Sunday, December 24, 2017
সম্পাদকীয় - / গৌতম সেন
সম্পাদকীয় -
বছর তার লট-বহর গুছিয়ে প্রায় তৈরি – কটা
দিন পরেই অতীতের তেপান্তরে পাড়ি জমাবে সে। ২০১৭ জায়গা ছেড়ে দেবে আর এক নতুন বছর কে
- ২০১৮ নতুন কলেবরে এসে আবির্ভাব হবে আগামী দিনপঞ্জীর প্রাত্যহিকীতে। কালের
নিয়মে নির্ধারিত এ বিদায়পর্ব ফিরে ফিরে আসে, আসে নতুন বছর নতুন নামে। এভাবেই একাবিংশ
শতাব্দী এগিয়ে চলেছে।
আমরাও সেই চিরাচরিত নিয়মের হাত ধরে এগিয়ে
চলেছি। জীবনের নানা সংঘাত, নানা সুখ-দুঃখকে মোকাবিলা করে এগিয়ে চলেছি আগামীকে বরণ
করে নেব বলে। আরও নতুন নতুন আশা জন্ম নেবে মনে। এভাবেই জীবন চির বহমান, গতিময়
ও নিত্য ঘটমান।
চিলেকোঠা এমনই এক বর্ষ সন্ধিক্ষণে আজ প্রকাশিত
হল তার ই-ম্যাগের সম্ভার নিয়ে। বহু গুণী লেখক – কবিদের সম্বৃদ্ধ লেখনীর অবদানে এ সংখ্যাটিও
উৎকর্ষতার এক সুন্দর ভাণ্ডার নিয়ে উপস্থিত। সকল সদস্য-সদস্যার
শতস্ফুর্ত যোগদান, তাঁদের সৃষ্টিশীল অবদানকে চিলেকোঠা কৃতজ্ঞতা
জানাচ্ছে অকুণ্ঠ হৃদয়ে। এমন সহৃদয় সহযোগীতা পেয়ে চিলেকোঠা ই-ম্যাগ
সত্যিই নতুন কিছু করার প্রয়াস নিতে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত হয়। বেশ কিছু সুন্দর
পরামর্শ ও অনুরোধ পাওয়া গেছে সদস্য-সদস্যাদের কাছ থেকে। সে গুলি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা
করা হচ্ছে, ও যথাসময়ে তার কিছু কাজে করে দেখানোর সদিচ্ছাও পোষন করি আমরা। যারা নানা-রকম
পরামর্শ জানিয়েছেন এই ই-ম্যাগকে আরও সম্বৃদ্ধ করার জন্য, তাঁদের
সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
শীতের আগমন বোধহয় এখন খানিকটা সুনিশ্চিত ভাবে
ধরা দিয়েছে, আকাশে বাতাসে তাই এক হিমশীতল ভাব। কবির ভাষায় – ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে...’। এই
শীতকাল বাঙালীর কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় – সামনে আছে বইমেলা, আছে
নানান সঙ্গীতানুষ্ঠান – বিশেষতঃ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আর সর্বোপরি আছে পোষ-পাবণের মহাভোজ পিঠে-পায়েস, নতুন গুড়। সবাই খুব ভাল থাকুন – গানে আর ঘ্রাণে, পাঠে আর পিঠেতে, এই শুভকামনা জানিয়ে আজ এখানেই থামা যাক।
ধারাবাহিক / স্বপ্নস্বরূপ - ১৩ / ন ন্দি নী সে ন গু প্ত
আজ
এমন একটি বিষয় নিয়ে বলতে চাই, জানি না সে বিষয় এক পর্বে বলা সম্ভব কিনা। কিন্তু সম্ভব
না হলেও, এটা বুঝতে পারছি যে এই কথা বলবার এই মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অদ্ভুতভাবে
কিছু চোরাস্রোত প্রবেশ করছে আমাদের সমাজজীবনে যেখান থেকে এরকম মত উঠে আসছে যে রবীন্দ্রনাথ
সেই অর্থে সাম্প্রদায়িক না হলেও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসের ব্যাপারে বেশ
জাজমেন্টাল ছিলেন। এই কালিমালেপন যে মৃত্যুর এত বছর পরেও তাকে সহ্য করতে হবে, সে কথা
কে জানত? না, এই মুহূর্তে আর মানুষটি হৃদয়ের অন্তস্থলে কিরকম ভাব পুষে রেখেছিলেন, সে
কথা জানা সম্ভব নয়। তবে তার বিভিন্ন লেখাপত্র থেকে জানা সম্ভব যে ঠিক কী ধরণের চিন্তা
সমাজে ছড়িয়ে পড়া উচিত বলে তিনি ভেবেছিলেন। সমাজের মঙ্গলকামনায় তার মতো একজন শিক্ষাবিদের
ধারণা কি ছিল এই বিষয়ে আজ উচ্চকিত কণ্ঠে বলবার সময় এসেছে।
আজ এই বিশ্বায়নের যুগে দাঁড়িয়েও বারে বারে পৃথিবীতে
মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে নানা বিভেদকামী শক্তি। তার ভাষাতেই বলি, ‘বাহিরের দিকে দরজা যতই
খুলিতেছে, প্রাচীর যতই ভাঙিতেছে, মানুষের জাতিগুলির স্বাতন্ত্র্যবোধ ততই যেন আরো প্রবল
হইয়া উঠিতেছে। এক সময় মনে হইত মিলিবার উপায় ছিল না বলিয়াই মানুষেরা পৃথক হইয়া আছে কিন্তু
এখন মিলিবার বাধা সকল যথাসম্ভব দূর হইয়াও দেখা যাইতেছে পার্থক্য দূর হইতেছে না।' তিনি
সত্যদ্রষ্টা ছিলেন। সমাজকে সতর্ক করেছেন তার বার্তার মধ্য দিয়ে বারবার। ভেদবুদ্ধি ছড়িয়েছেন
