি।" এ কথা বলে মামীমা জোরে জোরে হেসে উঠলেন। আমি আর বাপ্পা
সমস্বরে মামিমাকে জিজ্ঞেস করলাম, "বংশীদা কি আজ একবারের জন্যও বাড়ির
বাইরে যায়নি?"
"না না ও তো সারাদিন আমার চোখের সামনেই রয়েছে," বলে উঠলেন মামীমা।
আর তখনই, বংশীদা দুই হাতে দুই প্লেট মিষ্টি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো আর
আমাদের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলল, " খা লিজিয়ে বাপ্পা ভাইয়া, আপ ভি খা
লিজিয়ে।" তারপর মামীমার দিকে তাকিয়ে বলল, " হাম বোলা থা না মাইজি, আজ
বাপ্পা ভাইয়া জরুর আয়েগা। আধি রাত কি স্বপ্না কভি ঝুটা নাহি হোতা, হা হা
হা।"
Bah-- besh laglo
ReplyDelete