সরমার আর্থারাইটিসের ব্যামো। চল্লিশ বছর ধরে। ইদানীং সোজা হয়ে
দাঁড়াতেও পারেন না। ব্যথায় ছটফট করেন দিনরাত। হাত ধরে ধরে সিঁড়ি টপকান। নামেনও
একইভাবে।
ডাক্তার রেস্ট নিতে বলেছেন কিছুদিন। কোনও রকমে রান্নাটা সরমা করলেও
বাসন মেজে দেন দিলীপবাবু ! যদিও তিনিও বার্ধক্যজনিত অসুখে জর্জরিত।
একমাত্র ছেলে অপু ব্যাঙ্গালোরে। একটা তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ
করে। বাড়িতে সরমা আর দিলীপবাবু। বিয়ে দেওয়ার বয়স হলেও ছেলে এখনই বিয়েতে রাজি নয়।
সে আরেকটু গুছিয়ে নিতে চায়।
সব সময়ের জন্য একটা কাজের লোকের বড় দরকার সরমাদের। কিন্তু এ পোড়া
তল্লাটে কাজের লোকের দেখা পাওয়া মানে ভগবানের দেখা পাওয়া। খোঁজ করেও যখন পেলেন না,
সেদিন বিকেলবেলায় হালদার পাড়ার তহমিনার মা এসে হাজির। সে কাজ করতে চায়। দেরি না
করে সরমা, দিলীপবাবুও রাজি হয়ে গেলেন।
কাল বিকেলে পাশের বাড়ির গোবিন্দর মা এসেছিল সরমাদের বাড়িতে। একথা
সেকথায় সে বললো, দিদি, শেষ পর্যন্ত মুসলমান ঢোকালেন বাড়িতে ! ওর হাতের ছোঁয়া...
কথা আর বাড়তে দিলেন না সরমা, শোনো, মুসলমান না, বলো একটা মানুষ ঢুকিয়েছি বাড়িতে। ঐ যে বাজারে ফুল বিক্রি করে, সেও মুসলমান, যে মাছ বিক্রি করে সেও মুসলমান, কই তাদের হাতের ছোঁয়া লাগে না ! নাকি মাছওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করো তুমি হিন্দু না মুসলমান ! যেদিন এই ধারণা থেকে বেরোতে পারবে, সেদিন আমার বাড়িতে এসো, বুঝলে?
কথা আর বাড়তে দিলেন না সরমা, শোনো, মুসলমান না, বলো একটা মানুষ ঢুকিয়েছি বাড়িতে। ঐ যে বাজারে ফুল বিক্রি করে, সেও মুসলমান, যে মাছ বিক্রি করে সেও মুসলমান, কই তাদের হাতের ছোঁয়া লাগে না ! নাকি মাছওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করো তুমি হিন্দু না মুসলমান ! যেদিন এই ধারণা থেকে বেরোতে পারবে, সেদিন আমার বাড়িতে এসো, বুঝলে?
বললেন বটে, তবে সরমা এটা বুঝলেন যে চারিদিকে শুধু হিন্দু, মুসলমান,
খ্রীষ্টান, খোঁজে সবাই ; কেউ মানুষ খোঁজে না
বেশ তো ।
ReplyDeleteঠিক, মানসিক উন্নতি এখনো বহুদূর
ReplyDeleteসময়োপযোগী গল্প । সাহিত্যিকের দায়িত্ব সুনিপুণ অথচ সহজভাবে পালন করেছেন ।
ReplyDelete