বলে কোনও অর্বাচীন কোথাও বলবে না। তবুও যদি কেউ আজ বলে, ধরে নিতে হবে ক্ষুদ্রস্বার্থবুদ্ধি
তাকে দিয়ে আজ বলিয়ে নিচ্ছে এই কথা।
সবার আগে কবি নিজেকে চিনে নেওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন।
যিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে জানেন, বোঝেন যে তার ধর্ম কীভাবে তার অস্তিত্বকে ধারণ করে
আছে, তিনি কি অন্যধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু থাকতে পারেন? যার নিজের ব্রহ্মাণ্ডের ভরকেন্দ্র
টলটলায়মান, তিনিই ক্ষিপ্ত হয়ে বিভেদকামিতাকে আমন্ত্রণ জানাবেন। সুখের কথা এবং শান্তির
কথা, রবীন্দ্রনাথের সেরকম কোনও অবকাশ আসেনি।
না, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না। তিনি ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী
ছিলেন। কিন্তু হিন্দুধর্ম যে ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী মানুষের ধর্ম নয়, সে বিষয়ে তার
থেকে ভালো বিশ্লেষণ আর কেউ কোথাও করেছেন বলে চোখে পড়ে নি। বলেছেন, যা জীবনধর্মী, তা
গতিশীল। এর স্থিতির দিকে যেমন সংজ্ঞা আর অস্তিত্ব আছে, গতির
দিকেও পাল্লা হাল্কা নয়। এখন যেকোনো একদিক থেকে একে বিচার করাই একচোখোমি। তিনি চোখে
আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আমরা অন্ধ, মূক, বধির হয়ে আছি। কবি বলছেন, ‘যেসকল আচার
আমাদের শাস্ত্রে এবং প্রথায় অহিন্দু বলিয়া গণ্য ছিল আজ কত হিন্দু তাহা প্রকাশ্যেই লঙ্ঘন
করিয়া চলিয়াছে; কত লোককে আমরা জানি যাঁহারা সভায় বক্তৃতা দিবার ও কাগজে প্রবন্ধ লিখিবার
বেলায় আচারের স্খলন লেশমাত্র সহ্য করিতে পারেন না অথচ যাঁহাদের পানাহারের তালিকা দেখিলে
মনু ও পরাশর নিশ্চয়ই উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিবেন এবং রঘুনন্দন আনন্দিত হইবেন না। সমস্ত বাঁধাবাঁধির
মধ্যেও হিন্দুসমাজ একপ্রকার অর্ধচেতন ভাবে অনুভব করিতে পারে যে, বাহিরের এইসমস্ত পরিবর্তন
হাজার হইলেও তবু বাহিরের — যথার্থ হিন্দুত্বের সীমা এইটুকুর মধ্যে কখনোই বদ্ধ নহে।’
আমরা হয়তো বা আজ ভুলতে বসেছি যে তিনি পদে পদে সতর্ক
করে গিয়েছিলেন। বলে গিয়েছিলেন, ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে...’। তিনি সম্যকরূপে
ভারতবর্ষকে চেনবার একটা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, ব্রিটিশ আমলেও এই সমস্যা
নতুন কিছু ছিল না। তার কথায় ‘স্বদেশ ও স্বজাতি-রক্ষার জন্য হিন্দু এক হইতে পারে না,
গোষ্ঠ এবং গোজাতি-রক্ষার জন্য চাই কি তাহারা এক হইতেও পারে। স্বাধীনতা স্বদেশ আত্মসন্মান
মনুষ্যত্ব প্রভৃতি অনেক শ্রেষ্ঠতর পদার্থের অপেক্ষা গোরুকে রক্ষা করা যে আমাদের পরমতর
কর্তব্য, এ কথা হিন্দু ভূপতি হইতে কৃষক পর্যন্ত সকলেই সহজে বুঝিবে।’ তিনি বুঝেছিলেন
হিন্দুধর্মের বিপদের খানাখন্দ। বড় দুঃখের কথা, আমরা আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও বেরিয়ে
আসতে পারি নি, চলতে পারি নি ভেদবুদ্ধির উর্ধে উঠে তার নির্দেশিত পথে।
(চলবে)
কবিতা / বুকের ভেতর দাঁড়ের শব্দ / অনুপম দাশশর্মা
সামান্য আবছা আলোটুকু মাখব বলে
আমি হেঁটে চলি শ্রাবণহারা ধুসর
বিকেলপথে
আত্মআবিষ্কারের শূন্যগর্ভে ভেসে ওঠে
এক অদ্ভুত ধ্বনির আভাস
অনুভব করি, পরিচয়হীন এক আত্মার উপস্থিতি।
আমি হেঁটে চলি শ্রাবণহারা ধুসর
বিকেলপথে
আত্মআবিষ্কারের শূন্যগর্ভে ভেসে ওঠে
এক অদ্ভুত ধ্বনির আভাস
অনুভব করি, পরিচয়হীন এক আত্মার উপস্থিতি।
ডুবে যেতে থাকি অনন্ত বিস্মৃতির কুয়াশাবাগানে
শুধু সামনে ঝলসে ওঠে ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকা
রঙিন মানবজীবন
শুধু সামনে ঝলসে ওঠে ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকা
রঙিন মানবজীবন
পাশ দিয়ে বয়ে যায় বহমান তিস্তা
ভাবের অবগাহনে দিই ডুব সাঁতার
বুকের ভেতর দাঁড়ের শব্দ ওঠে-
ছলাৎ ছল....ছলাৎ ছল.....
ভাবের অবগাহনে দিই ডুব সাঁতার
বুকের ভেতর দাঁড়ের শব্দ ওঠে-
ছলাৎ ছল....ছলাৎ ছল.....
অনু গল্প / খেলা / রীনা রায়।
অটোয় বসে কলকল করে ঘামছে রিয়া, প্রায় দশমিনিট হল ট্র্যাফিকের জ্যামে আটকে, কিন্তু সেদিকে ওর ভ্রুক্ষেপ নেই।
কফিশপের ছবিটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছেনা।
নেট অন করতেই টুং করে মেসেজ ঢুকলো, সৌরভের মেসেজ --- ডিসগাস্টিং বলেও হঠাৎ একটা শব্দে চোখটা আটকে গেল ----'সুইসাইড'-- কি মনে হওয়ায় রিয়া একটা স্ক্রীনশট নিয়ে রেখে দিলো।
---
বাড়ি ফিরে সৌরভকে ফোন করলো রিয়া। জানালো, ওরা কাল মিট করবে। কাল, 'আহিরী' শপিংমলের মোড় থেকে ও সৌরভকে পিক-আপ করবে।
তারপর সৃজাকে একটা ফোন করে অনলাইন হতে বললো।
----
সৃজাকে ও সব জানালো। সৌরভ যে ওদের দুজনকে নিয়েই খেলছে
সেটা বোঝালো।
রিয়ার ভালবাসা না পেলে সৌরভ নাকি সুইসাইড করবে--স্ক্রীনশটটা সৃজাকে সেন্ড করলো রিয়া।
প্রচন্ড রেগে সৃজা একটা বোকামি করে বসলো, স্ক্রীনশটটা সৌরভকে পাঠিয়ে কৈফিয়ত চাইলো।
বুদ্ধিমান সৌরভ সব বুঝে গেলো।
---
পরদিন রাস্তায় একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল, রিয়া নামের মেয়েটা আর কোনদিন কোন স্বপ্ন দেখবেনা!
এই ঘটনায় পর ভীত সৃজা নির্বাক হয়ে গেল।
--
দিনকয়েক পর এক কফিশপে দেখা গেল, সৌরভ তার অন্য 'শিকার' এর সাথে প্রেম প্রেম খেলায় মগ্ন হয়ে আছে।
অনু গল্প / সময়ের অপেক্ষা / উৎসব দত্ত
জানলা দিয়ে কুকুর ডাকার আওয়াজ
আসছে ক্রমাগত। এখন রাত পৌনে দুটো। এখনও মাথাটা টলছে। কিভাবে যে কি হয়ে গেল। তবে শান্তি
। কাল থেকে যথারীতি ঘ্যান ঘ্যান শোনার থেকে মুক্তি। এখন কি তবে একটু ঘুমবো? লিপির বডিটা
কি হবে তাহলে? ঠিক ধরেছেন। লিপি আমার স্ত্রী। ওকে আজ আমি ঠিক একটু আগেই খুন করেছি।
ও ঘুমোচ্ছিল আমি বালিশ মুখের ওপর চেপে ধরেছিলাম মিনিট দশেক। প্রথমে একটু থতমত খেয়ে
ছটফট করছিল আমার গেঞ্জিটা ধরে টানার চেষ্টা করছিল কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর হাত
পা ছোঁড়া বন্ধ হয়ে এলো। মুখ থেকে বালিশ টা তুলতে দেখি চোখদুটো কপালে উঠে গেছে, হাঁ
করে আছে। ওকে মেরে ফেলতে আমার মাত্র পনেরো মিনিট লাগল। আমি ওকে ভালবাসতাম। বিয়ের আগে
আমরাও স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সমস্ত কিছু ওলট পালট হতে শুরু করল ওর অফিসে প্রোমোশন হওয়ার
পর থেকে। রাত করে বাড়ি ফেরা । অফিস ট্যুর লেগেই থাকতো। কিছু বলতে গেলে ‘সংসারটা কার
টাকায় চলে?’ বিয়ের আগের স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে মলিন হতে শুরু করল। অশান্তি ভালো লাগেনা।
ধৈয্যর বাঁধ ভাঙল গতপরশু। দিল্লিতে অফিস ট্যুর! ওর পার্সে মন্দারমনি রিসোর্টের বিল।
দুরাত তিন দিন। আর থাকতে পারিনি। ঘুমলে চলবে না। ওর ডেড বডিটার একটা কিছু ব্যবস্থা
করতে হবে। ভয় করছে এখন। কাল সকাল হলেই সবাই জানতে পেরে যাবে। হুইস্কি ঢালতে যাবো গ্লাসে,
বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠল, একি!
লিপি জেগে উঠেছে যে! হুইস্কির গ্লাস বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে! আমার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে
এগিয়ে আসছে। আমায় ধাক্কা দিতে লাগলো। নেশার ঘোরে বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে! আমি লিপিকে
মেরে ফেললাম তাও প্রতিদিনের মতো আজও লিপি আমায় ড্রিঙ্ক বানিয়ে দিচ্ছে । হঠাৎ আমার বুকে
ওর নখের আঁচড়ে বুঝলাম পুরোটাই স্বপ্ন। কাল আবার নতুন করে ভাবা। নতুন পরিকল্পনা। প্রস্তুতির
পালা। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
কবিতা / চলাচল / দেবাশীষ সেন
যতখানি
ভালো থাকার ইচ্ছে, মনে ততটাই মন্দবাসা
হেমন্তের
শিশির ছুঁয়ে, বরষায় ভিজে আসা
চোখে
অলচিকি লিপি, দুর্বোধ্য সেই পরিভাষা।
যতখানি
পথ হাঁটলে পরে, ভবিষ্যত দেখি স্পষ্ট
পোষমানা
সব ভয়, চাঁদের আলোয় নষ্ট
হাত
রাখি হাত, পায়ে জড়াক কষ্ট।
যতখানি
কথা শব্দ খোঁজে, মিছিলে কিংবা বুকে
রাংতায়
মোড়া ছল, বিশ্বাসী হয় সুখে
টুকরো
টুকরো আমিত্ব, ক্ষণজন্মা এ মুখে।।
কবিতা / ইছামতির কথা/ পিনাকী দত্ত গুপ্ত
তোমায় কখনো দেখিনি, কথাও হয়নি কখনো।
তবুও সেদিন রাতে রেডিওতে 'ইছামতির কথা'
শুনতে শুনতে তোমায় মনে পড়ল। মনে হ'ল
, ইছামতির ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভিজে গেছে তোমার
দোহারা শরীর। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে তারা।
রাত্রি ঘুমিয়ে আছে অববাহিকার সাথে, দ্বিধাহীন।
ছলাত ছলাত শব্দে তুমি আর ইছামতি এক হয়ে
গেছো। তারপর শুধু এক অন্ধকার, ঘন অন্ধকার।
তোমাকে কিছু বলতে গিয়ে দেখি, ওরা একে একে
ঘিরে দাঁড়িয়েছে। চাঁদের স্তিমিত আলোয় ওদের
রুপোলি চোখ চিকচিক ক'রে ওঠে। ওরা চেয়ে থাকে
অপলক। আমি চুপ করে থাকি। অববাহিকার বুকে
জঙলি ঘাসের বনে শুয়ে থাকে বুনো হাঁস, জোনাকি
ও ধূর্ত শেয়াল। আমি জেগে থাকি মৃত প্রহরীর মত।
ছায়াগুলি একে একে ফিরে যায়। ইছামতি বয়ে চলে।
যদিও তোমায় জানি দেখিনি কখোনো, তবু মনে হয়
রেডিওতে বেজে চলেছে ইছামতির সুর। বাকি তারা
নেমে এলে, আমিও হয়ত ভেসে যাব কোন রাতে...
ইছামতির নরম ঢেউয়ে লেগে থাকবে তোমার গন্ধ।
কবিতা / বৃত্ত ভাঙার শব্দ / বুবুসীমা চট্টোপাধ্যায়
গ্রামের
চিরপরিচিত অগভীর নদীটি যদি
হঠাত্ করে তোমার
কাছে জানতে চায় --
"সমুদ্র কতদূর গো ? "
তুমি প্রথম দিনে একটু হেসে বলবে-"
"সমুদ্র কতদূর গো ? "
তুমি প্রথম দিনে একটু হেসে বলবে-"
ঐ তো কাছেই আর
একটুখানি পথ ।"
নদী বুঝবে তুমি
সাথেই আছো ।
প্রতি বিকেলে নদীর
একটা অংশ জুড়ে যেখানে তুমি এসে দাঁড়াও '
সেখানে একটা
জায়গা করে নিয়ে বেশ পরিপাটি হয়ে বসে কবিতা লেখো
আর নদীর বুকে
রেখে আসো ; তা কি ভেসে যাবে বলে ভাসাও ?
নদীর সাহস বাড়ে সাহস কিনারা ছাড়াল যেদিন ;
নদীর সাহস বাড়ে সাহস কিনারা ছাড়াল যেদিন ;
সেদিন ' তোমার পা ভিজিয়ে দিয়ে পাড় ভাঙার গল্প বলতে এসে আবার শুধায়--
"সমুদ্র কতদূর গো?"
তুমি কি চমকে গেলে ?
"সমুদ্র কতদূর গো?"
তুমি কি চমকে গেলে ?
সমুদ্র তোমার ভালো
লাগেনা তা নদী জানে
' তুমি তো তাঁকে পাহাড় থেকে এনে গ্রামের
মাঝখানটিতে রেখেছিলে ।
তবুও শুধায় -
"সমুদ্র কতদূর গো?"
সেদিন তুমি কোনো উত্তর না দিয়ে
পালিয়ে এলে-----
"সমুদ্র কতদূর গো?"
সেদিন তুমি কোনো উত্তর না দিয়ে
পালিয়ে এলে-----
' নদী তো তোমার পায়ে পায়ে
উঠোন পেরিয়ে -
চৌকাঠ পেরিয়ে -
চৌকাঠ পেরিয়ে -
সোওওজা তোমার পড়ার
টেবিলে , সে তো থামতে জানেনা ;
একদিন অভিমানী মুখ নিয়ে তুমি নদীর কাছে দাঁড়াতেই, নদীর গর্জনতর্জন শুরু হলো
একদিন অভিমানী মুখ নিয়ে তুমি নদীর কাছে দাঁড়াতেই, নদীর গর্জনতর্জন শুরু হলো
' তোমার অভিমান পিছল পথে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে -
কুঁকড়ে যাচ্ছে
তোমার কলমী-লতার ভাবনাচর ;
তোমার মুঠোয় রাখা সমুদ্রকে নদী দেখতে না পেয়ে -
পাড় ভাঙছে আর পাড় ভেঙেই যাচ্ছে - '
হঠাত্
একটি ছোট্ট "চুয়া" তোমায় বলে উঠলো -
" নদী কতদূর গো?"
তুমি মুঠোয় রাখা সমুদ্রকে দুচোখে মাখিয়ে নিয়ে ফিরে এলে পড়ার টেবিলে ।
তোমার মুঠোয় রাখা সমুদ্রকে নদী দেখতে না পেয়ে -
পাড় ভাঙছে আর পাড় ভেঙেই যাচ্ছে - '
হঠাত্
একটি ছোট্ট "চুয়া" তোমায় বলে উঠলো -
" নদী কতদূর গো?"
তুমি মুঠোয় রাখা সমুদ্রকে দুচোখে মাখিয়ে নিয়ে ফিরে এলে পড়ার টেবিলে ।
একটি ছোট গল্প / বড়দিন / নারায়ণ রায়।
ঋভুর ছেলেবেলা কেটেছে দক্ষিন চব্বিশ পরগনার একটি গ্রামে। ওই অজ গ্রামে
বড়দিন বলে আলাদা করে তেমন কোন কিছুর উপস্থিতি থাকার কথা নয়। তবে এই
গ্রীষ্ম প্রধান দেশে ক্ষনস্থায়ী শীতকালের একটা আলাদা মাধুর্য্য অবশ্যই
আছে। এই সময়ে বাৎসরিক পরীক্ষা হয়ে গেছে, পড়ার কোন চাপ নেই, সারাদিন মাঠে
তিনটে কঞ্চি পুতে ক্যাম্বিস বলে ক্রিকেট খেলা আর খেলা। আর খেলতে খেলতে
নিজেরাই কমল ভট্টাচার্য্য কিম্বা অজয় বসুর কন্ঠ নকল করে সেই খেলার
ধারাবিবরনী দেয়া। আর আসেপাশে কার বাড়িতে পিঠে পুলি তৈরী হচ্ছে সে খবর
জোগাড় করে সুযোগ মত তাদের বাড়িতে ঢুকে যাওয়া।
সেইযুগে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারের মত বড়দিনে ঋভুদের
বাড়িতেও কেক খাওয়ার প্রচলন ছিল না। আর তখন ঐসব প্রত্যন্ত এলাকাতে
বিদ্যুতই ছিল না তাই এযুগের মত ঘরে ঘরে টুনি বাল্ব জ্বালিয়ে ক্রিস-মাস
ট্রি তৈরী করার তো কোন প্রশ্নই ছিলনা। তবে ওদের গ্রামের পাশেই মোয়ার জন্য
বিখ্যাত জয়নগর। বড়দিনে ওর বাবা মোয়া কিনে আনতেন। আর ঋভুকে প্রভু যিশুর
গল্প বলতেন।
বাবা বলতেন, মধ্য প্রাচ্যের এক দেশে একদিন রাজাকে কর দেওয়া ও নাম
লেখানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ বেথেলহেমে্র পথে চলেছেন। মরিয়মকে গাধার
পিঠে বসিয়ে যোসেফও রওনা দেন সেই বেথেলহেমের পথে। পথেই মরিয়মের
গর্ভবেদনা ওঠে। রাজ্যের মানুষের ভিড়ে বেথেলহেমের কোনো সরাইখানায় জায়গা
হয় না তাঁদের। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে সন্তান জন্মদানের জন্য মরিয়মকে
এক গোয়ালঘরে ঠাঁই নিতে হয়। সেখানেই জন্ম দেন পুত্র যিশুকে। এভাবেই মহা
আশ্চর্যরূপে মা মরিয়মের কোলে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের মুক্তিদাতা প্রভু
যিশুর জন্ম হয়।
তবে ঋভুদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আনন্দপুর নামের একটা জায়গায় একটা
চার্চ ছিল। ওই চার্চের পরিবেশটা ঋভুর খুব ভাল লাগতো। ভিতরে ঢুকলেই কেমন
ছবিতে দেখা বিদেশের কাউন্ট্রি সাইড বলে মনে হত। আসলে ঋভুর ঐ চার্চে
যাওয়ার আর একটা কারণও ছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই ঋভুর পেন ফ্রেন্ড আর দেশ
বিদেশের ডাকটিকিট জমানোর সখ ছিল । ওই চার্চের ফাদার 'লয়েজ দেমসা'র তাকে
দেশ বিদেশের ডাকটিকিট দিতেন, আর -- কি ঋভু বাবু তুমি কেমন আছো ... বলে
বিদেশী টানে বাংলায় তার সঙ্গে কত কথা বলতেন। তবে ঋভুর সব চেয়ে ভাল লাগতো
কোন সুদুর যুগোশ্লাভিয়ার এক গ্রাম থেকে কি ভাবে এই সুন্দরবন এলাকায়
এসেছিলেন সেই গল্প শুনতে।
ঋভু অবাক হয়ে শুনতো সেসব কথা, আর বাড়ি গিয়ে মানচিত্র খুলে দেখত কোথায় সেই
পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া আর হাজার হাজার মাইল
দূরে কোথায় এই ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সুন্দর বন লাগোয়া এক অখ্যাত গ্রাম।
পৃথিবীতে এত দেশ থাকতে ফাদার কি করে আমেরিকা ইংল্যান্ড না গিয়ে এই অজ
গ্রামে এসে থেকে গেলেন সে কথা ভেবে ঋভু অবাক হয়ে যেত। ঋভু মাঝে মাঝে
খবরের কাগজে যুগোশ্লাভিয়া দেশটার নামও খুব দেখতে পেত। ঋভু তখন অতসব বুঝতো
না...... কি সব জোট নিরপেক্ষ না কি যেন! প্রেসিডেন্ট টিটো ইত্যাদি। ওর
খুব ইচ্ছে হত একদিন ঋভুও অন্তত জাহাজের খালাসির চাকরী নিয়েও
যুগোশ্লাভিয়ায় চলে যাবে।
চার্চের ফাদার 'লয়েজ দেমসার' যেমন ঋভুকে বিদেশি ডাক টিকিট দিতেন, বিদেশি
চকলেট খাওয়াতেন, তেমনই প্রভু যিশুর কথাও বলতেন। নিষ্পাপ ঋভু সরল মনে
ফাদারকে জিজ্ঞাসা করতো, তোমাদের যিশু যদি এ্তই ভাল তাহলে তার এমন
মর্মান্তিক মৃত্যু কেন?
একথা শুনে এতটুকু ক্ষুব্ধ হতেন না ফাদার, বলতেন, তোমাদের পরমহংসদেব যেমন
বলতেন, এই তোকে যেমন দেখছি, ঠিক তেমনি আমি ঈশ্বরকেও দেখতে পাই, তিনি যেমন
গিরিশ ঘোষকে বলেছিলেন -- দে আমাকে তোর সকল পাপের বকলমা দে......। ঠাকুর
যেমন সকলের পাপ কন্ঠে ধারণ করেছিলেন বলে তার সেই নীলকন্ঠ কর্কট
রোগাক্রান্ত হয়েছিল। ঠিক তেমনই প্রভু যীশু সকলের পাপ নিজের স্কন্ধে নিয়ে
ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছিলেন।
ঋভু এমনিতেই প্রায় প্রতি সপ্তাহে ফাদারের সঙ্গে চার্চে দেখা করতে যেত।
কিন্তু প্রতিবছর ফাদার ঋভুকে বড়দিনের জন্য চার্চে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রন
জানাতেন। খৃষ্টান না হয়েও ক্যারোলে যোগদান করত ঋভু। সবার সঙ্গে সমবেত
কন্ঠে ঋভুও গলা মেলাতো। ফাদার পিয়ানো বাজাতেন। ......"" স্বর্গের দুতেরা
জানালো বারতা রাখাল বালকদেরে/ জন্মিল শোন রাজাধিরাজ এক ক্ষুদ্র গোয়াল
ঘরে।""
সঙ্গীতের পর ফাদার, যীশুর বাণী এবং কার্য-কলাপ পাঠ করতেন, ঋভু সেসব বাণী
খুব মন দিয়ে শুনতো। প্রভু যীশু কিভাবে আর্তের সেবা করতেন, কি ভাবে তিনি
নিজ হাতে কুষ্ঠ রোগীর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দিতেন । এরপর যীশুর বিচারের
নামে প্রহসনের কথাও বলতেন।
বিচার শেষে যীশু একটি পাথরখন্ডের উপর বসলেন। স্বর্গীয় যুবকের বসার ধরনটি
অপূর্ব। পরনে দীর্ঘ শুভ্র বসন। ঈষৎ লালচে দীর্ঘ চুল। নীলাভ চোখ। মুখময়
ঈষৎ লালচে শ্মশ্রু । ভিড়ের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে যিশু বললেন,
শক্রকে ভালোবেস। আর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে অযাথা উৎকন্ঠিত হয়ো না। উপস্থিত
জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল। তারপর তাঁর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি কাঁটা তারের
মুকুট পরিয়ে দেওয়া হ'ল তাকে। অতঃপর তিনি নিজের ক্রুশটিকে নিজেই কাঁধে করে
নিয়ে এলেন বধ্য ভুমিতে।
ক্রুশবিদ্ধ অবস্থাতেও তার মুখে কোন কষ্টের চিহ্ন নেই, তার মুখমন্ডল এক
স্বর্গীয় আনন্দে উদ্ভাসিত, আর তিনি বলে চলেছেন, ঈশ্বর তুমি এদের ক্ষমা
কোর। ক্রমশ বড়দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যেত।
তারপর ঋভুকে বলতেন, আজ তোমার মনের সকল অকথিত অপরাধ এবং প্রার্থনা প্রভু
যীশুর কাছে নিবেদন কর। প্রভু নিশ্চই তোমার সকল অপরাধ মার্জনা করে তোমাকে
নতুন জীবন দান করবেন। সেইযুগে বিদ্যুৎহীন চার্চের ভিতরে মোমবাতির আলোয় এক
স্বর্গীয় পরিবেশে ঋভুর মনে হত যীশু ক্রোড়ে মাতা মেরীর চক্ষু দুটি
অশ্রুসজল। হাতজোড় করে সেই স্বর্গীয় মুর্তির দিকে তাকাতেই তার নিজেরও
চক্ষুদুটি অশ্রুসজল হয়ে উঠত। বালক ঋভুর দুই কপোল সিক্ত হয়ে ওঠে তার অশ্রু
ধারায়। ঋভু কিছুই বলতে বা চাইতে পারতো না। সবশেষে ফাদার ঐদিন তার শত
ব্যস্ততার মধ্যেও ঋভুকে আলাদা করে কাছে ডেকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে
আশীর্বাদ করে তাকে একটা সুন্দর কেক, মিষ্টি, চকোলেটের প্যাকেট ও নিজ হাতে
শুভেচ্ছা লিখে একটি ডায়েরি উপহার দিতেন। মফস্বলের বিদ্যুৎ হীন এলাকার
ছোট্ট চার্চ। বেলা থাকতে থাকতেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যেত। তবে বাড়ি ফিরেও আর
পাঁচটা দিনের চেয়ে ঐ দিনটা ঋভুর কছে হত সম্পুর্ণ অন্যরকম। এর রেশ থাকতো
পরবর্তী বেশ কয়েকদিন। ওর মনটা এক সুন্দর স্বর্গীয় আনন্দে যেন ভেসে যেত।
গত তিন চার বছর ধরে এটাই ছিল ঋভুর বড়দিনের রুটিন। কিন্তু এবার কি আর
যাওয়া হবে? বড়দিনতো এসেই গেল। কিন্তু গত কদিন ধরেই ঋভুর বেশ জ্বর, সর্দি,
কাশি, ভীষন ঠান্ডা লেগেছে। কবিরাজ মশাই বলেছেন টাইফয়েড। খুব সাবধানে
থাকতে হবে। সেই মুঠো ফোনহীন যুগে প্রায় দশ বারোদিন হয়ে গেল ফাদারের সঙ্গে
দেখা হয়নি। বাবা একটা ছোটদের বিবেকানন্দ বই কিনে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে বইটা
উলতে পালটে পড়ে। কোন কিছুই যেন ভাল লাগে না, তেমন মন দিয়ে বইটা পড়তেও
ইচ্ছে করছে না। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হটাত এক জায়গায় ওর চোখদুটো আটকে
যায়। সদ্য পিতৃ হারা নরেন যতই ভাবে দক্ষিনেশ্বরের ওই বূড়োটার কাছে আর
যাবে না। তবুও কেন না গিয়ে থাকতে পারে না? কি এক অমোঘ আকর্ষণে বার বার
ছুটে যায় ঠাকুরের কাছে।
গত কদিন শরীরটা বেশ সুস্থ লাগছে। কবিরাজ মশাইও অভয় দিয়েছেন। বড়দিনের এখন
কদিন বাকী আছে। এবারও তাহলে ও নিশ্চই চার্চে যেতে পারবে। সেই রাত্রে ঋভু
এক আশ্চর্য্য স্বপ্ন দেখলো। ফাদার দেমসার...... কি অপরূপ তার রূপ, দীর্ঘ,
অত্যন্ত গৌর বর্ণের শ্বেত শুভ্র শশ্রু শোভিত, সমগ্র শরীর শুভ্র গাউনে
আচ্ছাদিত। এক হাতে বাইবেল অন্য হাতটি ঋভুর মাথায় বোলাতে বোলাতে ফাদার
বললেন, কেমন আছো ঋভু? আবার বড়দিন এসে গেল। তোমাকে তো যেতেই হবে চার্চে।
তুমি না গেলে প্রভু রাগ করবেন যে!
ঋভু ফাদারকে দেখে অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তার হাত দুটি ধরে বলতে গেল- হ্যা
ফাদার আমার যতই শরীর খারাপ হোক না কেন আমাকে যে যেতেই হবে। কিন্তু
ততক্ষনে ফাদার বললেন আমি চলি আমার সময় হয়ে এসেছে। ঋভুর ঘুম ভেঙ্গে
গেল,... আমার সময় হয়ে এসেছে মানে? চোখ খুলে দেখল ভোর হয়ে গেছে। আকাশ
পরিষ্কার হতে শুরু হয়েছে।
ঋভুর শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে। ঊঠে চোখে মুখে জল দিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে
শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পরে একটু সকাল হতেই ওদের সদর দরজাটায় কে যেন কড়া নাড়া
দিল। ঋভুর বাবা দরজা খুলতেই এক ভদ্রলোক হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে
ঢুকতেই... ঋভু উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলে উঠল- আরে এ তো চার্চের
বাদলদা। ...... কি খবর বাদলদা? জানো আজ ভোর রাত্রে আমি ফাদারকে স্বপ্নে
দেখেছি......। ফাদার কেমন আছেন, বাদলদা? কি ব্যাপার ... তুমি চুপ করে আছো
কেন?
বাদল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো বাদলদা-----
ফাদার আর নেই দাদাবাবু। গত কাল সন্ধ্যার সময়ে অন্য দিনের মতই প্রার্থণা
করার সময়ে হটাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পাড়ার পরাণ ডাক্তার দেখে বললেন সব
শেষ।
সঙ্গে সঙ্গে আমরা কলকাতার বড় চার্চে খবর পাঠাই। ওরা এসে দেহ নিয়ে চলে
গেল। কলকাতায় কোন এক গোরস্থানে নাকি গোর দেবে। আর বলে গেলেন দুই-এক দিনের
মধ্যেই নতুন ফাদার চলে আসবেন। ফাদার অনেকদিন তোমার কোন খবরর না পেয়ে
পড়শুদিন আমাকে এই প্যাকেটটা তোমার বাড়িতে পৌছে দিয়ে তোমার খবর নিয়ে যেতে
বলেছিলেন। আমি সময় করে আসতে পারিনি।
হটাৎ ঋভু যেন পাথর হয়ে গেছে, ও কান্না ভুলে গেছে। নিতান্ত অনিচ্ছায় হাতটা
বাড়িয়ে বাদলদার কাছ থেকে প্যাকেটটা নিল। তারপর খুলে দেখলো অন্যান্য বারের
মত এবারেও ওকে একটা ডায়েরি আর একটা পেন পাঠিয়েছেন ফাদার। আর তার প্রথম
পাতায় পরিষ্কার সুন্দর হস্থাক্ষরে লিখে দিয়েছেনঃ- My beloved Rivu...No
need to go to church for god, make your parents happy first to grt
your god........ with blessings from Fr. Loize Demsar
Subscribe to:
Posts (Atom)
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া
সম্পাদকীয় ও চিত্রাঙ্কন-গৌতম সেন ... সম্পাদনা ও কারিগরী সহায়তা - নূপুর বড়ুয়া

-
ধর্ম আমায় ধারণ করেছে আগুন করেছি বর্ম ... দেখতে পাচ্ছ এই দাবানলে জ্বলছে অস্থি , চর্ম ? দেখতে পাচ্ছ উড়ছে ফিনিক্স , চাঁ...
-
শত চেষ্টা করে যখন একটা কাঠও জোগাড় করা গেল না , তখন নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হল । যে খড়ের আঁটি জ্বেলে কাঙালি মায়ের মুখে আগুন...
-
বিষাদের মেঘ ছেয়েছে আকাশে বৃষ্টি বুঝি আসন্ন— বাতাসের চোখ ছল ছল ভাসে প্রতীক্ষা কার জন্য? ওগো মেয়ে তুমি কার কথা ভাবো, সে কি ...
-
শুকনো বকুল চললি কোথায় ? গ্রহণলাগা দুপুরবেলা লাল মাটি পথ একলা চলা - রুদ্রপলাশ মোড়ের মাথায় ? কি বললি ? আজ বিকেলে মোরগ লড়াই ...
-
ওকি বৃষ্টির শব্দ ? নাকি পায়ের থেকে নূপুর খুলে হাতে নিয়ে তোর দৌড়ে আসার শব্দ ; যদি তাই হয় তবে এখন কেন ? এখন তো অনেক রাত , ব...
-
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রোজ খেলে মরে, একাকী দেয়ালে খেয়ালে বা অখেয়ালে... হেসে কুটে একাকার। মাথা নেড়ে নেড়ে অবাধ...
-
জীবনের পথ দিয়ে চলতে চলতে দিয়ার ক্লান্ত অবসন্ন মন্ ঘরের জানলায় চোখ রেখে আকাশটাকে দেখতে চাইত । কিন্তু তার আকাশটা হারিয়ে যেত , অভিমানে ...
-
বসন্তে যেমন ফুল ফোটে তেমন ফুল ঝরে। কুদরতের নিয়মে যত ফুল ফোটে ঠিক তত ফুলই ঝরে। আল্লা তালার হিসেব চুলচেরা। শুধু কি ঝরে ? ফুল কাঁদে , ফ...
-
হাইবারনেশানে যাই যখন তখন তার অবগাহনে ডুবে যেতে। ফিরে যাই সেই মাতোয়ারা দিনগুলোতে জীবনের জরদ্গভ প্রাচীর ডিঙিয়ে অদ্ভুত এক লুকোচুর...